অভাগীর স্বর্গ অনুধাবন প্রশ্ন

অভাগীর স্বর্গ অনুধাবন প্রশ্ন ও উত্তর

অভাগীর স্বর্গ অনুধাবন প্রশ্ন: ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পটি অভাগীর মরণোত্তর সৎকারের বাসনাকে ঘিরে জন্মের পর গড়ে উঠেছে। ‘অভাগী’ নামটি তার বাবা রেখেছিল, মায়ের মৃত্যুর কারণে। অভাগীর বিয়ের পর তার স্বামী অন্য স্ত্রীর কাছে চলে যায়। সে তখন অসহায় হয়ে পড়ে। তা সত্ত্বেও সে তার শিশুপুত্র কাঙালীকে নিয়ে বহুকষ্টে দিনাতিপাত করে। এ গল্পের অভাগী নিচু শ্রেণির হিন্দু পরিবারের হতদরিদ্র মানুষের প্রতিনিধি। উঁচু জাতের হিন্দু পরিবারে মৃতের সৎকারে আড়ম্বর দেখে অভাগীরও তার মতো স্বর্গারোহণের ইচ্ছা হয়।

তাই সে তার বাসনার কথা ছেলে কাঙালীকে বলে রাখে। মায়ের মৃত্যুর পর কাঙালী সেই বাসনা পূরণ করতে চায়। কিন্তু পোড়ানোর কাঠ জোগাড় করতে না পেরে খড়ের আঁটি জ্বালিয়ে মুখাগ্নি করে তাকে নদীর চরে মাটিচাপা দেয়। মুখুয্যে বাড়ির গৃহকর্ত্রীর মৃত্যুর পর সৎকারের দৃশ্য দেখে অভাগী নিজেও মৃত্যুর পর চন্দন, সিঁদুর, আলতা, মালা, ঘৃত, মধু, ধূপ, ধুনা, অগ্নির ধোঁয়ায় স্বর্গে গমনের স্বপ্ন দেখেছিল।

মৃত্যুর সময় ছেলে কাঙালী তার বাবাকে হাজির করতে পারলেও সামন্তবাদের নির্মম শিকার হয়ে মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে ব্যর্থ হয়। গল্পে জমিদার, গোমস্তা অধর রায়, মুখ্য পরিবারের লোকজন সামন্ত শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব করেছে। তাদের নির্মম অত্যাচার, যন্ত্রণা, শোষণ, বঞ্চনা, ঘৃণা, অবহেলা গল্পটির একাংশ জুড়ে আছে। অন্য অংশে শোষিত, বঞ্চিত, নীচু জাত বলে ঘৃণিত শ্রেণিভুক্ত অভাগী এবং তার পুত্র কাঙালীর যাপিত জীবন- যন্ত্রণা প্রকাশ পেয়েছে।


অভাগীর স্বর্গ অনুধাবন প্রশ্ন

প্রশ্ন ১। অভাগীর মায়ের কিসে মনে হচ্ছিল ঠাকুরদাস মুখুয্যের স্ত্রী স্বর্গে যাচ্ছে?
উত্তর : কাঙালীর মা দেখল যে, ঠাকুরদাস মুখোপাধ্যায়ের স্ত্রীর শবে যখন বহুকণ্ঠের হরিধ্বনির সঙ্গে পুত্রহস্তের আগুন লাভ করছে তখন প্রশ্নোক্ত কথাটি সে মনে মনে বলেছিল I কাঙালীর মায়ের মতে মৃত্যুর পর ছেলের হাতের আগুন অত্যন্ত পবিত্র। যে মা তা পায় সে অত্যন্ত ভাগ্যবতী। কারণ ছেলের হাতে আগুন পেলে সে স্বর্গে যায়। তাই যখন ঠাকুরদাস মুখোপাধ্যায়ের স্ত্রীর চিতায় তার ছেলে আগুন দিচ্ছিল তখন কাঙালীর মায়ের অনুরূপ ভাবনাটি হয়েছিল।

প্রশ্ন ২। রাখালের মা কাঙালীর মাকে সতী-লক্ষ্মী বলেছিল কেন?
উত্তর : ছেড়ে যাওয়া স্বামীর প্রতি ভক্তি এবং সন্তানকে আগলে রাখবে দিক বিবেচনা করে রাখালের মা কাঙালীর মাকে সতী-লক্ষ্মী বলেছিল। কাঙালীর মা অভাগী পৃথিবীতে বড় অসহায়। মাতৃহারা অভাগীর বিয়ে হয় রসিক দুলের সঙ্গে কিন্তু অভাগীর কপালে বেশিদিন সেই সুখ সয়নি। রসিক দুলে আরেকটি বিয়ে করে অন্য গ্রামে চলে যায়। তখন অনেকেই অভাগীকে বিয়ে করার জন্য পরামর্শ দিয়েছিল। কিন্তু অভাগী স্বামী এবং একমাত্র সন্তানের কথা ভেবে দ্বিতীয়বার বিয়ে করেনি। দুঃখ-দৈন্যে সে কাঙালীকে বুকে আগলে বড় করতে লাগল। এ কারণেই রাখালের মা কাঙালীর মাকে সতী-লক্ষ্মী বলেছিল।

প্রশ্ন ৩। অভাগী কেন শ্মশানের কাছে যেতে সাহস পেল না?
উত্তর : দুলে বংশের মেয়ে বলে অভাগী শ্মশানের কাছে যেতে সাহস পেল না। ঠাকুরদাস মুখোপাধ্যায়ের স্ত্রী মারা যাওয়ায় তাকে মহাসমারোহে শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে সৎকারের জন্য। হিন্দু রীতিতে দুলে বংশ অনেক ছোট। বড় বংশের মড়া পোড়ানোর সময় ছোট জাতের কেউ শ্মশানে গেলে সেটা দৃষ্টিকটু হয়। অভাগী সবার পিছু পিছু শ্মশানের কাছাকাছি গেলেও ভেতরে যাওয়ার সাহস পেল না। কারণ সে দুলে অর্থাৎ নীচু বংশের মেয়ে।

প্রশ্ন ৪। অভাগীর বাবা কেন মেয়ের নাম অভাগী রাখল?
উত্তর : অভাগীর যখন জন্ম হয়, তখনই তার মা মারা যায়। এ কারণেই রাগ করে বাবা তার মেয়ের নাম রাখল অভাগী। অভাগীর বাবার কাজ মাছ ধরা। দিন-রাত সে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে। যেদিন অভাগীর জন্ম হলো- সেদিন আঁতুড়েই অভাগীর মা মারা গেল। সদ্যোজাত শিশুর মা মারা যাওয়া দারুণ দুর্ভাগ্যের নামান্তর। কারণ মাতৃস্নেহ ও মাতৃস্তন্য থেকে সে বঞ্চিত। তাছাড়া অভাগীর বাবা জীবিকা নির্বাহের একমাত্র পন্থা মাছ ধরার কাজে সারাদিন বাইরে থাকে। ফলে অভাগীর কপালে পিতৃস্নেহও বিশেষ জুটবে না। এ কারণেই বাবা রাগ করে তার নাম রাখে ‘অভাগী’।

প্রশ্ন ৫। কাঙালীর অসহায়ত্বের কারণ কী?
উত্তর : কাঙালীর অসহায়ত্বের প্রধান কারণ পিতার সঙ্গে সম্পর্কহীনতা, দারিদ্র্য এবং নিচু জাত বলে সামাজিক বৈষম্য। ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পে কাঙালী দুলে পরিবারের ছেলে। ছেলেবেলা থেকেই সে বাবার আদর পায়নি। মাকে ছেড়ে তার বাবা আর একটি বিয়ে করে অন্য গ্রামে সংসার পেতেছে। কাঙালীদের সংসারে নিত্য অভাব। তার মা কোনো রকমে সংসারে দুবেলা খাদ্যের সংস্থান করে। সেই মায়ের অসুস্থতা ও মৃত্যু, সর্বোপরি সামাজিক বৈষম্য কাঙালীর জীবনকে অনিশ্চয়তা ও অসহায়ত্বের দিকে ঠেলে দিয়েছে।

প্রশ্ন ৬। অধর রায় বারান্দায় গোবরজল দিতে বলেছেন কেন?
উত্তর : অধর রায় বারান্দায় গোবরজল ছড়িয়ে দিতে বলার কারণ হলো— নিচু জাতের সন্তান কাঙালী তার মায়ের মড়া ছুঁয়ে এসে অধর রায়ের বারান্দায় দাঁড়িয়েছিল। কাঙালী মায়ের শেষ ইচ্ছা পূরণের জন্য মায়ের মৃত্যুর পর কাঠের ব্যবস্থা করতে জমিদারের কাছারি বাড়ি যায়। কাছারি বাড়ির কর্তা অধর রায়। কাঙালী তার কাছে তাদের বাড়ির আঙ্গিনায় লাগানো বেলগাছটি কাটার অনুমতি চায় মাকে পোড়ানোর জন্য। এতে অধর রায় বিরক্ত হয়। বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকা কাঙালীকে নিচে নেমে দাঁড়াতে বলে এবং জাত জিজ্ঞাসা করে। অধর রায় ওর দাঁড়ানোর জায়গাটাতে গোবর জল ছড়িয়ে দিতে আদেশ দেন। মূলত কাঙালী নিচু জাতের হওয়ায় এবং মড়া ছুঁয়ে আসায় অধর রায় এ কথা বলেছেন।

প্রশ্ন ৭। স্বামী ছেড়ে যাওয়ার পরেও কেন অভাগী পুনরায় বিয়ে করেনি?
উত্তর : স্বামী ছেড়ে যাওয়ার পরও কাঙালীর মা দ্বিতীয় বিয়ে করেনি। একমাত্র সন্তান কাঙালীর জন্য। কাঙালীর বাবা ছেড়ে যাওয়ার পর অভাগীকে অনেকেই বিয়ে করতে বলেছে। কিন্তু তাতে অভাগীর মন গলেনি, সে বিয়েতে রাজি হয়নি। কারণ সে জানে কাঙালীর সে ছাড়া এ জগতে আর কেউ নেই। তাই নিজের কথা ভেবে স্বার্থপরের মতো সে বিয়ে করেনি, বাঙালীর জন্য কারও প্ররোচনায় সে কান দেয়নি।

প্রশ্ন ৮ অভাগী কবিরাজের বড়ি উনুনে ফেলে দিল কেন?
উত্তর : কাঙালী মায়ের চিকিৎসার জন্য ঘটি বাঁধা দেওয়ায় তার মা অভাগী রাগ করে কবিরাজের বড়ি উনুনে ফেলে দিল । অভাগীর জীবননাট্যের শেষ অঙ্ক পার হতে চলল। কাঙালী গিয়ে কাঁদাকাটি করল, হাতে পায়ে পড়ল, শেষে ঘটি বাঁধা দিয়ে তাকে এক টাকা প্রণামি দিল। কিন্তু তাতেও কবিরাজ না এসে গোটা চারেক বড়ি দিলেন। কাঙালির মা রাগ করে বলল, কেন তুই আমাকে না বলে ঘটি বাঁধা দিতে গেলি বাবা? হাত পেতে বড়ি কয়টি নিয়ে মাথায় ঠেকিয়ে উনুনে ফেলে দিয়ে বলল, ভালো হই তো এতেই হব, বাগদি দুলের ঘরে কেউ ওষুধ খেয়ে বাঁচে না।

প্রশ্ন ৯। বৃদ্ধ মুখোপাধ্যায় মহাশয়কে ধানের কারবারে অতিশয় সংগতিপন্ন মনে হয় কেন?
উত্তর : বৃদ্ধ মুখোপাধ্যায় মহাশয়ের স্ত্রীর মৃত্যুতে শবযাত্রার আয়োজন করতে দেখে তাকে ধানের কারবারে অতিশয় সংগতিপন্ন মনে হয়। বৃদ্ধ মুখোপাধ্যায় মহাশয় ধানের কারবারের মাধ্যমে অতিশয় সংগতিপন্ন হয়েছেন। তার স্ত্রীর শবযাত্রার আয়োজনে শ্মশানে পূর্বাহ্ণেই কাঠের ভার, চন্দনের টুকরা, ঘৃত, মধু, ধূপ, ধুনা প্রভৃতি উপকরণ সঞ্চিত হয়েছিল। শবযাত্রা দেখে মনে হয়েছিল, এ কোনো শোকের ব্যাপার নয়, গৃহিণী যেন নতুন করে আরেকবার স্বামিগৃহে যাত্রা করছেন। আড়ম্বরপূর্ণ এ শেষ কৃত্যানুষ্ঠান দেখে তাই মনে হয় বৃদ্ধ মুখোপাধ্যায় মহাশয় ধানের কারবারে অতিশয় সংগতিপন্ন।

প্রশ্ন ১০। অভাগীর অন্তিম ইচ্ছা পূরণ হলো না কেন?
উত্তর : জাত-ধর্মের বিভেদ ও জমিদারি প্রথার নিষ্ঠুরতার জন্য অভাগীর অন্তিম ইচ্ছা পূরণ হলো না। স্বামী পরিত্যক্তা অভাগী একমাত্র সন্তান কাঙালীকে নিয়ে কোনোমতে জীবন পার করছিল। তার আশা ছিল ছেলে একদিন বড় হয়ে তার দুঃখ ঘুচাবে। মৃত্যুর পর ছেলের হাতের আগুন পেয়ে সে স্বর্গে যাবে। কিন্তু এ সমাজ তার অন্তিম ইচ্ছা পূরণ করতে দেয়নি। ছোট জাতের বলে তার নিজের হাতে লাগানো বেলগাছটিও জমিদার কাটতে দেয়নি। যার জন্য কাঙালী মায়ের শেষ ইচ্ছা পূরণ করতে পারেনি।

প্রশ্ন ১১। “ছেলের হাতের আগুন! সে তো সোজা কথা নয়।”— ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : “ছেলের হাতের আগুন, সে তো সোজা কথা নয়”- এ কথা কাঙালীর মা বলেছিল ছেলের হাতে আগুন লাভ করে স্বর্গে যাওয়ার ভাবনা থেকে। ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পটি অভাগীর সৎকারের বাসনাকে ঘিরে গড়ে উঠেছে। ধর্মভীরু · কুসংস্কারাচ্ছন্ন নিচু জাতের মেয়ে অভাগী। সে ঠাকুরদাস মুখোপাধ্যায়ের স্ত্রীর শবযাত্রায় বহু কণ্ঠে হরিধ্বনির সঙ্গে পুত্রহস্তে মুখাগ্নি দেখে ভাবল ঠাকুরদাসের স্ত্রী স্বর্গে যাচ্ছেন। এজন্য সেও তার সৎকারে ছেলের হাতের আগুন প্রত্যাশা করল। তার ধারণা, ছেলের হাতে আগুন পেলেই সে স্বর্গে যাবে। সেজন্য সে ভেবেছে, ছেলের হাতের আগুন পাওয়া সোজা কথা না, ভাগ্যের ব্যাপার।

প্রশ্ন ১২। হিন্দুস্থানি দারোয়ান অশ্রাব্য গালি দিলেও গায়ে হাত দিল না কেন?
উত্তর : হিন্দুস্থানি দারোয়ান অশ্রাব্য গালি দিলেও গায়ে হাত দিল না অশৌচের ভয়ে। তৎকালীন হিন্দুসমাজে জাত-পাত ও বর্ণপ্রথা প্রচলিত ছিল। উঁচু বর্ণের বা জাতের মানুষরা জাত-ধর্মের ভয়ে নিচু জাতের মানুষদের ছায়াও মাড়াত না। কাঙালী নিচু জাতের ছেলে। সে তার মায়ের মৃতদেহ স্পর্শ করেছে। তাই হিন্দুস্থানি দারোয়ান দূর থেকে কাঙালীকে অশ্রাব্য গালি দিলেও অশৌচের ভয়ে তার গায়ে হাত দিল না ।

প্রশ্ন ১৩। “এই ছলনায় বহুদিন কাঙালীর মা তাকে ফাঁকি দিয়া আসিয়াছে।” উক্তিটি বুঝিয়ে লেখ।
উত্তর : না খেয়ে থেকে ‘খিদে নেই’ বলে কাঙালীর মা অনেকদিন তাকে ফাঁকি দিয়েছে। কাঙালী ও তার মায়ের অভাবের সংসার। ঠিকমতো খাবার জোটে না। তাই অনেক সময় ছেলেকে খাইয়ে যা না খেয়ে থাকে। কিন্তু কাঙালী জিজ্ঞাসা করলে বলেছে যে তার খিদে নেই। আসলে তো খাবার নেই বলে সে খাচ্ছে না। এভাবে খিদে না থাকার ছলনায় অনেক দিন সে কাঙালীকে ফাঁকি দিয়েছে।


🔰🔰 আরও দেখুন: সুভা গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ২০২২
🔰🔰 আরও দেখুন: সুভা গল্পের অনুধাবন প্রশ্ন ও উত্তর


আশাকরি আমাদের আজকের আর্টিকেল টি আপনাদের ভালো লেগেছে। শিক্ষা, পাঠ্যপুস্তক, গল্পের বই সহ যে কোন পিডিএফ ডাউনলোড করতে আমাদের সাথেই থাকুন। ভালো থাকবেন সবাই, ধন্যবাদ। এছাড়াও আমাদের কোন আপডেট মিস না করতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে আমাদের সাথে ফেসবুকে কানক্ট থাকতে পারেন।