krishi kaje biggan rochona

কৃষি কাজে বিজ্ঞান রচনা (JSC, SSC, HSC)

কৃষি কাজে বিজ্ঞান রচনা: বিজ্ঞান আজ অসম্ভবকে সম্ভব করেছে। উন্নত দেশগুলোতে বিজ্ঞানের সাহায্যে পাহাড় কেটে জঙ্গল পরিষ্কার করে বিভিন্নভাবে কৃষিজমি তৈরি করা হচ্ছে। ফসল আবাদের প্রতিটি পদক্ষেপে তারা বিজ্ঞানকে কাজে লাগাচ্ছে। এর ফলস্বরূপ তারা কৃষিক্ষেত্রে লাভ করছে বিরাট সাফল্য। কৃষিক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক পন্থা অবলম্বনের ক্ষেত্রে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি।

আসসালামু আলাইকুম, কেমন আছেন সবাই? আশাকরি সবাই ভালো আছেন। পিডিএফ মেলার আজকের আর্টিকেলে কৃষি কাজে বিজ্ঞান রচনা শেয়ার করা হবে। কথা না বাড়িয়ে তাহলে চলুন শুরু করি।


কৃষি কাজে বিজ্ঞান রচনা (JSC, SSC)

মানবজীবনে কৃষির গুরুত্ব: কৃষি মানুষের অস্তিত্বের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত। মানবজীবন ও মানবসমাজে এর গুরুত্ব অপরিসীম। জীবনযাত্রার ক্ষেত্রে এটি মানুষের আদিমতম জীবিকার উপায়। দেশে দেশে কৃষিই সমাজের মেরুদণ্ড, কৃষিই সমাজের ভিত্তি। স্বভাবতই কৃষির ক্রমোন্নতিতেই সমাজের ও দেশের সর্বাঙ্গীণ উন্নতি। এই উন্নতিতে অনন্য ও অভাবনীয় ভূমিকা রেখেছে বিজ্ঞান। আজকের বিশ্বে প্রতিটি ক্ষেত্রের মতো কৃষিক্ষেত্রেও বিজ্ঞানই আজ বাড়িয়ে দিয়েছে তার সুদূরপ্রসারী কল্যাণী হাত।

কৃষির আধুনিকায়নে বিজ্ঞান: আঠারো শতকের শেষদিকে এবং উনিশ শতকের গোড়ার দিকে শিল্পবিপ্লবের মাধ্যমে কৃষির আধুনিকায়নের সূচনা ঘটে। এর ফলে কৃষকেরা কৃষিক্ষেত্রে উন্নত ধরনের যন্ত্রপাতি ও কৃষিপদ্ধতির সাথে পরিচিত হয়। জন্তু আর কাঠের লাঙলের পরিবর্তে কৃষকদের হাতে আসে কলের লাঙল, ট্রাক্টর ও পাওয়ার টিলার। বিজ্ঞানের কল্যাণে উন্নত দেশগুলোতে জমিকর্ষণের পুরোনো পদ্ধতিগুলো লোপ পেয়েছে।

সেচব্যবস্থাতেও বিজ্ঞান অনেক পরিবর্তন এনেছে। কৃষকদের এখন ফসলের জন্যে প্রকৃতির মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হয় না। গভীর ও অগভীর নলকূপের সাহায্যে জমিতে পানিসেচের ব্যবস্থা করতে পারে। এ ক্ষেত্রে সেচের জন্যে ভূগর্ভস্থ পানি তুলতে ব্যবহৃত হচ্ছে বিদ্যুৎশক্তি চালিত পাম্প। অতিবৃষ্টিও আজ কৃষককে ভীত করছে না। বিজ্ঞানের বদৌলতে জমির অতিরিক্ত জল নিষ্কাশন আজ অত্যন্ত সহজ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে । বিজ্ঞানীরা এখন কৃত্রিম বৃষ্টিপাত ঘটিয়ে কৃষিক্ষেত্রে নতুন অকল্পনীয় অগ্রগতি অর্জন করেছেন।

উন্নতমানের বীজ উৎপাদনে বিজ্ঞান কৃষিক্ষেত্রে যে ভূমিকা রেখেছে তাও অভাবনীয়। বিশেষ করে কৃত্রিম উপায়ে উচ্চফলনশীল বীজ উৎপাদনে সাফল্য বিস্ময়কর। এসব বীজ সাধারণ বীজের তুলনায় ফসল উৎপাদনে তুলনামূলকভাবে সময়ও কম নেয়। সুতরাং বীজ নিয়ে কৃষকদের অতীতের অনিশ্চয়তা দূর করেছে বিজ্ঞান।

শক্তিশালী রাসায়নিক সার আবিষ্কৃত হওয়ায় ফসল উৎপাদনে এসেছে অভূতপূর্ব সাফল্য। সাম্প্রতিককালে বিশ্বের বৃষ্টিহীন শুষ্ক মরু অঞ্চলে চাষাবাদ শুরু করার প্রচেষ্টা চলছে বিজ্ঞানের সহায়তায়। সেদিন দূরে নয় যেদিন এ ক্ষেত্রেও বিজ্ঞানীরা সাফল্য অর্জন করবেন।

উন্নত বিশ্বের কৃষি: উন্নত দেশগুলোর কৃষিব্যবস্থা সম্পূর্ণ বিজ্ঞাননির্ভর। জমিতে বীজ বপন থেকে শুরু করে ঘরে ফসল তোলা পর্যন্ত সমস্ত কাজেই রয়েছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ছোঁয়া। বিভিন্ন ধরনের বৈজ্ঞানিক কৃষিযন্ত্র, যেমন : মোয়ার (শস্য-ছেদনকারী যন্ত্র), রপার (ফসল কাটার যন্ত্র), বাইন্ডার (ফসল বাঁধার যন্ত্র), থ্রেশিং মেশিন (মাড়াই যন্ত্র), ম্যানিউর স্প্রেডার (সার বিস্তারণ যন্ত্র) ইত্যাদি উন্নত দেশগুলোর কৃষিক্ষেত্রে এনেছে বৈপ্লবিক সাফল্য।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া প্রভৃতি দেশের খামারে একদিনে ১০০ একর পর্যন্ত জমি চাষ হচ্ছে কেবল এক-একটি ট্রাক্টরের মাধ্যমে। সেগুলো আবার একসাথে তিন- চারটি ফসল কাটার যন্ত্রকে একত্রে কাজে লাগাতে সক্ষম। তারা বিভিন্নভাবে কৃষিকাজের এমন অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করছে যার ফলে প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা সত্ত্বেও তারা কৃষিকাজে ব্যাপকভাবে অগ্রগামী। যেমন বলা যায় জাপানের কথা। জাপানে জমির উর্বরাশক্তি বাংলাদেশের তুলনায় এক-চতুর্থাংশ। কিন্তু বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে তারা এ দেশের তুলনায় ৬ গুণ বেশি ফসল উৎপাদন করছে।

কৃষি ও বাংলাদেশ: বাংলাদেশ একটি কৃষিনির্ভর দেশ। এ দেশের মাটি ও জলবায়ু বিশ্বের অন্য দেশগুলোর তুলনায় কৃষির অনুকূলে। কিন্তু উন্নত দেশগুলো যখন প্রতিকূল অবস্থা ঘুচিয়ে ফসল উৎপাদনের বৈজ্ঞানিক নেশায় মেতেছে, সেখানে বাংলাদেশের কৃষকেরা তার কাঠের লাঙল আর একজোড়া জীর্ণ-শীর্ণ বলদ নিয়ে চেয়ে আছে আকাশের পানে বৃষ্টির প্রতীক্ষায়। তবে ধীরে ধীরে এ অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশে জমি চাষের জন্য প্রায় ১ লক্ষ ইঞ্জিন চালিত চাষযন্ত্র ব্যবহৃত হচ্ছে।

এ ছাড়াও কৃষিকাজে ট্রাক্টর, সিডড্রিল (গতখনক), ধান-বুনন যন্ত্র, বিরিড্রাম সিডার, স্প্রেয়ার, উন্নত সেচ-পাম্প, ড্রায়াফ্রাম পাম্প, ট্রেডল পাম্প, রোয়ার পাম্প, শস্যকাটা যন্ত্র, ঘাসকাটা যন্ত্র, মাড়াই যন্ত্র ইত্যাদির ব্যবহার বাড়ছে। এ কথা অবশ্য সত্যি যে বাংলাদেশেও কৃষি নিয়ে গবেষণা হচ্ছে এবং বিভিন্ন ধরনের গবেষণায় সফলতা এসেছে। কিন্তু বাংলাদেশের শতকরা আশিভাগ কৃষক এখনও সনাতন পদ্ধতিতে কৃষিকাজ করে চলেছে। শিক্ষা, সচেতনতা, মূলধন, পুঁজি ইত্যাদির অভাবে তারা কৃষিকাজে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। তারা শ্রম দিচ্ছে কিন্তু উপযুক্ত ফসল পাচ্ছে না। কেননা তারা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কৃষিকাজ করতে পারছে না।

উপসংহার: বিজ্ঞান আজ অসম্ভবকে সম্ভব করেছে। উন্নত দেশগুলোতে বিজ্ঞানের সাহায্যে পাহাড় কেটে জঙ্গল পরিষ্কার করে বিভিন্নভাবে কৃষিজমি তৈরি করা হচ্ছে। ফসল আবাদের প্রতিটি পদক্ষেপে তারা বিজ্ঞানকে কাজে লাগাচ্ছে। এর ফলস্বরূপ তারা কৃষিক্ষেত্রে লাভ করছে বিরাট সাফল্য। কৃষিক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক পন্থা অবলম্বনের ক্ষেত্রে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি।

সুজলা-সুফলা আমাদের এই দেশে বিজ্ঞানের জাদুর ছোঁয়া আমরা যত বেশি কাজে লাগাতে পারব ততই কৃষি আমাদের দেবে সোনালি ফসলসহ নানা ফসলের সম্ভার। কৃষকদের সচেতনতা, সরকারি ও বেসরকারিভাবে তাদের সাহায্য প্রদান এবং বাংলাদেশে কৃষি নিয়ে বৈজ্ঞানিক গবেষণাই পারে আমাদের স্বপ্ন পূরণ করতে বাংলাদেশকে একটি সুজলা-সুফলা শস্য-শ্যামলা দেশ হিসেবে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করতে।


কৃষি কাজে বিজ্ঞান রচনা (HSC)

ভূমিকা: বর্তমান যুগ বিজ্ঞানের যুগ। ‘বিজ্ঞান’ শব্দের অর্থ কোনো বিষয়ে বিশেষ জ্ঞানলাভ। আজ মানুষ এ বিশেষ জ্ঞানের সহায়তায় জীবনের সর্বস্তরে ও সর্বাবস্থায় রূপান্তর ঘটিয়ে চলেছে। বিজ্ঞানের সাহায্যে মানুষ প্রকৃতিকে জয় করেছে, প্রকৃতির বিপুল সম্পদে নিজেকে সমৃদ্ধ করে তুলেছে। বিজ্ঞানের বদৌলতে মানুষ প্রকৃতিকে করেছে তার আজ্ঞাবাহী। আর এই বিজ্ঞানই আজ তার সুদূরপ্রসারী কল্যাণী হাত বাড়িয়ে দিয়েছে কৃষিক্ষেত্রে।

মানবজীবনে কৃষির গুরুত্ব: মাটি, পানি এবং মানব সম্পদ-এ তিনটিই হচ্ছে বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। এ তিন সম্পদের সর্বোত্তম সমন্বিত ব্যবহারের ওপরেই নির্ভর করছে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ আর্থ-সামাজিক উন্নতি ও সমৃদ্ধি।

বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা এই বাংলাদেশের মাঠে-প্রান্তরে যে কৃষিদ্রব্য উৎপন্ন হয়, তার সঙ্গে সমগ্র দেশবাসীর ভাগ্য জড়িত। বাংলাদেশের শতকরা প্রায় ৮০ জন কৃষিজীবী। এদেশের অর্থনৈতিক বুনিয়াদ সম্পূর্ণ কৃষির ওপর নির্ভরশীল। স্বাধীন বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আজ পুনরুজ্জীবিত করতে হলে, সর্বাগ্রেই চাই কৃষিক্ষেত্রে বিপ্লব। আর এ জন্যে প্রথমেই কৃষিকাজের মহানায়ক কৃষকের জীবন এবং তার দৃষ্টিভঙির সম্পূর্ণ পরিবর্তন করতে হবে। কৃষক বাঁচলে কৃষি বাঁচবে এবং কৃষি বাঁচলে আমাদের দেশ বাঁচবে।

সমস্ত উন্নত দেশেই আজ কৃষি কাজের পদ্ধতি, উপকরণ ও তার প্রায়োগিক ক্ষেত্রে বিজ্ঞান এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করেছে। যান্ত্রিক প্রযুক্তির প্রয়োগ কৃষিকে অকল্পনীয়ভাবে উৎপাদনমুখী করে তুলেছে। কাজেই দেশের উন্নয়নে এবং কৃষকের ভাগ্যের উন্নয়নে আমাদের অপরিহার্যভাবেই কৃষিক্ষেত্রে যন্ত্রপ্রযুক্তির প্রসার ঘটাতে হবে।

কৃষি ও বিজ্ঞান: কৃষি হচ্ছে একটি পরিবর্তনশীল বিজ্ঞান। নিত্য নতুন প্রযুক্তির সংযোজন ও উদ্ভাবনীমূলক পদ্ধতির বৈভবে বর্তমান বিশ্বে কৃষি সবচেয়ে অধিক আকর্ষণীয় খাত হিসেবে প্রতিভাত হয়েছে। এখানে আছে বিজ্ঞান চর্চা ও গবেষণার অফুরন্ত সুযোগ, জনকল্যাণে আত্মনিবেদনের উন্মুক্ত এলাকা, দারিদ্র্য বিমোচনে কাজ করার অনুকূল পরিস্থিতি, প্রজ্ঞা ও মেধা বিকাশের বিশাল ক্ষেত্র। অথচ কৃষি প্রযুক্তি হচ্ছে প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল, এখানে রূপান্তরিত হেচ্ছ কৌশল, বদল হচ্ছে পদ্ধতি। তাই, এ পরিবর্তনকে কৃষক, কৃষিজীবী, কৃষিবিদ, কৃষি গবেষক, কৃষি সংগঠন এবং কৃষির সঙ্গে সম্পৃক্ত বিশাল বণিক শ্রেণিকে দ্রুত অবহিত রাখতে হলে প্রয়োজন গণমাধ্যমের নিবিড় ও একান্ত সহযোগিতা।

সভ্যতার ঊষালগ্নে মহিলারা অবদান রেখেছে কৃষিতে, আবিষ্কার ও উৎপাদনের পুরোধা হিসেবে। বর্তমান বিশ্বে পরিবর্তন হয়েছে প্রেক্ষাপট। কৃষি হচ্ছে সকল পরিকল্পনার কেন্দ্রবিন্দু, দারিদ্র্য বিমোচনের অন্যতম উপায়, স্বনির্ভর অর্থনীতির মৌলিক ভিত্তি এবং বিজ্ঞান চর্চা ও গবেষণার প্রধান ক্ষেত্রে হিসেবে কৃষিতে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রয়োগ, কৃষি উপকরণে নতুন প্রযুক্তির সংযোজন, চাষাবাদের পদ্ধতি ও সার ব্যবহারে আধুনিক নিয়ম এবং উচ্চ ফলনশীল বীজের উদ্ভাবন ও বায়ো টেকনোলজি বা টিস্যু কালচার থেকে লব্ধ জ্ঞানের ব্যবহার, অথবা পানি সেচের ক্ষেত্রে ডিপ-ইরিগেশনের আশ্রয় গ্রহণ ইত্যাদি প্রক্রিয়া কৃষি উন্নয়নের সঙ্গে মিলেমিশে কৃষিকে এক আধুনিক ও প্রগতিশীল বিজ্ঞান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

কৃষির আধুনিকায়নে বিজ্ঞান: মানুষ খাদ্যের জন্যে কৃষির ওপর নির্ভরশীল। আজ বিজ্ঞানের প্রভাবে কৃষিকার্য আদিম স্তর কাটিয়ে আধুনিক স্তরে পৌঁছেছে। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ দিকে এবং ঊনবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে শিল্পবিপ্লবের মাধ্যমে কৃষির আধুনিকায়নের সূচনা ঘটে। এর ফলে কৃষকেরা কৃষিক্ষেত্রে উন্নত ধরনের যন্ত্রপাতির কৃষিপদ্ধতির সঙ্গে পরিচিত হয়। কাঠের লাঙলের পরিবর্তে মানুষের হাতে আসে কলের লাঙল, ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার ইত্যাদি। সেচ ব্যবস্থায় এখন ব্যবহার করা হয় বিদ্যুৎ শক্তিচালিত পাম্প।

বিজ্ঞানীরা কৃত্রিম বৃষ্টিপাত ঘটিয়ে কৃষিক্ষেত্রে অকল্পনীয় অগ্রগতি অর্জন করেছে। উন্নতমানের বীজ উৎপাদনে বিজ্ঞান কৃষিক্ষেত্রে যে ভূমিকা রেখেছে তাও বিস্ময়কর। বিশেষ করে কৃত্রিম উপায়ে উচ্চফলনশীল বীজ উৎপাদনের সাফল্য অভাবনীয়। এসব বীজ সাধারণ বীজের তুলনায় ফসল উৎপাদনে তুলনামূলকভাবে সময়ও কম লাগায়, তাতে ফলনও বেশি হয়। আর শক্তিশালী রাসায়নিক সার আবিষ্কৃত হওয়ায় ফসল উৎপাদনে এসেছে অভূতপূর্ব সাফল্য।

সাম্প্রতিককালে বিশ্বের শুষ্ক মরু অঞ্চলে চাষাবাদ শুরু করার প্রচেষ্টা চলছে বিজ্ঞানের সহায়তায়। বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় শীত ঋতুর ফসল, শাকসবজি যে কোনো ঋতুতেই উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে। বর্তমানে অনেক গ্রীষ্মপ্রধান দেশে কৃত্রিম ঘরে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে শীতকালীন শাকসবজির চাষ হচ্ছে।

উন্নত দেশে কৃষিকাজে বিজ্ঞান: উন্নত দেশসমূহে আজ কৃষিকার্য সম্পূর্ণভাবে বিজ্ঞানের ওপর নির্ভরশীল। জমি কর্ষণ, বীজ বপন, সেচকার্য, ফসল কাটা, মাড়াই এবং বাছাই ইত্যাদি সব কাজ আজ যন্ত্রের সাহায্যে সম্পাদন করা হয়। এর আগে বপনের জন্য সংরক্ষিত বীজ বাছাই কাজও যন্ত্রের দ্বারা করা হয়। জমিতে প্রয়োজনমত সার দেওয়া কিংবা ফসলে পোকা লাগলে তা দমনের জন্য ঔষধ ছিটানোর কাজও যন্ত্রের সাহায্যে করা হয়। আজকের যুগে ফসলের জমি সেচের জন্য মানুষ গভীর নলকূপ এবং পাম্পের সাহায্যে সেচ দেয়।

ফসল কাটা যন্ত্রের সাহায্যে একদিকে ফসল কাটছে, অন্যদিকে মাড়াই হয়ে শস্য ও খড় আলাদা হয়ে যাচ্ছে। উন্নত দেশের লোকেরা কৃষিকার্যকে যন্ত্রনির্ভর করে ফেলেছে। এসব কাজে ব্যবহার করা হয় বিশেষ কতকগুলো বৈজ্ঞানিক যন্ত্র, যেমন- মোয়ার (শস্য ছেদনকারী যন্ত্র), রপার (ফসল কাটার যন্ত্র), বাইন্ডার (ফসল বাঁধার যন্ত্র), থ্রেশিং মেশিন (মাড়াই যন্ত্র), ম্যানিউর স্প্রেডার (সার ছিটানোর যন্ত্র) ইত্যাদি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ট্রলিয়া, রাশিয়া প্রভৃতি দেশের খামারে একদিনে ১০০ একর পর্যন্ত জমি চাষ হচ্ছে কেবল এক-একটি ট্রাক্টরের মাধ্যমে।

সেগুলো আবার একসঙ্গে তিন-চারটি ফসল কাটার যন্ত্রকে একত্রে কাজে লাগাতে সক্ষম। তারা বিভিন্নভাবে কৃষিকাজের এমন অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করেছে যার ফলে প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা সত্ত্বেও তারা কৃষিকাজে ব্যাপকভাবে অগ্রগামী। যেমন বলা যায় জাপানের কথা। জাপানে জমির উর্বরাশক্তি আমাদের দেশের জমির উর্বরা শক্তির মাত্র এক চতুর্থাংশ।

কিন্তু বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বন করে তারা আমাদের তুলনায় ৬ গুণ বেশি ফসল উৎপাদন করতে সক্ষম হচ্ছে। বিজ্ঞানের বদৌলতে আজ শীতপ্রধান দেশ শীত নিয়ন্ত্রিত’ গৃহ তৈরি করে গ্রীষ্মপ্রধান দেশের শাক-সবজি ও ফলমূল উৎপন্ন করছে। আর এই বিজ্ঞানের বদৌলতেই মরুভূমির মত জায়গাতে সেচ, সার ও অন্যান্য প্রক্রিয়ায় চাষাবাদ করে নানারকম ফসল ফলিয়ে এক চমক এবং এক যুগান্তকারী বিপ্লব সৃষ্টি হয়েছে।

বাংলাদেশে কৃষিকাজে বিজ্ঞান: সময়ের পরিবর্তন এসেছে। সেই সঙ্গে কৃষিতেও লেগেছে পরিবর্তনের ছোঁয়া। আমাদের কৃষি এখন জীবননির্বাহী স্তরের চাষাবাদের বৈশিষ্ট্য হারিয়ে ধীরে ধীরে, বাণিজ্যিকীকরণের দিকে ধাবিত হচ্ছে। যান্ত্রিক উপায়ে ধান মাড়াই হচ্ছে। কোথাও কোথাও ড্রামসিডার দিয়ে বীজ বপন করা হচ্ছে। অনেক কৃষকই এখন মান্ধাতার আমলের লাঙল-জোয়াল, গরু ছেড়ে ট্রাক্টর দিয়ে চাষাবাদ করছে।

আবাদি জমির সিংহ ভাগই সেচের আওতায় চলে এসেছে। এখন কিছু কিছু জায়গায় হাইব্রিড বীজ চাষ করা হচ্ছে। এমনকী উচ্চ ফলনশীল বীজও উদ্ভাবন করছে কৃষকই। আমাদের চাষিরা এখন আর সম্পূর্ণরূপে বৃষ্টির ওপর নির্ভর করে না। তারা সেচের জন্যে ব্যবহার করছে গভীর নলকূপ এবং মেশিনচালিত পাম্প। অধিক ফসলের জন্যে উন্নত বীজ বপন করা হচ্ছে। অবশ্য, বীজ সংরক্ষণে বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির সাহায্য নেয়া হয়। বিজ্ঞানের সাহায্যে আগে যে জমিতে এক ফসল হতো, এখন সেখানে তিন ফসল হচ্ছে।

এছাড়া কৃষিপ্রযুক্তিনির্ভর উল্লেখযোগ্য চাষাবাদ হচ্ছে, আন্তঃফসল চাষাবাদ, মিশ্র ফসল চাষাবাদ, ‘রিলে’ ও ‘রেটুন’ পদ্ধতিতে চাষাবাদ, ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধি, বাড়ির আঙিনায় পাহাড়ি এলাকায় লবণাক্ত এলাকায়- চর এলাকায় চাষাবাদ, উফশীজাতের চাষ, শস্য বহুমুখীকরণ এবং ভাসমান পদ্ধতি ইত্যাদি। আজকাল খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোসহ বিভিন্ন কারণে বিশ্বের উন্নত দেশে বায়োট্যকনোলজির ব্যবহার নিয়ে চলছে বিস্তর গবেষণা এবং বাস্তবে তার প্রয়োগ। এরই পথ ধরে বাংলাদেশেও ‘ইনস্টিটিউট অফ বায়োটেকনোলজি’ নামে প্রতিষ্ঠান গড়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কৃষিতে আজকালতাই বিজ্ঞানের অবদানকে দেশের চাষাবাদের ক্ষেত্রে সঠিকরূপে ব্যবহার করতে পারলে আমাদের সমস্যা অচিরেই সমাধান হতে পারে।

বাংলাদেশে কৃষিকাজে বিজ্ঞানের প্রয়োগ ও আমাদের করণীয়: কাঠের লাঙলকে বিদায় জানাতে হবে। কৃষকের হাতে বিজ্ঞানের হাতিয়ার তুলে দিতে হবে। সে সঙ্গে আনুষঙ্গিক বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলো, কৃষকসম্প্রদায়ের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে হবে। শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। শিক্ষার মাধ্যমেই কৃষক তার শতাব্দীদীর্ঘ অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কার, ধর্মীয় পশ্চাৎপদতা ঘুচিয়ে একজন বিজ্ঞানমনস্ক সুস্থ নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে পারে।

🔰🔰 আরও দেখুন: চিঠি লেখার নিয়ম। পত্র লেখার সঠিক নিয়ম জানুন

বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষাবাদের ব্যাপারে কৃষকদের মধ্যে সচেতনতা জাগিয়ে তুলতে হবে। আমাদের কৃষকগণ অশিক্ষিত হওয়ায় আধুনিক কৃষিব্যবস্থা সম্পর্কেও পরিচিত নয়। তাই কৃষি- বিশেষজ্ঞ ও কৃষি-কর্মকর্তাদের সক্রিয় সহযোগিতায় কৃষক সম্প্রদায়কে আধুনিক কৃষি ব্যবস্থা সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে হবে। কৃষকের উন্নতির জন্যে সুষ্ঠু সরকারি নীতি গ্রহণ করা প্রয়োজন।

বন্যার পানি যেন ফসলের ক্ষতি করতে না পারে সে জন্যে নদীর তীরে বাঁধ নির্মাণ কিংবা নদী খননের মাধ্যমে বন্যা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করতে হবে। কৃষিকাজের আধুনিকায়নের জন্যে কৃষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা অপরিহার্য। গ্রামীণ জীবনে চিকিৎসা, বিদ্যুৎ ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দিয়ে গ্রামের প্রতি শিক্ষিত লোকের আকর্ষণ বৃদ্ধি করার মাধ্যমেও কৃষিজীবনের উন্নতি করা সম্ভব।

অস্বীকার করার উপায় নেই, আমাদের মতো গরিব দেশসমূহে আগামী দিনে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হবে। দ্রব্যমূল্যসহ জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, লোকসংখ্যা বৃদ্ধি, মানুষের চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে সংগতি রেখে খাদ্য বৃদ্ধি করতে না পারলে অপ্রত্যাশিত দুর্যোগের মুখোমুখি হতে হবে। পক্ষান্তরে হ্রাস পাচ্ছে কৃষি জমি, গ্রামীণ জনপদে তৈরি হচ্ছে বাড়ি আর বাড়ি।

একই সঙ্গে শহরের দিকে ধাবিত হচ্ছে মানুষ, যারা খাদ্যশস্য উৎপাদনে কোনো অবদান রাখছে না। বছর বছর পরিবেশের বিপর্যয়, শস্যহানী, নদী ভাঙন, জলোচ্ছ্বাস উপকূলীয় লোকদের জীবনকে করছে বিপদসঙ্কুল। তাই আজ নবযুগের এই প্রভাতে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগে কৃষির সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রতিটি সেক্টরে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সর্বোত্তম প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের কৃষিতে স্বনির্ভরতা আনতে হলে আমাদের সকলের সমবেত প্রচেষ্টায়, নিজেদের খাদ্য ভাণ্ডার নিজেদেরকেই গড়তে হবে, সাহায্য করবে এবং প্রয়োগ করবো প্রযুক্তি, অবদান রাখবে বিজ্ঞান।

কৃষি উন্নয়ন ও গণমাধ্যম: কৃষির আধুনিক প্রযুক্তি, নব নব আবিষ্কার, কৃষির উন্নয়নে করণীয় কী— এ সবই দেশের বিশাল বণিক শ্রেণি ও কৃষকদের দ্রুত অবহিত করতে হলে প্রয়োজন গণমাধ্যমের নিবিড় ও একান্ত সহযোগিতা। বর্তমান দুনিয়ায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে কৃষি-কর্মকাণ্ডে ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে এবং হচ্ছে। সে পরিবর্তনের অন্যতম বাহক হচ্ছে গণমাধ্যম, নিবিড় সংযোগ-সাধনকারী, উদ্ভাবন ও প্রয়োগের মাঝে সেতুবন্ধন।

বায়োফুয়েল বা শস্যকে জ্বলানিতে রূপান্তরের যে মহাযজ্ঞের সূচনা হয়েছে পশ্চিমা দুনিয়ায়, বিশেষ করে আমেরিকা, যুক্তরাষ্ট্র, যার ফলশ্রুতিতে বিশ্ব খাদ্যভান্ডারে আকাল পরিলক্ষিত হচ্ছে, গণমাধ্যমই এ তথ্য দিয়ে খাদ্য ঘাটতি দেশসমূহকে সতর্ক করেছে। কৃষি খাতের এ জাতীয় দ্রুত পরিবর্তন বা উদ্ভাবনীমূলক তথ্য কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তাদের পক্ষে প্রদর্শনী খামার বা মেলা করে কৃষকের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছানো অনেক সমযের ব্যাপার, জটিলও বটে। তাছাড়া, ততোদিনে নতুন প্রযুক্তি এসে ভিন্ন পরিস্থিতির সূচনা করতে পারে। এইতো মাত্র কদিন আগে ডিপ্লোমা কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন-এর উদ্যোগে ‘কৃষি উন্নয়নে গণমাধ্যমের ভূমিকা” শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছিল।

এ আয়োজন করে ভবিষ্যৎ কর্মসূচি সম্পর্কে ভাবনার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। লবণাক্ত পানিতে অধিক ফসল উৎপাদনকারী ধানের বীজ ইরি-৪৭ আবিষ্কার করেছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, যা চিংড়ি চাষের প্রভাব থেকে মুক্ত থাকতে সাহায্য করবে। ইকো টয়লেট আবিষ্কার করেছে কুমিল্লা বার্ড, বারিতে সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা বিভাগ ডিপ-ইরিগেশন প্রদর্শনী শুরু করেছে এবং টিস্যু কালচারের গবেষণায় উচ্চ ফলনশীল বীজ আবিষ্কারের অনেক সাফল্য এসেছে। এ সকল উদ্ভাবনী ও সাফল্য জনগণ ও কৃষকের কাছে দ্রুত পৌঁছাতে পারে একমাত্র গণমাধ্যম। এই গণমাধ্যমই এক সময় কাজি-পেয়ারাকে মানুষের কাছে সুপরিচিত করেছিল। এবার করেছে বাউকুল ও লটকন ফলকে।

তেমনিভাবে পোকা নিধনে ভেষজ মেহগনি গাছের তৈল-এর আবিষ্কার, বাঁশের দ্রুত বংশ বৃদ্ধি, পাথর কুঁচির অনুরূপ লেবুর পাতা থেকে লেবু গাছ উৎপাদনের আবিষ্কারকে গণমাধ্যমই সুপরিচিত করতে পারে গণমানুষের কাছে। উল্লেখ্য এ সকল আবিষ্কার করেছে আমাদের দেশের সাধারণ কৃষক ও কৃষিবিদেরা, যেমনভাবে হয়েছে উচ্চ ফলনশীল ‘হরিধান’। এ ছাড়াও মাশরুমের খাদ্যগুণ, বৈদেশিক বাণিজ্যে ব্রকলি, ক্যাপনিকাম, বেবিকরণ—এর লাভজনক ব্যবসায়, অর্কিড, গ্ল্যাডিলাস, টিউলিফ ও পত্র পল্লবের বিদেশে চাহিদা এবং এ সকল ক্ষেত্রে সরকারের নগদ ভর্তুকির সুযোগ, সবই কৃষিবিদ, কৃষি ব্যাবসায়ী ও সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের কাছে অধিক বোধগম্য করতে পারে একমাত্র গণমাধ্যম।

বর্তমানে বাংলাদেশে ৫০% টিভি চ্যানেলে কৃষি বিষয়ক বিশেষ কোনো অনুষ্ঠান নেই। বাংলাদেশে ‘মাটি ও মানুষ’ যেমন প্রশংসিত হয়েছে, তেমনিভাবে পশ্চিমবঙ্গের ইটিভি-এর অনুষ্ঠান ‘অন্নদাতা’ মাঠে গিয়ে কৃষকের সঙ্গে কথা বলে অনুষ্ঠানকে আকর্ষণীয় ও তথ্যবহুল করেছে। তবে আমাদের অন্যান্য চ্যানেলসমূহকেও এগিয়ে আসতে হবে। ভালো অনুষ্ঠান উপহার দিতে পারলে অবশ্যই স্পনসর পাওয়া যাবে।

একাজে কৃষির সঙ্গে সম্পৃক্ত ওষুধ কোম্পানিসমূহ, সার ও বীজের আমদানিকারক, কৃষি উপকরণের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানসমূহ, পোলট্রি ও ফিস-ফিডের ব্যবসায়ীগণ সহযোগিতা করতে পারেন। কৃষি কথা, কৃষি বিপ্লব, উর্বরা প্রভৃতি মাসিক ও পাক্ষিক পত্রিকা কৃষির মতো বিশাল ক্ষেত্রকে জনপ্রিয় করার চেষ্টা করছে। তবে তাদের পাঠক সংখ্যা যথেষ্ট নয়। প্রত্যেক জাতীয় পর্যায়ের পত্রিকাকে প্রতি সপ্তাহে একদিন শুধু কৃষির উপর একটি পাতা নির্ধারিত রাখলে তবেই কৃষি বিষয়ক জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার প্রসার ঘটবে। নিজস্ব প্রযুক্তির বিকাশ ঘটবে।

আমাদের বিজ্ঞান গবেষণা প্রতিষ্ঠানসমূহ উৎসাহিত হবে। জোতদার ও ভূমিদস্যুরা দখল করে নিচ্ছে কৃষি জমি। ভূমিদস্যু প্রতিরোধ ফোরামের সভাপতি সৈয়দ শাসুল হক ভূমিদস্যুদের কঠোর শাস্তিদানের আহ্বান করে আসছেন বারবার। একই সঙ্গে গ্রামীণ জনপদের সাংবাদিকেরাও উৎসাহিত হতে হবে। তাদেরকে অনেক বেশি সুযোগ দিতে হবে, তবেই তারা সঠিক পরিসংখ্যান প্রদানে দায়িত্বশীল স্বাক্ষর রাখবে।

ডিজিটাল কৃষি-ব্যবস্থা: বর্তমানে বিশ্বজুড়ে আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির যে হাওয়া বইছে তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের কৃষিক্ষেত্রেও এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। কৃষকেরা এখন ইন্টারনেট ব্যবহার করে জেনে নিচ্ছে উৎপাদিত পণ্যের বাজারমূল্য, দেশ-বিদেশের কৃষির নিত্যনতুন তথ্য। তারা আধুনিক চাষপদ্ধতি সম্পর্কে জানতে পারছে প্রোজেক্টরের মাধ্যমে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের কৃষি তথ্য সার্ভিস পরীক্ষামূলকভাবে ২০টি কৃষি তথ্য ও যোগাযোগ কেন্দ্র স্থাপন করেছে। এসব কেন্দ্রগুলোতে প্রতিদিন কৃষকরা কম্পিউটারের সামনে বসে জেনে নিচ্ছে দেশ ও বিদেশের সর্বশেষ কৃষি বাস্তব প্রয়োগ ঘটাচ্ছে নিজেদের মাঠে। এসব কেন্দ্রে ইন্টারনেট ব্যবহারে কৃষকদের সাহায্য করার জন্য দুজন অভিজ্ঞ কর্মি সার্বক্ষণিক কাজ করছেন।

১০ বছরের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে চালু হওয়া এসব কেন্দ্রে থাকছে ডেস্কটপ, ল্যাপটপ, স্ক্যানার, ইউপিএস, সাউন্ড সিস্টেম, ওয়েব ক্যাম, প্রিন্টার, ইন্টারনেট ডিজিটাল ক্যামেরা, মোবাইল ফোন, সিডি, ভিসিডি। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের কৃষি ম্যাগাজিন, কৃষি ডায়েরি, নিউজ লেটার, পোস্টার, লিফলেট, বুকলেট ও ফোল্ডার। কৃষকেরা একটি নির্দিষ্ট সময় এসব সামগ্রী ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছে এবং তথ্য, সংযোগ (মডেম), প্রয়োজনীয় জ্ঞান সংগ্রহ করছে। চাষাবাদের ক্ষেত্রেও তারা সনাতন পদ্ধতির বদলে আধুনিক পদ্ধতির প্রয়োগ ঘটাচ্ছে। আর এভাবেই ধীরে ধীরে কৃষির সার্বিক উন্নয়নের সঙ্গে গড়ে উঠছে আমাদের স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ।

উপসংহার: কৃষককুলের অশিক্ষা ও অজ্ঞতার কারণে আমরা বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতির ব্যবহার ব্যাপকভাবে করতে পারছি না। এ সমস্যা থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ হচ্ছে শিক্ষার হার বর্ধিতকরণ। কৃষকদের আধুনিক কৃষি পদ্ধতির সঙ্গে পরিচয় করাতে হবে। বর্তমানে বিভিন্ন সরকারি কৃষি সংস্থা বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে এবং প্রযুক্তিতে কৃষির ওপর গবেষণা চালাচ্ছেন।

কৃষিবিদ্যায় উচ্চশিক্ষাপ্রাপ্ত কৃষিকর্মীদের দিয়ে গ্রামে গ্রামে কৃষকদের আধুনিক পদ্ধতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন। আমাদের বাংলাদেশ কৃষিভিত্তিক। কৃষির উন্নতিতেই আমাদের দেশের সামাজিক উন্নতি নির্ভর করছে। তাই কৃষিকে উন্নত করার স্বার্থে কৃষিক্ষেত্রে বিজ্ঞানের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। আর তখনই ধীরে ধীরে কৃষির সার্বিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে গড়ে উঠবে সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ।


আশাকরি আমাদের আজকের আর্টিকেল (কৃষি কাজে বিজ্ঞান রচনা) টি আপনাদের ভালো লেগেছে। শিক্ষা, পাঠ্যপুস্তক, গল্পের বই সহ যে কোন পিডিএফ ডাউনলোড করতে আমাদের সাথেই থাকুন। ভালো থাকবেন সবাই, ধন্যবাদ। এছাড়াও আমাদের কোন আপডেট মিস না করতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে আমাদের সাথে ফেসবুকে কানেক্ট থাকতে পারেন।