প্রতিবেদন লেখার নিয়ম

প্রতিবেদন কি? প্রতিবেদন লেখার নিয়ম

প্রতিবেদন লেখার নিয়ম: আসসালামু আলাইকুম, কেমন আছেন সবাই? আশাকরি সবাই ভালো আছেন। আজকের আর্টিকেলে প্রতিবেদন কি? প্রতিবেদন লেখার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। কথা না বাড়িয়ে তাহলে চলুন রু করি।

প্রতিবেদন কী

‘প্রতিবেদন’ কথাটি ইংরেজি ‘রিপোর্ট’ (report) কথাটির বাংলা পারিভাষিক শব্দ। report শব্দের আভিধানিক বা শাব্দিক অর্থ সমাচার, বিবরণী, বিবৃতি হলেও বাংলা ভাষায় ‘প্রতিবেদন’ শব্দটিই এখন সবচেয়ে বেশি প্রচলিত, কথিত এবং ব্যবহৃত হচ্ছে। ‘প্রতিবেদন’ শব্দটির পাশাপাশি ‘রিপোর্ট’ শব্দটিও বাংলা ভাষায় একইভাবে এবং একই অর্থে প্রচলিত। কোনো বিশেষ ঘটনা বা কোনো নির্দিষ্ট বিষয় সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্যানুসন্ধানের পর সে বিষয় সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বিবরণী পেশ করার নামই প্রতিবেদন।

প্রতিবেদন বিশেষ কৌশলে বা পদ্ধতিতে রচিত বিবৃতি বা বিবরণী। কারো কারো মতে তথ্যগত ও সত্যনিষ্ঠ বিবরণীকেই প্রতিবেদন বলা হয়। অর্থাৎ, কোনো তথ্য ঘটনা বা বক্তব্য সম্পর্কে বস্তুনিষ্ঠ বর্ণনা দানই প্রতিবেদন। অধ্যাপক মাইক হ্যাচ বলেন, ‘প্রতিবেদন হল একটি সুসংগঠিত তথ্যগত বিবৃতি যা কোনো বক্তব্য সম্মন্ধে সংক্ষিপ্ত অথচ সঠিক বর্ণনাবিশেষ। একে যথেষ্ট সতর্কতা, পর্যবেক্ষণ, পর্যালোচনা, গবেষণা ও বিচার-বিশ্লেষণের পর তৈরি করা হয়।’

প্রতিবেদন রচয়িতাকে প্রতিবেদক বা Reporter বলা হয়। প্রতিবেদকের কাজের ফলই প্রতিবেদন। প্রতিবেদকের দায়িত্ব হল কোনো বিষয়ে তথ্য, উপাত্ত, সিদ্ধান্ত ফলাফল ইত্যাদি খুঁটিনাটি অনুসন্ধানের পর বিবরণী তৈরি করে কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা কোনো কর্তৃপক্ষের বিবেচনার জন্যে পেশ করা। সংবাদপত্রে প্রতিদিন এ-ধরনের অসংখ্য প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ঘটনার বিবরণ তুলে ধরেন প্রতিবেদক বা রিপোর্টার (reporter), সেখানে তাঁর ব্যক্তিগত আবেগ-অনুভূতি, সুপারিশ, নিজস্ব মতামত প্রকাশের কোনো সুযোগ নেই। পক্ষান্তরে, অন্যান্য প্রতিবেদনে কখনো কখনো প্রতিবেদকের মন্তব্য বা সুপারিশ বা নিজস্ব চিন্তা-ভাবনা স্থান পায় বলে অনেকেই সংবাদপত্রের প্রতিবেদনকে অন্যান্য প্রতিবেদনের সঙ্গে পার্থক্য রয়েছে বলে মত ব্যক্ত করেন। কিন্তু এ-ধরনের ধারণা সঙ্গত নয়। কেননা, সংবাদপত্রের মুখ্য উদ্দেশ্য হল বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন।

সাধারণ পাঠক সংবাদপত্রের কোনো প্রতিবেদন পাঠের পর তার যে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া বা মন্তব্য বা সুপারিশ কিংবা সেই একই প্রতিবেদনের ওপর প্রশাসনিক যে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া বা সিদ্ধান্ত পুনরায় প্রতিবেদককে তা সংবাদপত্রে প্রকাশ করতে হয় বা করে থাকেন বলে- সেখানে তাঁর ব্যক্তিগত মতামত বা সুপারিশের কোনো মূল্য নেই। কেননা, সংবাদপত্রের প্রতিবেদনটি হয় সর্বজনীন, তথা এ-প্রতিবেদন পাঠে যে-কোনো পাঠকই তার দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে যে-কোনো মন্তব্য করতে পারেন কিন্তু কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা তাদের নেই, যদি না প্রশাসন এ ব্যাপারে ব্যবস্থা না নেন।

পক্ষান্তরে, প্রশাসনিক ব্যবসায়িক, আইন-আদালত ও অন্যান্য ক্ষেত্রে যে প্রতিবেদন তৈরি করা হয় সেই প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্তে উপনীত হন বলে, এ-সব প্রতিবেদনে প্রতিবেদক সে বিষয় সম্পর্কে কিছু সুপারিশ বা মন্তব্য বা মতামত দিয়ে থাকেন, কর্তৃপক্ষও প্রতিবেদকের প্রদত্ত মতামতকে বিবেচনা করেন।

ভাষাবিদ নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী তাঁর ‘বাংলায় কী লিখবেন, কেন লিখবেন’ গ্রন্থে বলেছেন, ‘সংবাদের উপর মন্তব্য করার জন্য সম্পাদকীয় নিবন্ধকারেরা আছেন, ভাষ্যকারেরা আছেন, তা ছাড়া আছেন নিয়মিত কলামের লেখকেরা। ও কাজ প্রতিবেদক বা রিপোর্টারের নয়। প্রতিবেদন বা রিপোর্ট মন্তব্যবর্জিত হবে।”

সংবাদপত্রের প্রতিবেদন রচনার ক্ষেত্রে লক্ষণীয় বিষয় হল : ভূমিকা অংশেই প্রতিবেদনের উৎস বা সূত্র দেওয়া থাকে। যেমন : নিজস্ব সংবাদদাতা / প্রতিনিধি / প্রতিবেদক, রয়টার জানাচ্ছেন, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারি মুখপাত্র জানান ইত্যাদি। পত্রিকায় প্রকাশের জন্যে সংবাদ প্রতিবেদন পাঠালে প্রতিবেদনের সত্যতা বা গ্রহণযোগ্যতা কতখানি তা সংবাদপত্রে বিবেচনা করা হয় বলে প্রতিবেদনের সঙ্গে প্রতিবেদকের পরিচয়, পদবি, নাম, ঠিকানা, তারিখ, স্বাক্ষর দিতে হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হলে তা উল্লেখ করে দিতে হবে।

লক্ষণীয়: দৈনিক সংবাদপত্রের চিঠিপত্র কলামে জনগণের বিভিন্ন সমস্যা, অভাব-অভিযোগ সম্পর্কে প্রতিনিয়ত যে চিঠিপত্র প্রকাশিত হয় তাকে দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশের জন্যে চিঠি বলা হয়। এসব চিঠি প্রতিবেদনের অন্তর্গত নয়। পত্রিকায় প্রকাশের জন্যে চিঠি কোনো বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে লেখা নয়, আবার এ-জাতীয় পত্রকে ব্যক্তিগত পত্রও বলা যায় না। জনমত প্রকাশ বা জনমত গঠনই এ-জাতীয় পত্রের উদ্দেশ্য। সেকারণেই এগুলোকে বৈষয়িক চিঠির অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

প্রতিবেদনের উদ্দেশ্য

প্রতিবেদন রচনার কতকগুলো সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য রয়েছে। সংবাদপত্রে প্রতিদিন যে অসংখ্য প্রতিবেদন ছাপানো হয়, তার মধ্যে— ব্যক্তি, পারিবারিক, সামাজিক ও জাতীয় প্রয়োজনে অনেক প্রতিবেদন বিশেষ ভূমিকা পালন করে। যেমন : ‘আর্সেনিক দূষণ’ সংক্রান্ত প্রতিবেদন, ‘ডেঙ্গু জ্বর’ সংক্রান্ত প্রতিবেদন, ‘পরীক্ষায় দুর্নীতি’ বা ‘চিকিৎসা ব্যবস্থা’ সম্পর্কে প্রতিবেদন’, ‘দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি’ সম্পর্কে প্রতিবেদন ইত্যাদি। এসব প্রতিবেদন পড়ে আমরা সচেতন ও সতর্ক হতে পারি। তাছাড়া সরকারি, আধাসরকারি, বেসরকারি ও বিভিন্ন সমিতি, সংস্থা, সংগঠন নানা ধরনের বাৎসরিক রিপোর্ট প্রদান করেন। বস্তুত প্রতিবেদন বস্তুনিষ্ঠ ও তথ্যনির্ভর হয় বলে বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রতিবেদন খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

বস্তুনিষ্ঠ ও তথ্যনির্ভর প্রতিবেদনের ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ রাখতে হবে। যেমন- (১) নির্দিষ্ট কোনো বিষয়বস্তু সম্পর্কে কর্তৃপক্ষকে সুস্পষ্টভাবে অবহিত করা। (২) নিরপেক্ষভাবে বক্তব্য উপস্থাপন করা। (৩) কাজের সুষ্ঠু সমন্বয় সাধন করা। (৪) কোনো বিশেষ ঘটনা বা বিষয়কে সরেজমিনে তদন্ত করে পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণলব্ধ ফলাফল সংগ্রহ করা এবং এর সত্যতা যাচাই করে ওই বিষয় সম্পর্কে কর্তৃপক্ষকে যথাযথ ধারণা দেওয়া প্রয়োজনে প্রতিবেদন সম্পর্কে সুপারিশ করা (তবে সুপারিশের বিষয়টি সংবাদপত্রে প্রকাশের জন্য যে প্রতিবেদন তাতে প্রযোজ্য নয়)।

প্রতিবেদন লেখার নিয়ম, প্রতিবেদনের বৈশিষ্ট্য বা একটি আদর্শ প্রতিবেদন রচনার গুণাবলি

প্রতিবেদনের যেসব নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে তা নিম্নরূপ:

  • প্রতিবেদন নির্দিষ্ট কাঠামো ও নিয়মানুযায়ী রচিত হতে হবে।
  • কোনো নির্দিষ্ট ঘটনা বা বিষয় অবলম্বনে প্রতিবেদনটি বস্তুনিষ্ঠ ও তথ্যনির্ভর হতে হবে।
  • প্রতিবেদনের বক্তব্য হবে সহজ-সরল, নিরপেক্ষ, যুক্তিযুক্ত ও বাহুল্য বর্জিত। প্রতিবেদকের কাছে বিশেষভাবে প্রত্যাশিত যে, তাঁর সংবাদে পারতপক্ষে এমন কোনও বিশেষণ ব্যবহার করা যাবে না, যার ফলে তাঁর রচনাকে পক্ষপাতদুষ্ট বা অভিসন্ধিমূলক মনে হয়।
  • জটিল বিষয়ে সরল ব্যাখ্যা দান করাই সঙ্গত।
  • প্রতিবেদনে প্রতিবেদকের কোনো প্রকার আবেগ বা ভাবোচ্ছ্বাস প্রকাশ করার সুযোগ নেই। অর্থাৎ প্রতিবেদনের ভাষা হবে সরল। কিন্তু সরল ভাষা বলতে তরল ভাষা বোঝায় না। যেমন, আবেগ বলতে বোঝায় না উচ্ছ্বাস। ভাষা সম্পূর্ণ নিরাবেগ হবে, এমন দাবি অনুচিত। কেননা, যা নিতান্ত নিরাবেগ, সেই শুকনো ‘কেঠো’ ভাষা একই জায়গায় অনড় দাঁড়িয়ে থাকে, আবেগের ছোঁয়া না লাগা পর্যন্ত তাতে গতির স্পন্দন জাগে না। কিন্তু আবেগ নামক ব্যাপারটাকে যে সংযমের লাগাম পরিয়ে রাখা চাই, সেটা মনে রাখতে হবে। আবেগ সংযত না হয়ে উচ্ছ্বসিত হলে ভাষাকে তা অনর্থক আবিল করে মাত্র। রচনার স্বচ্ছতা তাতে নষ্ট হয়; লেখকের যা বক্তব্য, তা উচ্ছ্বাসের ফেনার তলায় চাপা পড়ে যায়।
  • বাক্য জটিল হলে ভাষা দুর্বোধ্য হয়। যে-ভাষা দুর্বোধ্য, তা অধিকাংশ মানুষের কাছে পৌঁছায় না। নানা পত্রপত্রিকায় নানা বিষয়ে বাইরে থেকে অনেক অনেক লেখা পাঠানো হয়। তার দু-একটি ছাপা হয়, অধিকাংশই ফেরত যায়। কোন্ লেখা ছাপা হবে আর কোনটা হবে না, তা যাঁরা ঠিক করেন, একটা ব্যাপারে তাঁরা প্রায় সকলেই দেখা যায় একমত; সেটা এই যে, যে-সব লেখা তাঁদের হাতে আসে, তার অন্তত কিছু অংশের ‘বিষয়বস্তু খুবই কৌতূহলোদ্দীপক’। বস্তুত সেগুলো ছাপার ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত সেগুলো বাদ পড়ে যায় একমাত্র ভাষা কঠিন বলে।
  • বাক্যের পূর্বাপর সংগতি যেন কোনও মতেই ক্ষণ্ন না হয় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। যেমন কোনো বাক্যের প্রথমাংশে ‘যখন’, ‘যত’, ‘যদিও’, ‘যে-কারণে’, ‘যেজন্য’, ‘যেহেতু’ ইত্যাদি শব্দ থাকলে, পরবর্তী অংশের সঙ্গে তাদের একটা সুষ্ঠু যোগসম্পর্ক থাকতে হবে। নইলে বক্তব্যের পূর্বাপর সংগতির সূত্র ছিন্ন হবে।
  • প্রতিবেদনের বিষয়বস্তুকে কয়েকটি অনুচ্ছেদে ভাগ করে নেওয়া যেতে পারে। প্রতিটি অনুচ্ছেদে বর্ণিত হবে প্রতিবেদনের ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার বিবরণ এবং বস্তুনিষ্ঠ, তথ্যনির্ভর ও অনুসন্ধানমূলক বিবরণী। তবে এ ক্ষেত্রে লক্ষ রাখতে হবে যে, প্রতিটি অনুচ্ছেদ শুরু করতে হবে প্রসঙ্গ বাক্য দিয়ে। যেন পাঠক তা দেখেই বুঝতে পারেন প্রতিবেদনের কোন দিকটি ওই অনুচ্ছেদে বিশদ হয়েছে।
  • বাক্যে যতি চিহ্নের ব্যবহার যথাযথ হতে হবে।
  • প্রতিবেদনের শিরোনামে উদ্ধৃতি চিহ্ন ব্যবহার করা সঙ্গত নয়।
  • সংবাদের গুরুত্বপূর্ণ বিষগুয়লোই অর্থাৎ খবর হিসেবে যা গুরুত্বপূর্ণ তাই প্রতিবেদনে স্থান পাবে। বক্তা কিংবা প্রতিষ্ঠানের খ্যাতিতে বিভ্রান্ত না হয়ে বস্তু, ব্যক্তি, স্থান ও কাল সবই প্রতিবেদককে সতর্কভাবে বিচার করে আসল বা সত্য বিষয়টি প্রতিবেদনে তুলে ধরতে হবে।
  • সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ক্ষেত্রে কোনোভাবেই সুপারিশ গ্রহণযোগ্য নয়। তবে অন্যান্য প্রতিবেদনে সমস্যা সম্পর্কে সুপারিশ বা মতামত দেয়া যেতে পারে।
  • প্রতিবেদনে ‘নির্ভরযোগ্য সূত্রে প্রাপ্ত’ বলে কোনো বিষয়কে চিহ্নিত করা যাবে না। বরং সুনির্দিষ্ট তথ্য-সূত্র বা উৎস-নির্দেশ করতে হবে। এছাড়া পরিশেষে বলি’, ‘প্রসঙ্গত বলি’ ইত্যাদিও যথাসম্ভব বর্জনীয়। বলাবাহুল্য ও লেখা উচিত নয়। বলাবাহুল্যই যদি হবে তো বলার প্রয়োজন কেন?
প্রতিবেদন লেখার নিয়ম
প্রতিবেদন লেখার নমুনা

প্রতিবেদন রচনায় লক্ষণীয় বিষয়

প্রতিবেদন রচনার জন্যে বিশেষ কতকগুলো বিষয়ের প্রতি লক্ষ রাখা আবশ্যক। যেমন-

১. সুনির্দিষ্ট কাঠামো: প্রতিবেদন রচনার জন্যে একটি নির্দিষ্ট কাঠামো অনুসরণ করা প্রয়োজন। এতে সাধারণত শিরোনাম, প্রাপকের নাম-ঠিকানা, আলোচ্য বিষয়ের সূচিপত্র, বিষয়বস্তু, তথ্যপঞ্জি, ষাক্ষর, তারিখ ইত্যাদি থাকবে। অর্থাৎ প্রতিবেদন রচনার আগে প্রতিবেদনের একটি রূপরেখা তৈরি করে নিলে ভালো হয়।

২. সঠিক তথ্য: প্রতিবেদন রচনার আগে সে বিষয়ের ওপর প্রয়োজনীয় তথ্য প্রতিবেদককে সংগ্রহ করতে হবে। প্রতিবেদনে পরিবেশিত তথ্য হতে হবে নির্ভুল, সম্পূর্ণ, নির্ভরযোগ্য ও তথ্যনির্ভর। একটি প্রতিবেদনকে কয়েকটি অনুচ্ছেদে বর্ণনা করা যেতে পারে।

৩. উপস্থাপনা ও পরিবেশনা: প্রতিবেদনের উপস্থাপনা হতে হবে আকর্ষণীয়। এর বক্তব্য সুন্দর ও সাবলীল ভাষায় পরিবেশিত হতে হবে।

৪. প্রতিবেদনের আকার: প্রতিবেদনের আকার নির্ভর করবে প্রতিবেদনের বিষয়ের ওপর। বিষয়ের গুরুত্ব ও পরিধি অনুপাতে প্রতিবেদন এক পৃষ্ঠা থেকে একশত পৃষ্ঠা কিংবা তারও বেশি হতে পারে। বড় প্রতিবেদন সাধারণত পুস্তকাকারে হয়ে থাকে। এ ধরনের প্রতিবেদনে পরিসংখ্যান, সারণি, চিত্র ইত্যাদি সংযোজিত থাকে।

প্রতিবেদনের শ্রেণিবিভাগ

প্রতিবেদনকে নির্দিষ্টভাবে শ্রেণিবিভাগ করা সম্ভব নয়, কেননা বিষয়ের বৈচিত্র্য অনুযায়ী প্রতিবেদনও নানা প্রকার হয়ে থাকে। সাধারণত প্রতিবেদনেই বলা হয় বা প্রকাশিত হয় যে এটি কোন ধরনের প্রতিবেদন। বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে প্রতিবেদনকে নানা নামে ও বিশেষণে অভিহিত করা হয়। যেমন: নিয়মিত প্রতিবেদন, সাময়িক বা খসড়া প্রতিবেদন, চূড়ান্ত প্রতিবেদন, রীতিসিদ্ধ বা রীতিবিরুদ্ধ প্রতিবেদন, বিশেষ প্রতিবেদন, নির্বাহী প্রতিবেদন প্রার্থিত বা অপ্রার্থিত প্রতিবেদন, কোম্পানি প্রতিবেদন, বাৎসরিক প্রতিবেদন, সরকারি বা বেসরকারি প্রতিবেদন ইত্যাদি। তবে মোটাদাগে প্রতিবেদনকে দু ভাগে ভাগ করা হয়।

১। সংবাদ প্রতিবেদন: সংবাদপত্রে প্রকাশিত কোনো ঘটনা সম্পর্কিত প্রতিবেদনকে সংবাদ প্রতিবেদন বলে। নিজস্ব সংবাদদাতা বা প্রতিবেদক এবং বিভিন্ন দেশি-বিদেশি সংবাদ সংস্থার মাধ্যমে এসব সংবাদ সংগ্রহ করা হয়।

২। দাপ্তরিক বা প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবেদন: দাপ্তরিক বা প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবেদন এমন এক ধরনের বিবরণ যাতে প্রাতিষ্ঠানিক কোনো ঘটনা, স্থান, অবস্থা প্রভৃতি বিষয় যাচাই করে সে সম্পর্কিত তথ্য, তত্ত্ব, উপাত্ত তুলে ধরা হয়। দাপ্তরিক প্রতিবেদন দু ধরনের হয়। যেমন: (ক) তদন্ত প্রতিবেদন : এটি কোনো ঘটনা, দুর্ঘটনা, গোলযোগ, হত্যাকাণ্ড ইত্যাদি সম্পর্কে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশে তদন্ত সাপেক্ষে প্রকাশ করা হয়। (খ) কারিগরি প্রতিবেদন : এটি সাধারণত উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয়, প্রযুক্তিগত সম্ভাব্যতা, জনস্বার্থে অবদান, অর্থনৈতিক লাভালাভ ইত্যাদি বিষয়ে তথ্যভিত্তিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। যেমন : পদ্মা সেতুর সম্ভাব্যতা যাচাই’-একটি কারিগরি প্রতিবেদনের উদাহরণ।

প্রতিবেদনের উপযোগিতা

বর্তমান সমাজব্যবস্থায় প্রতিবেদনের সীমা-পরিসীমা যেমন ব্যাপক তেমনি এর উপযোগিতা ও গুরুত্ব অপরিসীম। বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ বা বিবরণের জন্যে প্রতিবেদনের কোনো বিকল্প নেই। প্রতিবেদনে কোনো বিশেষ ঘটনা বা বিষয়কে সরেজমিনে তদন্ত করে পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণলব্ধ ফলাফল প্রকাশ করা হয় বলে, তা থেকে আলোচ্য বিষয় সম্পর্কে প্রয়োজনীয় খুঁটিনাটি তথ্য অবগত হওয়া যায়। কর্তৃপক্ষও সহজে সেই প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারেন। প্রতিবেদনের মাধ্যমে কোনো বিষয়ের পরিকল্পনা গ্রহণ, সংগঠন, নির্দেশনা, নিয়ন্ত্রণ, ফলাফল নিরূপণ, সমন্বয়সাধন ইত্যাদি কাজে সহায়তা পাওয়া যায়। প্রতিষ্ঠানের সুষ্ঠু পরিচালনা, নীতি নির্ধারণে প্রতিবেদন সহায়ক হয়। কোনো বিরোধপূর্ণ ঘটনার মীমাংসার ক্ষেত্রে প্রতিবেদন মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকে। এসব নানা বিষয়ে প্রতিবেদন ব্যবহৃত হচ্ছে বলে বর্তমান সমাজব্যবস্থায় প্রতিবেদন একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে।

একটি সাধারণ প্রতিবেদনের কাঠামো বা অংশবিভাজন

একটি প্রতিবেদনকে প্রধানত চারটি ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন: ১. শিরোনাম ২. সূচনা অংশ ৩. বিষয়বস্তু ৪. প্রতিবেদকের নাম-ঠিকানা, স্বাক্ষর ও অন্যান্য বিষয়।

শিরোনাম: প্রতিবেদনের শিরোনাম আকর্ষণীয় হতে হবে। প্রতিবেদনের যেটা সারাংশ, কিংবা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ বা প্রতিবেদনের যেটা জরুরি অংশ সেটাই শিরোনাম হবে। শিরোনাম যথাসম্ভব ছোট রাখা আবশ্যক।

সূচনা অংশ: প্রতিবেদনের যেটা একেবারে মুখপাত বা সূচনাংশ তা প্রতিবেদনের বাদবাকি অংশের তুলনায় গুরুত্ব বেশি। তার কারণ, এটির দ্বারা আকৃষ্ট হলে তবেই একজন পাঠক গোটা খবরটি পড়তে উৎসাহী হবেন। প্রতিবেদনের যেটা জরুরি অংশ তার দিকে নজর রেখে এমনভাবে সূচনা অংশ লেখা উচিত যেন প্রতিবেদনের বাদ বাকি অংশ সম্পর্কে পাঠকের কৌতূহল জাগ্রত হয়।

বিষয়বস্তু: এ অংশে প্রতিবেদনের শিরোনাম অনুযায়ী বিষয়বস্তুর তথ্যনির্ভর বস্তুনিষ্ঠ আলোচনা থাকবে। অর্থাৎ ‘কে, কী, কেন, কবে ও কোথায়’ এসব প্রশ্নের মাধ্যমে প্রতিবেদনের মূল বিষয়গুলো খুঁজে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো রেখে অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা ছাটাই করতে হবে এবং তথ্যনির্ভর সংবাদ উপস্থাপন করতে হবে। কার নির্দেশে এবং কী ধরনের প্রতিবেদন লিখতে বলা হয়েছে, তিনি কোন বিষয়গুলো বা সমস্যা খতিয়ে দেখতে বলেছেন তা স্থান, কাল ও পাত্র ভেদে (অর্থাৎ অনুসন্ধান, তদন্ত, তথ্য সংগ্রহের জন্য স্থান বা ঘটনাস্থল পরিদর্শন, কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বা প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে আলোচনা ও সাক্ষাত গ্রহণ করা) তার অনুসন্ধানমূলক বিবরণ দিতে হবে।

প্রতিবেদকের নাম-ঠিকানা, স্বাক্ষর ও অন্যান্য বিষয়:  এ-অংশে প্রতিবেদকের নাম-ঠিকানা, স্বাক্ষর, প্রতিবেদন তৈরির সময়, সংযুক্তি (কোনো প্রকার ছবি বা ডকুমেন্ট ইত্যাদি), তারিখ ইত্যাদি উল্লেখ করা যেতে পারে। সংবাদপত্রের জন্য প্রতিবেদক যেসব প্রতিবেদন পাঠান সে-সব প্রতিবেদনের প্রথমেই এসব বিষয়গুলো উপস্থাপন করেন। প্রয়োজনে আলাদা কাগজে প্রতিবেদন লিখেন।


আশাকরি আমাদের আজকের আর্টিকেল টি আপনাদের ভালো লেগেছে। শিক্ষা, পাঠ্যপুস্তক, গল্পের বই সহ যে কোন পিডিএফ ডাউনলোড করতে আমাদের সাথেই থাকুন। ভালো থাকবেন সবাই, ধন্যবাদ। এছাড়াও আমাদের কোন আপডেট মিস না করতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে আমাদের সাথে ফেসবুকে কানেক্ট থাকতে পারেন।