মাসি-পিসি গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

মাসি-পিসি গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ২০২৩

মাসি-পিসি গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর: “মাসি-পিসি” গল্পটি প্রথম প্রকাশিত হয় কলকাতার পূর্বাশা’ পত্রিকায় ১৩৫২ বঙ্গাব্দের চৈত্র সংখ্যায় (মার্চ-এপ্রিল ১৯৪৬)। পরে এটি সংকলিত হয় পরিস্থিতি’ (অক্টোবর ১৯৪৬) নামক গল্পগ্রন্থে। বর্তমান পাঠ গ্রহণ করা হয়েছে ‘ঐতিহ্য’ প্রকাশিত মানিক-রচনাবলি পঞ্চম খণ্ড থেকে।

স্বামীর নির্মম নির্যাতনের শিকার পিতৃমাতৃহীন এক তরুণীর করুণ জীবনকাহিনি নিয়ে রচিত হয়েছে “মাসি-পিসি” গল্প। আহ্লাদি নামক ওই তরুণীর মাসি ও পিসি দুজনই বিধবা ও নিঃস্ব। তারা তাদের অস্তিত্বরক্ষার পাশাপাশি বিরূপ বিশ্ব থেকে আহ্লাদিকে রক্ষার জন্য যে বুদ্ধিদীপ্ত ও সাহসী সংগ্রাম পরিচালনা করে সেটাই গল্পটিকে তাৎপর্যপূর্ণ করে তুলেছে।

অত্যাচারী স্বামী এবং লালসা-উন্মত্ত জোতদার, দারােগা ও গুন্ডা-বদমাশদের আক্রমণ থেকে আহ্লাদিকে নিরাপদ রাখার ক্ষেত্রে অসহায় দুই বিধবার দায়িত্বশীল ও মানবিক জীবনযুদ্ধ খুবই প্রশংসনীয়। দুর্ভিক্ষের মর্মস্পর্শী স্মৃতি, জীবিকা নির্বাহের কঠিন সংগ্রাম, নারী হয়ে নৌকাচালনা ও সবজির ব্যবসায় পরিচালনা প্রভৃতি এ গল্পের বৈচিত্র্যময় দিক।


এইচএসসি বাংলা সৃজনশীল প্রশ্ন

🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন: বায়ান্নর দিনগুলো
🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন: অপরিচিতা


মাসি-পিসি গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

সৃজনশীল ০১: শৈশবে মা-বাবাকে হারিয়ে এক চাচার আশ্রয়ে থাকা আসমার জীবনে ঘটে যায় বাল্যবিবাহ, স্বামীর ঘরে অত্যাচার নির্যাতন, পরে তালাক। চাচার সহযোগিতা না পেলেও দমে যায়নি সে। টিউশনি করে লেখাপড়া চালিয়ে যায় সে। অদম্য ইচ্ছাশক্তির জোরে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় লাভ করে ভালো ফল। আসমা এখন মেডিকেল কলেজের শেষ বর্ষের ছাত্রী।

ক) ‘মাসি-পিসি’ গল্পে চৌকিদারের নাম কী?
খ) আহ্লাদিকে দেখে বুড়ো রহমানের চোখ ছলছল করে ওঠে কেন?
গ) উদ্দীপকের চাচা ও ‘মাসি-পিসি’ গল্পের মাসি-পিসি চরিত্রের তুলনামূলক চিত্র উপস্থাপন কর।
ঘ). “উদ্দীপকের আসমা এবং ‘মাসি-পিসি’ গল্পের আহ্লাদি উভয়েই নির্যাতিত নারী সমাজের প্রতিনিধি।” –আলোচনা কর।

২নং প্রশ্নের উত্তর

ক) ‘মাসি-পিসি’ গল্পে চৌকিদারের নাম কানাই।

খ) আহ্লাদিকে দেখে বুড়ো রহমানের মেয়ের কথা মনে পড়ায় তার চোখ ছলছল করে ওঠে। যেকোনো দুঃখের স্মৃতি মানুষকে আবেগতাড়িত করে তোলে এবং তার চোেখ অশ্রুসিক্ত হয়ে ওঠে। ‘মাসি-পিসি’ গল্পে অল্প কয়েকদিন আগে বুড়ো রহমানের মেয়ে শ্বশুরবাড়ির নির্যাতনে মারা গেছে। তার সামনেই মাসি-পিসি আহ্লাদিকে স্বামীর বাড়ি যাওয়া ঠেকাতে কৈলাশের সাথে তর্কে লিপ্ত হয়েছে। এ সকল কথোপকথন বুড়ো রহমানকে তার মেয়ের কথা মনে করিয়ে দেয় এবং আহ্লাদির চেহারায় তিনি তার মেয়ের প্রতিচ্ছবি দেখতে পান। তাই তো আহ্লাদির দিকে তাকিয়ে বুড়ো রহমানের চোখ ছলছল করে ওঠে।

গ) চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বিচারে উদ্দীপকের চাচা ও ‘মাসি-পিসি’ গল্পের মাসি-পিসি যেন দুই মেরুর বাসিন্দা। ‘মাসি-পিসি’ গল্পের মাসি-পিসি স্বামী-সন্তানহীন, বিধবা। তারা নিজেদের উপার্জন নিজেরা করে খায়। আহ্লাদির প্রতি তাদের অপরিসীম মমতা।

আহ্লাদি নির্যাতিত হয়ে শ্বশুরবাড়ি থেকে ফিরে এলে মাসি-পিসি তাকে মাতৃসুলভ স্নেহে আগলে রেখেছে। পরবর্তীতে আহ্লাদির মা-বাবা মারা যাওয়ার পর তাদের স্নেহের ধারা যেন দ্বিগুণ বৃদ্ধি পায়। আহ্লাদির অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় তারা যেন মায়ের মতোই দায়িত্ব পালন করে। আহ্লাদির সংকটময় সময়ে তাকে মানসিকভাবে সুস্থ রাখতে মাসি-পিসি সব সময় সাহস জুগিয়েছে। স্বামীর অত্যাচার এবং পাড়ার খারাপ প্রকৃতির মানুষের হাত থেকে অহ্লোদিকে তারা পরম মমতায় আগলে রেখেছে।

উদ্দীপকের আসমার দুঃখের প্রকৃতিও ‘মাসি-পিসি’ গল্পের আহ্লাদির মতোই। সে-ও বাল্যবিবাহের শিকার এবং স্বামীর অত্যাচারে তালাকপ্রাপ্ত। এতিম আসমা স্বামীর ঘর ছেড়ে চাচার কাছে আশ্রয় নেয়। তবে চাচার কাছ থেকে সে কোনো প্রকার সহযোগিতা পায়নি। ‘মাসি-পিসি’ গল্পের মাসি-পিসির চরিত্র এর সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তাদের সামনে ছিল প্রতিকূলতার হাজারো দেয়াল। তবুও আর্থিক, সামাজিকসহ সকল প্রতিবন্ধকতা দূর করে মাসি-পিসি আহ্লাদিকে পরম মমতায় আগলে রেখেছে।

আহ্লাদির দুর্দিনে তারা মায়ের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। যার বিন্দুমাত্র সহযোগিতা বা সহমর্মিতা উদ্দীপকের চাচার মাঝে প্রতিফলিত হয়নি। তাই বলা যায় যে, চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বিচারে উদ্দীপকের চাচা ও ‘মাসি-পিসি’ গল্পের মাসি-পিসির অবস্থান সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুতে।

ঘ) উদ্দীপকের আসমা এবং ‘মাসি-পিসি’ গল্পের আহ্লাদি উভয়েই নির্যাতিত নারী সমাজের প্রতিনিধি – মন্তব্যটি সঠিক। নারী অবলা, নারী কমজোরি; তাই সভ্যতার শুরু থেকেই চলে আসছে নারী নির্যাতন। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় সভ্যতার চরম উৎকর্ষের এ যুগে এসেও এ চিত্র পাল্টায়নি। উদ্দীপকের আসমা ও ‘মাসি-পিসি’ গল্পের আহ্লাদি এমনই দুজন নির্যাতিতা নারী।

‘মাসি-পিসি গল্পে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় স্বামীর নির্মম নির্যাতনের শিকার এক তরুণীর করুণ কাহিনির মাধ্যমে বিংশ শতাব্দীর নারী নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরেছেন। গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র আহ্লাদি স্বামী জগুর কাছে সামান্য ভালোবাসাও পায়নি, বরং তাকে সহ্য করতে হয়েছে অমানুষিক নির্যাতন। দুবেলা পেট পুরে খেতে দিতে পারত না, কিন্তু তাকে লাথি ও ঝাঁটা দিয়ে প্রহার করত। এমনকি নিঠুর স্বামী তাকে কলকেপোড়া ছ্যাকা দিত, দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখত।

স্বামীর এমন অত্যাচারে টিকতে না পেরে একসময় সে বাপের বাড়ি গিয়ে আশ্রয় নেয়। আলোচ্য উদ্দীপকেও নারী নির্যাতনের নির্মম চিত্র ফুটে উঠেছে। এতিম আসমা চাচার ঘরে আশ্রিত। শৈশবেই তার বিয়ে হয়ে যায়। কিন্তু স্বামীর অত্যাচার-নির্যাতনে টিকতে না পেরে সে চাচার বাড়ি চলে আসে। যদিও চাচার পক্ষ থেকে সে কোনো সাহায্য পায়নি, তবুও সে নিজ উদ্যোগে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে এবং মেডিকেলে ভর্তি হয়।

অর্থাৎ ‘মাসি-পিসি’ গল্পে এবং আলোচ্য উদ্দীপক উভয় স্থানে নারী নির্যাতনের চিত্র এবং নারীর সংগ্রামী জীবনের চিত্র প্রকাশিত হয়েছে। আলোচনার শেষাংশে এসে বলা যায় যে, উদ্দীপকের আসমা এবং ‘মাসি-পিসি’ গল্পের আহ্লাদি উভয়েই তাদের নির্যাতিত জীবনের করুণ কাহিনি আমাদের সামনে তুলে ধরেছে। নিঃসন্দেহে তারা বাংলার নির্যাতিত নারী সমাজের প্রতিনিধি।

সৃজনশীল ০২: মীনার বাবা হঠাৎ মারা যাওয়ায় তার মা রানু তাকে নিয়ে অসহায় হয়ে পড়ে। সে তার স্বামীর রেখে যাওয়া সামান্য কৃষিজমিতে উৎপন্ন ফসল বিক্রি করে যা আয় করে তাতে মীনার লেখাপড়ার খরচ চালাতে পারে না। তাই অন্যের বাড়িতে ধান ভানা, মাড়াই দেওয়া ও গৃহপরিচারিকার কাজ করে মীনার লেখাপড়া ও সংসারের খরচ চালিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎ বাধা হয়ে দাঁড়ালো মীনার বয়স। ষোড়শী মীনাকে গ্রাম্য মোড়লের কুদৃষ্টি থেকে রক্ষার জন্য সে তাকে বিয়ে দিল। কিন্তু অর্থলোভী ও স্বার্থান্ধ পরিবারে মীনার ঠাঁই হলো না। সে মায়ের কাছে চলে এলো। শুরু হলো মা- মেয়ের নতুন করে বেঁচে থাকার লড়াই।

ক) ‘পাতাশূন্য শুকনো গাছটায়’ কারা বসেছে?
খ) “ছেলের মুখ দেখে পাষাণ নরম হয়,”—এখানে ‘পাষাণ’ কথাটি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?
গ) উদ্দীপকের সমাজচিত্রের সাথে ‘মাসি-পিসি’ গল্পের সমাজচিত্রের সাদৃশ্য কতটুকু? আলোচনা কর।
ঘ) ‘বেঁচে থাকার লড়াই’ –—কথাটি উদ্দীপক ও ‘মাসি-পিসি’ গল্পের আঙ্গিকে ব্যাখ্যা কর।

২নং প্রশ্নের উত্তর

ক) ‘পাতাশূন্য শুকনো গাছটায়’ শকুনরা এসে বসেছে।

খ) “ছেলের মুখ দেখে পাষাণ নরম হয়,” —এখানে ‘পাযাণ’ কথাটি দ্বারা নিঠুর স্বামীকে বোঝানো হয়েছে। ‘প্রত্যেক সমাজেই নারী নির্যাতনের চিত্র দেখা যায়। স্বামী কর্তৃক স্ত্রীর প্রতি অবিচার প্রায়শই ঘটে। তবে তাদের ঘরে সন্তান এলে তখন অনেক ক্ষেত্রে পরিবর্তনও আসে। কঠিন হৃদয়ের পুরুষের মনও নরম হতে পারে অর্থাৎ স্বামী যত গোঁয়ার বা নিষ্ঠুর হোক না কেন ছেলেমেয়ের মুখ দেখলে তখন আর সে গোয়ার্তুমি থাকে না— প্রশ্নোক্ত উক্তিটিতে সেদিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে।

গ) উদ্দীপকের সমাজচিত্রের সাথে ‘মাসি-পিসি’ গল্পের সমাজচিত্রের পুরোপুরি সাদৃশ্য রয়েছে। আমাদের প্রচলিত সমাজব্যবস্থা নারীর অনুকূল নয়। ঘরে-বাইরে কোথাও নারী নিরাপদ নয়। পদে পদে তাদের রয়েছে নিগ্রহ, নিরাপত্তাহীনতা আর নারীত্বের অবমাননার ভয়। এসব সামলে তারা যখন নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায় তখনও বাধা হয়ে দাঁড়ায় সমাজে জেঁকে বসা পুরুষতন্ত্র।

উদ্দীপক ও আলোচ্য গল্পের প্রেক্ষাপটও এর ব্যতিক্রম কিছু নয়। ‘মাসি-পিসি’ গল্পের মাসি-পিসি ও আহ্লাদির যে সমাজে বসবাস, সেখানে তাদের টিকে থাকা একদম সহজ ছিল না। সে সমাজে নারীর টিকে থাকা ছিল ভীষণ কষ্টকর। চারিদিকে ছিল কতিপয় মানুষরূপী হায়েনাদের লোলুপ দৃষ্টি। কর্তা, কানাই, গোকুল, দারোগা, জগু সকলে মিলে মাসি-পিসি আর আহ্লাদির জীবনকে বিষিয়ে তুলেছে। মাসি-পিসি দা-বঁটি হাতে নিয়ে রুখে দাঁড়াতে না জানলে আহ্লাদিকে তারা তুলে নিয়ে যেত। তারপরও ছিল ঘরে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার ভয়। এভাবে চরম বৈরী পরিবেশে আহ্লাদিকে নিয়ে মাসি-পিসি দিন কাটায়। অর্থাৎ এ সমাজ কোনোভাবেই নারীর বিকাশের পক্ষে ছিল না।

আলোচ্য উদ্দীপকেও আমরা অনুরূপ সমাজচিত্রের দেখা পাই। যেখানে প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পূর্বেই গ্রাম্য মোড়লের কুদৃষ্টি থেকে বাঁচাতে মীনাকে বিয়ে দিয়ে দিতে হয়। তবুও শেষ রক্ষা হয়নি। অর্থলোভী ও স্বার্থান্ধ শ্বশুরবাড়িতে মীনা টিকতে পারেনি। সে মায়ের কাছে ফিরে আসতে বাধ্য হয়। অর্থাৎ উদ্দীপকেও আমরা নারীর নিরাপত্তাহীন সমাজের চিত্রই দেখতে পাই। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের সমাজচিত্রের সাথে ‘মাসি-পিসি’ গল্পের সমাজচিত্রের পূর্ণ সাদৃশ্য রয়েছে।

ঘ) উদ্দীপক ও ‘মাসি-পিসি’ গল্প – উভয় সমাজের ভাঁজে ভাঁজেই লুকিয়ে রয়েছে লড়াই করে নারীর বেঁচে থাকার গল্প। কোনো সমাজে নারীকে কতটুকু সম্মান দেখানো হয়, তা-ই হলো ওই সমাজের উৎকর্ষের মাপকাঠি। যে সমাজ নারীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে, নারীর বিকাশের পথকে মসৃণ করে দেয় সে সমাজ হলো প্রত্যাশিত সমাজ, আদর্শ সমাজ।

বিপরীতে যেখানে নারীকে প্রতিনিয়ত নষ্ট পুরুষের লালসার শিকার হতে হয়, পুরুষের কুদৃষ্টিকে পাশ কাটিয়ে সংগ্রাম করে চলতে হয়, সে সমাজ পতিত সমাজ, অভিশপ্ত সমাজ। এরূপ সমাজেই টিকে থাকার জন্য নিরন্তর সংগ্রাম করে যাচ্ছে ‘মাসি-পিসি’ গল্পের মাসি-পিসি, আহ্লাদি ও উদ্দীপকের মীনা ও তার মা। ‘মাসি-পিসি’ গল্পের আহ্লাদি তার স্বামীর নির্মম নির্যাতনের শিকার। তার স্বামী জগু তাকে পেট ভরে খেতে দিতে পারত না, কিন্তু শারীরিকভাবে নির্যাতন করত, কলকেপোড়া ছ্যাকা দিত। এমনকি সারাদিন খুঁটির সাথে বেঁধে রাখত। স্বামীর অত্যাচারে সে মুমূর্ষু অবস্থায় বাপের বাড়ি চলে আসতে বাধ্য হয়। সেখানেও তার রেহাই নেই। লালসা-উন্মত্ত জোতদার, দারোগা ও গুণ্ডা-বদমাশদের আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে তার মাসি-পিসিকে সংগ্রাম করতে হয়।

প্রতিটি ক্ষণ তাদের লড়াই করে টিকে থাকতে হয়েছে। দুবেলা দুমুঠো ভাতের জন্য তাদের যেমন গ্রাম থেকে সবজি কিনে ডিঙি বেয়ে শহরে নিয়ে বিক্রি করতে হয়, তেমনি সমাজপতি ও তার সাগরেদদের লোলুপ দৃষ্টি থেকে বাঁচতেও সদা জাগ্রত দৃষ্টি রাখতে হয়। আহ্লাদির সম্ভ্রম রক্ষা করতে হাতে তুলে নিতে হয় দা, বঁটি। নারীর অনুরূপ সংগ্রামী জীবনচিত্র ফুটে উঠেছে আলোচ্য উদ্দীপকেও। মীনার বাবা মারা যাওয়ার পর সংসারের হাল ধরে তার মা। সে অন্যের বাড়িতে ধান ডেনে, মাড়াই করে ও গৃহপরিচারিকার কাজ করে মীনার লেখাপড়া ও সংসার চালায়। তাতেও রক্ষা হয় না।

মীনার ওপর কুদৃষ্টি পড়ে গ্রাম্য মোড়লের। তাই তড়িঘড়ি করে মীনার মা তাকে বিয়ে দিয়ে দেয়। কিন্তু স্বামীর অত্যাচারে সেখানেও তার স্থান হয় না। অবশেষে সে মায়ের কাছে ফিরে আসে এবং শুরু হয় মা-মেয়ের সংগ্রামী জীবন। উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে তাই বলা যায়, উদ্দীপকে যেমন, তেমনি মাসি-পিসি’ গল্পেরও পরতে পরতে ছড়িয়ে রয়েছে নারীর বেঁচে থাকার লড়াইয়ের গল্প।

নিজে করো,

সৃজনশীল ০৩: দশম শ্রেণির ছাত্রী আসমা এক দরিদ্র পিতার সন্তান। গ্রামের প্রভাবশালী ব্যক্তি গওহর মণ্ডল জোরপূর্বক আসমাকে পুত্রবধূ বানাতে চায়। হুমকি দেয় তুলে নিয়ে যাওয়ার। এই পরিস্থিতিতে আসমার বান্ধবীরা পাশে এসে দাঁড়ায়। মণ্ডলের বখাটে ছেলের হাতে পড়ে মেধাবী ছাত্রী আসমার, লেখাপড়া ধ্বংস হোক তা তারা চায় না। বান্ধবীরা বিষয়টি স্থানীয় সাংবাদিক ও কয়েকজন গণ্যমান্য ব্যক্তিকে জানায়। তারা দলবেঁধে স্কুলে যায় এবং পালা করে আসমার বাড়ি পাহারা দেয়। এতে দমে যায় গওহর মণ্ডল। জয় হয় সম্মিলিত প্রতিরোধের।

ক) ‘সালতি’ কী?
খ) ‘বুড়ো রহমান ছলছল চোখে তাকায় আহ্লাদির দিকে।’ কেন? বুঝিয়ে দাও।
গ) উদ্দীপকের গওহর মণ্ডল ‘মাসি-পিসি’ গমের কোন চরিত্রের প্রতিনিধিত্ব করে? তোমার মতের পক্ষে যুক্তি দেখাও।
ঘ) “জয় হয় সম্মিলিত প্রতিরোধের’ ‘ — একথা ‘মাসি-পিসি’ গল্পের ক্ষেত্রেও সমভাবে প্রযোজ্য” —উক্তিটির যথার্থতা মূলায়ন কর।

সৃজনশীল ০৪: বাপ-মা মরা অভাগী মেয়ে প্রতিমা দরিদ্র কাকা-কাকীর কাছে বড় হয়েছে। দারিদ্র্যের সাথে সংগ্রাম করে অনেক কষ্টে ভাই-ঝিকে বিয়ে দেন কাকা। অভাগী প্রতিমা শ্বশুর বাড়িতেও সুখের নাগাল পায় না। কারণ তার কাকার কাছ থেকে যৌতুকস্বরূপ টাকা আনার জন্য স্বামী-শাশুড়ি প্রতিনিয়ত শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালায়। এমনকি অন্তঃসত্ত্বা জেনেও তার স্বামী একদিন মারধর করে তাকে অজ্ঞান করে ফেলে। যখন জ্ঞান ফিরে আসে, প্রতিমা কোনোরকমে পালিয়ে কাকা-কাকীর কাছে চলে আসে। ভাই-ঝি’র এমন পরিস্থিতি বিবেচনা করে কাকা-কাকী সিদ্ধান্ত নেয় অমন শ্বশুর বাড়িতে তাকে আর পাঠাবে না তারা।

ক) মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় কত বছর বেঁচেছিলেন?
খ) ‘যুদ্ধের আয়োজন করে তৈরি হয়ে থাকে মাসি-পিসি’—ব্যাখ্যা কর।
গ) উদ্দীপকের প্রতিমার সাথে ‘মাসি-পিসি’ গল্পের আহ্লাদি চরিত্রের সাদৃশ্য-বৈসাদৃশ্য নিরূপণ কর।
ঘ) “অর্থলিপ্সা মানুষকে পরিপূর্ণ পশু করে তোলে—উদ্দীপকে ও ‘মাসি-পিসি’ গল্পে এ সত্যটি সন্দেহাতীতভাবে প্রকাশিত হয়েছে” —মন্তব্যটির যথার্থতা বিচার কর।

সৃজনশীল ০৫: বকুল যখন স্বামীহারা হয় তখন তার মেয়ে পারুলের বয়স দুই বছর। একদিকে অর্থকষ্ট, অপরদিকে, বদলোকের কুদৃষ্টি। লোকের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে, খেয়ে না খেয়ে মেয়েটাকে বড় করে বকুল। একসময় মেয়ের বিয়েও দেয় কিন্তু বছর না ঘুরতেই অত্যাচারী স্বামীর সাথে সম্পর্ক ছেদ করে মায়ের কাছে ফিরে আসে পারুল। সম্মানের সাথে বেঁচে থাকার জন্য মেয়ে পারুল হয় বকুলের অবলম্বন। মায়ের জীবন সংগ্রাম দেখে বড় হওয়া পারুল মায়ের চেয়েও সাহসী এবং আত্মমর্যাদাশীল। বাড়ির পাশে শাক-সবজি চাষ করে, ঘরে হাঁস-মুরগী পালন করে, ধান ভেনে, কাঁথা সেলাই করে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করে মা ও মেয়ে। যে কোনো অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে জীবন বাজি রাখার দৃঢ় প্রত্যয় বকুল ও পারুলের চালচলনে।

ক) মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পিতৃপ্রদত্ত নাম কী?
খ) “নিজেকে তার ছ্যাচড়া, নোংরা, নর্দমার মতো লাগে।”— কার, কেন?
গ) উদ্দীপকের পারুলের সাথে ‘মাসি-পিসি’ গল্পের আহ্লাদির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের বৈপরীত্য দেখাও।
ঘ) “উদ্দীপকটি অধিকাংশ ক্ষেত্রে ‘মাসি-পিসি’ গল্পের বক্তব্যকে ধারণ করে।”—তোমার মতামত দাও।

সৃজনশীল ০৬: পরম মমতা আর ইন্দ্রিয়ানুভূতির লালিত্যই রমণীকুলের আভিজাত্যবোধের পরিচায়ক। রমণীয় মাতৃসুলভ আচরণ মাতৃহীনদের মায়ের অভাব পূরণ করতে পারে, পারে তার বোধশক্তির উন্মেষ ঘটাতে। সুতপা ও সুবর্ণা দুজন মিলে গ্রামে তৈরি করেছে অনাথ শিশু ও স্বামী পরিত্যক্তা স্ত্রীদের জন্য সেবাশ্রম। নারীর এই মাতৃসুলভ আচরণ চিরকাল প্রশংসা পেয়ে আসছে।

ক) মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পিতৃপ্রদত্ত নাম কী?
খ) মাসি-পিসির সারা রাত জেগে থাকতে চাওয়ার কারণ কী?
গ) উদ্দীপকের দুই নারী আর মাসি-পিসির মধ্যে সাদৃশ্য-বৈসাদৃশ্য নিরূপণ কর।
ঘ) নারীর মাতৃসূলভ আচরণ কেন প্রশংসার যোগ্য, তা উদ্দীপক ও ‘মাসি-পিসি’ গল্পের আলোকে বিশ্লেষণ কর।

সৃজনশীল ০৭: চাঁদের আলোয় শরীর ডুবিয়ে গোলাপ ফুলের মতো দাম্পত্য জীবন হবে ভাবত যে মেয়েটা, বিয়ের পর কেরোসিনের আগুনে প্রাণ দিতে হলো তাকে। সুমি, যার চঞ্চলতা দেখে আকৃষ্ট হয় ইমরান। দুঃখের বিষয়, বিয়ের পর ইমরান জানতে পারে সুমির বাবার অর্থ-সম্পদ নেই বললেই চলে, তখন থেকেই সে সুমির উপর পশুর মতো আচরণ শুরু করে। অ্যাসিড ঢেলে স্ত্রীর মুখ ঝলসে দেয় এবং চিকিৎসার জন্য লক্ষাধিক টাকা আনে শ্বশুরবাড়ি থেকে। দ্বিতীয়বার টাকা চেয়ে না পেয়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় সুমির সমস্ত শরীরে।

ক) আহ্লাদির স্বামীর নাম কী?
খ) ‘কাঁথা-কম্বলটা চুবিয়ে রাখি জলে’- ব্যাখ্যা কর।
গ) আহ্লাদি এবং সুমি চরিত্রের পরিণতির কারণ ‘মাসি-পিসি’ গল্পের আলোকে বর্ণনা কর।
ঘ)‘সুমির মতো চরিত্রদের বাঁচিয়ে রাখার অনুপ্রেরণা ‘মাসি-পিসি’ চরিত্র।- উক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ কর।

সৃজনশীল ০৮: মকবুল হাতের ব্যথায় মৃদু কাতরাচ্ছিল আর পিটপিট চোখে তাকাচ্ছিল ওদের দিকে। হঠাৎ দাওয়া থেকে ছুটে এসে মুহূর্তে হালিমার চুলের গোছাটা ধরল আবুল। তারপর কোনো চিন্তা না করে সজোরে একটা লাথি বসিয়ে দিল ওর তলপেটে। উঃ মাগো বলে পেটটা দুহাতে চেপে ধরে মাটিতে বসে পড়ল হালিমা। রাগে তখন ফোপাচ্ছে আবুল। জানে খতম কইরা দিমু না তোরে, কাইট্টা নদীতে ভাসাইয়া দিমু না বলে আবার ওর চুলের গোছাতে হাত দিতে যাচ্ছিল আবুল। বুড়ো মকবুল চিৎকার দিয়ে উঠল, খবরদার আবুইল্যা, তুই যদি বউয়ের গায়ে আরেকবার হাত তুলছস তাহলে ভালো অইব না কিন্তুক।

ক) আহ্লাদির স্বামীর নাম কী?
খ) মাসি-পিসি আহ্লাদিকে শ্বশুরবাড়িতে পাঠাতে চান না কেন?
গ) উদ্দীপকের আবুল ‘মাসি-পিসি’ গল্পের কোন চরিত্রের প্রতিচ্ছবি? ব্যাখ্যা কর।
ঘ) ‘মাসি-পিসি’ গল্পের মাসি-পিসির চরিত্রের বৈশিষ্ট্যই যেন উদ্দীপকের মকবুলের মধ্যে প্রতিফলিত হয়েছে- মূল্যায়ন কর।

সৃজনশীল ০৯: হালের বলদ কেনার জন্য গ্রাম্য মহাজন জোয়াদ্দারের নিকট থেকে ৫,০০০ টাকা নিয়েছিলেন ওসমান। টাকা নেওয়ার সময় সাদা কাগজে তার সই নিয়েছিল মহাজন। পরে ফসল উঠলে ওসমান সুদসহ টাকা ফেরত দেয়। কিন্তু মহাজন ১০,০০০ টাকা দিয়েছিল বলে দাবি করে। একদিন রাতে মহাজনের লোকজন ওসমানের হালের বলদ নিতে আসে। বাধ্য হয়ে ওসমান চিৎকার শুরু করে। প্রতিবেশীরা এগিয়ে এলে মহাজনের লোকজন পালিয়ে যায়।

ক) খুঁটির সাথে আহ্লাদিকে বেঁধে রাখত কে?
খ) ‘কলকেপোড়া ছ্যাকা’ দ্বারা ‘মাসি-পিসি’ গল্পে কী বোঝানো হয়েছে?
গ) উদ্দীপকের ঘটনাটি ‘মাসি-পিসি’ গল্পের কোন ঘটনাকে স্মরণ করিয়ে দেয়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ) সম্মিলিত শক্তি বড় যে কোনো অপশক্তিকে প্রতিহত করতে পারে—উদ্দীপক ও গল্পের আলোকে উক্তিটির যথার্থতা বিশ্লেষণ কর।


আশাকরি আমাদের আজকের আর্টিকেল টি আপনাদের ভালো লেগেছে। শিক্ষা, পাঠ্যপুস্তক, গল্পের বই সহ যে কোন পিডিএফ ডাউনলোড করতে আমাদের সাথেই থাকুন। আমাদের যে কোন আপডেট মিস করতে না চাইলে ফেসবুক ও ইউটিউবে সাবক্রাইব করে আমাদেস দাথে কানেক্ট থাকতে পারেন। ভালো থাকবেন সবাই, ধন্যবাদ।