পদ্মা সেতু রচনা pdf

পদ্মা সেতু রচনা pdf

পদ্মা সেতু রচনা pdf: পদ্মাসেতু প্রকল্পের কার্যক্রম বাংলাদেশ সরকারের একটা অভূতপূর্ব সাফল্য নয়, এটি একটি বিরাট বিজয়। আসসালামু আলাইকুম, কেমন আছেন সবাই? আশাকরি সবাই ভালো আছেন। আজকের আর্টিকেলে পদ্মা সেতু রচনা pdf শেয়ার করা হবে। কথা না বাড়িয়ে তাহলে চলুন শুরু করি।


পদ্মা সেতু রচনা pdf

পদ্মাসেতু আর আমাদের স্বপ্ন নয় বরং বাস্তব এবং পদ্মা সেতু এখন দৃশ্যমান। পদ্মাসেতু নির্মাণের জন্য পদ্মার দুপাড়ে শুরু হয়েছে এক মহাকর্মযজ্ঞ। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ২০২২ সালেই এই সেতুর উপর দিয়ে গাড়ি ও রেল চলবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই সেতুর কার্যক্রম শেষ হলে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হবে এবং সাথে সাথে দেশের অর্থনীতির উন্নয়নের গতিও ত্বরান্বিত হবে।

ভৌগোলিক প্রেক্ষাপটে পদ্মা সেতুর গুরুত্ব

বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। এদেশের বুক চিরে বয়ে চলেছে অসংখ্য নদনদী। তাই যাতায়াত ব্যবস্থায় আমাদের প্রতিনিয়তই নৌপথের আশ্রয় নিতে হয়। এতে যোগাযোগ ব্যবস্থায় দীর্ঘসূত্রতা ও মন্থর গতি পরিলক্ষিত হয়। এই যাতায়াত ব্যবস্থাকে গতিশীল করার জন্য প্রয়োজন হয় সেতুর। সেতু থাকলে নদীর দুই পারের মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থার যেমন উন্নতি হয়, তেমনি ব্যবসায়-বাণিজ্য ভালো হওয়ায় মানুষের জীবনমানেরও উন্নয়ন ঘটে। তাই এক কথায় এই পদ্মা সেতুর ভূমিকা অপরিহার্য।

পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রেক্ষাপট

দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন এই পদ্মা সেতু। এজন্য এই অঞ্চলের মানুষ স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সরকারের কাছে তাদের দাবি বাস্তবায়নের কথা জানিয়ে এসেছে। অবশেষে এই সেতুর সম্ভাবনার কথা বিবেচনায় এনে ১৯৯৮ সালে প্রথম সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সমীক্ষা যাচাইয়ের পর ২০০১ সালে এই সেতুর ভিত্তিপ্রস্তরও স্থাপন করা হয়। কিন্তু অর্থের জোগান না হওয়ায় সেতুর ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে। পরবর্তীকালে পদ্মা সেতু প্রকল্পের যাত্রা শুরু হয় ২০০৭ সালে। পরে ২০১১ সালে আওয়ামী লীগ সরকার এই সেতুতে রেলপথ যুক্ত করে। ২৩ জুন, ২০২২ তারিখ এর নির্মান কাজ শেষ হয় এবং ২৫ জুন, ২০২২ তারিখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সেতুর শুভ উদ্ভোদন করেন।

পদ্মা সেতু নির্মাণে প্রতিবন্ধকতা ও বাংলাদেশের সক্ষমতা

স্বাধীনতা-উত্তর পদ্মা বাংলাদেশে সেতু সবচেয়ে বড় প্রকল্প ছিল। বিভিন্ন সময় নানা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়েছে এই প্রকল্প। ২০০৯ সালের পর বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুতে অর্থায়নে আগ্রহ প্রকাশ করলে তাদের সাথে ১২০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি হয়। কিন্তু ২০১২ সালে ঋণচুক্তি বাতিল করে বিশ্বব্যাংক। যার ফলে অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে পদ্মা সেতু প্রকল্প। পরে সরকার নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেয়। ষড়যন্ত্রের বাধা জয় করে এগিয়ে চলে পদ্মা সেতুর কাজ। অবশেষে নিজস্ব অর্থায়নে দৃশ্যমান হয়েছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু।

পদ্মা সেতুর সর্বশেষ অবস্থা

২৫ জুন, ২০২২ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জন নেত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করেন। এবং ২৬ জুন সকাল ৬ টা থেকে পদ্মা সেতু যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। প্রথম দিন মোটরসাইকেল সহ সকল যানবাহন চলালের অনুমতি থাকলেও পরবর্তীতে পদ্মা সেতু তে মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ করা হয়।

ডিসেম্বর ২০২০ অনুযায়ী ৪১তম স্প্যানটি সেতুর ১২ ও ১৩ নম্বর খুঁটির (পিলার) ওপর বসানো হয়। পদ্মা সেতুর প্রথম স্প্যানটি খুঁটির ওপর বসেছিল ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর। সর্বশেষ স্টিলের কাঠামো (স্প্যান) বসানোর মাধ্যমে বহুল আলোচিত পদ্মা সেতুর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বড় কাজের সমাপ্তি হয়। পদ্মা সেতুটি হচ্ছে স্টিল ও কংক্রিটের মিশ্রণে। সেতুর মূল কাঠামোটা স্টিলের, যা স্প্যান হিসেবে পরিচিত। খুঁটি ও যানবাহন চলাচলের পথ কংক্রিটের।

প্রতিটি স্প্যানের দৈর্ঘ্য ১৫০ মিটার। ৪২টি খুঁটির সঙ্গে স্প্যানগুলো জোড়া দেওয়ার মাধ্যমে পুরো সেতু দৃশ্যমান হয়। পদ্মার মূল সেতু, অর্থাৎ নদীর অংশের দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। অবশ্য দুই পারে আরও প্রায় চার কিলোমিটার সেতু আগেই নির্মাণ হয়ে গেছে। এটাকে বলা হয় ভায়াডাক্ট । এর মধ্যে স্টিলের কোনো স্প্যান নেই। পদ্মা সেতু নির্মাণে প্রয়োজন হবে দুই হাজার ৯১৭টি রোডওয়ে স্ন্যাব। এ ছাড়া, দুই হাজার ৯৫৯টি রেলওয়ে স্ল্যাব বসানো হবে। মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে বসানো স্প্যানগুলোতে এসব স্ন্যাব বসানো হচ্ছে।

পদ্মা সেতুর সংক্ষিপ্ত বিবরণ: বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ

মূল সেতু : ৬.১৫ কি:মি: দৈৰ্ঘ্য
ঠিকাদার : চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন, চায়না।
চুক্তির মেয়াদ : ৪ বছর + ১ বছর (রক্ষণাবেক্ষণ)।
চুক্তি মূল্য : টাকা ১২,১৩৩.৩১ কোটি ।
চুক্তি স্বাক্ষরের তারিখ : জুন ১৭, ২০১৪।
কার্যাদেশ প্রদানের তারিখ : নভেম্বর ২৬, ২০১৪।
নদীশাসন কাজ (১৪ কি:মি: দৈর্ঘ্যে) :
ঠিকাদার : সিনোহাইড্রো কর্পোরেশন লিমিটেড, চায়না।
চুক্তির মেয়াদ : ৪ বছর + ১ বছর (রক্ষণাবেক্ষণ)।
চুক্তি মূল্য : টাকা ৮,৭০৭.৮১ কোটি।
চুক্তি স্বাক্ষরের তারিখ : নভেম্বর ১০, ২০১৪।
কার্যাদেশ প্রদানের তারিখ : ডিসেম্বর ৩১, ২০১৪।

বেড়েছে সেতুর নির্মাণ ব্যয়

সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে বলা হয়েছে যে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত দরের বিপরীতে সর্বনিম্ন দর প্রস্তাব করায় আন্তর্জাতিক পরামর্শ প্রতিষ্ঠান এবং কারিগরি মূল্যায়ন কমিটির অনুমোদন সাপেক্ষে চীনা প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেডকে মূল সেতু নির্মাণ কাজের জন্য নির্ধারিত করা হয়েছে। অনুমোদিত দরপত্র অনুযায়ী এখন মূল সেতু নির্মাণের ব্যয় দাড়াচ্ছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। ২০১০ সালে যখন ৮৩৬১ কোটি টাকা প্রাক্কালে ধরা হয়েছিল তারপর থেকে সময়ের সাথে সাথে নির্মাণ সামগ্রীর দাম বেড়েছে, ডলারের দাম বেড়েছে, ফলে বর্তমান নির্মাণ খরচ বেড়েছে।


🔆🔆 আরও দেখুন: রচনা – জাতীয় শোক দিবস
🔆🔆 আরও দেখুন: রচনা – অধ্যবসায়
🔆🔆 আরও দেখুন: রচনা – কৃষি কাজে বিজ্ঞান
🔆🔆 আরও দেখুন: রচনা – সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম


পদ্মা সেতুর অর্থনৈতিক গুরুত্ব

→ প্রকল্পের প্রাথমিক সুবিধা বলতে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ৪ কোটি মানুষের সুবিধার কথা বলা যায়। দেশের দক্ষিণাঞ্চল পুরোপুরি ফেরির উপর নির্ভরশীল যার জন্য মানুষ থেকে শুরু করে ট্রাক, বাস এবং অন্যান্য যানবাহনের ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় নষ্ট করতে হয়। যার পুরোটাই বাঁচানো যাবে এই সেতু নির্মিত হলে । তাছাড়া ফেরির জন্য নদীর তীর ধ্বংস থেকেও রক্ষা করবে এই সেতু।

→ যেহেতু এই সেতু সড়ক পথই শুধু নয় রেলপথও সংযুক্ত করবে তাই রাজধানীর সাথে দক্ষিণাঞ্চলের সার্বিক মালামাল পরিবহনে সুবিধা প্রদান করবে।

→ এ সেতুর মাধ্যমে টেলিযোগাযোগ, বিদ্যুৎ ও গ্যাস পরিবহন করে ঐসব অঞ্চলের জনগণের নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

→ ঢাকা এবং কলকাতার মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে দক্ষিণাঞ্চলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্প্রসারণে এ সেতু বৃহৎ ভূমিকা পালন করতে পারবে।

→ দেশের দক্ষিণাঞ্চলে মংলা পোর্টের কর্মদক্ষতা বাড়িয়ে আরও অধিকতর বাণিজ্যিক সুবিধা আনয়নে এ সেতু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

→ এ সেতু নির্মিত হলে পদ্মার অপর প্রান্তে অবস্থিত শরিয়তপুর- মাদারীপুরে বিভিন্ন শিল্প কারখানা গড়ে উঠবে। ফলে রাজধানী ঢাকার ওপর চাপ একটু কমবে, যানজট কিছুটা হলেও কমবে।

→ পদ্মা সেতু নির্মাণ হলে দেশের জিডিপি বৃদ্ধি পাবে। সমীক্ষায় বলা হয়েছে দেশের জিডিপি প্রায় ২ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

তাছাড়া দেশের সর্বস্তরের মানুষের সাথে যোগাযোগ স্থাপনে এ সেতু সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সবক্ষেত্রেই অসামান্য অবদান রাখবে।

উপসংহার

পদ্মাসেতু প্রকল্পের কার্যক্রম বাংলাদেশ সরকারের একটা অভূতপূর্ব সাফল্য নয়, এটি একটি বিরাট বিজয়।

পদ্মা সেতু বিশ্বের মধ্যে ১২২ তম অবস্থান করছে। তবে আমাদের পদ্মা সেতু সুইডেনের অল্যান্ড ব্রিজকে পেছনে ফেলে ১২২ তম অবস্থান নিয়েছে।

পদ্মা সেতুর মোট পিলারের সংখ্যা ৪২টি, স্প্যান ৪১টি।

পদ্মা সেতু বা পদ্মা বহুমুখী সেতুর মোট দৈর্ঘ্য ৬.১৫ কিলোমিটার (২০,১৮০ ফুট)।

পদ্মা সেতু নির্মাণে খরচ হয় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।

DOWNLOAD PDF

আশাকরছি তোমাদের ভালো লেগেছে। পদ্মা সেতু রচনা pdf টি ডাউনলোড করতে কোন সমস্যা হলে ফেসবুকে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। বিভিন্ন পরিক্ষার প্রশ্নোত্তর জানতে এখনি সাবক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল কে। ভালো থাকবেন সবাই, ধন্যবাদ।