ভাব ও কাজ অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর

ভাব ও কাজ অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর

ভাব ও কাজ অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর: ভাব ও কাজের মধ্যে পার্থক্য অনেক। মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য ভাবের গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু শুধু ভাব দিয়ে মহৎ কিছু অর্জন করা যায় না। তার জন্য কর্মশক্তি এবং সঠিক উদ্যোগের দরকার হয়।

ভাবের দ্বারা মানুষকে জাগিয়ে তােলা যায় কিন্তু যথাযথ পরিকল্পনা ও কাজের স্পৃহা ছাড়া যেকোনাে ভালাে উদ্যোগ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এ রচনাটিতে লেখক দেশের উন্নতি ও মুক্তি এবং মানুষের কল্যাণের জন্য ভাবের সঙ্গে বাস্তবধর্মী কর্মে তৎপর হওয়ার ওপর জোর দিয়েছেন।


ভাব ও কাজ অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর

প্রশ্ন-১. ‘ডাব জিনিসটা হচ্ছে পুষ্পবিহীন সৌরভের মতো’— ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ভাবের বিমূর্ত রূপকে উন্মোচিত করতে লেখক আলোচ্য উক্তিটির অবতারণা করেছেন। ‘ভাব’ জিনিসটাকে দেখা বা স্পর্শ করা যায় না। কিন্তু মানুষের জীবনে এর উপস্থিতি অনুভব করা যায়। ভাবের দ্বারা আবিষ্ট হয়েই মানুষ বিভিন্ন কাজে উৎসাহী হয়ে ওঠে। ভাব বিমূর্ত হলেও তার ভূমিকা দৃশ্যমান— এ বিষয়টি বোঝাতেই লেখক আলোচ্য উক্তিটি করেছেন।

প্রশ্ন-২. ভাবকে ‘অবাস্তব উচ্ছ্বাস’ বলা হয়েছে কেন?
উত্তর: মনের কল্পনা থেকে ভাব সাময়িক উত্তেজনা প্রকাশ করে বলেই ভাবকে অবাস্তব উচ্ছ্বাস বলা হয়েছে। মানুষের মন স্বভাবতই কল্পনাপ্রবণ ও স্বপ্নবিলাসী। এই কল্পনা মানুষের মধ্যে সাময়িক একটি প্রণোদনা সৃষ্টি করে। লেখক এই প্রণোদনাকেই বলেছেন ভাব; যা পরিপূর্ণ হয় কাজের মাধ্যমে। কাজবিহীন ভাবের কোনো বাস্তবিক স্থান নেই। সে কারণে লেখক একে অবাস্তব উচ্ছ্বাস বলেছেন।

প্রশ্ন-৩. ‘গরমাগরম কার্যসিদ্ধি’ বলতে লেখক কী বুঝিয়েছেন?
উত্তর: গরমাগরম কার্যসিদ্ধি বলতে লেখক ভাবোদয়ের পর তাৎক্ষণিক কর্মসম্পাদনের বিষয়টিকে বুঝিয়েছেন। ভাবকে কাজের দাসরূপে নিয়োগ করতে না পারলে তার কোনো সার্থকতা থাকে না। ভাব দিয়ে লোককে মাতিয়ে তোলা যায়, কিন্তু তাকে যথাযথ কাজে লাগাতে না পারলে সেই ভাব নেতিয়ে পড়ে। তাই ভাব সঞ্চারিত হলে সঙ্গে সঙ্গে তাকে কর্মে রূপ দেবার কাজে ব্রতী হতে হবে। এ বিষয়টিকেই কবি ‘গরমাগরম কার্যসিদ্ধি’ বলেছেন।

প্রশ্ন-৪. ‘এখানে কার্যসিদ্ধি মানে কার্যসিদ্ধি নয়’- কথাটি বুঝিয়ে লেখো।
উত্তর; নিজের স্বার্থসিদ্ধি যে প্রকৃত কার্যসিদ্ধি নয়, তা বোঝাতেই লেখক প্রশ্নোত্ত উক্তিটি করেছেন। কার্যসিদ্ধির জন্য ভাবের প্রয়োজন আছে। কিন্তু কেবল ভাবাবেগে লোকদের জাগিয়ে তুলে নিজের স্বার্থসিদ্ধি প্রকৃত কার্যসিদ্ধি নয়। কার্যসিদ্ধি করতে হবে মানবকল্যাণের জন্য। মহত্তর উদ্দেশ্য ও কল্যাণ কামনায় ভাবকে কাজে পরিণত করতে হবে। কার্যক্ষেত্র তৈরির জন্য লোকদের ভাবের সোনার কাঠি ছুইয়ে দিয়ে জাগিয়ে তুলতে হবে। আলোচ্য উত্তিতে নিঃস্বার্থভাবে মানুষের কল্যাণের জন্য ভাবের সঙ্গে বাস্তবধর্মী কর্মে তৎপর হওয়ার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

প্রশ্ন-৫. ভাবের বাঁশিবাদককে কী ধরনের যোগ্যতাসম্পন্ন হতে হবে?
উত্তর: ভাবের বাঁশিবাদককে কল্যাণকামী ও ত্যাগী মানসিকতার অধিকারী হতে হবে। ভাবের বাঁশিবাদক বলতে সেই মানুষকে বোঝানো যে অন্য মানুষদের ভাবের দ্বারা জাগ্রত করে কর্ম পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে উদ্বুদ্ধ সক্ষম হবেন। এছাড়া ভাবের বাঁশিবাদককে নিঃস্বার্থ ত্যাগ ঋষির মতো হতে হবে। তার লক্ষ্য হবে দেশ ও মানুষের কল্যাণ, নিজের স্বার্থসিদ্ধি করা নয়। মহত্তম উদ্দেশ্য ও কল্যাণ কামনা ছাড়া যদি সে মানুষকে অসৎ উদ্দেশ্যে জাগ্রত করে, তাহলে সমাজ ও দেশের অপূরণীয় ক্ষতি হতে পারে। এ কারণেই ভাবের বাঁশিবাদককে হতে হবে কল্যাণকামী, নিঃস্বার্থ ও ত্যাগী মানুষ।

প্রশ্ন-৬. ‘তাহা অপেক্ষা বরং কুম্ভকর্ণের নিদ্রা ভালো, সে-ঘুম ঢোল কাঁসি বাজাইয়া ভাঙানো বিচিত্র নয়’- ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: একবার উৎসাহ হারিয়ে ফেললে মানুষ আর কাজ করার আগ্রহ পায় না, তাকে কাজে নামানো তখন প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। মানুষকে উৎসাহ প্রদানের আগে অবশ্যই কার্যসিদ্ধির পথ সুগম করে রাখতে হবে। কারণ উৎসাহ পেয়েও কাজের যথাযথ সুযোগ না পেলে তার মাঝে আর কাজ করার কোনো আগ্রহ অবশিষ্ট থাকে না। উচ্চশব্দের মাধ্যমে কুম্ভকর্ণের দীর্ঘ ঘুম ভাঙানো গেলেও নিরুৎসাহী ব্যক্তির মাঝে উৎসাহ ফিরিয়ে আনা প্রায় অসম্ভব কাজ। এ বিষয়টিই আলোচ্য উত্তিতে নির্দেশিত হয়েছে।

প্রশ্ন-৭. স্পিরিট বা আত্মার শক্তির পবিত্রতা নষ্ট হয় কীভাবে? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ভাবের দ্বারা জাগ্রত হয়ে কর্মোদ্যোগী হতে না পারলে আত্মার শক্তির পবিত্রতা নষ্ট হয়। মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে ভাবের গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু অনেক সময় মানুষ ভাব দ্বারা জাগ্রত হয় কিন্তু যথাযথ কর্ম পরিকল্পনা করে না। এতে করে ভালো উদ্যোগও ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। এভাবে মানুষ যখন ভাবের উচ্ছ্বাসে উদ্বেলিত হয় তখন উপযুক্ত কাজটি করতে ব্যর্থ হয়। আর তখনই আত্মার শক্তির পবিত্রতা নষ্ট হয়।

প্রশ্ন-৮. প্রাবন্ধিক তরুণদের দেশের প্রাণশক্তি বলেছেন কেন?
উত্তর: তরুণরা তাদের তারুণ্যের শক্তি দিয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণ সাধন করতে পারে বলে প্রাবন্ধিক তাদের দেশের প্রাণশক্তি বলেছেন। তরুণরা নানা রকম ইতিবাচক বৈশিষ্ট্য ধারণ করে। তাদের সাহস, গতি, মনোবল, শক্তি, উন্নয়নমূলক কর্মে স্বতঃস্ফূর্ততা সবকিছুই অতুলনীয়। তাদের এই বৈশিষ্ট্যসমূহকে কাজে লাগাতে পারলে তারা অসাধ্য সাধন করতে পারে। কল্যাণমূলক কাজ করে সমাজ ও জাতির অর্ভূতপূর্ব উন্নয়নসাধন করতে পারে। তাই আলোচ্য প্রবন্ধটিতে প্রাবন্ধিক তরুণদের দেশের প্রাণশক্তি বলেছেন।

প্রশ্ন-৯. ‘সাপ লইয়া খেলা করিতে গেলে তাহাকে দস্তুরমতো সাপুড়ে হওয়া চাই’— ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: যে কোনো কাজে নামার পূর্বে ওই বিষয়ে যথাযথ জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করা আবশ্যক। ভাব ও কাজের মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে। কেবল আবেগের বশে কঠিন কোনো কাজে নেমে পড়লে তাতে আশানুরূপ সাফল্য অর্জন করা যায় না। সাফল্যের জন্য প্রয়োজন কাজটি সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান। সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও বাস্তব অভিজ্ঞতা ছাড়া কাজে নামলে অনেক সময় ভালো উদ্যোগও নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই কাজকে দৃঢ়ভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে যথাযথ পরিকল্পনা এবং ওই বিষয়ের দক্ষতা অর্জন করা প্রয়োজন। প্রশ্নোত্ত বাক্যটিতে এ কথাই বোঝানো হয়েছে।

প্রশ্ন-১০. কর্মশক্তি মানুষের জন্য তাৎপর্যময় কেন? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: কর্মশক্তি ছাড়া মানুষের ভাবাবেগ ও কল্পনাশক্তি বাস্তব রূপ পায় না বলেই তা এত তাৎপর্যময়। ভাব মানুষকে যেকোনো বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করে। কিন্তু ভাবের মধ্যে নিমজ্জিত থেকে বাস্তবিক কোনো ফললাভ হয় না। তাই প্রয়োজন হয় কর্মশক্তির; কারণ কর্ম না করলে কোনো ভাবই কাজে আসে না। এ কারণে ভাবের সঙ্গে সঙ্গে মানুষকে কর্মের গুণ আয়ত্ত করতে হয়। তাই কর্মশক্তি এত তাৎপর্যময়।

প্রশ্ন-১১. কর্ম কীভাবে মানুষের আত্মশক্তিকে বৃদ্ধি করে?
উত্তর: কর্ম আত্মোপ্রণোদনার মাধ্যমে মানুষের আত্মশক্তিকে বৃদ্ধি করে। ভাব মানুষকে অনুপ্রাণিত করে সত্য; কিন্তু কর্মের মধ্য দিয়ে মানুষ পরিপূর্ণতা পায়। কারণ কাজ জিনিসটাই ভাবকে রূপ দেয়; অর্থপূর্ণ করে তোলে। এর মাধ্যমে মানুষের উদ্দীপনা তথা স্পিরিট বৃদ্ধি পায় এবং মানুষ আত্মশক্তিতে বলীয়ান হয়ে ওঠে।

প্রশ্ন-১২. ‘আগে ভালো করিয়া চোখ মেলিয়া দেখো।’ প্রাবন্ধিক কী বোঝাতে চেয়েছেন?
উত্তর: আলোচ্য উক্তিটির মাধ্যমে লেখক কোনো কাজ করার পূর্বে তার সম্ভাব্য ফলাফল সম্পর্কে অবগত থাকতে বলেছেন। কোনো কাজ করার পূর্বে সেই কাজের উদ্দেশ্য ও পরিণতি সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে। ভাবের উচ্ছ্বাসে উদ্বেলিত হয়ে অগ্র-পশ্চাৎ বিবেচনা না করে কাজ করলে অযথা কর্মশক্তি নষ্ট হয়। এতে ব্যক্তি ও দেশ উভয়েরই ক্ষতি হয়। আর তাই তো লেখক কোনো কাজের পূর্বে তার ভালোমন্দ দিক বিবেচনা করতে পরামর্শ দিয়েছেন।


আশাকরি আমাদের আজকের আর্টিকেল টি আপনাদের ভালো লেগেছে। শিক্ষা, পাঠ্যপুস্তক, গল্পের বই সহ যে কোন পিডিএফ ডাউনলোড করতে আমাদের সাথেই থাকুন। আমাদের যে কোন আপডেট মিস করতে না চাইলে ফেসবুক ও ইউটিউবে সাবক্রাইব করে আমাদেস দাথে কানেক্ট থাকতে পারেন। ভালো থাকবেন সবাই, ধন্যবাদ।