নবম-দশম শ্রেণির রসায়ন ১ম অধ্যায়

নবম-দশম শ্রেণির রসায়ন ১ম অধ্যায় এর অনুধাবণ মূলক প্রশ্ন ও উত্তর সমূহ

আসসালামু আলাইকুম, প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা।  কেমন আছো তোমরা? আশাকরি সবাই ভালো আছো। পিডিএএফ মেলার আজকের পোস্টে তোমাদের স্বাগতম। আজকের পোস্টে আমি রসায়ন প্রথম অধ্যায় এর সকল অনুধাবন মূলক প্রশ্ন আপনাদের সাথে শেয়ার করেছি। কথা না বাডিয়ে তাহলে চলুন শুরু করি।

প্রশ্ন ১। পাকা আম খেতে মিষ্টি লাগে কেন?

উত্তর: পাকা আম খেতে মিষ্টি লাগে। কারণ কাঁচা আমে সাক্সিনিক এসিড, ম্যালেয়িক এসিড প্রভৃতি থাকায় কাঁচা আম টক হয়। কিন্তু আম যখন পাকে তখন এই এসিডগুলাের রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে গ্লুকোজ ও ভ্রুক্টোজের সৃষ্টি হয়। তাই পাকা আম খেতে মিষ্টি লাগে।

প্রশ্ন ২। ‘আল-কেমি’ বলতে কি বুঝো?

উত্তর: ‘আল-কেমি’ বলতে প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় রসায়ন চর্চাকে বােঝানাে হয়। আল-কেমি’ শব্দটি আরবি আল-কিমিয়া’ থেকে উদ্ভূত যা দিয়ে মিসরীয় সভ্যতাকে বুঝানাে হতাে। আল-কেমি’র দ্বারা প্রাচীন মিসরীয়রা তাদের চাহিদা বহুলাংশে মেটাতে সক্ষম হয়েছিল।

প্রশ্ন ৩। দেহকে রাসায়নিক কারখানা বলা হয় কেন?

উত্তর: জীবদেহ বিভিন্ন জটিল অণু যেমন প্রােটিন, চর্বি, ক্যালসিয়াম, পানি, DNA প্রভৃতি নিয়ে গঠিত। দেহের ভেতরের এই যৌগগুলাের মধ্যে প্রতি মুহূর্তেই ঘটে চলেছে অসংখ্য রাসায়নিক বিক্রিয়া। আর সেজন্যই আমরা বেঁচে আছি। উদ্ভিদ কিংবা প্রাণী সকলের দেহই বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ নিয়ে গঠিত হওয়ায় দেহকে রাসায়নিক কারখানা বলা হয়।

প্রশ্ন ৪। কিভাবে মরিচা প্রতিরোধ করা যায়?

উত্তর: সাধারণত ধাতুর উপরিতলে রং বা গ্রিজ দিয়ে, মেশিনের ঘূর্ণনশীল অংশে তেল বা গ্রিজ দিয়ে মরিচা রােধ করা হয়। লােহার উপর দস্তার প্রলেপ থাকলে মরিচা পড়তে পারে না। লােহ বা ইস্পাতের তৈরি তৈরি সামগ্রীর ওপর তড়িৎ বিশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় ইলেকট্রোপ্লেটিং-এর মাধ্যমে মরিচা প্রতিরােধ করা হয়। ইস্পাতের সঙ্গে ক্রোমিয়াম ও নিকেল মিশিয়ে যে বিশেষ ইস্পাত তৈরি করা হয় তাকে স্টেইনলেস স্টিল বলে। এতে মরিচা ধরে না।

প্রশ্ন ৫। বর্তমান পৃথিবীতে গবেষণার গুরুত্ব কি?

উত্তর: বিজ্ঞানের কল্যাণে আজ মানুষের জীবন হয়েছে সুন্দর, সহজ হয়েছে সকল কাজ, উন্নত হয়েছে জীবনযাত্রার মান। শিক্ষা, চিকিৎসা, কৃষি, যােগাযােগসহ সকল ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের অবদান অনস্বীকার্য । বিজ্ঞানের এ ভূমিকা সম্ভব হয়েছে একমাত্র গবেষণার দ্বারা। তাই প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে গবেষণার কোনাে বিকল্প নেই।

প্রশ্ন ৬। ল্যাভয়সিয়েকে বসায়নের জনক বলা হয় কেন?

উত্তর: অ্যারিস্টটল, জাবির ইবনে হাইয়ানসহ অনেক দার্শনিক মনে করতেন সকল পদার্থ মাটি, আগুন, পানি ও বাতাস মিলে তৈরি কলে রসায়নের প্রকৃত রহস্যগুলো তাদের কাছে পরিষ্কার ছিল না। অগেয়ে বিজ্ঞানী অ্যান্টনি ল্যাভাসিয়ে সায়নের প্রকৃত সহস্য উদ্ভাবন করে রসায়ন চর্চা প্রথম শুরু করেন বলে ল্যাভয়সিয়েকে রসায়নের জনক বলে ।

প্রশ্ন ৭। কীভাবে Chemistry শব্দের উৎপত্তি হয়?

উত্তর: মধ্যযুগীয় আরবের রসায়ন চর্চাকে আলকেমি (Alchemy) বলা হতাে। আলকেমি শব্দটি এসেছে আবৃৰি আল-কিমিয়া থেকে আল- কিমিয়া শব্দটি আবার এসেছে কিমি (Chemi) শব্দ থেকে এই Chemi শব্দ থেকেই Chemistry শব্দের উৎপত্তি।

প্রশ্ন ৮ ল্যাবরেটরিতে বিশেষ পােশাক পরিধান করতে হয় কেন?

উত্তর: ল্যাবরেটরিতে দুর্ঘটনা এড়াতে বিশেষ পােশাক পরিধান করতে হয়। ল্যাবরেটরিতে যে সকল রাসায়নিক পদার্থ নিয়ে কাজ করা হয় সেগুলাে অত্যন্ত বিপজ্জনক। এজন্য ল্যাবরেটরিতে ঢিলে-ঢালা পােশাক পরা উচিত নয়। এ সময় রাসায়নিক পদার্থ থেকে কাপড় ও শরীরকে রক্ষা করতে এপ্রােন পরা উচিত। তাছাড়া খালি হাতে কোনাে রাসায়নিক পদার্থ ধরা উচিত নয়। এজন্য সব সময় হ্যান্ড গ্লাভস পরে থাকা উচিত।

প্রশ্ন ৯। পরীক্ষাগারে মাস্ক ব্যবহার করা হয় কেন?

উত্তর: পরীক্ষাগারে কোনো কোনাে পরীক্ষায় মারাত্মক বিষাক্ত ও দুর্গন্ধযুক্ত গ্যাস নির্গত হয়। এসব নির্গত গ্যাসের প্রভাবে চোখে পানি আসা, মাথা ব্যথা করা, বমি আসা, শ্বাসকষ্ট হওয়া এমনকি শিক্ষার্থী জান পর্যন্ত হারিয়ে ফেলতে পারে। মাস্ক ব্যবহারের ফলে এরূপ দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা যথেষ্ট কমে যায়।

প্রশ্ন ১০। ল্যাবরেটরিতে নিরাপদ চশমা বা গগলস পরার প্রয়ােজনীয়তা কী?

উত্তর: চোখ মানুষের অমূল্য সম্পদ। ল্যাবরেটরিতে বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদানকে বার্নারে তাপ দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। এ সময় নিজের বা অন্যের অসাবধানতার কারণে বিভিন্ন ক্ষতিকারক রাসায়নিক উপাদান এমনকি তীব্র এসিড বা ক্ষার ছিটকে গিয়ে চোখে মুখে পড়তে পারে। এতে চোখ চিরদিনের জন্য অন্ধ হয়ে যেতে পারে। চোখে সেফটি গ্লাস বা গগলস বা পরা থাকলে এরূপ দুর্ঘটনার হাত থেকে অনেকটাই রক্ষা পাওয়া যায়।

প্রশ্ন ১১। প্রত্যেকের রসায়ন সম্পর্কে জ্ঞান থাকা জরুরি কেন?

উত্তর: ভালাে থাকার জন্য রাসায়নিক পদার্থের পরিমিত ব্যবহার অত্যন্ত জরুরি। তা একমাত্র রসায়ন সম্পর্কে সুস্পষ্ট জ্ঞানই নিশ্চিত করতে পারে। অপরদিকে, রসায়ন পাঠের মাধ্যমে রাসায়নিক পদার্থের বিভিন্ন ক্ষতিকারক দিক ও ঝুঁকি সম্পর্কে জ্ঞানার্জন সম্ভব, যা আমাদেরকে সচেতন নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে পারে। এর পাশাপাশি আমরা বিভিন্ন সামগ্রী ব্যবহারকারী এবং প্রস্তুতকারী উভয়ে রাসায়নিক পদার্থের গুণাগুণ বিবেচনাপূর্বক এদের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করে সমাজ ও পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারি। তাই প্রত্যেকের রসায়ন সম্পর্কে জ্ঞান থাকা অতীব জরুরি।

প্রশ্ন ১২। বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইড বৃদ্ধির কারণ কী?

উত্তর: মানুষ বিভিন্ন ক্ষেত্রে জ্বালানি হিসেবে কেরােসিন, প্রাকৃতিক গ্যাস, পেট্রোল, ডিজেল ব্যবহার করে থাকে। এসব জ্বালানি ব্যবহারের ফলে বিপুল পরিমাণ কার্বন ডাইঅক্সাইড তৈরি হয়। এছাড়া চুলােয় রান্না করার সময় কাঠ বা প্রাকৃতিক গ্যাস পুড়ে কার্বন ডাইঅক্সাইড তৈরি হয়। এর ফলে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।

  • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপন্যাস মনে রাখার কৌশল

প্রশ্ন ১৩। কাঁচা ফল টক হয় কেন?

উত্তর: কাঁচা ফলে চিনি থাকে না। কাঁচা ফলে বিভিন্ন প্রকার জৈব এসিড যেমন- ম্যালেয়িক এসিড, সাথিনিক এসিড এবং কোনাে কোনাে ফলে সামান্য পরিমাণে অজৈব এসিড়ও পাওয়া যায়। কাচা ফলে pH মান কম থাকে। তাই কাঁচা ফল টক হয় ।

প্রশ্ন ১৪। রসায়নে রাসায়নিক দ্রব্য বা উপাদান পুনরুদ্ধার তথা পুনর্ব্যবহার জরুরি কেন?

উত্তর: প্রকৃতিতে বর্তমান রাসায়নিক দ্রব্য বা উপাদানগুলাের মধ্যে কোনাে কোনােটি ব্যাপক ব্যবহারের ফলে এক সময় নিয়ে হয়ে যেতে পারে। এসব উপাদান নষ্ট হলে দীর্ঘদিন পরিত্যন্ত অবস্থায় থাকলে আমাদের পরিবেশের ক্ষতি হতে পারে। তাই এসব পরিত্যক্ত উপাদান হতে প্রয়ােজনীয় উপাদান পুনরুধার একটি পরিবেশবান্ধব সিদ্ধান্ত । কাজেই প্রকৃতিতে প্রয়ােজনীয় রাসায়নিক দ্রব্য বা উপাদানের পর্যাপ্ত মজুদ বজায় রাখার জন্য উপাদানগুলাের পুনরুদ্ধার করে পুনর্ব্যবহার জরুরি।

প্রশ্ন ১৫। রাসায়নিক দ্রব্য সংগ্রহ বা পরীক্ষণের পূর্বে তার কার্যকারিতা সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা থাকা জরুরি কেন?

উত্তর: রসায়ন পরীক্ষণ নির্ভর বিজ্ঞান হওয়ায় অনুসন্ধান ও গবেষণার কাজে রাসায়নিক দ্রব্যের যথেষ্ট ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়। তবে অনেক রাসায়নিক পদার্থ স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য প্রত্যক্ষ বা পরােক্ষভাবে মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। কিছু রাসায়নিক দ্রব্য আছে যা সহজেই বিস্ফোরণযােগ্য, বিষাক্ত, দাহ্য, স্বাস্থ্যসংবেদনশীল কিংবা ক্যান্সার সৃষ্টিকারী। এজন্য সতর্কতামূলক পূর্ব পদক্ষেপ হিসেবে রাসায়নিক দ্রব্যের কার্যকারিতা সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা থাকা অত্যন্ত জরুরি।

প্রশ্ন ১৬। কীভাবে আমরা জ্বালানির অপচয় রােধ করতে পারি?

উত্তর: জ্বালানির অপচয় রােধে প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থাসমূহ-
ক. রান্নাবান্না শেষে চুলা বন্ধ করে রাখা।
খ. গ্যাসের চুলার উপর কাপড়-চোপড় শুকানাে বন্ধ করা।
গ. পথের মধ্যে থামতে হলে গাড়ির ইঞ্জিন বন্ধ করে রাখা।
ঘ. যানবাহনের ইঞ্জিন ত্রুটিমুক্ত রাখা।
ঙ. ব্যবহারের প্রয়ােজনীয়তা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া।

প্রশ্ন ১৭। কাঠ, কয়লা পােড়ানাে একটি রাসায়নিক পরিবর্তন- ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: কাঠ, কয়লা মূলত কার্বনের যৌগ। এগুলােতে আগুন জ্বালানাের অর্থ প্রকৃতপক্ষে কার্বনের দহন । আর যেকোনাে প্রকার দহন হলাে রাসায়নিক পরিবর্তন। এর ফলে কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাস, জলীয় বাষ্প ও তাপের উৎপাদন হয়।

প্রশ্ন ১৮। ভিনেগার কীভাবে আচারকে সংরক্ষণ করে?

উত্তর: আচার সংরক্ষণের জন্য ভিনেগার বা সিরকা ব্যবহার করা হয়। আচার পচে যাওয়ার জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়া। ভিনেগারের ইথানয়িক এসিডের H+ আয়ন ব্যাকটেরিয়ার প্রােটিন ও ফ্যাটকে আবিশ্লেষিত করে। ফলে ব্যাকটেরিয়া মরে যায়। এতে করে আচার পচনের হাত থেকে রক্ষা পায়।

প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুগন, এই ছিলো ১ম অধ্যায় এর সকল অনুধাবন মূলক প্রশ্ন। আশাকরি প্রথম অধ্যায় থেকে প্রশ্ন আসলে এগুলোর মধ্যেই তোমরা কমন পাবা। তোমাদের জন্য শুভ কামণা রইলো, ধন্যবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *