বিশেষ্য পদের সংজ্ঞা ও শ্রেণিবিভাগ

বিশেষ্য পদের সংজ্ঞা ও শ্রেণিবিভাগ

কোনাে ব্যক্তি, স্থান, দ্রব্যসামগ্রী, গুণ বা অবস্থার নাম বিশেষ্য শব্দশ্রেণির মধ্যে পড়ে। যেমন : নজরুল, ঢাকা, চট্টগ্রাম, দয়া, হাসি। এছাড়া যাতে -র/-এর বা গুলি/-গুলাে বিভক্তি বা প্রত্যয় যুক্ত হয় এবং যা কর্তা/উদ্দেশ্য বা কর্ম হিসাবে বাক্যে ব্যবহৃত হতে পারে তা-ই বিশেষ্য। বাংলায় সংস্কৃত শব্দঋণ ও তদ্ভব অংশে কেবল বিশেষ্য শব্দেরই স্ত্রীলিঙ্গ রূপ পাওয়া যায়।

সংজ্ঞা বা নামবাচক বিশেষ্য (proper noun)

যে বিশেষ্য বিশেষ ব্যক্তি, থান, দেশ, শিল্পকর্ম, পত্রিকা, বই, মাস, দিন ইত্যাদির সুনির্দিষ্ট নাম বােঝায় তাকে সংজ্ঞাবাচক বিশেষ্য বলে। যেমন : রবীন্দ্রনাথ, বাংলাদেশ, পদ্মা, বৈশাখ, শনিবার ইত্যাদি।

সাধারণ বিশেষ্য

এ জাতীয় বিশেষ্য বিশেষ বা নির্দিষ্ট কোনাে ব্যক্তি, স্থান বা জিনিষের নাম না বুঝিয়ে সাধারণ ও সামগ্রিকভাবে ওই শ্রেণিকে বােঝায়। এই জাতীয় বিশেষ্য অর্থের দিকে থেকে সংজ্ঞাবাচক বিশেষ্যের বিপরীত। যেমন : ‘মানুষ’ সাধারণ বিশেষ্য, কিন্তু ‘নজরুল’ সংজ্ঞাবাচক বিশেষ্য। এরকম-নদী, পর্বত, গাছ, পাখি ইত্যাদি সাধারণ বিশেষ্য।

সাধারণ বিশেষ্যকে (ক) ইন্দ্রিয়গ্রাহ্যতা, (খ) গণনযােগ্যতা, (গ) সজীবতা, (ঘ) অন্য শব্দশ্রেণিজাত বিশেষ্য হিসেবে ভাগ করা যায়। যেমন :

ইন্দ্রিয়গ্রাহ্যতা অনুসারে সাধারণ বিশেষ্যকে দু ভাগে ভাগ করা যায়। যথা : (i) মূর্ত বিশেষ্য । এ জাতীয় বিশেষ্য এমন ব্যক্তি বা বস্তুর নাম বােঝায় যা দেখা যায়, স্পর্শ করা যায়, ঘ্রাণ নেওয়া যায়, পরিমাপ করা যায়। যেমন : পানি, গােলাপ, হাত ইত্যাদি। (ii) ভাব বিশেষ্য : নির্বক অবস্থা, মনােগত ভাব বা গুণগত তৈশিষ্ট্য ইত্যাদির নাম বােঝায়। যেমন- আনন্দ, দুঃখ, ইচ্ছা, রাগ, সন্দেহ, সাহস ইত্যাদি।

গণনযােগ্যতা অনুসারে সাধারণ বিশেষ্যকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন : (i) গণন বিশেষ্য । সংখ্যা দিয়ে গণন করা যায় এবং এগুলাের বহুবচন হয়। যেমন : দিন (তিন দিন বা চার দিন), শিক্ষক (শিক্ষকবৃন্দ) ইত্যাদি। (ii) পরিমাণ বিশেষ্য ; যা শুধু পরিমাপ করা যায়; সংখ্যা দিয়ে গণনা করা যায় না। যেমন : চাল, ডাল, চিনি, তেল ইত্যাদি। (iii) সমষ্টি বিশেষ্য : কোনাে দল বা গােষ্ঠীর একক বা সমষ্টি বােঝায়। যেমন- শ্রেণি, দল, গুচ্ছ, জনতা, বাহিনী, সমাজ, সভা, সমিতি ইত্যাদি।

সজীবতা অনুসারে সাধারণ বিশেষ্যকে দু ভাগে ভাগ করা যায়। যথা : (i) সজীব (animate) বিশেষ্য : জীবন্ত বা সক্রিয় সত্তার সাধারণ শ্রেণিকে বােঝায়। (ii) অজীব (inanimate) বিশেষ্য : জীবন্ত নয় এবং নিজে চলাফেরা করতে পারে না। ধারণাযােগ্য ও ইন্দ্রিগ্রাহ্য এমন কিছু সাধারণ নামকে বােঝায়। যেমন- আকাশ, ঘর, পানি পাথর, বই ইত্যাদি।

অন্য শব্দশ্রেণিজাত সাধারণ বিশেষ্যকে দু ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। যেমন (i) ক্রিয়াবিশেষ্য (verbal noun) (ভাববাচক) : ক্রিয়া বা কাজের নাম বােঝায়। যেমন- করা, দেখা, বলা, খাওয়া, যাওয়া, পঠন, ভােজন ইত্যাদি। (ii) বিশেষণজাত (গুণবাচক বিশেষ্য : ধীরতা, পটুত্ব, শৌখিনতা, নষ্টামি ইত্যাদি।

বাক্যে বিশেষ্যের ব্যবহার

বিশেষ্য পদ বাক্যে কর্তা, কর্ম বা কর্তার পরিপূরক (complement) হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যেমন : রহিম (কর্তা) ভাত খাচ্ছে। আমি রহিমকে (কর্ম) চিনি ইত্যাদি।

প্রয়ােগে এক শ্রেণির বিশেষ্য অন্য শ্রেণিতে ব্যবহৃত হতে পারে। যেমন-

প্রথম উদাহরণ—রবীন্দ্রনাথ তাে আর দুটো হয় না। এই বাক্যে সংজ্ঞাবাচক ‘রবীন্দ্রনাথ’ পদটি রবীন্দ্রনাথের মতাে কবি’ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে বলে এটি আর সংজ্ঞাবাচক বিশেষ্য নয়, এটি হয়ে গেছে সাধারণ (জাতিবাচক) বিশেষ্য।

দ্বিতীয় উদাহরণ— তার ভিতরের মানুষটি জেগে উঠল। এই বাক্যে ‘মানুষ’ সাধারণ (জাতিবাচক) বিশেষ্য পদটি “মনুষ্যত্ব’ অর্থে ব্যবহূত হয়েছে বলে এটি আর সাধারণ (জাতিবাচক বিশেষ্য থাকল না, এটি এখন হয়ে উঠেছে বিশেষণজাত (গুণবাচক বিশেষ্য।

বিশেষণজাত (গুণবাচক) বিশেষ্য ও ক্রিয়াবাচক (ভাববাচক) বিশেষ্য পদের ব্যবহার

গুণবাচক ও ভাববাচক বিশেষ্যকে বাক্যে ব্যবহার করার সময় সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। কোনাে বিশেষণ পদকে বাক্যের কর্তা বা কর্ম হিসেবে ব্যবহার করা যায় না, সে ক্ষেত্রে বিশেষণের বিশেষ্য-রূপটিকে (গুণবাচক) ব্যবহার। করতে হয়। যেমন : তার ‘সৎ’ আমাদের মুগ্ধ করল— বাক্যটি সঠিক নয়। এখানে মুগ্ধ করা ক্রিয়াটির কর্তা হল ‘সৎ’। সুতরাং সৎ’ এর বিশেষ্যরূপ ‘সততা’ ব্যবহৃত হবে। সুতরাং সঠিক বাক্যটি হবে । তার সততা আমাদের মুগ্ধ করল।

বিশেষণজাত (গুণবাচক) বিশেষ্য পদের ব্যাপারটা বােঝার চেষ্টা করা যাক

গুণবাচক বিশেষ্য যেমন বিশেষ্যের দোষ বা গুণ প্রকাশ করে তেমনি বিশেষণও বিশেষ্যের দোষ-গুণ প্রকাশ করে; তাহলে উভয়ের মধ্যে পার্থক্যটা কোথায়? উভয়ের দুটি উদাহরণ লক্ষ করা যাক— গুণবাচক বিশেষ্য: সততা একটি মহৎ গুণ। গুনবাচক বিশেষণ: করিম সৎ তাই সে মহৎ।

প্রথম বাক্যে সততা হলাে সৎ ব্যক্তির গুণ অর্থাৎ যাদের মধ্যে সৎ গুণ রয়েছে তারাই ‘সততা’র অন্তর্ভুক্ত। তাহলে ‘সততা একটি বিশেষ গুণের নামকেই প্রকাশ করছে, সুতরাং ‘সততা’ শব্দটি গুণবাচক বিশেষ্য হবে। অপর পক্ষে দ্বিতীয় বাক্যটিতে ‘করিম সম্পর্কে গুণ প্রকাশ করা হয়েছে, তাই ‘করিম হল বিশেষ্য অর্থাৎ নাম। বিশেষ্য সম্পর্কে যদি গুণ প্রকাশ করা হয় তবে তা হবে বিশেষণ।

তাহলে দেখা যায় যে, বিশেষণ পদগুলাে যখন গুণবাচক বিশেষ্যে পরিবর্তিত হয় তখন তাদের সঙ্গে কতকগুলাে ধ্বনি বা ধ্বনিসমষ্টি যােগ হয়। যেমন— য (্য), তা, মি, ত্ব, পনা ইত্যাদি। যেমন : তরুণ–তারুণ্য, সৎ—সততা, ঘনঘনত্ব, ছেলে–ছেলেমি, দুরন্ত—দুরন্তপনা ইত্যাদি।

বিশেষ্য পদ ও কারক: বিশেষ্য বা সর্বনাম পদের সঙ্গে ক্রিয়াপদের সম্পর্কটাই হলাে কারক। সুতরাং পুরাে ‘কারক’ অধ্যায়টি আয়ত্ত করার জন্যে বিভিন্ন প্রকার বিভক্তিযুক্ত বিশেষ্য পদের রূপ এবং অবস্থান (বাক্যে) সম্বন্ধে ভাল জ্ঞান থাকা চাই। সংশ্লিষ্ট অধ্যায়ে এ ব্যাপারে আলােচনা করা হয়েছে।

About মেরাজুল ইসলাম

আমি মেরাজুল ইসলাম, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী পাশাপাশি একজন ব্লগার। এডুকেশন এর প্রতি ভালোবাসাও অনলাইল শিক্ষার পরিসর বাড়ানোর জন্য এডুকেশন ব্লগের পথচলা। ব্লগিং এর পাশাপাশি আমি ওয়েবসাইট ডিজাইন, কন্টেন্ট রাইটিং, কাস্টমাইজ সহ ওয়েব রিলেটেড সকল কাজ করি।

View all posts by মেরাজুল ইসলাম →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *