সমাস চেনার সহজ উপায়

সমাস চেনার সহজ উপায়

সমাস চেনার সহজ উপায়: সমাস অর্থ সংক্ষেপ, মিলন, একাধিক পদের একপদীকরণ। একাডেমিক পরিক্ষা থেকে শুরু করে চাকরির পরিক্ষা ও বিসিএস সহ সকল পরিক্ষার জন্য সমাস গুরুত্বপূর্ণ এবং সমাস থেকে প্রশ্ন থাকে। আজকের আর্টিকেলে আপনাদের সাথে সমাস চেনার সহজ উপায় সম্পর্কে আলোচনা করা হবে। সমাস চেনার সহজ উপায় সম্পর্কে পুরোপুরি ধারণা পেতে সম্পূর্ণ আর্টিকেল টি পড়বেন। কথা না বাড়িয়ে তাহলে চলুন শুরু করি।

সমাস চেনার সহজ উপায়

সমাস চেনার সহজ উপায় সম্পর্কে জানার আগে চলুন জেনে নেই, সমাস কাকে বলে? ও সমাস কত প্রকার। বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত অর্থসম্বন্ধযুক্ত একাধিক পদ একটি পদে পরিণত হওয়ার প্রক্রিয়াকে সমাস বলে। বাংলা ভাষায় যে সকল প্রক্রিয়ায় নতুন পদ বা শব্দ তৈরি হয় সমাস তার একটি। সমাসের রীতি সংস্কৃত থেকে বাংলায় এসেছে। যেমন: দোয়াত ও কলম = দোয়াতকলম, পীত অম্বর যার = পীতাম্বর (শ্রীকৃষ্ণ)।

সমাস প্রধানত ৬ প্রকার। যথা-

১। দ্বন্ধ সমাস
২। কর্মধারয় সমাস
৩। তৎপুরুষ সমাস
৪। বহুব্রীহি সমাস
৫। অব্যয়ীভাব সমাস
৬। দ্বিগু সমাস

দ্বন্দ্ব সমাস

দ্বন্দ্ব সমাস সংযােজক অব্যয়ের লােপ পেয়ে এবং উভয় পদের (পূর্বপদ এবং পরপদ) অর্থেরই প্রাধান্য বজায় রেখে যে সমাস হয় তাকে দ্বন্দ্ব সমাস বলে। যেমন : মাতা ও পিতা মাতাপিতা; ভালাে ও মন্দ = ভালােমন্দ ইত্যাদি। এখানে মাতাপিতা বলতে মাতা ও পিতা এবং ভালােমন্দ বলতে ভালাে ও মন্দ উভয়কেই বােঝায়।

‘দ্বন্দ্ব’ শব্দের দুটো অর্থ— সংঘাত ও মিলন। সমাসের ক্ষেত্রে ‘মিলন’ অর্থটাই গৃহীত হয়। দ্বন্দ্ব সমাস’ মানে মিলনের সমাস। যে সমাসে দুই বা ততােধিক পদের মিলন হয় এবং সমস্যমান প্রত্যেক পদের অর্থই প্রধান থাকে, তাকে দ্বন্দ্ব সমাস বলে। এই সমাসে ব্যাসবাক্য তৈরি করার জন্যে এবং, ‘ও’, ‘আর, ইত্যাদি সংযােজক অব্যয়ের সাহায্য নেওয়া হয়। চলুন এবার তাহলে জেনে নেই দ্বন্দ্ব সমাস চেনার সহজ উপায়।

দ্বন্দ্ব সমাস চেনার সহজ উপায়

দ্বন্দ্ব শব্দের অর্থ জোড়া। শব্দটি নিজেই এই সমাসের বৈশিষ্ট্যের আভাস দেয়।

  • এতে পূর্বপদ ও পরপদ একই বিভক্তিযুক্ত থাকে এবং উভয় পদের অর্থই প্রাধান্য পায়।
  • বিশেষ্য + বিশেষ্য; যেমন : আইন-আদালত, কাগজ-কলম, শহর-গ্রাম, হাত-পা, ভাবভঙ্গি, নাচ-গান, আদবকায়দা, দাঙ্গা-হাঙ্গামা, ধনজন, রাজা-উজির, কীটপতঙ্গ, নথিপত্র, রীতিনীতি, পথঘাট, লােক-লস্কর, পুথিপত্র, পােকামাকড়, সভা-সমিতি, সৈন্যসামন্ত, ছাত্রছাত্রী, আঁকজমক, বেশভূষা, তালতমাল, হাতি-ঘােড়া ইত্যাদি।
  • বিশেষণ + বিশেষণ; যেমন : কাঁচা-পাকা, কানা-খোড়া, জানাশােনা, নরম-গরম, ভালাে-মন্দ, চেনা-অচেনা, হাসি-কান্না, দীন-দুঃখী, নিত্য-নৈমিত্তিক ইত্যাদি।
    ক্রিয়াবিশেষ্য-ক্রিয়াবিশেষ্য; যেমন : আসা-যাওয়া-ওঠা-বসা, লেখাপড়া, চলাফেরা, দেওয়া-নেওয়া, ক্রয়-বিক্রয়, খানাপিনা, পড়াশােনা, টানাহেঁচড়া, লম্ফঝম্ফ ইত্যাদি।
  • ক্রিয়াপদ-ক্রিয়াপদ; যেমন : মেরে-ধরে, হেসে-খেলে, ভেঙে-চুরে, চেয়েচিন্তে, হারি-জিতি, উঠে-পড়ে ইত্যাদি হতে পারে।
  • ব্যাসবাক্যে পূর্বপদ ও পরপদ এই প্রধান পদ দুটি এবং’, ‘ও’, ‘আর’ এই সংযােজক অব্যয়গুলাে দ্বারা যুক্ত থাকে। যেমন : কাপড় কিনতে যাচ্ছ? তাহলে আসল-নকল দেখে কিনবে। এখানে আসল এবং নকল যাদের শেষে একই বিভক্তি আছে শূেন্য বিভক্তি)। শব্দ দুটি সংযােজক অব্যয় এবং দ্বারা যুক্ত। এই অংশটুকু ব্যাসবাক্য। পূর্বপদ ও পরপদ আসল ও নকল দুটি পদের অর্থই প্রাধান্য পাচ্ছে কারণ শুধু আসল কিংবা শুধু নকলকেই বােঝানাে হচ্ছে না, আসল-নকল উভয়কেই বােঝানাে হচ্ছে।

দ্বিগু সমাস

যে সমাসে সংখ্যাবাচক শব্দ পূর্বে বসে সমাহার বােঝায় এবং পরপদের অর্থই প্রাধান্য পায় তাকে ‘দ্বিগু সমাস বলে। যেমন: নব রত্নের সমাহার = নবরত্ব, সপ্ত অহের সমাহার সপ্তাহ ইত্যাদি। অথবা, সমাহার (সমষ্টি) বা মিলনার্থে সংখ্যাবাচক শব্দের সঙ্গে বিশেষ্য পদের যে সমাস হয় তাকে দ্বিগু। সমাস বলে। যেমন : ত্রি (তিন) কালের সমাহার = ত্রিকাল; তে (তিন) মাথার সমাহার = তেমাথা; শত অব্দের সমাহার = শতাব্দী, পঞ্চবটের সমাহার = পঞ্চবটী; ত্রি পদের সমাহার = ত্রিপদী ইত্যাদি। চলুন এবার তাহলে জেনে নেই দ্বিগু সমাস চেনার সহজ উপায়।

দ্বিগু সমাস চেনার সহজ উপায়

দ্বিগু সমাসে প্রথম পদটি সংখ্যাবাচক হয় এবং পরপদটি হবে বিশেষ্য। সমস্তপদটি দ্বারা সমষ্টি বা সমাহার বােঝায়। এবং বা সমস্তপদটি একটি বিশেষ্য পদ হয়। যেমন : তে (তিন) মাথার সমাহার = তেমাথা, নব (নয়) রত্নের সমাহার: নবরত্ব।

কর্মধারয় সমাস

বিশেষ্য ও বিশেষণ পদে বা বিশেষ্য ও বিশেষণ ভাবাপন্ন পদে যে সমাস হয় এবং যেখানে পরপদের অর্থ প্রাধান্য পায় তাকে কর্মধারয় সমাস বলে। অথবা, যেখানে বিশেষণ বা বিশেষণভাবাপন্ন পদের সঙ্গে বিশেষ্য বা বিশেষ্যভাবাপন্ন পদের সমাস হয় এবং পরপদের অর্থই প্রধানরূপে প্রতীয়মান হয় তাকে কর্মধারয় সমাস বলে।

যেমন : নীল যে পদ্ম = নীলপদ্ম; যা কাচা তা-ই মিঠা নীলপদ্ম; যা কাঁচা তা-ই মিঠা = কাঁচামিঠা; যা মিঠা তা-ই কড়া। মিঠাকড়া, ফুলের মতাে কুমারী = ফুলকুমারী। একার্থবােধক দুটি বিশেষ্য বা দুটি বিশেষণেও কর্মধারায় সমাস হয়ে থাকে। কর্মধারয় সমাসে সাধারণত বিশেষণ পদ আগে বসে। যে, সে, যেই, সেই, যিনি, তিনি, যা, তা ইত্যাদি ব্যাসবাক্য কর্মধারয় সমাসে ব্যবহৃত হয়। চলুন এবার তাহলে জেনে নেই কর্মধারয় সমাস চেনার সহজ উপায়।

কর্মধারয় সমাস চেনার সহজ উপায়

এ সমাসে প্রথম পদটি দ্বিতীয় পদটির বিশেষণরূপে অবস্থান করে (এমনকী বিশেষণ পদ না হয়েও) এবং সমস্তপদে দ্বিতীয় বা পরপদের অর্থ প্রাধান্য পায়।

ব্যাসবাক্যের মাঝে যে থাকবে। যেমন : নীল যে পদ্ম = নীলপদ্ম বলতে একটি বিশেষ ধরনের পদ্মকে বােঝায়, যার রং নীল। এখানে নীলপদ্ম শব্দটি দ্বারা এর প্রথম অংশ ‘নীল রং-কে বােঝানাে হচ্ছে না, পরবর্তী অংশকে বােঝানাে হচ্ছে। অর্থাৎ পরপদের অর্থ প্রাধান্য পাচ্ছে। আবার ‘পদ্ম’ শব্দটির বিশেষণ হিসেবেও ‘নীল’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে।

কয়েকটি বিশেষ সমাস চেনার সহজ উপায়

  • বিশেষ্য + বিশেষ্য কিংবা বিশেষ্য + বিশেষণ পদে কর্মধারয় সমাস হলে পূর্বপদ এবং পরপদ উভয়ই একই ব্যক্তি বা বস্তুকে বােঝায়। যেমন : ছেলেটি বেশ চালাক-চতুর। অর্থাৎ ছেলেটি একই সঙ্গে ‘চালাক’ এবং ‘চতুর। এখানে উভয় বিশেষণ দ্বারা একই ব্যক্তিতে বােঝানাে হচ্ছে।
  • পূর্বপদে ‘মহৎ’ বা ‘মহা’ শব্দটি থাকলে সমস্তপদে তা ‘মহা’ এবং পরপদে (ব্যাসবাক্যে) ‘রাজা’ শব্দটি থাকলে সমস্তপদে তা ‘রাজ’ হয়ে যায়। যেমন : মহান্ যে রাজা = মহারাজ, মহান্ যে নবী = মহানবী, মহৎ যে জ্ঞানী = মহাজ্ঞানী। বিশাল অর্থেও ‘মহা’ শব্দটি প্রযােজ্য হয়। যেমন : মহাকার যে প্লাবন = মহাপ্লাবন। সমাস চেনার সহজ উপায়।
  • ব্যাসবাক্যে ‘কু বিশেষণটি ‘খারাপ’ অর্থে ব্যবহৃত হলে, পরপদের প্রথম অক্ষর যদি স্বরবর্ণ হয় তাহলে, সমস্তপদের প্রথমে ‘ক’ হয়। যেমন : কু যে অর্থ = কদৰ্থ, কু যে আকার = কদাকার।
  • পূর্বপদে স্ত্রী বাচক (ঈ-প্রত্যয়ান্ত) বিশেষণ থাকলে সমস্তপদে তার ঈ-প্রত্যয়টি থাকে না। যেমন : সুন্দরী যে ও লতা = সুন্দরলতা, মহতী যে কীর্তি = মহাকীর্তি ইত্যাদি।
  • ব্যাসবাক্যে বিশেষণ পদ আগে থাকলে তা কখনও কখনও পরে বসে। যেমন : অধম যে নর = নরাধম, সিদ্ধ যে আলু = আলুসিদ্ধ।
  • রূপক কর্মধারয় সমাস : এ সমাসে ব্যাসবাক্যের মধ্যে ‘রূপ’ শব্দ থাকবে। যেমন : মন রূপ মাঝি = মনমাঝি, ভব ভবনদী ইত্যাদি।

তৎপুরুষ সমাস

যে সমাসে পরপদের অর্থ প্রধান বলে বিবেচিত হয় এবং পূর্বপদের দ্বিতীয়াদি বিভক্তি লােপ পায় তাকে তৎপুরুষ সমাস বলে। আরও বিস্তৃতভাবে বললে বলা যায়, পূর্বপদে কর্ম প্রভৃতি কারকের বিভক্তিস্থানীয় অনুসর্গযুক্ত পদের সঙ্গে অথবা সম্বন্ধপদের সঙ্গে সমাস হয়ে যদি পরপদের অর্থ-প্রাধান্য থাকে তাকে তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন : ধানের ক্ষেত = ধানক্ষেত, ভাতকে রাঁধা = ভাতরাধা ইত্যাদি । এ সমাসে পূর্বপদে দ্বিতীয়া থেকে সপ্তমী পর্যন্ত বিভক্তি থাকে এবং সমাস গঠনের ফলে সে সব বিভক্তি লােপ পায়। চলুন এবার তাহলে জেনে নেই তৎপুরুষ সমাস চেনার সহজ উপায়।

তৎপুরুষ সমাস চেনার সহজ উপায়

তৎপুরুষ সমাসের সমস্তপদে পূর্বপদের বিভক্তি লােপ পায়।

পরপদের অর্থ প্রাধান্য পায়। যেমন : সে রাজার পুত্র। এ বাক্যটিতে ‘রাজার’ এবং ‘পুত্র’—এ দুটি শব্দের প্রথমটির সঙ্গে ৬ষ্ঠী বিভক্তির চিহ্ন ‘র’ যুক্ত থেকে শব্দ দুটির মধ্যে একটি সম্বন্ধ বােঝাচ্ছে। এই ৬ষ্ঠী বিভক্তি বাদ দিয়ে ‘রাজ’ এবং ‘পুত্র’ শব্দ দুটিকে পাশাপাশি জুড়ে দিয়ে তাদের একটিমাত্র শব্দে পরিণত করা যায়। তা হল ‘রাজপুত্র। অর্থাৎ পূর্বপদের বিভক্তি চিহ্ন লােপ পেল। আবার রাজপুত্র শব্দটির মধ্যে দুটি শব্দ মিশে আছে— রাজা এবং পুত্র। কিন্তু শব্দটি দ্বারা রাজাকে বােঝানাে হচ্ছে না। বােঝানাে হচ্ছে তার পুত্রকে। অর্থাৎ পূর্বপদ এবং পরপদ উভয় দ্বারা কেবল পরপদকে বােঝাচ্ছে। তাহলে দেখা যায় যে, পরপদের অর্থই প্রাধান্য পাচ্ছে।

তৎপুরুষ সমাসে কোন্ বিভক্তি কীভাবে লুপ্ত হচ্ছে এটা জানাই প্রধান কাজ। আর এজন্য বিভক্তিগুলাে জানতে হবে।

২য়া তৎপুরুষ সমাস: এ সমাসে ব্যাসবাক্যে ২য়া বিভক্তির চিহ্ন ‘কে’, ‘রে থাকবে এবং সমস্তপদে বিভক্তির চিহ্নগুলাে থাকবে না, লােপ পাবে। যেমন : বইকে পড়া বইপড়া, ভাতকে রাধা = ভাতরাধা, শােককে অতীত = শােকাতীত ইত্যাদি। ব্যাপ্তি বােঝালেও ২য়া তৎপুরুষ সমাস হয়।

৩য়া তৎপুরুষ সমাস: এ সমাসে ব্যাসবাক্যে ৩য়া বিভক্তির চিহ্ন দ্বারা’, ‘দিয়া’, ‘কর্তৃক থাকবে এবং সমস্তপদে বিভক্তির চিহ্নগুলাে থাকবে না, লােপ পাবে। যেমন : মন দ্বারা গড়া = মনগড়া, টেকি দ্বারা ছাটা = চেঁকিছাটা, মধু দিয়ে মাখা = মধুমাখা ইত্যাদি।

কখনও কখনও সমস্যমান পদের দ্বারা বিভক্তির পরিবর্তে সমস্তপদে ‘এ’ বিভক্তির আগম ঘটে। এ জাতীয় সমাসের আলােচনা সাধারণত অলুক তৎপুরুষ সমাসের আলােচনার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। যেমন : তেল দ্বারা ভাজা তেলেভাজা (তেল-ভাজা নয়। তেল + এ = তেলে), কল দ্বারা ছাঁটা = কলেছাটা (কল + এ =কলে), তাত দ্বারা বােনা = তাঁতেবােনা ইত্যাদি।


🔆🔆 আরও দেখুন: দ্বন্দ্ব ও দ্বিগু সমাসের শ্রেণিবিভাগ
🔆🔆 আরও দেখুন: কর্মধারয় সমাসের শ্রেণিবিভাগ
🔆🔆 আরও দেখুন: তৎপুরুষ সমাসের শ্রেণিবিভাগ
🔆🔆 আরও দেখুন: বহুব্রীহি সমাসের শ্রেণিবিভাগ


৪র্থী তৎপুরুষ সমাস: এ সমাসে ব্যাসবাক্যে ৪র্থ বিভক্তির চিহ্ন ‘কে’, ‘রে’ এবং জন্য, তরে, নিমিত্ত ইত্যাদি অনুসর্গ থাকবে এবং সমস্তপদে বিভক্তির চিহ্নগুলাে থাকবে না, লােপ পাবে। এই সমাসে সচরাচর পূর্বপদের উদ্দেশ্যে কিছু করা হয় এরূপ বােঝায়। যেমন : দেবকে দত্ত = দেবদত্ত, বসতের জন্যে বাড়ি = বসতবাড়ি ইত্যাদি।

৫মী তৎপুরুষ সমাস: এ সমাসে ব্যাসবাক্যে ৫মী বিভক্তির চিহ্ন হতে’, ‘থেকে’, ‘চেয়ে থাকবে এবং সমস্তপদে বিভক্তির চিহ্নগুলাে থাকবে না, লােপ পাবে। যেমন : জেল থেকে মুক্ত জেলমুক্ত, বৃক্ষ থেকে চ্যুত = বৃক্ষচ্যুত, গাছ থেকে পড়া = গাছ-পড়া ইত্যাদি।

৬ষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস: এ সমাসে ব্যাসবাক্যে, ৬ষ্ঠী বিভক্তির চিহ্ন ‘র’, ‘এর’ থাকবে এবং সমস্তপদে বিভক্তির চিহ্নগুলাে থাকবে না, লােপ পাবে। যেমন: বটের (বট-এর) তলা = বটতলা, তালের গাছ = তালগাছ, গৃহের স্বামী = গৃহস্বামী ইত্যাদি।

৭মী তৎপুরুষ সমাস: এ সমাসে ব্যাসবাক্যে ৭মী বিভক্তির চিহ্ন ‘এ’, ‘য়’, ‘তে থাকবে এবং সমস্তপদে বিভক্তির চিহ্নগুলাে থাকবে না, লােপ পাবে। যে শব্দের সঙ্গে ৭মী ‘এ’, ‘য়’, ‘তে’ বিভক্তি যুক্ত হয় তা কোন থান, সময় বা বিষয়কে বােঝায়। যেমন : গাছে (গাছ + এ) পাকা = গাছপাকা, রাতে কানা।

অলুক তৎপুরুষ সমাস: অলুক = ন (নাই) লুক (লােপ) যার। অর্থাৎ পূর্বপদে বিভক্তির লােপ হয় না। সমস্তপদ এবং ব্যাসবাক্য একই থাকে। যেমন: মায়ের দোয়া = ‘মা-দোয়া’ না হয়ে হবে ‘মায়ের দোয়া, কলের গান = ‘কলগান’ না হয়ে কলের গান’ হবে ইত্যাদি।

নঞ তৎপুরুষ সমাস: ব্যাসবাক্যের প্রথমে নহে/নয়/নাই’ শব্দ থাকবে এবং ব্যাসবাক্য দ্বারা না-বােধক অর্থ প্রকাশ করবে। যেমন : ন (নহে/নয়/নাই’) উক্ত = অনুক্ত, ন কাল অকাল ইত্যাদি।

বহুব্রীহি সমাস

‘ব্রীহি’ মানে ধান। বহুব্রীহি মানে ‘বহু ধান’ নয়- ‘বহু ধান আছে যার এমন অবস্থাসম্পন্ন কোনও মানুষ। যে সমাসে সমস্যমান পদ দুটির কোনােটির অর্থ না বুঝিয়ে অতিরিক্ত অন্য কোনাে অর্থ বােঝায়, তাকে বহুব্রীহি সমাস বলে।

যে সমাসে পূর্বপদ বা পরপদ কোনােটির অর্থ না বুঝিয়ে এ দুয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্য কোনাে অর্থ প্রধানরূপে প্রতীয়মান হয় তাকে ‘বহুব্রীহি সমাস বলে। যেমন: দশ আনন যার দশানন। এখানে ‘দশ’ বা ‘আনন’ (অর্থাৎ মুখ) কোনাে পদের অর্থ বােঝানাে হয় নি। লঙ্কার রাজা রাবণের দশটি মাথা থাকায় তার নাম দশানন। যেমন: বীণা পাণিতে যার = বীণাপাণি। এখানে ‘বীণা’ অথবা ‘পাণি’ (অর্থাৎ হাত) কোনােটাই না বুঝিয়ে দেবী সরস্বতীকে বােঝানাে হয়েছে। এরকম আরেকটি শব্দ ‘নীলকণ্ঠ’ অর্থাৎ নীল (বিষ) কণ্ঠ যার। এই শব্দে নীল বা কণ্ঠ কোনােটাই প্রধান বক্তব্য নয়; এখানে বুঝতে হবে শিবকে, কেননা বিষপানে শিবের কণ্ঠই নীল হয়ে গিয়েছিল। বহুব্রীহি সমাস সাধারণত বিশেষণ শব্দ গঠন করে এবং এ সমাসে ‘যে’, ‘যিনি’, ‘যার’, ‘যাতে’ ইত্যাদি ব্যাসবাক্যে ব্যবহৃত হয়। যেমন: আয়ত লােচন যার = আয়তলােচনা (ত্রী), স্বচ্ছ সলিল যার স্বচ্ছসলিলা ইত্যাদি। চলুন এবার তাহলে জেনে নেই বহুব্রীহি সমাস চেনার সহজ উপায়।

বহুব্রীহি সমাস চেনার সহজ উপায়

এ সমাসে সমস্যমান পদগুলাের কোনােটির অর্থ প্রাধান্য না পেয়ে, অন্য কোনাে তৃতীয় পদের অর্থ প্রাধান্য পায়।

ব্যাসবাক্যে ‘যে’, ‘যিনি’, ‘যার’ প্রভৃতি শব্দ থাকবে। যেমন: দশ আনন যার = দশানন। এখানে ব্যাসবাক্যে। ‘দশ’ এবং ‘আনন’ শব্দ দুটি আছে। আনন = মুখ। দশানন শব্দটি দ্বারা দশ (১০) সংখ্যাটিকে বােঝানাে হয় না, আনন বা মুখও বােঝানাে হয় না; যে ব্যক্তির দশটি মুখ ছিল তাকেই— অর্থাৎ রাজা রাবণকে বােঝানাে হয়। তাহলে দেখা যায় যে, সমস্যমান পদগুলাের (দশ আনন) কোনােটির অর্থ প্রাধান্য না পেয়ে, অন্য কোনাে তৃতীয় পদের (যার) অর্থ প্রাধান্য পেল।



আশাকরি আমাদের আজকের আর্টিকেল টি “সমাস চেনার সহজ উপায়” আপনাদের ভালো লেগেছে।  শিক্ষা, পাঠ্যপুস্তক, গল্পের বই সহ যে কোন পিডিএফ ডাউনলোড করতে আমাদের সাথেই থাকুন। আমাদের যে কোন আপডেট মিস করতে না চাইলে ফেসবুক ও ইউটিউবে সাবক্রাইব করে আমাদেস দাথে কানেক্ট থাকতে পারেন। ভালো থাকবেন সবাই, ধন্যবাদ।