শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব অনুধাবন প্রশ্ন

শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব অনুধাবন প্রশ্ন ও উত্তর

শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব অনুধাবন প্রশ্ন: ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধটি মোতাহের হোসেন চৌধুরীর অন্যতম গ্রন্থ ‘সংস্কৃতি কথা’র ‘মনুষ্যত্ব’ শীর্ষক প্রবন্ধের অংশবিশেষ। এ প্রবন্ধে লেখক মানুষের দুটি সত্তার কথা উল্লেখ করেছেন। এ দুটি হলো— জীবসত্তা ও মানবসত্তা বা মনুষ্যত্ব। মানুষ মাত্রই মানুষ নয়, কঠিন সাধনা করে তবে তাকে মানুষ হতে হয়। আর মানুষ হওয়ার এই বিশেষ কৌশলই শিক্ষা।

গভীরভাবে শিক্ষা হলো জীবসত্তা থেকে মানবসত্তায় উত্তরণের পদ্ধতি বা উপায় । লেখকের মতে, শিক্ষার দুটি দিক– একটি প্রয়োজনের, অন্যটি অপ্রয়োজনের। তিনি অপ্রয়োজনের দিকটিকেই শ্রেষ্ঠ বলেছেন। এ দিকটির মাধ্যমে জীবনকে যথার্থভাবে উপভোগ করা যায়। ভুল শিক্ষা গ্রহণ করে মানুষ অর্থচিন্তার নিগড়ে বন্দি হয়ে পড়ে। ফলে যে যত পায় সে তত পাওয়ার লোভে অনবরত ছুটতে থাকে।

লেখক বলেছেন নিজের মনের মালিক হয়ে জীবনের রস আস্বাদন করতে হলে অর্থচিন্তা থেকে মুক্তি পেতে হবে। কারণ অন্নবস্ত্রের প্রাচুর্যের চেয়ে মুক্তি বড়। আত্মশক্তি অর্জনের এ বোধটি নিজের মধ্যে জাগিয়ে তুলতে হবে।

আর যেখানে মুক্তচিন্তার স্বাধীনতা নেই, বুদ্ধির স্বাধীনতা নেই, আত্মপ্রকাশের স্বাধীনতা নেই সেখানে মুক্তি অসম্ভব। লেখক এই মুক্তির দিকে লক্ষ্য রেখে মানুষকে অন্নবস্ত্রের চাহিদা মেটানোর চেষ্টা করতে বলেছেন। কারণ, ক্ষুৎপিপাসায় কাতর মানুষকে তৃপ্ত করতে না পারলে তার কাছে মুক্তির চিন্তা করা বৃথা। তাই তাঁর যুক্তি, মুক্তির জন্য দুটি উপায় – অন্নবস্ত্রের চিন্তা থেকে মানুষকে মুক্তি দেওয়ার চেষ্টা এবং শিক্ষা দ্বারা মানুষকে মুক্তির স্বাদ পাওয়ানো।

শুধু অন্নবস্ত্রের পেছনে ছুটলে যেমন চলবে না, তেমনই তা বাদ দিয়ে শুধু মুক্তির আশাও বৃথা। কোনো ভারী জিনিসকে উপরে তুলতে হলে নিচের দিক থেকে যেমন ঠেলতে হয়, অনুরূপ উপর থেকেও টানতে হয়। তবেই পুরো সঁফলতা আসে। শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য মানুষের মূল্যবোধ সৃষ্টি করা, জ্ঞানদান করা নয়। জ্ঞান মূল্যবোধ সৃষ্টির উপায় মাত্র। মানুষ শিক্ষা দ্বারা জীবসত্তা থেকে মানবসত্তায় উত্তীর্ণ হবে, সংস্কৃতিবান হবে। আর এটিই ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধের মূল কথা।


শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব অনুধাবন প্রশ্ন 

প্রশ্ন ১। মানবজীবনে শিক্ষা সোনা ফলাতে পারে না কেন?
উত্তর : মানবজীবনে শিক্ষা সোনা ফলাতে না পারার কারণ মানুষ অর্থসাধনাকেই জীবনসাধনা মনে করে। সাধারণভাবে অধিকাংশ মানুষই শিক্ষাকে জীবনধারণের উপায় মনে করে। তারা মনে করে, অর্থসাধনাই জীবনসাধনা। কিন্তু অর্থসাধনাই যে জীবনের সবটুকু নয় এই বিষয়টি মানুষকে বোঝানো যায় না। তাই শিক্ষা তাদের জীবনে সোনা ফলাতে পারে না। কিছুসংখ্যক মানুষ শিক্ষার সুফল বুঝতে পারলেও অধিকাংশ মানুষই শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য বুঝতে পারে না। তারা যে তিমিরে আছে, সেই তিমিরেই থেকে যায়।

প্রশ্ন ২। কখন হাঁটার আনন্দ উপভোগ করা যায় না?
উত্তর : ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধের লেখকের মতে— পায়ের কাঁটার দিকে বারবার নজর দিতে হলে হাঁটার আনন্দ উপভোগ করা যায় না। ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধে লেখক মানবজীবনকে একটি দোতলা ঘরের সঙ্গে তুলনা করেছেন। জীবসত্তা সেই ঘরের নিচতলা আর মানবসত্তা উপরের তলা। শিক্ষা মানুষকে ক্ষুৎপিপাসা থেকে মুক্তি দেয় এবং আত্মার অকৃত্রিম আনন্দের স্বাদ দেওয়ার জন্য মানবসত্তার ঘরে নিয়ে যায়। সাধারণত অর্থচিন্তায় মানুষ সবসময় ব্যস্ত থাকে। আর অর্থচিন্তায় তাড়িত মানুষ প্রকৃত মনুষ্যত্ব অর্জন করতে পারে না। ফলে মানুষ তার জীবনের প্রকৃত আনন্দ উপভোগ করতে পারে না। এই বিষয়টি বোঝাতেই লেখক হাঁটার আনন্দ উপভোগের ক্ষেত্রে পায়ের কাঁটার দিকে বারবার তাকাতে নিষেধ করেছেন।

প্রশ্ন ৩। শিক্ষার প্রয়োজনীয় ও অপ্রয়োজনীয় দিকগুলো বুঝিয়ে লেখ।
উত্তর : শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধে শিক্ষার প্রয়োজনীয় ও অপ্রয়োজনীয় উভয় দিকের কথা বলা হয়েছে। শিক্ষার প্রয়োজনীয় দিককে লেখক কম গুরুত্ব দিয়েছেন, অপ্রয়োজনীয় দিককে শ্রেষ্ঠ দিক হিসেবে উল্লেখ করেছেন। মানুষ জৈবিক চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে সব সময় অর্থচিন্তার নিগড়ে বন্দি থাকে। মনে করে উচ্চশিক্ষায় পাস দিয়ে প্রচুর অর্থ উপার্জন করে জৈবিক চাহিদা মেটানোই শিক্ষাগ্রহণের মূল উদ্দেশ্য। এখানে ব্যক্তি শিক্ষার সুফল ব্যক্তিগতভাবে ভোগ করে। এই বিষয়টি শিক্ষার প্রয়োজনীয় দিক। অন্যদিকে শিক্ষার মাধ্যমে চিন্তার স্বাধীনতা, বুদ্ধির স্বাধীনতা, আত্মপ্রকাশের স্বাধীনতা লাভের আকাঙ্ক্ষা এবং মানবসত্তাকে বিকশিত করাই হলো শিক্ষার অপ্রয়োজনীয় দিক। এই অপ্রয়োজনীয় দিকটি মানুষের মূল্যবোধ সৃষ্টি করে।

প্রশ্ন ৪। জীবসত্তার উন্নয়ন ছাড়া মানবসত্তার উন্নয়ন হয় না কেন?
উত্তর : জীবসত্তার উন্নয়ন ছাড়া মানবসত্তার উন্নয়ন হয় না। কারণ ক্ষুৎপিপাসায় কাতর মানুষকে তৃপ্ত রাখতে না পারলে আত্মার অমৃত উপলব্ধি করা যায় না। লেখক মানুষের দুটি সত্তার কথা বলেছেন। একটি জীবসত্তা, যার প্রয়োজন অন্ন-বস্ত্রের চিন্তা থেকে মুক্তি লাভ করা। আর অন্যটি মানবসত্তা, যার প্রয়োজন শিক্ষার মাধ্যমে মনুষ্যত্বের বিকাশ সাধন করা। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ অর্থচিন্তার নিগড়ে বন্দি থাকে। ফলে মনুষ্যত্বের বিকাশ সাধন সম্ভব হয় না। মানবসত্তার উন্নয়ন ঘটে না। তাই মানুষের অন্ন-বস্ত্রের চিন্তার সমাধান হলে অর্থাৎ জীবসত্তার উন্নয়ন ঘটলে মানবসত্তারও উন্নয়ন ঘটবে। তাই বলা হয়েছে, জীবসত্তার উন্নয়ন ছাড়া মানবসত্তার উন্নয়ন হয় না।

প্রশ্ন ৫। ‘অর্থচিন্তার নিগড়ে সকলে বন্দি’— কীভাবে? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : অর্থচিন্তার নিগড়ে সকলে বন্দি’ বলতে মূলত জীবসত্তার চাহিদা মেটাতে গিয়ে মানব সত্তা বিসর্জন দিয়ে মানুষের অর্থবৃত্তে আবদ্ধ হয়ে পড়াকে বোঝায়। শিক্ষার উদ্দেশ্য মূল্যবোধ সৃষ্টি করা। কিন্তু বর্তমানে অর্থসাধনাই হয়ে উঠেছে মানুষের মূল লক্ষ্য। ফলে তারা শিক্ষাকে অর্থ উপার্জনের মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করছে। তারা কেবল অন্ন- বস্ত্রের চিন্তায় ব্যস্ত থাকে। এ কারণে তারা প্রকৃত মনুষ্যত্ব অর্জন করতে পারে না। ‘মানবসত্তার সুষ্ঠু বিকাশে যেমন অর্থের প্রয়োজন আছে, তেমনই প্রয়োজন আছে সঠিক শিক্ষার, যে শিক্ষা মানুষকে মনুষ্যত্ব অর্জনে সহায়তা করে। সমাজের অধিকাংশ মানুষই এ বিষয়টি অনুধাবন না করে শুধু অর্থ উপার্জনের পেছনেই ছুটে চলেছে। এ কথাটি বোঝাতেই লেখক প্রশ্নোক্ত কথাটি বলেছেন।

প্রশ্ন ৬। মুক্তির জন্য কী কী উপায় অবলম্বন করতে হবে?
উত্তর : মানবমুক্তির নিমিত্তে দুটি উপায় অবলম্বন করা অতীব জরুরি। যেমন— প্রথমত অন্নবস্ত্রের চিন্তা থেকে মানুষকে মুক্তি দিতে হবে। দ্বিতীয়ত শিক্ষাদীক্ষা দ্বারা মানুষকে মনুষ্যত্বের স্বাদ পাওয়ার সাধনা করতে হবে।. চিন্তার স্বাধীনতা, বুদ্ধির স্বাধীনতা ও আত্মপ্রকাশের স্বাধীনতা না থাকলে মানবমুক্তি অর্জিত হয় না। উপর্যুক্ত দুটি উপায় অবলম্বন ছাড়া মানবমুক্তি কখনই সম্ভব নয়।


🔰🔰 আরও দেখুন: শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব প্রবন্ধের সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
🔰🔰 আরও দেখুন: বই পড়া গল্পের অনুধাবন প্রশ্ন


আশাকরি আমাদের আজকের আর্টিকেল টি আপনাদের ভালো লেগেছে। শিক্ষা, পাঠ্যপুস্তক, গল্পের বই সহ যে কোন পিডিএফ ডাউনলোড করতে আমাদের সাথেই থাকুন। ভালো থাকবেন সবাই, ধন্যবাদ। এছাড়াও আমাদের কোন আপডেট মিস না করতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে আমাদের সাথে ফেসবুকে কানক্ট থাকতে পারেন।