রানার কবিতার সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 

SSC: রানার কবিতার সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

রানার কবিতার সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর: ১৩৫৪ বঙ্গাব্দে প্রকাশিত সুকান্ত ভট্টাচার্যর ‘ছাড়পত্র’ কাব্যগ্রন্থ থেকে ‘রানার’ কবিতাটি সংকলন করা হয়েছে। শ্রমজীবী মানুষের জীবনযাপন, দুঃখবোধ এবং তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে ন্যায়-নিষ্ঠা ও সততার দিকটি তুলে ধরা।

‘রানার’ কবিতায় কবি শ্রমজীবী মানুষের জীবনযাপন, দুঃখবোধ এবং তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে সততার দিকটি তুলে ধরেছেন। কবিতায় যাদের ক্লান্ত শ্বাস ছুঁয়েছে আকাশ, মাটি ভিজে গেছে ঘামে, তাদের কথা বলা হয়েছে।

রানার মানুষের সুখ-দুঃখের অনেক অজানা সংবাদবাহক। পিঠে খবরের বোঝা, টাকার বোঝা নিয়ে রাতের অন্ধকারে লণ্ঠন জ্বালিয়ে, ঝুমঝুম্ ঘণ্টা বাজিয়ে ছুটে চলে রানার। সূর্য ওঠার আগেই সে গন্তব্যে পৌঁছতে চায়।

তাই পথে দস্যুর ভয়ের চেয়ে তার সূর্য ওঠার ভয় বেশি। সুখে, দুঃখে, আনন্দে, শোকে, প্রেমে, আবেগে, স্মৃতিতে লোকে যেসব চিঠি লেখে সেগুলো সে তাদের প্রিয়জনদের কাছে পৌছে দেয়। আর তার নিজের জীবনের কষ্টের কথা চাপা পড়ে থাকে।

আরও দেখুন: আম আঁটির ভেঁপু সৃজনশীল সাজেশন [SSC ২০২৪]

ক্ষুধিত রানারের জীবনের দুঃসহ যন্ত্রণা পথের তৃণের কাছে পড়ে থাকে। তার দুঃখের কথা শহর কিংবা গ্রামের কেউ জানতে পারবে না, তা কালো রাতের খামে ঢাকা পড়ে থাকবে। পিঠে টাকার বোঝা সে বহন করে কেবল, ছুঁয়ে দেখে না।

এই সততার মূল্য তার পারিপার্শ্বিক সমাজ তাকে দেয় না। তাই তার জীবনের দুঃখের কাল অবসানের খবর কখন আসবে তা কেউ জানে না। তবুও কবি আশা করেন ভীরুতা পেছনে ফেলে শ্রমজীবীরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে একদিন অগ্রগতির ‘মেলে’ সে খবর বয়ে আনবে । সেদিন সাম্যের, মানবতার জয় হবে।


এসএসসি বাংলা ১ম পত্রের সকল গদ্য ও কবিতার সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: সুভা
সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: বইপড়া
সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: আম আঁটির ভেঁপু
সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: মানুষ মুহাম্মদ (সাঃ)
সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: নিমগাছ
সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব
সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: প্রবাস বন্ধু
সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: মমতাদি
সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: সাহিত্যের রুপ ও রীতি
সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: একাত্তরের দিনগুলি
সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: বঙ্গবানী
সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: কপোতাক্ষ নদ
সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: জীবন-সঙ্গীত
সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: মানুষ
সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: পল্লিজননী
সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: রানার
সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা
সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: আমার পরিচয়
সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: স্বাধীনতা এ শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো


রানার কবিতার সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

সৃজনশীল ০১: বাড়ির সকলের প্রতি সমান দায়িত্ব তার। কে, কখন চা খাবে, কখন ঔষধ খাবে; কোনো কিছুই তার বাদ পড়ে না। কারো কাপড় ময়লা হলে ধুয়ে ফেলা, খাওয়া-দাওয়ার খোঁজ নেয়া যেন তার প্রাত্যহিক রুটিন। গৃহিণীর কখন কী লাগবে তাও সে জানে। হেলেনার এমন কর্তব্যপরায়ণতায় সবাই মুগ্ধ। এগারো বছরের এই মেয়েটির প্রতি সবাই তাই খুব আন্তরিক। তার একটু সর্দি-জ্বর হলেও সবাই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। গৃহের লোকদের এমন ব্যবহারে হেলেনা নিজেকে ভাগ্যবতী মনে করে।

ক. রানার দস্যুর চেয়ে বেশি ভয় পায় কাকে?
খ. রানারের কাছে পৃথিবীটা কালো ধোঁয়া মনে হয় কেন? বুঝিয়ে লেখ।
গ. উদ্দীপকের হেলেনার সাথে ‘রানার’ কবিতার রানারের সাদৃশ্য বর্ণনা কর।
ঘ. “উদ্দীপকের বাড়ির লোকজনের আন্তরিকতা ‘রানার’ কবিতার কবির চেতনাকে ধারণ করে কি? উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।

১নং প্রশ্নের উত্তর

ক। রানার দস্যুর চেয়ে বেশি ভয় পায় সূর্য ওঠাকে ।

খ। ঘরে অভাবের কারণে রানারের কাছে পৃথিবীটা ‘কালো ধোঁয়া’ মনে হয় ।

রানার শ্রমজীবী মানুষ। দায়িত্বের কারণে তাকে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। রাতের ঘুম বিসর্জন দিয়ে রানার ছুটে চলে। নির্জন রাতে বন্ধুর পথ সে অতিক্রম করে অসীম সাহসিকতায়। রানারের ঘামের চিহ্ন পড়ে থাকে পথের তৃণের উপর। কিন্তু প্রতিদানে রানার তেমন কিছুই পায় না । অভাবের কথা মনে হলে রানারের কাছে পৃথিবীটা কালো ধোঁয়ার মতো মনে হয় ।

গ। উদ্দীপকের হেলেনা ও ‘রানার’ কবিতার রানারের সাদৃশ্য রয়েছে দায়িত্ববোধ এবং অর্পিত দায়িত্ব পালনে সচেতনতায়। জীবন-জীবিকার তাগিদে মানুষ নানা রকম কাজ করে।

কোনো কাজই তুচ্ছ নয়। কাজের প্রতি যত্নবান এবং দায়িত্বশীলতাই মানুষকে মর্যাদাবান করে। জগতে শ্রম ও শ্রমের মর্যাদা যত বৃদ্ধি পায়, সভ্যতারও তত অগ্রগতি সাধিত হয়। উদ্দীপকে বাসার কাজে নিয়োজিত এগারো বছরের এক বালিকার দায়িত্ববোধ, কর্মদক্ষতা এবং তার প্রতি গৃহকর্তার পরিবারের লোকদের মানবিক আচরণের দিকটি তুলে ধরা হয়েছে।

এখানে হেলেনা রোগীকে ওষুধ খাওয়ানো, কাপড় কাচা, চা বানানো প্রভৃতি কাজ করে। বাড়ির সবার প্রতি সে সমান যত্ন ও দায়িত্ববোধ নিয়ে কাজ করে। এই দায়িত্বশীলতা ও কর্মসচেতনতার দিকটি ‘রানার’ কবিতার রানারের দায়িত্ববোধ ও কর্মসচেতনতার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। রানারও সর্বদা সজাগ থাকে সূর্য ওঠার আগেই খবরের বোঝা নিয়ে শহরে পৌঁছে যাওয়ার জন্য; নিজে কষ্ট স্বীকার করে সে কখনো দায়িত্বে অবহেলা করে না। # সারক্ষণ কর্মসচেতন ও দায়িত্বশীল। ।

ঘ। “হ্যা, উদ্দীপকের বাড়ির লোকজনের আন্তরিকতা ‘রানার’ কবিতার কবির চেতনাকে ধারণ করে।” কবির চেতনাকে ধারণ করে।

মানুষ সামাজিক জীব। পারস্পরিক সাহায্য-সহযোগিতার ভিত্তিতেই সমাজ উন্নত ও গতিশীল হয়। সমাজের মানুষ নানা রকম কাজে নিয়োজিত থাকে। কর্মে দায়িত্ব ও কর্তব্যনিষ্ঠার পরিচয় দিলে সবাই তাকে ভালোবাসে এবং তার সঙ্গে মানবিক আচরণ করে। উদ্দীপকে বাসা-বাড়ির কাজে নিয়োজিত হেলেনা নামের এগারো বছরের এক বালিকার দায়িত্ব সচেতনতা এবং তার প্রতি বাড়ির লোকের সহানুভূতিশীল আচরণের দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে।

এখানে বাড়ির সবার প্রতি দায়িত্বশীল থাকার কারণে সে ঐ বাড়িরই একজন হয়ে উঠেছে। কাজের মেয়ে হেলেনার অসুস্থতায় বাড়ির সবাই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। কাজের লোকের প্রতি এই মানবিকতার দিকটি ‘রানার’ কবিতার রচয়িতার চেতনার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। কারণ ‘রানার’ কবিতায় কবি রানারের কষ্টকর জীবনের অবসান এবং তার প্রতি অন্যের সহানুভূতি প্রত্যাশা করেছেন।

‘রানার’ কবিতায় কবি রানারের কর্মক্লান্ত জীবনে অন্যদের সহানুভূতি প্রত্যাশা করেছেন। এই বিষয়টি উদ্দীপকের বাড়ির লোকদের মধ্যেও দেখা যায়। তারা বাড়ির কাজের মেয়ে হেলেনার অসুস্থতায় অস্থির হয়ে উঠেছে, তার প্রতি সহানুভূতি দেখিয়েছে। ‘রানার’ কবিতার কবিও অনুরূপ সহানুভূতি প্রত্যাশা করেছেন ক্লান্তিতে ক্ষয়ে ক্ষয়ে যাওয়া রানারের জীবনের জন্য। সুতরাং বলা যায়, প্রশ্নোত্ত মন্তব্যটি যথার্থ।

সৃজনশীল ০২: ফারুক সাহেব একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত। তিনি বিদ্যালয়ে যথাসময়ের আগে আসেন এবং ছুটির পর পরবর্তী দিনের কিছু কাজ গুছিয়ে বাড়ি ফেরেন। একদিন ভোরে আকস্মিকভাবে বাড়ি থেকে ছোট ভাইয়ের মৃত্যু সংবাদ পেয়ে তিনি বাড়ি যান। ভাইয়ের দাফন-কাফন সম্পন্ন করে পরদিনই কর্মস্থলে পুনরায় ফিরে আসেন। বিদ্যালয়ে কর্মরত অন্যরা বিবিধ অসুবিধার সম্মুখীন না হন, এই ব্যাপারে তিনি খুবই দায়িত্বশীল ব্যক্তিত্ব।

ক. রানারের কাছে সহানুভূতির চিঠি পাঠাবে কে?
খ. দস্যুর ভয়, তারো চেয়ে ভয় কখন সূর্য ওঠে।’— এই চরণ দ্বারা কবি কী বুঝিয়েছেন? ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের ফারুক সাহেবের মধ্যে ‘রানার’ কবিতার রানার চরিত্রের কোন দিকটি প্রতিফলিত? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের ফারুক সাহেব এবং ‘রানার’ কবিতার রানার দায়িত্বশীলতার দিক হতে সহঅবস্থানে বিরাজমান।”— মন্তব্যটি মূল্যায়ন কর।

২নং প্রশ্নের উত্তর

ক। রানারের কাছে সহানুভূতির চিঠি পাঠাবে ভোরের আকাশ।

খ। “দস্যুর ভয়, তারো চেয়ে ভয় কখন সূর্য ওঠে।’— এই চরণ দ্বারা কবি রানারের পেশাগত দায়িত্ববোধ ও সময়নিষ্ঠা বুঝিয়েছেন ।

‘রানার’ কবিতায় কবি শ্রমজীবী মানুষের জীবনযাপন, দুঃখবোধ এবং তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে সততার দিকটি তুলে ধরেছেন। রানার মানুষের সুখ-দুঃখের অনেক অজানা সংবাদের বাহক। পিঠে খবরের বোঝা, মানিঅর্ডার নিয়ে রাতের অন্ধকারে লন্ঠন জ্বালিয়ে, ঝুমঝুম্ ঘণ্টা বাজিয়ে ছুটে চলে রানার। সূর্য ওঠার আগেই সে গন্তব্যে পৌছতে চায়। তাই নির্জন পথে দস্যুর ভয়ের চেয়ে সূর্য ওঠায় তার বড় ভয় অভিমুখে ছুটে চলে।

গ। উদ্দীপকের ফারুক সাহেবের মাঝে ‘রানার’ কবিতার রানার চরিত্রের পেশাগত দায়িত্ববোধের দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে। পেশাগত দায়িত্ব পালনে অবহেলা করা উচিত নয়। অথচ বহু লোক দায়িত্ব ও কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করে না। এরা দেশ, জাতি ও সমাজের উন্নতির অন্তরায়। তবে যেসব শ্রেণি-পেশার মানুষ অর্পিত দায়িত্ব পালনে প্রাণপাত করেন তারাই সভ্যতার নির্মাতা, অগ্রযাত্রী।

উদ্দীপকে সহকারী প্রধান শিক্ষক ফারুক সাহেবের দায়িত্ববোধ, সততা ও সময়নিষ্ঠার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। ফারুক সাহেব ভাইয়ের মৃত্যুসংবাদ পেয়ে বাড়িতে গেলেও পরদিন বিদ্যালয়ে আসতে তার দেরি হয়নি। তিনি দীর্ঘ চাকরি জীবনে সবার আগে বিদ্যালয়ে আসেন এবং সবার পরে যান। এই বিষয়টি তার দায়িত্ববোধ ও সময়নিষ্ঠার পরিচয় বহন করে। ‘রানার’ কবিতায় রানার পিঠে খবরের বোঝা নিয়ে রাতের অন্ধকারে লন্ঠন জ্বালিয়ে সে ছুটে চলে। পথে দস্যুর ভয়ের চেয়েও সে সূর্য ওঠার ভয়ে ভীত। সে পেশাগত দায়িত্ব পালনে অত্যন্ত সচেতন। উদ্দীপকের ফারুক সাহেব মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক হলেও তিনি অত্যন্ত দায়িত্বশীল। অতএব বলা যায় যে, উদ্দীপকের ফারুক সাহেবের মাঝে ‘রানার’ কবিতার রানারের দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধের দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে।

ঘ। “উদ্দীপকের ফারুক সাহেব এবং ‘রানার’ কবিতার রানার দায়িত্বশীলতার দিক হতে সহঅবস্থানে বিরাজমান। “- মন্তব্যটি যথার্থ। সমাজে নানা পেশার লোক দেখা যায়। তাদের মধ্যে অনেকেই পেশাগত দায়িত্ব পালনে তৎপর, আবার অনেকেই তা পালনে উদাসীন থাকে। প্রত্যেকেরই উচিত তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করা।

‘রানার’ কবিতায় কবি শ্রমজীবী মানুষের জীবনযাপন, দুঃখবোধ এবং তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে সততার দিকটি তুলে ধরেছেন। রানার মানুষের সুখ-দুঃখের অনেক অজানা সংবাদের বাহক। সে পিঠে খবরের বোঝা, মানিঅর্ডার নিয়ে রাতের অন্ধকারে লন্ঠন জ্বালিয়ে ঝুম্ ঝুম ঘণ্টা বাজিয়ে শহরের পথে ছুটে চলে। অন্ধকার পথে দস্যুর ভয় অপেক্ষা শহরে পৌছানোর আগে তার সূর্য ওঠার ভয়। অর্থের অভাবে, খাদ্যের অভাবে অতি পরিশ্রমে ক্লান্ত রানারের পিঠে টাকার বোঝা থাকলেও সে তা ছুঁয়ে দেখে না। ‘রানার’ কবিতার রানারের এই দায়িত্ববোধ এবং পেশাগত দায়িত্ব পালনে নৈতিক দৃঢ়তার বিষয়টি উদ্দীপকের শিক্ষক ফারুক সাহেবের দায়িত্ব সচেতনতার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। তিনিও সময়নিষ্ঠ এবং পেশাগত দায়িত্ব পালনে অত্যন্ত সজাগ ও তৎপর।

উদ্দীপকের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক ফারুক সাহেব ছোট ভাইয়ের মৃত্যুর খবর শুনে বাড়িতে গেলেও পরের দিনই বাড়ি থেকে ফিরে এসে তার কর্মস্থলে যোগ দেন। এখানে কাজের প্রতি তার মনোযোগ ও দায়িত্ববোধের যে পরিচয় পাওয়া যায় তা ‘রানার’ কবিতার রানারের দায়িত্ববোধের সঙ্গে একসূত্রে গাঁথা। তার কারণে বিদ্যালয়ের অন্যরা যাতে বিবিধ সমস্যার সম্মুখীন না হন, সেই দিকেও তিনি অত্যন্ত সচেতন। এসব দিক বিচারে তাই বলা যায় যে, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।

সৃজনশীল ০৩: প্রদীপ স্কুলের হোস্টেলের ধোপা। ছাত্রদের কাপড় ধোলাই করে ইস্ত্রি করে দেয়। প্রতিদিন কাপড় ধুয়ে রাতভর ইস্ত্রি করে ভোরে ছাত্রদের কক্ষে পৌঁছে দেয়। পরিষ্কার ধবধবে কাপড় পরে ছাত্ররা জাতীয় সঙ্গীতে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ালে তার খুব ভালো লাগে। সে বৃহস্পতিবার বাড়ি যায় এবং শুক্রবার বিকেলে চলে আসে। তার অবহেলার কারণে কাউকে যেন ময়লা কাপড়ে স্কুলে যেতে না হয় সে ব্যাপারে খুব সচেতন সে। একবার শীতের সময় খুব অসুস্থ অবস্থায় তাকে কাজ করতে দেখে হোস্টেল সুপার নিজে তাকে ছুটি দিয়ে দেন।

ক. রানার কী কাজ নিয়েছে?
খ. রানার সূর্য ওঠাকে ভয় পায় কেন?
গ. উদ্দীপকে প্রদীপের কাজে ‘রানার’ কবিতার রানার চরিত্রের কোন দিকটি ফুটে উঠেছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের হোস্টেল সুপার কবির প্রত্যাশা পূরণ করেছেন কি? তোমার উত্তরের পক্ষে যুক্তি দাও ।

৩নং প্রশ্নের উত্তর 

ক। রানার নতুন খবর আনার কাজ নিয়েছে।

খ। সূর্য ওঠার আগেই খবরের বোঝা শহরে পৌছে দিতে হবে বলে রানার সূর্য ওঠাকে ভয় পায়। ‘রানার’ কবিতায় শ্রমজীবী মানুষের প্রতিনিধি রানার একজন দায়িত্বশীল মানুষ। সে তার দায়িত্বের প্রতি যত্নশীল। অন্ধকার রাতে রানার লন্ঠন হাতে ঘণ্টা বাজাতে বাজাতে ছুটে চলে।

তার কাঁধে থাকে চিঠিপত্রের বোঝা, টাকার বোঝা, মূল্যবান জিনিসপত্র। নির্জন রাতে দুর্গম ও বন্ধুর পথে দস্যুর ভয় থাকে। রানার রাতের আঁধার কেটে, অন্ধকারে দস্যুর ভয় উপেক্ষা করে ছুটে চলে। কারণ এই ভয়ের চেয়েও তার মনে কাজ করে সূর্য ওঠার ভয়। কারণ দস্যুর ভয় অপেক্ষা দায়িত্বের বোঝা নিয়ে রানারকে সূর্য ওঠার আগেই শহরে পৌছতে হবে— এই ভয় তার কাছে বড় হয়ে ওঠে। এ কারণেই রানার সূর্য ওঠাকে ভয় পায়।

গ। উদ্দীপকে প্রদীপের কাজে ‘রানার’ কবিতার রানীর চরিত্রের পেশাগত দায়িত্ববোধের দিকটি ফুটে উঠেছে।

সমাজে মানুষ নানা পেশায় জড়িত থাকে। প্রত্যেকের উচিত নিজ নিজ পেশার প্রতি যত্নবান হওয়া। পেশাগত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করার মধ্য দিয়েই ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, দেশ উন্নতির পথে এগিয়ে যায়। তাই পেশাগত দায়িত্ব পালনে অবহেলা করা উচিত নয়। উদ্দীপকে স্কুল হোস্টেলের ধোপা প্রদীপের দায়িত্ববোধ ও সময়নিষ্ঠার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। সে প্রতিদিন হোস্টেলের ছাত্রদের কাপড় ধোলাই করে ইস্ত্রি করে দেয়। রাতভর সে কাপড় ইস্ত্রি করে, নিজের ব্যক্তিগত জীবনের হাসি-আনন্দ অপেক্ষা ছাত্রদের পরিচ্ছন্ন পোশাক তার কাছে বড় হয়ে ওঠে। এই বিষয়টি ‘রানার’ কবিতার রানারের দায়িত্ববোধের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।

রানারও নিজের ব্যক্তিগত জীবনের সুখ-আনন্দ বিসর্জন দিয়ে নতুন খবরের বোঝা কাঁধে রাতের পথে পথে শহর অভিমুখে ছুটে চলে। তার দায়িত্বের প্রতি সে অত্যন্ত সচেতন। তাই অন্ধকার রাতে দস্যুর ভয় অপেক্ষা তার সূর্য ওঠার ভয় বেশি। উদ্দীপকের ধোপা প্রদীপও খুব দায়িত্ব সচেতন। তার অবহেলার কারণে কাউকে যেন ময়লা কাপড়ে স্কুলে যেতে না হয় এ ব্যাপারে সে সর্বদা সজাগ থাকে।

ঘ। হ্যাঁ, উদ্দীপকের হোস্টেল সুপার কবির প্রত্যাশা পূরণ করেছেন । যুগে যুগে যাদের পরিশ্রমে সভ্যতা গড়ে উঠেছে, তারাই সবচেয়ে বেশি অবহেলার শিকার। তাদের দাবি খুব সামান্য, জীবনযাপনের চাহিদা অল্প, শুধু খেয়ে-পরে বেঁচে থাকার। তাই সহায় সম্পদের অধিকারীদের উচিত এদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া।

উদ্দীপকে স্কুল হোস্টেলের একজন ধোপার সচেতনতা ও দায়িত্বশীলতার দিকটি তুলে ধরা হয়েছে। সে রাতভর ছাত্রদের কাপড় ধোলাই ও ইস্ত্রি করে। কোনো ছাত্রকে যাতে তার কারণে ময়লা কাপড় পরে স্কুলে যেতে না হয় তার জন্য সে তৎপর থাকে। উদ্দীপকের প্রদীপ নামের এই ধোপার দায়িত্ববোধ ‘রানার’ কবিতার রানারের দায়িত্ববোধের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। রানারও অন্ধকার রাতে দস্যুর ভয়কে উপেক্ষা করে সূর্য ওঠার আগেই খবরের বোঝা শহরে পৌঁছে দেয়। ‘রানার’ কবিতায় সবার সুখ, দুঃখ, আনন্দ, বেদনার খবর নিয়ে রানার ছুটে চলে। তার নিজের দুঃখ পথের তৃণের কাছে পড়ে থাকে। তার জীবন ক্লান্তিতে ক্ষয়ে ক্ষয়ে আসে।

রাত গিয়ে সূর্য ওঠে, নতুন আলোর স্পর্শে রানারের দুঃখের কালের অবসান কবি প্রত্যাশা করেন। কবির সেই প্রত্যাশা উদ্দীপকে প্রদীপের প্রতি হোস্টেল সুপারের সহানুভূতিতে কিছুটা হলেও প্রকাশ পেয়েছে। শীতের সময় প্রদীপ খুব অসুস্থ হয়ে পড়ায় হোস্টেল সুপার তাকে ছুটি দিয়ে সহানুভূতি দেখান। ‘রানার’ কবিতার রানার দায়িত্ব সচেতন। কিন্তু তার দুঃখের ভাগীদার কেউ নেই। কবি তার এ দুঃখের অবসান প্রত্যাশা করেছেন। উদ্দীপকের হোস্টেল সুপার যেন ধোপা প্রদীপের অসুস্থতায় ছুটি দিয়ে কবির প্রত্যাশিত সেই কষ্ট লাঘব করেছেন।


আশাকরি আমাদের আজকের আর্টিকেল টি আপনাদের ভালো লেগেছে। শিক্ষা, পাঠ্যপুস্তক, গল্পের বই সহ যে কোন পিডিএফ ডাউনলোড করতে আমাদের সাথেই থাকুন। ভালো থাকবেন সবাই, ধন্যবাদ। এছাড়াও আমাদের কোন আপডেট মিস না করতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে আমাদের সাথে ফেসবুকে কানক্ট থাকতে পারেন।

ssc suggestion 2022