৮ম শ্রেণি: অতিথির স্মৃতি অনুধাবন প্রশ্ন

অতিথির স্মৃতি অনুধাবন প্রশ্ন

অতিথির স্মৃতি অনুধাবন প্রশ্ন: ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে একটি কুকুরের সঙ্গে একজন মানুষের গভীর মমত্বের দিকটি তুলে ধরা হয়েছে। লেখক বা কথক অসুস্থ হয়ে বায়ু পরিবর্তনের জন্য দেওঘরে গেলে সেখানে একটি পথের কুকুরের প্রতি তার সহানুভূতি জাগে।

বেড়াতে বের হলেই কুকুরটি তাকে সঙ্গ দিত। এমনকি কথকের চাকর-বাকররা কুকুরটির প্রতি অমানবিক আচরণ করলেও প্রাণীটি কথকের সঙ্গ ছাড়েনি। কথক দেওঘর ছেড়ে চলে আসার , সময় সেই অতিথি কুকুরকে রেখে আসেন।

সেই কুকুরটির স্মৃতি কথককে পীড়া দেয়। এ গল্পে লেখক দেখিয়েছেন, মানুষে-মানুষে যেমন মেহপ্রীতির সম্পর্ক, অন্য জীবের সঙ্গেও তেমনি মানুষের সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে। সেই সম্পর্ক নানা প্রতিকূলতার কারণে বাধাগ্রস্ত হয়।

মূলত মানবেতর একটি প্রাণীর সঙ্গে অসুস্থ একটি মানুষের পরিচয়ের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা একটি মমত্বের সম্পর্কই এ গল্পের বিষয়।


৮ম শ্রেণির বাংলা ১ম পত্র এর সকল গল্পের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর

🔅🔅 অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর: অতিথির স্মৃতি
🔅🔅 অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর: ভাব ও কাজ
🔅🔅 অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর: পড়ে পাওয়া
🔅🔅 অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর: তৈলচিত্রের ভূত
🔅🔅 অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর: এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম
🔅🔅 অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর: আমাদের লােকশিল্প
🔅🔅 অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর: সুখী মানুষ
🔅🔅 অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর: শিল্পকলার নানা দিক
🔅🔅 অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর: মংডুর পথে
🔅🔅 অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর: বাংলা নববর্ষ
🔅🔅 অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর: বাংলা ভাষার জন্মকথা


অতিথির স্মৃতি অনুধাবন প্রশ্ন

প্রশ্ন ০১। চাকরদের দরজা খোলার শব্দ শুনে অতিপি পালিয়েছিল কেন?
উত্তর : চাকরদের দরজা খোলার শব্দ শুনে অতিথি ভয় পেয়ে ছুটে পালিয়েছিল। লেখক চাকরদের বলেছিলেন কুকুরটা বাড়িতে এলে তাকে খাবার দিতে। কিন্তু চাকররা তা তো করেইনি, উপরন্তু অতিধিকে তাড়িয়ে দিয়েছে। তাই লেখক যখন তাকে ভেতরে আসার জন্য ডাকল সে তখন এলো না, বাইরেই দাঁড়িয়ে থাকল। আর লেখক চাকরদের হাঁক দিতেই চাকরদের দরজা খোলার শব্দ শুনে সে ভয়ে ছুটে পালাল।

প্রশ্ন ০২। লেখক দেওঘরে গিয়েছিলেন কেন? বুঝিয়ে লেখ।
উত্তর : চিকিৎসকের আদেশে বায়ু পরিবর্তনের জন্য লেখক দেওঘরে গিয়েছিলেন। দীর্ঘদিন এক জায়গায় থাকতে থাকতে মন ক্লান্ত হয়ে পড়ে। মনের এই ক্লান্তি শরীরকেও কাবু করে। তাই অনেক সময় রোগ সারানোর জন্য ডাক্তাররা বায়ু পরিবর্তনের কথা বলেন। দেখা যায় যে, বায়ু, পরিবর্তনের ফলে সহজেই রোগ থেকে আরোগ্য লাভ করা যায়। সুস্থতার জন্য তাই লেখক ডাক্তারের আদেশে দেওঘরে গিয়েছিলেন।

প্রশ্ন ০৩। লেখকের অতিথির চোখ দুটো ভিজে ভিজে দেখাচ্ছিল কেন?
উত্তর : লেখকের অতিথিকে খাবার না দিয়ে তাড়িয়ে দেওয়ায় অতিথির চোখ দুটো ভিজে ভিজে দেখাচ্ছিল। লেখক বায়ু পরিবর্তনের জন্য দেওঘরে যান। সেখানে এক পথের কুকুরের প্রতি তাঁর গভীর সহানুভূতি জেগে ওঠে। লেখক কুকুরটিকে ঘরে নিয়ে খাবার দিতে বললেও সেখানকার মালিনী কুকুরটিকে খাবার না দিয়ে মেরে তাড়িয়ে দেয়। ভয় ও ক্ষুধার কষ্টে তাই লেখককে দেখতে পেয়ে তাঁর অতিথির চোখ দুটো ভিজে ভিজে দেখাচ্ছিল।

প্রশ্ন ০৪। লেখকের সত্যিকার ভাবনা ঘুচে গেল কীভাবে? অথবা, ‘সত্যিকারের একটা ভাবনা ঘুচে গেল’- কীভাবে?
উত্তর : হলদে রঙের একজোড়া বেনে বৌ পাখিকে, আবার ফিরে আসতে দেখে লেখকের সত্যিকারের ভাবনা ঘুচে গেল। চিকিৎসকের আদেশে বায়ু পরিবর্তনের জন্য লেখক দেওঘরে আসেন। প্রাচীর ঘেরা বাগানের মধ্যে একটা বড় বাড়িতে তিনি থাকতেন। সেই বাগানের গাছগুলোতে সকাল থেকেই শুরু হতো বিভিন্ন পাখির আনাগোনা। সবচেয়ে দেরিতে আসত হলুদ রঙের একজোড়া বেনে-বৌ পাখি। তারা বসত প্রাচীরের ধারের ইউক্যালিপটাস গাছের সবচেয়ে বড় ডালটায়। কিন্তু হঠাৎ করে দুই দিন পাখি দুটিকে না দেখে লেখকের ভাবনা হলো ব্যাধেরা বুঝি পাখি দুটিকে ধরে চালান করে দিয়েছে। কিন্তু তিন দিনের দিন পাখি দুটিকে দেখে লেখকের সেই ভাবনা ঘুচে গেল।

প্রশ্ন ০৫। কুকুরটি ভেতরে ঢোকার ভরসা পেল না কেন?
উত্তর: চাকরদের ভয়ে লেখকের অতিথি কুকুরটি কিছুতেই ভেতরে ঢোকার ভরসা পেল না। লেখক কুকুরটিকে অন্ধকার পথে তাকে বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার জন্য বললেন। কুকুরটিকে লেজ নাড়তে দেখে লেখক বুঝলেন যে, সে রাজি আছে। তারপর কুকুরটিকে সঙ্গে নিয়ে তিনি বাড়ির সামনে এলেন। গেট খুলে কুকুরটিকে ভেতরে ডাকলেন। কিন্তু সে বাইরে দাঁড়িয়ে লেজ নাড়তে লাগল । কুকুরটি ভেতরে ঢুকল না। কারণ সেটি ভয় পেয়েছিল। সেটি ভেবেছিল ভেতরে ঢুকলে হয়তো তাকে প্রহার করা হবে।

প্রশ্ন ০৬। লেখক কেন বাড়ি ফিরে যাওয়ার আগ্রহ খুঁজে পেলেন না?
উত্তর : অতিথির প্রতি মায়া জন্মে যাওয়ার কারণে লেখক বাড়ি ফিরে যাওয়ার আগ্রহ খুঁজে পেলেন না। বায়ু পরিবর্তনের জন্য দেওঘর বেড়াতে গিয়ে লেখক একটি পথের কুকুরকে ডেকে এনে খাবার দেন। ক্রমে ক্রমে তার প্রতি লেখকের মমতা জন্মে। তিনি তার নাম দেন অতিথি। অতিথিও লেখকের খুব ভক্ত হয়ে ওঠে। তারপর একদিন লেখকের বাড়ি ফেরার সময় হয়ে যায়। সেদিন অতিথি রেলস্টেশন পর্যন্ত যায়। ট্রেন ছেড়ে দিলেও লেখকের যাত্রাপথের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। অবোধ প্রাণীটির প্রতি মমত্বের কারণে লেখক মনের মধ্যে বাড়ি ফিরে যাওয়ার আগ্রহ খুঁজে পেলেন না।

প্রশ্ন ০৭। লেখক দেওঘর থেকে বিদায় নিতে নানা অজুহাতে দিন দুই দেরি করলেন কেন? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : বেড়াতে যাওয়ার একমাত্র পথের সঙ্গী কুকুরটিকে ছেড়ে যেতে খারাপ লাগার কারণে লেখক দেওঘর থেকে বিদায় নিতে নানা অজুহাতে দিন দুই দেরি করলেন। ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখক পথে বেড়াতে বের হলে সঙ্গী হয় একটি কুকুর। প্রতিদিন কুকুরটি বাড়ির গেটের সামনে লেখকের জন্য অপেক্ষা করে সঙ্গে যাওয়ার জন্য। কুকুরটির এরূপ আচরণে লেখকের মনে কুকুরটির জন্য অকৃত্রিম মমত্ববোধ জেগে ওঠে। তাই দেওঘর থেকে যখন বিদায় নেওয়ার দিন এসে পড়ে তখন কুকুরটিকে ছেড়ে যেতে খারাপ লাগায় লেখক নানা অজুহাতে দিন দুই দেরি করলেন।

প্রশ্ন ০৮। ‘আতিথ্যের মর্যাদা লঙ্ঘন করে সে আরামে নিশ্চিন্ত হয়ে বসে আছে’— কথাটি বুঝিয়ে লেখ।
উত্তর : বিনা নিমন্ত্রণে কুকুরটি ভোজ খাওয়ার আশায় নিশ্চিত হয়ে বসে আছে, যা আতিথ্যের মর্যাদাকে ক্ষুণ্ন করে। কুকুরটির সঙ্গে লেখকের সখ্য হওয়ার পরের দিন কুকুরটি লেখকের নিমন্ত্রণ রক্ষা করে। পরের দিনও একই সময়ে কুকুরটি লেখকের গৃহে এসে হাজির হয়। অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে কারও বাড়িতে কোনো অতিথি অধিক সময় অবস্থান করলে তাতে আতিথ্যের মর্যাদা লঙ্ঘিত হয়। তাই সাধারণ বিচারে কুকুরটি এ মর্যাদা লঙ্ঘন করেছে, যা আলোচ্য বাক্যে ফুটে উঠেছে।

প্রশ্ন ০৯। “ফোলা পায়ের লজ্জা ঢাকতে বেচারাদের কত না যত্ন!”. বুঝিয়ে লেখ।
উত্তর : “ফোলা পায়ের লজ্জা ঢাকতে বেচারাদের কত না যত্ন।”- কথাটি বেরিবেরি রোগে আক্রান্ত মেয়েদের সম্পর্কে লেখক বলেছিলেন। বিকেল বেলা লেখকের বাড়ির সামনে দিয়ে পা ফোলা ফোলা মেয়েরা দল বেঁধে যেত। বেরিবেরি রোগের কারণে তাদের পা ফুলে গেছে, যা পায়ের সৌন্দর্য নষ্ট করে ফেলেছে। পায়ের এ সৌন্দর্যহীনতা ও লজ্জা ঢাকতেই তারা গরমের দিনেও মোজা পরত। এছাড়াও তারা মাটি পর্যন্ত লুটিয়ে কাপড় পরত। আলোচ্য কথাটি দ্বারা এটাই বোঝানো হয়েছে।

প্রশ্ন ১০। দরিদ্র ঘরের মেয়েটিকে দেখে লেখকের সবচেয়ে বেশি দুঃখ হতো কেন?
উত্তর : দরিদ্র ঘরের মেয়েটিকে দেখে লেখকের সবচেয়ে বেশি দুঃখ হতো, কারণ ঐ মেয়েটির কোনো আত্মীয়-স্বজন ছিল না, সে একা একা পথ চলত। চব্বিশ-পঁচিশ বছরের দরিদ্র মেয়েটির দেহ শীর্ণ আর পাণ্ডুর। যেন গায়ে কোনো রক্ত নেই। মেয়েটির তিনটি ছোট ছোট ছেলেমেয়ে। শীর্ণ মেয়েটিকে নিজের দেহ টেনে নিয়ে যেতেই অনেক কষ্ট করতে হয়। তবুও তার কোলে একটা বাচ্চা থাকে। মেয়েটির এ দুরবস্থা দেখে লেখকের মনে বেশি কষ্ট হতো।

প্রশ্ন ১১। লেখকের অতিথি কেন উপবাস করত?
উত্তর : লেখকের অতিথির উপবাস করার কারণ হলো অতিথির আতিথ্যের প্রতি বাড়ির মালিনী ও চাকরদের আপত্তি। কুকুরটিকে লেখক অতিথির মর্যাদা দিয়ে বেঁচে যাওয়া খাবার দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল, যা মালিনীর স্বার্থ ক্ষুণ্ন করে। তাই সে কুকুরটিকে মেরে তাড়িয়ে দিত। আর সে উদ্বৃত্ত খাবার নিয়ে যেত। এ কারণেই লেখকের অতিথি উপবাস করত।

প্রশ্ন ১২। কুলিদের সাথে কুকুরটির ছোটাছুটি করার কারণ কী? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : কুলিদের সাথে কুকুরটির ছোটাছুটি করার কারণ হলো- লেখকের কোনো কিছু যেন খোয়া না যায়। দেওঘর থেকে লেখকের যাওয়ার দিন কুলিরা ব্যস্ত হয়ে মালামাল গাড়িতে তুলতে লাগল। কুলিদের ব্যস্ততার সাথে কুকুরটিও ছোটাছুটি করে একাত্মতা ঘোষণা করল। লেখকের ভালোবাসার প্রতিদানস্বরূপ সেও যেন সাহায্য করতে চায় লেখককে, তাই কুলিদের সাথে খবরদারি করতে লাগে যেন কোনো জিনিস খোয়া না যায়।

প্রশ্ন ১৩। “হয়তো নিস্তব্ধ মধ্যাহ্নের কোন ফাঁকে লুকিয়ে উপরে উঠে খুঁজে দেখবে আমার ঘরটা।”— ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : আলোচ্য কথাটির দ্বারা অতিথি কুকুরটির প্রতি লেখকের মমতা প্রকাশ পেয়েছে এবং লেখকের প্রতি কুকুরের ভালোবাসার বিষয়টিও স্পষ্ট হয়েছে। দেওঘরে অবস্থানকালে পথের কুকুরটির সাথে লেখকের দারুণ সখ্য গড়ে ওঠে। পরবর্তীতে যা লেখকের মনে একখণ্ড বেদনার অবতারণা করে। কারণ লেখকের প্রস্থানের বিষয়টি কুকরটা তৎক্ষণাৎ বুঝতে পারবে না। তালাবদ্ধ গেটের সামনে অক্লান্তভাবে সে প্রতিদিন অপেক্ষা করবে। তারপর গোপনে লেখককে খুঁজবে। লেখকের প্রতি কুকুরটির এ নিঃস্বার্থ ভালোবাসার কথা স্মরণ করেই লেখক প্রশ্নোক্ত কথাটি বলেছেন।


আশাকরি আমাদের আজকের আর্টিকেল টি আপনাদের ভালো লেগেছে। শিক্ষা, পাঠ্যপুস্তক, গল্পের বই সহ যে কোন পিডিএফ ডাউনলোড করতে আমাদের সাথেই থাকুন। ভালো থাকবেন সবাই, ধন্যবাদ। এছাড়াও আমাদের কোন আপডেট মিস না করতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে আমাদের সাথে ফেসবুকে কানেক্ট থাকতে পারেন।

About মেরাজুল ইসলাম

আমি মেরাজুল ইসলাম, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী পাশাপাশি একজন ব্লগার। এডুকেশন এর প্রতি ভালোবাসাও অনলাইল শিক্ষার পরিসর বাড়ানোর জন্য এডুকেশন ব্লগের পথচলা। ব্লগিং এর পাশাপাশি আমি ওয়েবসাইট ডিজাইন, কন্টেন্ট রাইটিং, কাস্টমাইজ সহ ওয়েব রিলেটেড সকল কাজ করি।

View all posts by মেরাজুল ইসলাম →