মোবাইল ফ্রিল্যান্সিং এর ১০ টি জনপ্রিয় সেক্টর

মোবাইল ফ্রিল্যান্সিং এর ১০ টি জনপ্রিয় সেক্টর

অনলাইনে বসে বিভিন্ন কাজ করে যারা নিজেদের ক্যারিয়ারকে গড়ে তুলেছেন, তাদেরই ফ্রিল্যান্সার বলে। আর এ ধরনের কাজকেই ফ্রিল্যান্সিং বলে। পিডিএফ মেলার আজকের আর্টিকেলে মোবাইল ফ্রিল্যান্সিং এর ১০ টি জনপ্রিয় সেক্টর সম্পর্কে আলোচনা করা হবে। কথা না বাড়িয়ে তাহলে চলুন শুরু করি।

মোবাইল দিয়ে কি ফ্রিল্যান্সিং করা যায়?

ফ্রিল্যান্সিং একটি বিশাল সেক্টর, এখানে রয়েছে অনেক ধরনের কাজ। এর মধ্যে কিছু কিছু কাজ রয়েছে যা আপনারা খুব সহজেই আপনাদের স্মার্টফোন ব্যবহার করে করতে পারবেন। বর্তমানে অনেকে মোবাইল দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করে বেশ ভালো পরিমাণ উপার্জন করতেছে। এক কথায় বলতে গেলে মোবাইল দিয়েও ফ্রিল্যান্সিং সম্ভব। শুধুমাত্র আপনার কাজের প্রতি আগ্রহ ও ভালোবাসা থাকতে হবে। ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।

মোবাইল ফ্রিল্যান্সিং এর ১০ টি জনপ্রিয় সেক্টর

১। টান্সলেশন এন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ (Translate and language)

টান্সলেশন এন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ খুব সহজেই মোবাইলের মাধ্যমে করা যায়। টান্সলেশন এন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ (Translate and language) এর কাজ যদি আপনি করতে চান, তাহলে অবশ্যই আপনাকে অনেকগুলো ভাষা জানতে হবে।  আপনি যদি শুধু বাংলা জানেন তাহলে এই কাজটি ঠিক ভাবে করতে পারবনে না। 

মোবাইল ফ্রিল্যান্সিং এর ১০ টি জনপ্রিয় সেক্টরটান্সলেশন হচ্ছে, আপনাকে একটা ভাষা থেকে অন্য ভাষায় টান্সলেট করতে হবে। উদাহরণ স্বরুপ, ইংলিশ টু বাংলা, হিন্দি টু বাংলা, হিন্দি টু ইংলিশ ইত্যাদি। অর্থাৎ, ক্লায়েন্ট আপনাকে যে ভাষায় ট্রান্সলেট করতে বলবে আপনাকে ঠিক সেই ভাষাতেই ট্রান্সলেট করে দিতে হবে। 

যেহেতু ভাষা ট্রান্সলেট যে কোনো ডিভাইস দিয়েই করা যায়। তাই এই কাজটি করে আপনারা মোবাইলের মাধ্যমে ফ্রিলান্সিং খুব সহজেই করতে পারেন। এগুলোর জন্য আপনাকে অবশ্যই ইংলিশ জানতে হবে এবং অন্য আরও ২-১ টি ভাষা জানতে হবে।

২। টান্সক্রিপশন (Transcription) – মোবাইলের মাধ্যমে ফ্রিলান্সিং

টান্সক্রিপশন (Transcription)  এটা মুলত টান্সলেটর কাজটার মতোই। Transcription এবং Translate এর মঝে একটু পার্থক্য রয়েছে। যেমন; কোনো একটি ভাষা থেকে অন্য ভাষায় অনুবাদ করে লিখে দেওয়া হচ্ছে Translate। অন্য দিকে, Transcription হচ্ছে ভয়েস বা অডিও শুনে শুনে লিখা। অর্থাৎ বায়ার আপনাকে একটি অডিও ফাইল দিবে আপনি সেটি টেক্স এ রুপান্তর করে দিবেন। এটিই মুলত ট্রান্সলেটরের কাজ।

টান্সক্রিপশন এ বায়ার সেলার কে তার অডিও ফাইল দিবে এবং এরপর সেলার সেটা শুনে টেক্সট ফাইলে রুপান্তর করবে। এই কাজটি ও খুব সহজে মোবাইল দিয়ে করতে পারবেন এবং এর জন্যেও আপনাকে অনেক ভাষা জানতে হবে। 

৩। ভার্চুয়াল এসিস্টেন্ট (Virtual Assistant)

Virtual Assistant অর্থাৎ ভার্চুয়াল সহকারি। অর্থাৎ, ভার্চুয়ালি ক্লায়েন্ট এর কাজে সহযোগিতা করা বা ক্লায়েন্ট এর কাজ করে দেওয়া। 

মোবাইল ফ্রিল্যান্সিং এর ১০ টি জনপ্রিয় সেক্টরভার্চুয়াল এসিস্টেন্ট কাজের নির্দিষ্ট কোনো সীমারেখা নেই। মুলত ক্লায়েন্ট যে কাজের কথা বলবে সেটিই করতে হবে। তবে ভার্চুয়াল এসিস্টেন্টদের ক্লায়েন্টরা কঠিন কোনো কাজ দেয় না। বাহিরের দেশের বড় বড় কোম্পানীর যে মালিকরা রয়েছেন তাদের সামাজিক মাধ্যম গুলো যেমন, লিংকডিন, টুইটার, ফেইজবুক ইত্যাদি পোফাইল বা প্রেইজ গুলো নিয়ন্ত্রণ করা বা ওয়েবসাইটের সেলস কনভারসেশন ম্যানেজ করাই মুলত Virtual Assistant এর কাজ। 

৪। আর্টিকেল রাইটিং – মোবাইলের মাধ্যমে ফ্রিলান্সিং

মোবাইলের মাধ্যমে ফ্রিলান্সিং করার জন্য একটি সেরা কাজ হল আর্টিকেল রাইটিং (Article writing) এর কাজ। বর্তমানে অধিকাংশ ব্লগার বা কোম্পানি তাদের ওয়েবসাইটের জন্য প্রফেশনাল রাইটার হায়ার করে করে বা পার আর্টিকেল ভিত্তিক পেমেন্ট করে থাকে।

মোবাইল ফ্রিল্যান্সিং এর ১০ টি জনপ্রিয় সেক্টর আপনার যদি কন্টেন্ট রাইটিং সম্পর্কে অভিজ্ঞতা থাকে বা কন্টেন্ট রাইটিং এ আগ্রহ থাকে তাহলে আপনি আর্টিকেল রাইটিং করে বেশ ভালো উপার্জন করতে পারবেন। ফাইবার, আপওয়ার্ক সহ জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং মার্কেট গুলোতে আর্টিকেল রাইটিং এর বেশ চাহিদা রয়েছে। 

মোবাইল দিয়ে আর্টিকেল রাইটিং করার জনপ্রিয় কিছু অ্যাপস: 

  • Google Dose
  • WPS office
  • Microsoft office word
  • Free Article writing full course

৫। আর্টিকেল রি-রাইটিং (Article Re-Writing job)

আর্টিকেল রাইটিং এবং রি-রাইটিং এ দুটি মুলত দুই জিনিস। রাইটিং টা হচ্ছে আপনাকে কোনো একটা আর্টিকেল লিখতে হবে। আর রি-রাইটিং হচ্ছে, আপনাকে কোনো একটা আর্টিকেল রি-রাইট করে দিতে হবে। মানে কোনো একটা আর্টিকেল বায়ার আপনাকে দিবে আপনি সেটা রি-রাইট করে দিবেন বা বায়ার আপনাকে যে টপিক গুলো এড বা মডিফাই করতে বলবে সেগুলো পরিবর্তন করে দিবেন। 

৬। ফোরাম পোস্টিং – মোবাইলের মাধ্যমে ফ্রিলান্সিং

মোবাইলের মাধ্যমে ফ্রিলান্সিং করার জন্য আরও একটি সেরা কাজ হল ফোরাম পোষ্টিং। ফোরাম পোস্টিং এর কাজটি হল, আপনাকে ক্লায়েট কিছু ফোরামের লিস্ট দিবেন। অথবা বায়ার আপনাকে তার মার্কেটিং টপিক এর একটি কিওয়ার্ট দিবে। সেই কিওয়ার্ট থেকে আপনাকে লিস্ট খুজে বের করতে হবে। এবং প্রতিটি ফোরামে গিয়ে গিয়ে পোষ্ট কমেন্ট করতে হবে।  

উদাহরণ স্বরুপ,  আমার একটি মেডিসিন আছে এবং এই মেডিসিন টি প্রমোট করতে চাচ্ছি বিভিন্ন ফোরামে। এর জন্য মেডিক্যাল রিলেটেট যত ধরনের ফোরাম রয়েছে সব গুলো ফরামের আমি একটা লিস্ট করব। এবং সেখানে গিয়ে গিয়ে আমি মেডিসিন এর বিবরণ লিখে পোষ্ট করব, কমেন্ট করব। পোষ্ট কমেন্ট করার সময় মেডিসিন কিনার জন্য একটি লিংক দিয়ে দিব (যদি থাকে)। 

৭। কাস্টোমার সাপোর্ট – মোবাইলের মাধ্যমে ফ্রিলান্সিং

কোন একটা কোম্পানি বা ইন্ডাস্ট্রি যখন কোনো অফার প্রমোট করে। তখন কাস্টোমারের ঐ অফার নিয়ে অনেক প্রশ্ন করেন। তাদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার কাজটি ই হল কাস্টোমার সাপোর্ট জব। 

আপনি যে কোম্পানীর কাজ নিবেন ঐ কোম্পানি আপনাকে একটি ভার্চুয়াল নাম্বার দিবে। যখন কাস্টোমাররা ফোন করবে কোন ঐ নাম্বারে। আপনি তাদের কোম্পানির কাস্টোমার দের সাথে ফোনে কথা বলবেন, মেসেজিং করবেন। তাদের সমস্যার সমাধান দিবেন ইত্যাদি কাজ । তবে এই কাজ গুলো করতে হলে আপনাকে স্পোকিং ইংলিশ এ ভালো হতে হবে এবং এর পাশাপাশি আপনার ভয়েস সুন্দর হতে হবে। 

ঘরে বসে নিজের স্মার্ট ফোন ব্যবহার করে খুব সহজেই এই কাজ টি করতে পারবেন। বিশেষ করে মেয়েদের জন্য এই কাজ টি পারফেক্ট। 

৮। সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং

এটি মোবাইলের মাধ্যমে ফ্রিলান্সিং করার সবচেয়ে সহজ ফ্রিল্যান্স কাজ। সোশ্যার মিডিয়া মার্কেটিং বলতে বুঝানো হয় কোনো একটি প্রোডাক্ট বিভিন্ন সোশ্যাল সাইট যেমন, ফেসবুক, টুইটার, লিংকডিন, ইন্সট্রাগ্রাম ইত্যাদি সোশাল সাইট গুলোতে প্রমোট করা।  

বিভিন্ন কোম্পানি বা দোকানের পেইজগুলোতে আপনি মোডেরেটর হিসেবে কাজ করতে পারেন। সেক্ষেত্রে আপনার কাজ হলো সেই পেইজ/ একাউন্ট থেকে নিয়মিত তাদের প্রডাক্ট সম্পর্কে পোস্ট করা। সেই সাথে গ্রাহক দের কমেন্টের রিপ্লাই দেওয়া ও মেসেজের উত্তর দেয়া। আর এই কাজটি আপনি আপনার মোবাইল দিয়েই করতে পারবেন খুব সহজে।

৯। ওয়েব ডিজাইন – মোবাইলের মাধ্যমে ফ্রিলান্সিং

ওয়েব ডিজাইন শেখার ব্যসিক হলো HTML এবং CSS. যা আপনি মোবাইল দিয়ে খুব সহজে ওয়েভ ডিজাইন শিখতে পারবেন। এবং ছোটখাটো কাজ ও করতে পারেন। কিন্ত আপনি যখন এডভান্স লেভেলের ল্যাঙ্গুয়েজ শেখার কথা চিন্তা করবেন তখন অবশ্যই আপনার কম্পিউটার বা ল্যাপটপ প্রয়োজন হবে। 

১০। গ্রাফিক্স ডিজাইন (Graphics Design)

মোবাইল দিয়ে যদিও গ্রাফিক্স ডিজাইন কাজ করা সম্ভব না। তবে, বর্তমানে এমন কিছু মোবাইল অ্যাপস পাওয়া যায় যেগুলোর মাধ্যমে আপনি মোটামোটি লেভেলের ইমেজ, লোগো ডিজাইন করতে পারবেন। এই সকল অ্যাপস গুলো ব্যবহার করা খুবই সোজা। আপনি দুই একবার দেখলে পারবেন। এই সকল অ্যাপের মাধ্যমে ডিজাইন করা লোগো, ব্যানার ও ফটো গুলো অনলাইনের বিভিন্ন মার্কেটপ্লেসে বিক্রিয় করতে পারবেন এবং টাকা আয় করতে পারবেন। 

মোবাইলে গ্রাফিক্স ডিজাইন করা যায় এমন কয়েকটি অ্যাপস: 

  • Adobe Illustrator Draw
  • Adobe Spark
  • Canva
  • Autodesk Sketchbook Pro
  • Adobe Photoshop
  • Pixellab
  • Picsart 

এর পাশাপাশিও মোবাইল ফ্রিল্যান্সিং এর বেশ কিছু জনপ্রিয় সেক্টর রয়েছে, আর্টিকেলটি অনেক বড় হয়ে গেছে তাই শুধুমাত্র ১০ টি সেক্টর সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। আশাকরি মোবাইল ফ্রিল্যান্সিং এর ১০ টি জনপ্রিয় সেক্টর নিয়ে লেখা আজকের আর্টিকেল টি আপনাদের ভালো লেগেছে। আমাদের সাথেই থাকুন ধন্যবাদ।