আসসালামু আলাইকুম, কেমন আছেন সবাই? আশাকরি সবাই ভালো আছেন। পিডিএফ মেলার আজকের আর্টিকেলে ভাবসম্প্রসারণ লেখার নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করা হবে। কথা না বাড়িয়ে তাহলে চলুন শুরু করি।
ভাবের সুসঙ্গত সার্থক প্রসারণই ভাব-সম্প্রসারণ। আবৃতকে উন্মােচিত, সংকেতকে নির্ণীত করে তুলনীয় দৃষ্টান্ত ও প্রবাদ-প্রবচনের সাহায্যে সহজ ভাষায় ভাবের বিন্দুকে বিস্তার করার নাম ভাব-সম্প্রসারণ।
সাধারণত কবিতা বা গদ্যের দু-একটি তাৎপর্যপূর্ণ বা ভাবব্যঞ্জনাময় চরণ ভাব-সম্প্রসারণের জন্যে দেওয়া হয়। এই ভাবব্যঞ্জনায় লুক্কায়িত থাকে মানব-জীবনের কোনাে মহৎ আদর্শ কিংবা কোনাে ব্যক্তিচরিত্রের বিশেষ বৈশিষ্ট্য, নৈতিক কোনাে বিচ্যুতি। ভাব-সম্প্রসারণের সময় সেই গভীর ভাবটুকু উদ্ধার করে প্রয়ােজনীয় যুক্তি, বিশ্লেষণ, উপমা, উদাহরণের মাধ্যমে উপস্থাপন করতে হবে। কবি বা লেখক যেখানে তাঁর বক্তব্যকে ব্যঞ্জনা বা ইঙ্গিতধর্মী করে প্রকাশ করেন, ভাব-সম্প্রসারণে তাকে সেখানে আলােচনাধর্মী করে উপস্থাপিত করা হয়।
ভাব-সম্প্রসারণের জন্য প্রদত্ত কবিতা বা গদ্যের অংশটি সাধারণত খুব সংক্ষিপ্ত হয়। পরিসর যতই ক্ষুদ্র হােক না কেন, তা কিন্তু একটি বড় ভাবকে আশ্রয় দিয়ে থাকে। সতর্কতার সঙ্গে সেই মৌল ভাবটিকে খুঁজে বের করতে হবে। নিচের উদাহরণের সাহায্যে বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করা যাক:
কেরােসিন শিখা বলে মাটির প্রদীপে বাহাদুরির
‘ভাই বলে ডাক যদি দেব গলা টিপে।
হেনকালে আকাশেতে উঠিলেন চাদা;
কেরােসিন শিখা বলে, ‘এসো মাের দাদা।
এখানে কেরােসিন শিখা’, ‘মাটির প্রদীপ” এবং “চাদ’ এই তিনটি বস্তুই রূপক। অর্থাৎ এদের রূপের আড়ালে কবি । ভিন্ন কোনাে ভাবের কথা ব্যক্ত করতে চেয়েছেন। যে কেরােসিন শিখা মাটির প্রদীপের আত্মীয়তা অস্বীকার করে, সেই আবার নিজের অবস্থা বিস্মৃত হয়ে চাঁদকে আত্মীয় সভাযণে বিগলিত হয়ে ওঠে। এখানে কেরােসিন শিখার মধ্যেই মূল ভাবটি দ্যোতিত হয়েছে। সে আসলে কেরােসিন শিখা নয়; সে হল আত্মমর্যাদাহীন, সংকীর্ণচিত্ত, আত্মম্ভরি। তােষামােদপ্রিয় মানুষ। এখানে সেই মানুষের কথাই বিশদভাবে বলতে হবে। আর একটি উদাহরণ উল্লেখ করা যাক:
দণ্ডিতের সাথে
দণ্ডদাতা কাদে যবে সমান আঘাতে
সর্বশ্রেষ্ঠ সে বিচার।
এই কাব্যাংশটি রূপকাশ্রিত নয়; ভাবব্যঞ্জক এই চরণে একটি বিশেষ চিন্তা নিহিত আছে। কবিতাটির বাচ্যার্থ হল, সেই বিচারই শ্রেষ্ঠ যেখানে দণ্ডদাতা দণ্ডিতের সঙ্গে সমান বেদনা বােধ করেন। কিন্তু বাচ্যার্থ এখানে সমগ্র ভাবটিকে প্রকাশ করতে পারছে না, কেননা বাচ্যার্থকে ছাপিয়ে বিষয়টির ভাব ব্যঞ্জনাময় হয়ে উঠেছে। বিচারক যদি নিষ্প্রাণ যন্ত্রবিশেষরূপে শুধু আইনের অনুসরণ করেই বিচারকার্য সম্পন্ন করেন তবে সে বিচার সার্থক নয়। দণ্ডিতকে ঘৃণিত অপরাধীরূপে নয়, তাকে মানুষের মর্যাদা দিয়ে, মমতা ও সহানুভূতির সাহায্যে বিচার করতে হবে।
ভাব-সম্প্রসারণের আবশ্যকতা
জ্ঞান এবং দক্ষতা বৃদ্ধির জন্যে ভাব-সম্প্রসারণের অনুশীলন করার প্রয়ােজন রয়েছে। কারণ, ভাব-সম্প্রসারণ নিয়মিত অনুশীলন করলেও-
- কোনাে সংক্ষিপ্ত, অর্থপূর্ণ বক্তব্যকে বিশদভাবে ব্যাখ্যা করা যায়।
- কোনাে বিশেষ বক্তব্য থেকে সাধারণ সিদ্ধান্ত নেয়া যায়।
- ভাব-প্রকাশের ক্ষেত্রে ভাষা চর্চার যে গুরুত্ব আছে তা অনুধাবন করা যায়।
ভাবসম্প্রসারণ লেখার নিয়ম
ভাব-সম্প্রসারণের কাজটি সার্থক করতে হলে নিচের নিয়মগুলাে মেনে চলতে হবে:
- ভাব-সম্প্রসারণ করতে হলে উধৃত অংশ বা সারগর্ভ বাক্যটি মনােযােগ দিয়ে বারবার পড়ে তার প্রচ্ছন্ন ভাবটুকু বুঝে নিতে হবে। লেখকের রসঘন অর্থবহ রচনার মূল্যবান অংশ, কবিগণের ভাগৰ্ভ ও উজ্জ্বল পঙক্তি, প্রবাদ ইত্যাদি যেসব অংশ ভাব-সম্প্রসারণের জন্যে দেয়া হয়, তার যথার্থ মর্ম বুঝতে পারলে তাব-সম্প্রসারণ সহজ হয়।
- মূলভাব উপমা, রূপক, প্রতীক বা সংকেতের আড়ালে আছে কিনা তা দেখে, মূল তাৎপর্য বােঝার চেষ্টা করতে হবে।
- ভাব-সম্প্রসারণ কথাটির অর্থ যেহেতু ভাবের সম্প্রসারণ বা বৃদ্ধি, তাই প্রয়ােজনীয় উপমা বা দৃষ্টান্ত এবং যুক্তি দিয়ে বক্তব্য-বিষয়কে সহজ-সরলভাবে উপস্থাপন করতে হবে। প্রাসঙ্গিক হলে ঐতিহাসিক, পৌরাণিক বা বৈজ্ঞানিক তথ্য উল্লেখ করা যেতে পারে।
- ভাব-সম্প্রসারণের সময় ভাবের সম্প্রসারণ বা বৃদ্ধি করতে হয় বলে বাহুল্য বর্জন করতে হবে, অর্থাৎ অপ্রয়ােজনীয় কথা কিংবা একই কথার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয় সেদিকে বিশেষ লক্ষ রাখতে হবে। সম্প্রসারিত লেখার আয়তন হবে প্রদত্ত মান নির্ধারক নম্বর অনুযায়ী।
- সম্প্রসারিত-ভাবের বিষয়বস্তুকে ছােট ছােট অনুচ্ছেদের মাধ্যমে স্পষ্ট করে তুলতে হবে। তবে তিন-চার অনুচ্ছেদের বেশি না হওয়াই ভাল।
- আলােচনাটি যাতে রসহীন মনে না হয় সেদিকে মনােযােগী হতে হবে। প্রকাশভঙ্গির সৌন্দর্যের ওপরে ভাব- সম্প্রসারণের সার্থকতা নির্ভর করে।
- কাজটি যেহেতু ভাবের বিস্তার তাই কবি বা লেখকের নাম উল্লেখ করার প্রয়ােজন নেই। এমনকি প্রদত্ত কবিতা বা গদ্যে লেখকের অভিপ্রায় বিষয়েও মন্তব্য করা যাবে না। যেমন : ‘কবি এখানে বলতে চেয়েছেন …’; “লেখকের মতে … ইত্যাদি।
- প্রবাদ-প্রবচনের যথাযথ ব্যবহার লেখার তীক্ষ্ণতা বৃদ্ধি করে বলে তা গ্রহণযােগ্য। প্রয়ােজনে যুক্তিযুক্ত উপমা কিংবা উদ্ধৃতি ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে অযথা উদ্ধৃতির ব্যবহার মূল বিষয়ের সৌন্দর্যহানি ঘটায় বলে তা অবশ্যই বর্জনীয়।
1️⃣ You Can Also Read: বহুব্রীহি সমাসের শ্রেণিবিভাগ ও বহুব্রীহি সমাস নির্ণয়ের সহজ উপায়
2️⃣ You Can Also Read: তৎপুরুষ সমাসের শ্রেণিবিভাগ ও তৎপুরুষ সমাস নির্ণয়ের সহজ উপায়
3️⃣ You Can Also Read: দ্বন্দ্ব ও দ্বিগু সমাসের শ্রেণিবিভাগ ও নির্ণয়ের সহজ কৌশল
4️⃣ You Can Also Read: কর্মধারয় সমাসের শ্রেণিবিভাগ ও নির্ণয়ের সহজ উপায়
আশাকরি আমাদের আজকের আর্টিকেল টি আপনাদের ভালো লেগেছে। শিক্ষা, পাঠ্যপুস্তক, গল্পের বই সহ যে কোন পিডিএফ ডাউনলোড করতে আমাদের সাথেই থাকুন। ভালো থাকবেন সবাই, ধন্যবাদ।