নবম-দশম শ্রেণির রসায়ন ৩য় অধ্যায় এর অনুধাবণ মূলক প্রশ্ন ও উত্তর সমূহ

আসসালামু আলাইকুম, প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা। কেমন আছো তোমরা? আশাকরি সবাই ভালো আছো। পিডিএএফ মেলার আজকের পোস্টে তোমাদের স্বাগতম। আজকের পোস্টে আমি নবম-দশম শ্রেণির রসায়ন ৩য় অধ্যায় পদার্থের গঠন এর সকল অনুধাবন মূলক প্রশ্ন আপনাদের সাথে শেয়ার করেছি। কথা না বাড়িয়ে তাহলে চলুন শুরু করি।

১. পরমাণুতে বর্ণালি সৃষ্টি হয় কেন? ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: শক্তির উৎস থেকে মৌলের অসংখ্যা পরমাণুর একই ইলেকট্রন বিভিন্ন পরিমাণে শকি শােষণ করে উদ্দীপিত অবস্থায় বিভিন্ন নির্দিষ্ট শক্তিস্তরে লাফিয়ে চলে। পরে শক্তির উৎস সরিয়ে নিলে ঐ অসংখ্য হাইড্রোজেন পরমাণুর ইলেকট্রন শক্তি বিকিরণ করে একই নিম্নশক্তিস্তরে ফিরে আসে এবং তখনই বর্ণালির সৃষ্টি হয়।

২. পরমাণু চার্জ নিরপেক্ষ কেন?

উত্তর: পরমাণুর কেন্দ্রে নিউক্লিয়াস অবস্থিত। এতে প্রােটন ও নিউট্রন রয়েছে। প্রােটন ধনাত্মক চার্জযুক্ত, নিউট্রনের চার্জ নিরপেক্ষ অর্থাৎ কেন্দ্র নিউক্লিয়াস ধনাত্মক চার্জযুক্ত। অপরদিকে নিউক্লিয়াসের চারদিকে নির্দিষ্ট কক্ষপথে ঋণাত্মক চার্জযুক্ত ইলেকট্রন থাকে। প্রােটন ও ইলেকট্রন সংখ্যা সমান। ফলে নিউক্লিয়াসের ধনাত্মক চার্জ ও বিভিন্ন স্তরে অবস্থানকারী ইলেকট্রনের ঋণাত্মক চার্জ পরস্পরকে প্রশমিত করে। এজন্য পরমাণু চার্জ নিরপেক্ষ।

৩. কার্বন ডাই অক্সাইড ও পানি উভয়ের পরমাণুর সংখ্যা সমান হলেও আকৃতি ভিন্ন কেন?

উত্তর: CO2 এর আকৃতি সরলরৈখিক অথচ H2O এর আকৃতি y এর তো। H2O অণুতে দুই জোড়া মুক্ত ইলেকট্রন আছে। দুটি মুক্ত জোড় ইলেকট্রন বন্ধন সৃষ্টি করে না বিধায় পানির অণু ‘V’ আকৃতির হয়। অপরদিকে, কার্বন পরমাণুর সঙ্গে অক্সিজেন পরমাণুদ্বয়ের প্রতিটি দ্বিবন্ধনে যুক্ত। কার্বন পরমাণুর চারদিকে দুই জোড়া ইলেকট্রন বিদ্যমান। তাই CO2 অণুর গঠন সরলরৈখিক।

৪. আইসােটোপ ও আইসােবারের মধ্যে পার্থক্য উল্লেখ করো?

উত্তর: আইসােটোপ ও আইসােবারের মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ-
১. আইসােটোপসমূহের প্রােটন সংখ্যা সমান কিন্তু ভর সংখ্যা ভিন্ন হয় অপরদিকে আইসােবারের ক্ষেত্রে ভরসংখ্যা সমান হয় কিন্তু প্রােটন সংখ্যা ভিন্ন হয়।
২. আইসােটোপসমূহ একই মৌলের পরমাণু কিন্তু আইসােবারসমূহ ভিন্ন মৌলের পরমাণু।

৫. রাদারফোর্ডের মডেল কেন পারমাণবিক বর্ণালী এর ব্যাখ্যা দিতে পারে না?

উত্তর: রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেল পারমাণবিক বর্ণালির ব্যাখ্যা দিতে পারে না। কারণ রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেলে শক্তি শশাষণ ও বিকিরণ সম্পর্কে কোনাে ধারণা দেয় না। পারমাণবিক বর্ণালির উৎসই ইলেকট্রনের শক্তি শােষণ বা শক্তি বিকিরণ। রাদারফোর্ড মডেলে শক্তি শোষণ ও বিকিরণ সম্পর্কে কোনাে ধারণা না থাকায়, এ মতবাদ পারমাণবিক বর্ণালির ব্যাখ্যা দিতে পারে না।

৬. পর্যায় সারণির উদ্দেশ্য লিখ?

উত্তর: পৃথিবীতে বিভিন্ন মৌলের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মের মিল ও ভিন্নতা রয়েছে। যাদের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মের মিল রয়েছে তাদেরকে গ্রুপ ভিত্তিক এবং যাদের ধর্মের মধ্যে ভিন্নতা রয়েছে তাদেরকে পর্যায় ভিত্তিকভাবে সাজানাে হয়েছে। মূলত মৌলসমূহে তাদের পারমাণবিক সংখ্যা অনুসারে সাজিয়ে তাদের ধর্ম সম্পর্কে ধারণা লাভ করাই পর্যায় সারণির মূল উদ্দেশ্য।

৭. কার্বনের পারমাণবিক সংখ্যা, এ থেকে কি তথ্য পাওয়া যায়?

উত্তর: পারমাণবিক সংখ্যা বলতে কোনাে পরমাণুর প্রােটন সংখ্যাকে বুঝানাে হয়। কার্বনের পারমাণবিক সংখ্যা 6। এ থেকে বােঝা যায় কার্বনের একটি পরমাণুতে 6 টি প্রােটন আছে। একটি পরমাণুতে যেহেতু প্রােটন ও ইলেকট্রন সংখ্যা সমান তাই বােঝা যায়, কার্বনের একটি পরমাণুতে 6 টি ইলেকট্রন আছে।

৮. তেজস্ক্রিয় আইসোটোপের ক্ষতিকর প্রভাব ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: তেজস্ক্রিয় পদার্থ বিভিন্ন ধরনের রশি বিকিরণ করে। তেজস্ক্রিয়তা ক্যান্সার হওয়ার বিশেষ একটি কারণ। কেমােথেরাপিতে তেজস্ক্রিয় পদার্থ ব্যবহৃত হয়। ফলে মাথার চুল পড়ে যায়, বমি বমি ভাব হয়। অনেক সময় উপকারী প্রয়ােজনীয় ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলে। চা তৈরির কনডেন্স মিল্কের তেজস্ক্রিয়তা পাওয়া গেছে, যা আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর। সুতরাং তেজস্ক্রিয়তা পদার্থ সঠিক মাত্রায় ব্যবহার না করলে তা অকল্যাণের কারণ হয়ে দাড়ায়।

৯. রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেলকে সৌর মডেল বলা হয় কেন?

উত্তর: রাদারফোর্ড পরমাণুর মডেলকে সৌর মডেন বলা হয়। কারণ সৌরজগতের গ্রহসমূহ যেমন সূর্যের চারিদিকে ঘুরে তেমনি নিউক্লিয়াসের চারিদিকে ইলেকট্রনসমূহ সর্বদা ঘুরছে। সৌরজগতের গ্রহ ও রাদারফোর্ডের মডেলে মিল থাকায় এ মডেল সৌর মডেল নামেও পরিচিত।

১০. তেতুল দ্বারা পিতলের তৈরি সামগ্রী পরিষ্কারকরণ এর রসায়ন ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: তেঁতুল দ্বারা পিতলের তৈরি জিনিসপত্র পরিষ্কার করা যায়। কারণ তেঁতুলের মধ্যে টারটারিক এসিড বিদ্যমান। এসিড জাতীয় পদার্থ ব্যবহার করে দ্রব্যসামগ্রী পরিষ্কার করা হয়। যেহেতু তেঁতুলে টারটারিক এসিড থাকে সেহেতু তেঁতুল ব্যবহার করার মাধ্যমে দ্রব্যসামগ্রী পরিষ্কার করা যায়।

১১. কোন মৌলের আপেক্ষিক পারমাণবিক ভর M বলতে কি বোঝ?

উত্তর: কোনাে মৌলের একটি পরমাণুর ভরকে প্রমাণ হিসেবে ধরে তার সাপেক্ষে অপর কোনাে মৌলের একটি পরমাণু কতগুণ ভারী তা প্রকাশক আপেক্ষিক রাশিকে সংশ্লিষ্ট মৌলের আপেক্ষিক পারমাণবিক ভর বলা হয়। কোনাে মৌলের আপেক্ষিক পারমাণবিক ভর M বলতে বােঝায় যে, ঐ মৌলের একটি পরমাণুর ভর হাইড্রোজেনের একটি পরমাণুর ভরের M গুণ (হাইড্রোজেন স্কেল অনুসারে)।

১২. রাদারফোর্ড মডেলের কোন অস্তিত্ব নেই কেন?

উত্তর: রাদারফোর্ডের মতানুসারে, সৌরজগতে সূর্যের চারদিকে ঘূর্ণায়মান গ্রহসমূহের মত পরমাণুর ঋণাত্মক চার্জযুক্ত ইলেকটনগুলাে এর কেন্দ্রস্থ ধনাত্মক নিউক্লিয়াসের চারিদিকে সতত ঘূর্ণায়মান থাকে। কিন্তু ম্যাক্সওয়েলের তত্ত্বানুসারে কোনাে চার্জযুক্ত বস্তু অপর কোনাে চার্জযুক্ত বস্তুকে কেন্দ্র করে বৃত্তাকার পথে ঘুরলে তা ক্রমাগতভাবে শক্তি বিকিরণ করবে এবং তার আবর্তনশীল বৃত্তাকার পথে ধীরে ধীরে সংকুচিত হতে থাকবে। এক্ষেত্রে ঋণাত্মক চার্জযুক্ত ইলেকট্রনসমূহ ক্রমশ শক্তি হারাতে থাকবে এবং অবশেষে নিউক্লিয়াসে পতিত হবে। এতে পরমাণুর অস্তিত্ব ধ্বংস হয়ে যাবে। ফলে রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেলের কোনাে অস্তিত্ব নেই।

নবম-দশম শ্রেণির রসায়ন ৩য় অধ্যায়প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুগন, এই ছিলো নবম-দশম শ্রেণির রসায়ন ৩য় অধ্যায় এর সকল অনুধাবন মূলক প্রশ্ন। আশাকরি ২য় অধ্যায় থেকে প্রশ্ন আসলে এগুলোর মধ্যেই তোমরা কমন পাবা। তোমাদের জন্য শুভ কামণা রইলো, ধন্যবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *