অনুচ্ছেদ রচনা: কারিগরি (কর্মমুখী) শিক্ষা

অনুচ্ছেদ রচনা: কারিগরি (কর্মমুখী) শিক্ষা

কারিগরি শিক্ষা হচ্ছে এমন এক ধরনের শিক্ষা যাতে শিক্ষার্থী তার জীবনের বাস্তবক্ষেত্রে কোন একটি পেশা সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান লাভ করতে পারে। এ শিক্ষা গ্রহণের পর শিক্ষার্থীকে আর চাকরির জন্য অপেক্ষা করতে হয় না। সে নিজেই স্বাধীনভাবে কারিগরি পেশার মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করতে পারে। সাধারণ শিক্ষায় অনুৎসাহী শিক্ষার্থীর মনের মত কারিগরি শিক্ষার অনুশীলন করে নানাভাবে সাফল্যের পরিচয় দিতে পারে। এ ধরনের শিক্ষার প্রধান শর্ত পরিশ্রম, একাগ্রতা ও যথার্থ অনুশীলন। বুদ্ধি অপেক্ষা মন এখানে বড় ভূমিকা নেয়। মেধার সঙ্গে একাগ্রতা ও নিষ্ঠা এই বিশেষ শিক্ষা পদ্ধতির প্রধান পরিপােষক। কারিগরি শিক্ষার প্রধান সাফল্য তার ব্যবহারিক প্রয়ােগের ক্ষেত্র। এ শিক্ষার উদ্দেশ্য হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের পরবর্তী জীবনে নির্দিষ্ট কোন কারিগরি বিষয়ে দক্ষ করে তােলা, নিজ নিজ উদ্যোগে স্থানীয় ছােট ছােট শিল্পের প্রসার ঘটানাে, স্বাধীনভাবে পছন্দ অনুযায়ী বৃত্তি নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের প্রাকৃতিক ও মানব সম্পদকে প্রকৃষ্টভাবে কাজে লাগানাের চেষ্টা। কারিগরি শিক্ষার বিষয় : দর্জি বিজ্ঞান, ইলেকট্রনিক্স মেরামত ছােট ছােট ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী তৈরি, ওয়েলডিং, কাঠের কাজ, কুটির শিল্পের কাজ, হাতের কাজ, মােটর মেকানিক্স, রংয়ের কাজ, লােহা ইপাত ও জাহাজ শিল্পের কাজ, লেদার টেকনােলজির কাজ ইত্যাদি। উন্নত দেশগুলাের শিক্ষিত জনগােষ্ঠীর অধিকাংশই কারিগরি, বৃত্তিমূলক ও পেশাভিত্তিক শিক্ষায় শিক্ষিত। এমনকী এশিয়ার দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া, হংকং, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা ইত্যাদি দ্রুত উন্নয়নশীল দেশে কর্মমুখী শিক্ষা যথেষ্ট গুরুত্ব পেয়েছে। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতে শিক্ষিত জনগােষ্ঠীর ৫ শতাংশ কর্মমুখী শিক্ষায় শিক্ষিত। যেখানে বাংলাদেশে তার পরিমাণ মাত্র ১% এর কম। এর কারণ আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় কর্মমুখী শিক্ষার প্রতি অনভিপ্রেত উপেক্ষা। এমনকী সাম্প্রতিককালে নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, অনেক কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীতকরণের যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এবং ইতােমধ্যে উন্নীত করা হয়েছে, তার মধ্যে কর্মমুখী শিক্ষার দিকটি যথেষ্ট উপেক্ষিত হয়েছে। দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও দারিদ্র্য বিমােচনে এ শিক্ষা সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। এ শিক্ষা রুজি-রােজগারের পথ খুলে দেয় এবং নতুন নতুন কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা দেয়। এখানে আছে মানুষের প্রয়ােজনভিত্তিক বৃত্তি নির্বাচনের স্বাধীনতা। আছে সুস্থ সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ জীবন গঠনের অঙ্গীকার। কর্মমুখী শিক্ষায় দক্ষ জনশক্তিকে বিদেশে পাঠিয়ে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। তাই কর্মমুখী শিক্ষা আরাে ব্যাপক হওয়া প্রয়ােজন। কর্মমুখী শিক্ষার ওপর যত বেশি গুরুত্ব দেয়া হবে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা তত সুদৃঢ় হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *