SSC: পল্লিজননী কবিতার সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

পল্লিজননী কবিতার সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 

পল্লিজননী কবিতার সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর: ‘পল্লিজননী’ কবিতাটি কবি জসীমউদ্দীনের ‘রাখালী’ (১৯২৭) কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলন করা হয়েছে। রুগ্ণ পরিবেশে এক পল্লিজননীর মনে পুত্র হারানোর শঙ্কা এবং সন্তানের প্রতি অপত্যস্নেহের অনিবার্য আকর্ষণ সম্পর্কে ধারণা দেওয়া।

‘পল্লিজননী’ কবিতায় কবি রুগ্ণ পরিবেশে অসুস্থ সন্তানের শিয়রে এক পল্লিজননীর সন্তান হারানোর শঙ্কা তুলে ধরেছেন। কবিতায় পল্লি প্রকৃতির বিভিন্ন অনুষঙ্গে একটি দরিদ্র পরিবারের করুণ কাহিনি স্থান পেয়েছে।

পুত্রের রোগশয্যার পাশে নিবু নিবু প্রদীপ, চারদিকে বুনো মশার ভিড়, ডোবার পচা পাতার গন্ধ, ঠান্ডা হাওয়া ইত্যাদি নানা কিছু পল্লিজননীর অসুস্থ পুত্রের ঘুম কেড়ে নেয়। মা রুণ সন্তানকে চুমো খায়, সারা গায়ে হাত বুলায়, তার বুকের সমস্ত স্নেহ ঢেলে দিয়ে ছেলেকে ঘুম পাড়াতে চায়। ছেলের সুস্থতার জন্য মানত করে। আল্লাহ রসুল, পীরের কাছে প্রার্থনা করে অশ্রুসিক্ত হয়।

বাঁশবনে কানা কুয়োর ডাক, বাদুড়ের পাখা ঝাপটানি, জোনাকির ক্ষীণ আলো, শীতের শুভ্র কুয়াশা ইত্যাদি মায়ের কাছে অশুভের ইঙ্গিত বলে মনে হয়। মা বালাই বালাই বলে সেগুলো দূর করতে চায়।

দুরন্ত ছেলে রহিম চাচার ঝাড়-ফুঁকে সুস্থ হয়েই খেলতে গেলে, মা তখন তাকে একটুও বকবে না বলে অনুমতি নেয়। ছেলের এমন কথায় পল্লিমায়ের পুত্রের নানা আবদারের কথা স্মৃতিপটে ভেসে ওঠে। ছেলের ছোটখাটো বায়না না মিটানোর কথা, আড়ঙের সময় পুতুল কেনার পয়সা না দিতে পারার কথা মনে জাগে।

ছেলের পথ্য-ওষুধ কিছুই সে কিনে দিতে পারেনি। ঘরের চালে হুতুমের ডাক শুনে সে দূর দূর করে ছেলের অমঙ্গল তাড়াতে চায়। কিন্তু তার সামনের মহাকাল রাত যেন শেষ হয় না। ‘গ্রামীণ পরিবেশে এক দারিদ্র্যক্লিষ্ট মায়ের অপত্যস্নেহের অনিবার্য আকর্ষণই ‘পল্লিজননী’ কবিতার মূল বিষয়।


এসএসসি বাংলা ১ম পত্রের সকল গদ্য ও কবিতার সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: সুভা
🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: বইপড়া
🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: আম আঁটির ভেঁপু
🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: মানুষ মুহাম্মদ (সাঃ)
🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: নিমগাছ
🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব
🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: প্রবাস বন্ধু
🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: মমতাদি
🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: সাহিত্যের রুপ ও রীতি
🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: একাত্তরের দিনগুলি
🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: বঙ্গবানী
🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: কপোতাক্ষ নদ
🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: জীবন-সঙ্গীত
🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: মানুষ
🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: পল্লিজননী
🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: রানার
🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা
🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: আমার পরিচয়
🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: স্বাধীনতা এ শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো


পল্লিজননী কবিতার সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

সৃজনশীল ০১: অকালে স্বামী বিয়োগের পর একমাত্র সন্তান আবিরকে আফরোজা যক্ষের ধনের মত আগলে রাখে। আবিরও যেন পাড়ার ছেলেদের স্বঘোষিত সর্দার। সারাদিন ঘুড়ি উড়ানো, নদী-পুকুরে দাপাদাপি, বনে-বাদাড়ে পাখির বাসার খোঁজ এইসবে মেতে থাকে। একদিন বন্ধুদের সাথে খেলতে গিয়ে মাথায় আঘাত পায় এবং সমস্যাটি ধীরে ধীরে প্রকট আকার ধারণ করে। ছেলের সুস্থতার জন্য আফরোজা ডাক্তার-কবিরাজ-বড় বড় হাসপাতাল কিছুই বাদ রাখেনি। তার একটাই চাওয়া ছেলে তার সুস্থ হয়ে উঠুক, সুস্থভাবে বাঁচুক।

ক. ‘পল্লিজননী’ কবিতায় সাত-নরি-শিকা ভরে রাখার কথা হয়েছে?
খ. “সম্মুখে তার ঘোর কুত্বটি মহাকাল রাত পাতা”— বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
গ. উদ্দীপকের আবিরের সাথে ‘পল্লিজননী’ কবিতার ছেলের সাদৃশ্যপূর্ণ দিকটি ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের আফরোজা পল্লিজননীর চিরন্তন রূপটিই ধারণ করেছে উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।

১নং প্রশ্নের উত্তর

ক। ‘পল্লিজননী’ কবিতায় সাত-নরি-শিকা ভরে ঢ্যাপের মোয়া রাখার কথা বলা হয়েছে।

খ। “সম্মুখে তার ঘোর কুত্বটি মহাকাল রাত পাতা”- চরণটির মাধ্যমে রুগ্‌ণ ছেলের শিয়রে বসে থাকা মায়ের মনের আতঙ্কিত অবস্থা বোঝানো হয়েছে।

‘পল্লিজননী’ কবিতায় অসহায় দরিদ্র এক মায়ের চিত্র প্রকাশিত হয়েছে। ছেলের শিয়রে বসে মা একা রাত জাগে এবং ছেলের নানা আবদারের কথা ভাবে। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মায়ের মনে আশঙ্ক বেড়ে চলে। অসুস্থ ছেলের কখন কী হয় তা নিয়ে নে শঙ্কিত। রাতের আঁধার, নিবু নিবু প্রদীপ, অসুস্থ ছেলের শিয়রে বসে রাত জাগা মা— সব মিলিয়ে এক বিভীষিকাময় পরিবেশ। এ দুরবস্থায় সন্তান হারানোর আশঙ্কা মাকে স্বস্তি দিচ্ছে না। তার একমাত্র বুকের ধন হারিয়ে যাওয়ার দুশ্চিন্তা যেন তার কাছে দুর্বিষহ বেদনা। আর মায়ের এই অনুভূতিই আলোচ্য উক্তিতে প্রকাশ পেয়েছে।

গ। দুরন্তপনা ও অসুস্থ অবস্থার দিক থেকে উদ্দীপকের আবিরের সঙ্গে ‘পল্লিজননী’ কবিতার ছেলেটির সাদৃশ্য আছে।

পল্লিপ্রকৃতির কোলে যাদের বেড়ে ওঠা তারা স্বভাবতই হয় দুরন্ত ও বন্ধনহীন। তারা যেন হরিণ শিশুর মতো স্বাধীনভাবে চলা-ফেরা করতে ভালোবাসে। কোনো শাসন-বারণ তারা মানতে চায় না। পল্লিপ্রকৃতির আনাচে-কানাচে অবাধ বিচরণ তাদের চরিত্রের অন্যতম · বৈশিষ্ট্য।

উদ্দীপকের আবির প্রচণ্ড দুরন্ত ও চঞ্চল। সারা দিন সে ঘুড়ি ওড়ানো, নদীতে সাঁতার কাটা, বনে-বাদাড়ে পাখির বাসা খোঁজা নিয়ে ব্যস্ত থাকে। একদিন এই দুরন্ত ছেলেটি মাথায় আঘাত পেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে।

‘পল্লিজননী’ কবিতায়ও পল্লিমায়ের খোকা দারুণ চঞ্চল। সেও খেলাধুলা, হৈহুল্লোড় করে দিন কাটায়। পাখির বাচ্চা খোঁজা, বেতবনে গিয়ে বেথুল সংগ্রহ তার নিত্যদিনের কাজ। সেও একসময় জ্বরে পড়ে শয্যাশায়ী হয়। তাই বলা যায় যে, দুরন্তপনা ও অসুস্থতার দিক দিয়ে উভয়ের সাদৃশ্য রয়েছে।

ঘ। উদ্দীপকের আফরোজা পল্লিজননীর চিরন্তন রূপটিই ধারণ করেছে- মন্তব্যটি যথার্থ। পৃথিবীতে সন্তানের জন্য বাবা-মা সব ধরনের ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত থাকেন। এমনকি নিজেদের প্রাণের বিনিময়ে হলেও বাবা-মা সন্তানের মঙ্গল কামনা করেন। পৃথিবীতে সন্তানই তাদের বেঁচে থাকার অবলম্বন । উদ্দীপকের আফেরোজা স্বামীর মৃত্যুর পর সন্তানকে আকড়ে ধরে বেঁচে থাকে।

কিন্তু দুরন্ত ও চঞ্চল ছেলেটি একসময় মাথায় আঘাত পেলে সে পাগলপ্রায় হয়ে যায়। ডাক্তার, কবিরাজ, হাসপাতাল কিছুই সে বাদ রাখেনি। সে চেয়েছে তার সন্তান সুস্থ হয়ে সুন্দরভাবে বেঁচে থাকুক। ‘পল্লিজননী’ কবিতার জননীও সন্তানকে সমস্ত সত্তা দিয়ে আগলে রাখতে চায়। সেও অসুস্থ সন্তানকে ভালো করে তুলতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে। নামাজের ঘরে মোমবাতি মানে, দরগায় দান মানে।

‘পল্লিজননী’ কবিতার মা তার সকল মমতা ঢেলে দিয়ে সন্তানকে সুস্থ করে তুলতে চায়। কবিরাজের ঝাড়ফুঁক, দরগায় দান মানে সন্তানের মঙ্গল কামনায়। উদ্দীপকের আফরোজাও সন্তানের জন্য উদ্বিগ্ন, সেও সন্তানের জন্য মঙ্গল কামনা করেছে। তার মধ্যে পল্লিজননীর সন্তানবাৎসল্যের চিরন্তন রূপটি ধরা পড়েছে। সুতরাং বলা যায়, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ ও যুক্তিযুক্ত।

সৃজনশীল ০২: বশিরের মা অসুস্থ বশিরকে শহরের নামি হাসপাতালে চিকিৎসা করাচ্ছেন। উন্নত চিকিৎসা সেবা পেয়েও নানা আশঙ্কায় তার মন অস্থির। সে নফল নামাজ আদায় করে ছেলের জন্য দোয়া করেন, মাজারে মানত করেন।

ক. কোথা থেকে পচা পাতার ঘ্রাণ আসছে?
খ. মা নামাজের ঘরে মোমবাতি আর দরগায় দান মানেন কেন? বুঝিয়ে লেখ।
গ. উদ্দীপকের বশিরের মায়ের সাথে ‘পল্লিজননী’ কবিতার শিশুটির মায়ের বৈসাদৃশ্য ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকের বশিরের মা ও ‘পল্লিজননী’ কবিতার অসুস্থ শিশুর মায়ের মধ্যে কিছু পার্থক্য থাকলেও তারা শাশ্বত মায়েরই প্রতিচ্ছবি।”- উক্তিটি বিশ্লেষণ কর।

২নং প্রশ্নের উত্তর

ক। এঁদো ডোবা থেকে পচা পাতার ঘ্রাণ আসছে।

খ। মা তার অসুস্থ সন্তানের রোগমুক্তির জন্য নামাজের ঘরে মোমবাতি আর দরগায় দান মানেন।

‘পল্লিজননী’ কবিতায় এক দরিদ্র মায়ের প্রাণপ্রিয় সন্তানের অসুস্থতা এবং তার মৃত্যুর আশংকা প্রকাশ পেয়েছে। ধীরে ধীরে ছেলেটির জীবনপ্রদীপ নিভে আসছে। দারিদ্র্যের কারণে ভালো চিকিৎসার কথা তো দূরের কথা, প্রিয় সন্তানের জন্য পথ্যের ব্যবস্থাও সে করতে পারেননি। সীমাহীন দারিদ্র্য তাকে গ্রাস করেছে। রুণ সন্তানের শিয়রে বসে দুঃখিনী মা কত কিছুই না ভাবেন। অসহায় মা বড়ই নিরুপায়। গ্রামের নিরক্ষর মা বিশ্বাস করেন মানত করলে পুত্রের রোগমুক্তি ঘটবে। তাই তিনি মসজিদে মোমবাতি ও দরগায় দান মানত করেন।

গ। উদ্দীপকের বশিরের মায়ের সাথে ‘পল্লিজননী’ কবিতার শিশুটির মায়ের বৈসাদৃশ্য হলো আর্থিক অবস্থার। সন্তানের প্রতি মায়ের স্নেহ-ভালোবাসার অন্ত নেই। মা নিজের জীবনের চেয়েও সন্তানকে বেশি ভালোবাসেন। সন্তানের সুখ-দুঃখই তার চিন্তা। সন্তান অসুস্থ হলে মায়ের চিন্তার সীমা থাকে না। দিন-রাত জেগে সন্তানের সেবা করেন।

‘পল্লিজননী’ কবিতায় অসুস্থ ছেলেকে ঘিরে পল্লিমায়ের উৎকণ্ঠা তুলে ধরা হয়েছে। দরিদ্র মায়ের সন্তান ভীষণ অসুস্থ। তার অবস্থা ক্রমেই সঙ্গিন হয়ে পড়ছে। অথচ মা টাকার অভাবের কারণে ছেলের চিকিৎসা করাতে পারছেন না। সন্তানের জন্য তিনি ওষুধ-পথ্য কোনো কিছুরই ব্যবস্থা করতে পারেননি। যার ফলে ক্ষণে ক্ষণে তার মন হাহাকার করে ওঠে। অন্যদিকে উদ্দীপকের বশিরের মায়ের আর্থিক অবস্থা ভালো। টাকার অভাব নেই বলে শহরের নামি হাসপাতালে সন্তানের চিকিৎসা করাচ্ছেন। তবুও সন্তানের জন্য তিনি অস্থির। তাই আমরা বলতে পারি যে, উদ্দীপকের বশিরের মায়ের সাথে ‘পল্লিজননী’ কবিতার শিশুটির মায়ের বৈসাদৃশ্য হলো আর্থিক অবস্থার।

ঘ। “উদ্দীপকের বশিরের মা ও ‘পল্লিজননী’ কবিতার অসুস্থ শিশুর মায়ের মধ্যে কিছু পার্থক্য থাকলেও তারা শাশ্বত মায়েরই প্রতিচ্ছবি।”— উক্তিটি যথার্থ।

মায়ের কাছে সব সন্তানই সমান। স্নেহ-মমতার ক্ষেত্রে সব মা-ই সমান। তাদের প্রত্যেকেরই নিজ নিজ সন্তানের জন্য অনুভূতি অভিন্ন। তারা প্রত্যেকেই নিজ নিজ সন্তানের মঙ্গলের জন্য ব্যতিব্যস্ত থাকেন। সন্তান অসুস্থ হয়ে পড়লে সব মায়ের মনই শঙ্কিত হয়ে ওঠে। উদ্দীপকে সচ্ছল পরিবারের এক সন্তান বশিরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করার কথা বলা হয়েছে।

যার সেবার জন্য লোকের অভাব নেই, অভাব নেই ওষুধ-পথ্যের। এসবের মধ্যে সন্তানের সুস্থতার আশা ও আশঙ্কায় মায়ের চিরন্তন রূপটি প্রকাশ পেয়েছে। ঐ সন্তানের মা নফল নামাজ আদায় করছেন। ছেলের জন্য মোনাজাত করছেন। তার মনে নানা আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। উদ্দীপকের মায়ের এই চিরন্তন রূপটি. ‘পল্লিজননী’ কবিতায়ও প্রতিফলিত। অসুস্থ সন্তানের জন্য মায়ের স্নেহ-মমতা ও ব্যাকুলতার সঙ্গে বিষয়টি সাদৃশ্যপূর্ণ। পল্লিজননী সন্তানের জন্য উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা না করতে পারলেও সন্তানকে সুস্থ করতে তার চেষ্টার ত্রুটি নেই। তিনিও সন্তানের রোগমুক্তির জন্য দরগায় দান এবং নামাজের ঘরে মোমবাতি মানত করেন। অসুস্থ সন্তানের শিয়রে সারা রাত জেগে থাকেন।

উদ্দীপকের বশিরের মায়ের সঙ্গে ‘পল্লিজননী’ কবিতার জননীর আর্থিক অবস্থার পার্থক্য রয়েছে। এ পার্থক্যের বাইরে মায়ের চিরন্তন রূপটি উভয়ের মধ্যেই প্রকাশ পেয়েছে। দুজনের মধ্যেই সন্তানের জন্য ভালোবাসা ও স্নেহ-মমতা একই। উভয়েই সন্তানের রোগ নিয়ে শঙ্কিত। তাই বলা যায় যে, প্রশ্নোক্ত উক্তিটি যথার্থ।

সৃজনশীল ০৩: অহনা ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে শরিফা খানম একমাত্র মেয়ের জন্য খুবই বিচলিত হয়ে পড়েন। তিনি তাড়াতাড়ি তাঁর মেয়েকে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করান। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে কয়েকজন শিশু মারা গেলে মায়ের দুশ্চিন্তা আরো বেড়ে যায়। তিনি মেয়ের রোগমুক্তির জন্য নফল রোজা, নামাজ মানত করেন। মেয়ের রোগসজ্জার পাশে বসে সারাক্ষণ আল্লাহকে ডাকেন। খবর পেয়ে আত্মীয়- স্বজন আসে অহনাকে দেখতে। তাদের দেওয়া বিভিন্ন ফলমূল ও জুসে ভরে যায় হাসপাতালের কেবিনের টেবিল।

ক. ‘পল্লিজননী’ কবিতার মূলকথা কী?
খ. বিরহী মায়ের একলা পরাণ দোলে কেন?
গ. উদ্দীপকের অহনাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তির সঙ্গে ‘পল্লিজননী’ কবিতার বৈসাদৃশ্য কী? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের শরিফা খানম কি পল্লিজননীর যথার্থ প্রতিনিধি? তোমার মতের সপক্ষে যুক্তি দাও।

৩নং প্রশ্নের উত্তর

ক। ‘পল্লিজননী’ কবিতার মূলকথা অপত্য স্নেহের অনিবার্য আকর্ষণ।

খ। ‘বিরহী মায়ের একেলা পরাণ দোলে’- কথাটি দ্বারা অসুস্থ ছেলের জন্য দুশ্চিন্তাগ্রস্ত মায়ের ব্যাকুলতা বোঝানো হয়েছে।

মায়ের কাছে সন্তান পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সম্পদ। মা সবসময় সন্তানের মঙ্গলচিন্তায় ব্যস্ত থাকেন। তাই যখন সন্তান অসুস্থ হয় তখন মায়ের মন দুঃখে ভারাক্রান্ত হয়। মা খাওয়া-ঘুম সব ভুলে গিয়ে ছেলের মাথার কাছে বসে সেবা করেন। ‘পল্লিজননী’ কবিতায় অসুস্থ ছেলের জন্য মায়ের কষ্ট ও আশঙ্কা ফুটে উঠেছে। অসুস্থ ছেলের মাথার কাছে মা নির্ঘুম বসে থাকে। অজানা আশঙ্কায় তার পরান দুলে ওঠে। সন্তানের যন্ত্রণায় সে কাতর। কবি প্রশ্নোক্ত লাইনটিতে মায়ের ব্যাকুল হৃদয়ের কথাই প্রকাশ করেছেন।

গ। উদ্দীপকের অহনাকে হাসপাতালে ভর্তির সঙ্গে কবিতার বৈসাদৃশ্য ‘পল্লিজননী’ কবিতায় মায়ের দারিদ্র্যের কারণে অসুস্থ সন্তানকে, প্রয়োজনীয় খাদ্য ও চিকিৎসা দিতে না পারার দিক থেকে। মানুষের মৌলিক অধিকার হচ্ছে অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থান ইত্যাদি লাভ করা, অথচ অনেক ক্ষেত্রেই মানুষ এসব থেকে বঞ্চিত থাকে। তারা তাদের জীবনধারণের সামান্য সুযোগ থেকেও বঞ্চিত হয়।

উদ্দীপকে বিত্তশালী পরিবারের সন্তানকে দামি হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করার কথা বলা হয়েছে। এখানে অহনা ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে তার মা তাকে একটি আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করান। তারপরও তার ভয় কাটে না। পাশে কয়েকজন শিশুকে মারা যেতে দেখে তিনি উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠেন। আল্লাহর কাছে অহনার রোগমুক্তির জন্য প্রার্থনা করেন। এই বিষয়টি ‘পল্লিজননী’ কবিতার মায়ের সঙ্গে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ।

‘পল্লিজননী’ কবিতা মা রুগূণ পুত্রের শিয়রে বসে রাত জাগে। এই কবিতায় তার মনঃকষ্ট, পুত্রের চঞ্চলতা এবং দারিদ্র্যের কারণে তাকে প্রয়োজনীয় খাদ্য ও চিকিৎসা দিতে না পারার ব্যর্থতা প্রকাশ পেয়েছে। পুত্রের শিয়রে নিবু নিবু প্রদীপ, চারিদিকে মশার অত্যাচার, বেড়ার ফাঁক দিয়ে শীতের হীমেল হাওয়া প্রবেশ করে। এখানেও উদ্দীপকের সাথে ‘পল্লিজননী’ কবিতার পার্থক্য বিদ্যমান।

ঘ। হ্যাঁ, উদ্দীপকের শরিফা খানম পল্লিজননীর যথার্থ প্রতিনিধি। একজন মায়ের কাছে তার সন্তান পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সম্পদ। মা সব সময় সন্তানের মঙ্গল চিন্তা করেন। মায়ের কাছে সব সন্তানই সমান। স্নেহ-মমতার বিচারে ধনীর দুলালের সন্তান আর হতদরিদ্র সন্তানের কোনো পার্থক্য নেই।

উদ্দীপকের অহনা ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে তার মা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করান। তারপরও তিনি চিন্তামুক্ত নন। ডেঙ্গু আক্রান্ত কয়েকজন শিশু মারা গেলে তিনি দুশ্চিন্তায় পড়েন। মেয়ের রোগমুক্তির জন্য তিনি নফল রোজা, নামাজ মানত করেন। তার পরও তার অস্থিরতা কমে না, কিছুতেই তিনি শান্ত হতে পারেন না।

উদ্দীপকের মায়ের মতো ‘পল্লিজননী’ কবিতায় অসুস্থ সন্তানের জন্য মায়ের স্নেহ-মমতা ও ব্যাকুলতা ফুটে উঠেছে। কবিতায় রুগ্‌ণ পুত্রের চোখে ঘুম আসে না। মা তার সুস্থতার জন্য মসজিদে মোমাবাতি আর দরগায় মানত করেন। কানাকুয়ো হুতুম পেঁচার ডাককে অমঙ্গল ধ্বনি মনে করেন। তার মনে পুত্র হারানোর শঙ্কা জেগে ওঠে।

‘পল্লিজননী’ কবিতায় দারিদ্র্যক্লিষ্ট এক পল্লি মায়ের সন্তান হারানোর আশঙ্কা প্রকাশ পেয়েছে। এই বিষয়টি উদ্দীপকের মায়ের সন্তান হারানোর সঙ্গে একসূত্রে গাঁথা। উদ্দীপকের শরিফা ও ‘পল্লিজননী’ কবিতার মা উভয়ের মধ্যেই সন্তানের জন্য উৎকণ্ঠার রূপটি অভিন্নভাবে ফুটে উঠেছে। এদিক থেকে উদ্দীপকের শরিফা ‘পল্লিজননী’ কবিতার মায়ের যথার্থ প্রতিনিধি।


আশাকরি আমাদের আজকের আর্টিকেল টি আপনাদের ভালো লেগেছে। শিক্ষা, পাঠ্যপুস্তক, গল্পের বই সহ যে কোন পিডিএফ ডাউনলোড করতে আমাদের সাথেই থাকুন। ভালো থাকবেন সবাই, ধন্যবাদ। এছাড়াও আমাদের কোন আপডেট মিস না করতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে আমাদের সাথে ফেসবুকে কানক্ট থাকতে পারেন।

About মেরাজুল ইসলাম

আমি মেরাজুল ইসলাম, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী পাশাপাশি একজন ব্লগার। এডুকেশন এর প্রতি ভালোবাসাও অনলাইল শিক্ষার পরিসর বাড়ানোর জন্য এডুকেশন ব্লগের পথচলা। ব্লগিং এর পাশাপাশি আমি ওয়েবসাইট ডিজাইন, কন্টেন্ট রাইটিং, কাস্টমাইজ সহ ওয়েব রিলেটেড সকল কাজ করি।

View all posts by মেরাজুল ইসলাম →