SSC: বঙ্গবানী কবিতার সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

বঙ্গবানী কবিতার সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

বঙ্গবানী কবিতার সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর: মধ্যযুগের বাংলা কাব্যসাহিত্যের অন্যতম কবি আবদুল হাকিম। মধ্যযুগের কবিদের মধ্যে তিনিই বাংলা ভাষার প্রথম কবি যিনি দেশি ভাষার গুণকীর্তন করে কাব্য রচনা করেছেন। তাঁর কাছ থেকে অনুপ্রেরণা লাভ করে পরবর্তীকালের কবি-সাহিত্যিকরা সাহিত্য রচনা করেছেন।

‘বঙ্গবাণী’ কবিতায় কবি মাতৃভাষা বাংলার প্রতি সুগভীর ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা প্রকাশ করেছেন। সেকালে একশ্রেণির মানুষ সংস্কৃত, আরবি ও ফারসি ভাষায় রচিত গ্রন্থসমূহ বিশেষ করে ধর্মীয় বিষয়কে বাংলা ভাষায় রূপান্তরের ঘোর বিরোধী ছিলেন। অথচ তাদের বোধগম্য ভাষা হচ্ছে নিজ নিজ মাতৃভাষা। কবি উপলব্ধি করেছেন, বাংলা ভাষায় গ্রন্থ রচিত না হলে সাধারণ মানুষ তার অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে।

মানুষের নিজ ধর্ম পালনের মাধ্যমে আল্লাহর কৃপা পাওয়ার সমান অধিকার রয়েছে। আর মহান স্রষ্টা তাঁর সৃষ্ট সব পশু-পাখি ও মানুষের ভাষাই বুঝতে পারেন। তাই কবি নিজ ভাষায় কাব্য রচনার এবং ধর্মীয় উপাসনার পক্ষে তার মতামত প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, মারফত সম্পর্কে যারা অজ্ঞ তারাই হিন্দুয়ানি ভাষাজ্ঞানে বাংলা ভাষার প্রতি অনীহা প্রকাশ করে।

বাংলার মাটিতে জন্মে যারা বাংলা ভাষার প্রতি বিরূপ মনোভাব পোষণ করে কবি তাদের জন্মপরিচয় নিয়ে সন্দিহান। কবির মতে, তাদের এ দেশ ত্যাগ করা উচিত। সব ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই দেশীয় ভাষার সহজবোধ্যতা সাধারণ মানুষের বোধগম্য। ফলে জ্ঞানান্বেষণে সুবিধার কথা চিন্তা করেই কবি আলোচ্য কবিতায় বাংলা ভাষায় গ্রন্থ রচনার পক্ষে মতামত ব্যক্ত করেছেন।


এসএসসি বাংলা ১ম পত্রের সকল গদ্য ও কবিতার সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: সুভা
🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: বইপড়া
🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: আম আঁটির ভেঁপু
🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: মানুষ মুহাম্মদ (সাঃ)
🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: নিমগাছ
🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব
🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: প্রবাস বন্ধু
🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: মমতাদি
🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: সাহিত্যের রুপ ও রীতি
🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: একাত্তরের দিনগুলি
🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: বঙ্গবানী
🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: কপোতাক্ষ নদ
🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: জীবন-সঙ্গীত
🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: মানুষ
🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: পল্লিজননী
🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: রানার
🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা
🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: আমার পরিচয়
🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: স্বাধীনতা এ শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো


বঙ্গবানী কবিতার সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

সৃজনশীল ০১: মুকুল সাহেব তার একমাত্র ছেলেকে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়ান। তিনি বলেন, আমার ছেলে বাংলা বলতেই পারে না। অপরদিকে রাজু সাহেব বলেন, আমার ছেলেকে প্রথমেই বাংলা শেখাব, তারপর অন্যান্য; কেননা মাতৃভাষা ও এর ব্যবহার ছাড়া কোনো জাতি প্রকৃত মর্যাদা ও উন্নতি লাভ করতে পারে না।

ক. ‘বঙ্গবাণী’ কবিতাটি কবির কোন কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে?
খ. “সে সব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি”- বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
গ. উদ্দীপকের মুকুল সাহেব ‘বঙ্গবাণী’ কবিতার কোন দিকটির প্রতিনিধিত্ব করে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের রাজু সাহেবের উক্তিটি ‘বঙ্গবাণী’ কবিতার কবির মনোভাবের ধারক।- উক্তিটির যথার্থতা মূল্যায়ন কর।

১নং প্রশ্নের উত্তর

ক। ‘বঙ্গবাণী’ কবিতাটি কবির ‘নূরনামা’ কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে।

খ। ‘সে সব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি’ বলতে বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করে যারা বাংলা ভাষাকে ঘৃণা করে তাদের জন্মপরিচয় নিয়ে কবি যে সন্দিহান সেই বিষয়টি বোঝানো হয়েছে। সতেরো শতকে এক শ্রেণির লোক এ দেশ, নিজের ভাষা, নিজের সংস্কৃতি এমনকি নিজের আসল পরিচয় সম্পর্কে বিভ্রান্ত ছিল। তারা বাংলাকে ‘হিন্দুর অক্ষর’ বিবেচনা করে ঘৃণা করত এবং আরবি-ফারসি ভাষায় কথা বলতে পছন্দ করত। নিজের মাতৃভাষাকে ঘৃণা করা এসব শেকড়হীন, পরগাছা স্বভাবের মানুষ সম্পর্কে কবি প্রশ্নোক্ত কথাটি বলেছেন। মূলত ঐ বাক্যটির মাধ্যমে বাংলা ভাষাবিদ্বেষীদের কবি কটাক্ষ করে তাদের বোধোদয় ঘটাতে চেয়েছেন।

গ। উদ্দীপকের মুকুল সাহেব ‘বঙ্গবাণী’ কবিতার একশ্রেণির মানুষের মাতৃভাষাকে উপেক্ষা করার দিকটির প্রতিনিধিত্ব করে। মাতৃভাষায় কথা বলা মানুষের জন্মগত অধিকার। মাতৃভাষার মাধ্যমেই মানুষ যথাযথভাব মনের ভাব প্রকাশ করতে পারে। আবার অনেকে আছে মাতৃভাষাকে সম্মান করে না। যারা মাতৃভাষার পরিবর্তে অন্য ভাষাকে গুরুত্ব দেয় তারা নীচ ও হীন প্রকৃতির লোক । উদ্দীপকের মুকুল সাহেব তার একমাত্র ছেলেকে ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ান। তিনি গর্ব করে বলেন যে, তার ছেলে বাংলা বলতেই পারে না। তার এমন আচরণের মধ্য দিয়ে মাতৃভাষাকে উপেক্ষার দিকটি প্রকাশ পেয়েছে। ‘বঙ্গবাণী’ কবিতায়ও কবি এমন মানুষের কথা বলেছেন যারা সংকীর্ণমনা। যারা বাংলায় জন্মে বাংলা ভাষাকে উপেক্ষা করত কবি তাদের প্রতি তীব্র ক্ষোভ ও ঘৃণা প্রকাশ করেছেন। কারণ তারা মাতৃভাষা বাংলাকে ‘হিন্দুর অক্ষর’ বলে উপেক্ষা করেছে। এভাবে উদ্দীপকের মুকুল সাহেব ‘বঙ্গবাণী’ কবিতার মাতৃভাষাকে উপেক্ষা করার দিকটির প্রতিনিধিত্ব করে।

ঘ। উদ্দীপকের রাজু সাহেবের উক্তিটি ‘বঙ্গবাণী’ কবিতার কবির মনোভাবের ধারক।- উক্তিটি যথার্থ। বাঙালির মুখের ভাষা বাংলা। বাংলার ইতিহাস-ঐতিহ্য সবকিছুই এই ভাষার সঙ্গে সম্পর্কিত। মাতৃভাষার প্রতি তাই সবার মমত্ববোধ থাকা উচিত।

‘বঙ্গবাণী’ কবিতায় কবি আবদুল হাকিম বাংলা ভাষার প্রতি গভীর অনুরাগ ও ভালোবাসা প্রকাশ করেছেন। তিনি মাতৃভাষায় কাব্যচর্চাকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন। মাতৃভাষা বাংলাকে যারা অবজ্ঞা করেছে কবি তাদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করেছেন। কবি মনে করেন, যে ভাষা সবার বোধগম্য সেই মাতৃভাষাই মানুষের জন্য হিতকর। কারণ মাতৃভাষায় বর্ণিত বক্তব্য আমাদের মর্ম স্পর্শ করে।

উদ্দীপকের রাজু সাহেবের বক্তব্যের মধ্যে দিয়েও মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মানের দিকটি প্রকাশ পেয়েছে। তার মতে মাতৃভাষা ব্যবহার করেই জাতি প্রকৃত মর্যাদা ও উন্নতি লাভ করতে পারে। উদ্দীপকের রাজু সাহেব এবং ‘বঙ্গবাণী’ কবিতার কবির বক্তব্যের মধ্য দিয়ে মাতৃভাষার গুরুত্ব এবং এ ভাষার প্রতি ভালোবাসার দিকটিই প্রকাশ পেয়েছে। তাদের উভয়ের চেতনা অভিন্ন। এসব দিক বিচারে তাই বলা যায় যে, প্রশ্নোত্ত মন্তব্যটি যথার্থ।

সৃজনশীল ০২: সাহিদ ও জাহিদ দুই বন্ধু বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। সাহিদ বাংলা ভাষাকে খুব ভালোবাসে। অন্যদিকে জাহিদের বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি পছন্দ নয়। সে ইংরেজি জানা নিয়ে গর্ব করে। সাহিদ ক্ষুব্ধ হয়ে জাহিদকে বলে, “আমরা বাঙালি, বাংলা ভাষা আমাদের অহংকার।”

ক. ‘জুয়ায়’ শব্দের অর্থ কী?
খ. মাতা পিতামহ ক্রমে বঙ্গেত বসতি দেশী ভাষা উপদেশ মনে হিত অতি’— ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের জাহিদের মতো মানুষদের প্রতি কবি আবদুল হাকিম কী মনোভাব পোষণ করেন? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের সাহিদ ও ‘বঙ্গবাণী’ কবিতার কবির বক্তব্য একই চেতনা থেকে উৎসারিত” বিশ্লেষণ কর।

২নং প্রশ্নের উত্তর

ক। জুয়ায় শব্দের অর্থ জোগায়।

খ। ‘মাতা পিতামহ ক্রমে বঙ্গেত বসতি/দেশী ভাষা উপদেশ, মনে হিত অতি’ বলতে কবি বংশানুক্রমে বহুকাল ধরে মানুষের এদেশে বাস এবং বাংলা ভাষার প্রচলন ও এ ভাষার কল্যাণের দিকটিকে বুঝিয়েছেন। ‘বঙ্গবাণী’ কবিতায় কবি বাংলা ভাষার প্রতি গভীর ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা প্রকাশ করেছেন। মাতৃভাষায় জ্ঞানচর্চা, সাহিত্য রচনা এবং নীতি ও আদর্শ প্রচার অত্যন্ত সহজ ও স্বাভাবিক বলে কবি মনে করেছেন। তিনি দেখিয়েছেন যে, বংশানুক্রমে বহুকাল ধরে মানুষ এদেশে বাস করছে এবং মাতৃভাষা বাংলা ব্যবহার করে আসছে। মাতৃভাযায় মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যে, আনন্দে মনের ভাব প্রকাশ করতে পারে। মাতৃভাষা ভাব প্রকাশের সর্বোত্তম বাহন। এ কারণে প্রত্যেক জাতির কাছেই তার মাতৃভাষা অত্যন্ত মূল্যবান এবং সমৃদ্ধ ঐতিহ্য। এই দিকটি তুলে ধরতেই কবি প্রশ্নোক্ত কথাটি বলেছেন।

গ। উদ্দীপকের জাহিদের মতো মানুষের প্রতি কবি আবদুল হাকিম ক্ষুব্ধ মনোভাব পোষণ করেন।

মাতৃভাষা মানুষের প্রাত্যহিক জীবনযাত্রার সঙ্গে জড়িয়ে থাকে। মানুষের চিন্তা-চেতনা, সাধনা মাতৃভাযাতেই সহজভাবে সম্পন্ন হয়। কারণ মাতৃভাষা মানুষের সহজাত ভাষা।

উদ্দীপকের জাহিদের আচরণে মাতৃভাষার প্রতি অবজ্ঞা ও অবহেলা প্রকাশ পেয়েছে। কারণ সে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিকে পছন্দ করে না। এদেশে জন্মগ্রহণ করেও সে এদেশের ভাষাকে সম্মান করে না। সে ইংরেজি জানাকে গৌরবের বিষয় মনে করে। জাহিদের এই আচরণের বিষয়টি ‘বঙ্গবাণী’ কবিতায় প্রতিফলিত বাংলা ভাষাবিদ্বেষী মনোভাবসম্পন্ন মানুষের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। তারা দেশি ভাষাকে মূল্য ও মর্যাদা না দিয়ে বিদেশি ভাষাকে বেশি গুরুত্ব দেয়। কবি আবদুল হাকিম এ ধরনের স্বদেশি ভাষাবিদ্বেষী এবং বিদেশি ভাষাপ্রেমিকদের প্রতি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, দেশি ভাষার প্রতি যাদের অনুরাগ নেই, দেশি ভাষার বিদ্যা যাদের মন জোগায় না, যারা মাতৃভাষাকে অবহেলা করে, তারা যেন এ দেশ ত্যাগ করে বিদেশে চলে যায়।

ঘ। “উদ্দীপকের সাহিদ ও ‘বঙ্গবাণী’ কবিতার কবির বক্তব্য একই চেতনা থেকে উৎসারিত” – মন্তব্যটি যথার্থ।

মা, মাতৃভাষা ও মাতৃভূমি প্রত্যেক মানুষের কাছে পরম শ্রদ্ধার। মানুষ তার প্রয়োজনে মাতৃভাষা ছাড়াও একাধিক ভাষা শিখে। তাই বলে মাতৃভাষাকে অবজ্ঞা করা উচিত নয়। কারণ স্বদেশের ভাষা-সংস্কৃতিকে অবহেলা করে বিদেশি ভাষা-সংস্কৃতি দ্বারা কেউ বড় হতে পারে না। উদ্দীপকের সাহিদ বাংলা ভাষার প্রতি অনুরাগী। সে বাংলা ভাষাকে ভালোবাসে। যারা বাংলা ভাষাকে অবজ্ঞা ও অবহেলা করে তাদের প্রতি সে ক্ষুব্ধ।

সে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলে আমরা বাঙালি, বাংলা ভাষা আমাদের অহংকার। সাহিদের এ বক্তব্য এবং ‘বঙ্গবাণী’ কবিতায় প্রতিফলিত কবির বক্তব্য এক। কবিও বাংলা ভাষাবিদ্বেষীদের প্রতি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, যারা বাংলা ভাষাকে ঘৃণা করে, তারা যেন এদেশ ছেড়ে অন্য কোনো দেশে চলে যায়। কারণ বাংলা ভাষা বাঙালিদের কাছে অনেক মর্যাদার ও অহংকারের। বাংলা ভাষা ছাড়া অন্য কোনো ভাষার প্রতি কবির বিশেষ আগ্রহ নেই। তিনি এ ভাষাতেই তাঁর আবেগ-অনুভূতি প্রকাশ করেন। উদ্দীপকের সাহিদের মধ্যেও এ ধরনের ভাষাপ্রীতি লক্ষ করা যায়।

‘বঙ্গবাণী কবিতায় কবি তাঁর মাতৃভাষা বাংলার প্রতি গভীর অনুরাগ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু এদেশে জন্মগ্রহণ করে যারা এদেশের ভাষাকে অবজ্ঞা করে তাদের প্রতি তিনি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কবির মতো উদ্দীপকের সাহিদও বাংলা ভাষাবিদ্বেষীদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। এই দিক বিচারে প্রশ্নোত্ত মন্তব্যটি যথার্থ।

সৃজনশীল ০৩: ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের ছাত্রী টিনা কথায় কথায় বন্ধুদের সাথে ইংরেজি বলে। তারা ইংরেজি ভালো বলতে পারে না বলে সে তাদেরকে অবজ্ঞার চোখে দেখে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তার বন্ধু রাখি বলে, তোমার মতো বিদেশি ভাষা প্রীতি স্বভাবের মেয়ের সাথে আমার বন্ধুত্বের কোনো প্রয়োজন নেই। এ কথা বলে সে তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে।

ক. কারা হিন্দুর অক্ষরকে হিংসা করে?
খ. ‘দেশী ভাষা উপদেশ মনে হিত অতি’— কথাটি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?
গ. উদ্দীপকের টিনার মতো মানসিকতাসম্পন্ন মানুষ সম্পর্কে ‘বঙ্গবাণী’ কবিতার কবির অভিমত ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের রাখি ও কবি আবদুল হাকিমের চিন্তা ও চেতনা একসূত্রে গাঁথা’- মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।

৩নং প্রশ্নের উত্তর 

ক। মারফতে জ্ঞানহীনরা হিন্দুর অক্ষরকে হিংসা করে।

খ। “দেশী ভাষা উপদেশ মনে হিত অতি” কথাটি দ্বারা নিজ ভাষার মাধ্যমে জ্ঞান-বিজ্ঞানের সঙ্গে পরিচয় লাভ করা সহজ ও হিতকর দিকটিকে বোঝানো হয়েছে।

‘বঙ্গবাণী’ কবিতায় কবি একদিকে নিজের মাতৃভাষা বাংলার প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রকাশ করেছেন, অন্যদিকে যারা মাতৃভাষাকে অবজ্ঞা ও অবহেলা করে তাদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করেছেন। কবি মনে করেন, যে ভাষা সবার বোধগম্য সেই মাতৃভাষাই মানুষের জন্য হিতকর। তাই তিনি ক্ষোভ গশ করে বলেছেন যারা মাতৃভাষা চর্চা করে না, তাদেরকে তিনি এদেশ ছেড়ে যাওয়া উচিত বলে মনে করেছেন। কারণ কবি জানেন যে, মাতৃভাষাই জ্ঞান-বিজ্ঞানের নানা কিছু জানার সর্বোত্তম মাধ্যম। এ ভাষার উপদেশ মানুষের মনের জন্য সবচেয়ে বেশি হিতকর। প্রশ্নোক্ত লাইনে একথাই বলা হয়েছে।

গ। উদ্দীপকের টিনার মতো মানসিকতাসম্পন্ন মানুষ সম্পর্কে ‘বঙ্গবাণী’ কবিতার কবির অভিমত হচ্ছে— তারা যেন স্বদেশ ছেড়ে বিদেশে চলে যায়। মায়ের কাছ থেকে শেখা ভাষা মাতৃভাষা। মানুষ মাতৃভাষা ছাড়া অন্য কোনো ভাষায় সহজভাবে মনের ভাব প্রকাশ করতে পারে না। এ কারণে প্রত্যেক জাতির কাছেই তার মাতৃভাষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উদ্দীপকে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের ছাত্রী টিনার ইংরেজিপ্রীতি এবং বাংলা ভাষার প্রতি নেতিবাচক মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে। এখানে টিনার বন্ধু রাখি মাতৃভাষা বাংলার প্রতি অনুরাগী বলে টিনার বিদেশি ভাষাপ্রীতিকে মেনে নিতে চায়নি। এখানে টিনার যে মানসিকতা প্রকাশ পেয়েছে তা ‘বঙ্গবাণী’ কবিতার কবি এ ধরনের ব্যক্তিদের স্বদেশ ছেড়ে বিদেশে চলে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। কবি তাদের জন্ম ও বংশপরিচয় সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।

ঘ। ‘উদ্দীপকের রাখি ও কবি আবদুল হাকিমের চিন্তা ও চেতনা একসূত্রে গাঁথা’— মন্তব্যটি যথার্থ।

ভাষার মাধ্যমে মানুষ নিজের চিন্তা-চেতনা অন্যের কাছে প্রকাশ করে। মাতৃভাষার মধ্য দিয়ে মানুষ নিজের সত্তার বিকাশ যতটা সহজভাবে ঘটাতে পারে, তা অন্য কোনো ভাষায় সম্ভব নয়।

উদ্দীপকে বিদেশি ভাষা ইংরেজিপ্রীতি এবং বাংলা ভাষার অনুরাগী দুই বন্ধুর কথা বলা হয়েছে। এদের একজন টিনা, যে বাংলা বলে না। ইংরেজি স্কুলে পড়ে ইংরেজিতে কথা বলে। এর বিপরীতে আছে রাখি। রাখি নিজের মাতৃভাষা বাংলায় কথা বলে। নিজের দেশের ভাষাকে বাদ দিয়ে সে অন্য কোনো ভাষাকে বড় মনে করে না। উদ্দীপকের রাখির মনোভাব ‘বঙ্গবাণী’ কবিতার কবির মনোভাবের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।

কবিও এই কবিতায় বাংলা ভাষার প্রতি গভীর অনুরাগী। উদ্দীপকে টিনার ইংরেজি ভাষাপ্রীতিকে রাখি ঘৃণা করেছে এবং বিদেশি ভাষাপ্রীতি স্বভাবের মেয়ের সঙ্গে বন্ধুত্ব থাকার প্রয়োজন নেই বলে তাকে জানিয়ে দিয়েছে। টিনার প্রতি রাখির এই ক্ষোভ ‘বঙ্গবাণী’ কবিতার কবির বাংলা ভাষাবিদ্বেষীদের প্রতি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশের সঙ্গে একসূত্রে গাঁথা।

‘বঙ্গবাণী’ কবিতায় কবি আবদুল হাকিম বাংলা ভাষার প্রতি গভীর অনুরাগ ও ভালোবাসা প্রকাশ করেছেন। বংশানুক্রমে এদেশের মানুষ এ ভাষাতেই কথা বলে আসছেন। তাই এদেশে জন্মগ্রহণ করেও যারা এ ভাষাকে ঘৃণা করে কবি তাদের জন্ম ও বংশপরিচয় সম্পর্কে প্রশ্ন তুলেছেন। উদ্দীপকের রাখিও কবির মতো বাংলা ভাষার প্রতি গভীর অনুরাগী। তাই সে বিদেশি ভাষাপ্রীতি স্বভাবের মানুষের সঙ্গ ত্যাগের কথা বলেছে। এসব দিক বিচারে তাই বলা যায়, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।

সৃজনশীল ০৪: ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলার দামাল ছেলেরা মাতৃভাষার মান রক্ষার্থে রাজপথে জীবন দেয়। মাতৃভাষার জন্য মানুষের এমন আবেগ-অনুভূতির দৃষ্টান্ত ইতিহাসে বিরল। বাঙালি প্রমাণ করেছে মা, মাটি ও মাতৃভাষা তাদের কাছে সমান ভালোবাসার জিনিস।

ক. ‘বঙ্গবাণী’ কবিতাটি কোন শতকে রচিত হয়?
খ. কবি কাদেরকে এবং কেন বিদেশ চলে যেতে বলেছেন?
গ. উদ্দীপকে ‘বঙ্গবাণী’ কবিতার সাদৃশ্যপূর্ণ ভাবটি ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকের ভাষাসৈনিকদের পূর্বসূরি যেন ‘বঙ্গবাণী’ কবিতার কবি।”— বিশ্লেষণ কর।

৪নং প্রশ্নের উত্তর

ক। ‘বঙ্গবাণী’ কবিতাটি সপ্তদশ শতকে রচিত হয়।

খ। কবি মাতৃভাষার প্রতি অবজ্ঞাকারীদের স্বদেশ ছেড়ে বিদেশ যেতে বলেছেন। ‘বঙ্গবাণী’ কবিতায় কবি বাংলা ভাষার প্রতি গভীর অনুরাগ ও ভালোবাসা প্রকাশ করেছেন। তিনি বাংলা ভাষাকে অবজ্ঞাকারী কূপমণ্ডূকদের নিজ দেশ ছেড়ে বিদেশে চলে যেতে বলেছে। কারণ তারা স্বদেশি ভাষা ছেড়ে বিদেশি ভাষা সংস্কৃতির প্রতি বেশি অনুরাগ দেখায়। বাংলা ভাষার প্রতি তাদের আগ্রহ নেই। তাই তিনি তাদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে তাদেরকে বিদেশ যেতে বলেছেন।

গ। উদ্দীপকে ‘বঙ্গবাণী’ কবিতার সাদৃশ্যপূর্ণ ভাবটি হলো- মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসা । সাধারণভাবে মা, মাতৃভূমি আর মাতৃভাষা মানুষের আমিত্বের সঙ্গে মিশে থাকে। মাতৃভাষায় কথা বলার মতো এত সহজ উপায় আর নেই; তাই এ ভাষা মানুষের কাছে এত প্রশান্তির, এত মধুর। এ ভাষার জন্যেই অকাতরে জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন এ দেশের বীর সন্তানেরা।

উদ্দীপকে বলা হয়েছে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলার দামাল ছেলেরা মাতৃভাষার মান রক্ষার্থে রাজপথে জীবন দেন। তাঁরা মা’কে যেমন ভালোবাসেন মাতৃভাষাকেও তেমনই ভালোবাসেন। তাই তাঁরা প্রমাণ করতে পেরেছেন মা, মাটি ও মাতৃভাষা তাঁদের কাছে সমান ভালোবাসার জিনিস। ‘বঙ্গবাণী’ কবিতায় কবি নিজের মনের গভীর ভাব প্রকাশ করেছেন। মাতৃভাষার বাইরে আরবি বা ফারসি ভাষার প্রতি তাঁর কোনো বিদ্বেষ নেই। তাঁর যুক্তি, মাতৃভাষাকে আগে ভালোবেসে পরে অন্য ভাষাকে স্থান দিতে হবে। মাতৃভাষার প্রতি যাদের মমতা নেই কবি তাদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি তাদের জন্ম ও বংশ পরিচয় নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন তারা কেন এ দেশ ত্যাগ করে বিদেশ যায় না। এভাবে উদ্দীপকে ‘বঙ্গবাণী’ কবিতার ভাবটি মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ। “উদ্দীপকের ভাষাসৈনিকদের পূর্বসূরি যেন ‘বঙ্গবাণী’ কবিতার কবি।”- উক্তিটি যথার্থ।

বাঙালি জাতি যুগ যুগ ধরে ঔপনিবেশিক শক্তি দ্বারা শাসিত-শোষিত, নির্যাতিত হয়েছে। তারা বারবার তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে, প্রতিবাদ করেছে। এ দেশের শত্রুরা একসময় বাঙালির মুখের ভাষাও কেড়ে নিতে চেয়েছিল। তখন বাংলার বীর সন্তানেরা বুকের রক্ত দিয়ে মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষা করেছেন।

উদ্দীপকে উল্লিখিত ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলার দামাল ছেলেরা মাতৃভাষার মান রক্ষার্থে রাজপথে জীবন দেন। মাতৃভাষার জন্য এমন আবেগ-অনুভূতির দৃষ্টান্ত ইতিহাসে বিরল। বাংলার সূর্যসন্তানরা প্রমাণ করেছেন মা, মাটি ও মাতৃভাষা তাঁদের কাছে সমান ভালোবাসার জিনিস। ‘বঙ্গবাণী’ কবিতায় কবি ভাষা আন্দোলনের বহু বছর আগেই মাতৃভাষা বাংলার প্রতি গভীর অনুরাগ ও ভালোবাসা প্রকাশ করেছেন।

তিনি বাঙালিদের মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসার আগ্রহ সৃষ্টির কথা বলেছেন। যারা এ দেশে বসবাস করেও মাতৃভাষার প্রতি মমত্ব বোধ করে না, কবি তাদের এ দেশ ত্যাগ করে বিদেশ চলে যেতে বলেছেন। ‘বঙ্গবাণী’ কবিতার কবি কয়েকশ বছর আগে বাংলা ভাষার প্রতি গভীর অনুরাগ দেখিয়ে যে প্রতিবাদী বাক্য উচ্চারণ করেছিলেন, বহু বছর পর বাঙালি বীর সন্তানেরা সেই ভাষার জন্য জীবন দিয়ে তার পূর্ণ বহিঃপ্রকাশ করেছেন। তাই বলা যায় যে, উদ্দীপকের ভাষাসৈনিকদের পূর্বসূরি যেন ‘বঙ্গবাণী’ কবিতার কবি।


আশাকরি আমাদের আজকের আর্টিকেল টি আপনাদের ভালো লেগেছে। শিক্ষা, পাঠ্যপুস্তক, গল্পের বই সহ যে কোন পিডিএফ ডাউনলোড করতে আমাদের সাথেই থাকুন। ভালো থাকবেন সবাই, ধন্যবাদ। এছাড়াও আমাদের কোন আপডেট মিস না করতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে আমাদের সাথে ফেসবুকে কানক্ট থাকতে পারেন।

About মেরাজুল ইসলাম

আমি মেরাজুল ইসলাম, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী পাশাপাশি একজন ব্লগার। এডুকেশন এর প্রতি ভালোবাসাও অনলাইল শিক্ষার পরিসর বাড়ানোর জন্য এডুকেশন ব্লগের পথচলা। ব্লগিং এর পাশাপাশি আমি ওয়েবসাইট ডিজাইন, কন্টেন্ট রাইটিং, কাস্টমাইজ সহ ওয়েব রিলেটেড সকল কাজ করি।

View all posts by মেরাজুল ইসলাম →