কপোতাক্ষ নদ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

SSC: কপোতাক্ষ নদ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

কপোতাক্ষ নদ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর: ‘কপোতাক্ষ নদ’ চতুর্দশপদী কবিতায় কবি যশোরের সাগরদাঁড়ির পাশ দিয়ে কুলকুল ধ্বনিতে বয়ে যাওয়া কপোতাক্ষের প্রতি তাঁর গভীর প্রেমবোধের পরিচয় দিয়েছেন।

বিদেশি সাহিত্যে আত্মপ্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ কবি ফ্রান্সের ভার্সাই নগরীতে স্বজনহীন জীবনযাত্রার মাঝে শৈশব- কৈশোরের স্মৃতিবিজড়িত মাতৃরূপ কপোতাক্ষ নদকে স্মরণ করেছেন। তিনি সেখানে এ নদের মায়ামন্ত্র ধ্বনি শুনতে পেয়েছেন।

কবি শুনতে পান কপোতাক্ষের কলকল ধ্বনি। তখন জন্মভূমির শৈশব-কৈশোরের বেদনা-বিধুর স্মৃতি তাঁর মনে জাগিয়েছে কাতরতা। কবির মন দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে কপোতাক্ষের তীরে ফিরে আসার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠে।

কবি বহু দেশ ভ্রমণ করে, বহু নদ-নদীর জলে নৌকা ভাসিয়ে, সেসবের জলে পিপাসা মিটিয়েও দুগ্ধ-স্রোতোরূপী কপোতাক্ষের জলের সেই স্বাদ পাননি। কারণ জন্মভূমির এই নদ যেন মায়ের স্নেহডোরে তাঁকে বেঁধেছে, কিছুতেই তিনি তাকে ভুলতে পারেন না।

তাঁর মনে সন্দেহ জাগে, এই নদের দেখা কি তিনি আর পাবেন? তাই তিনি প্রিয় নদের কাছে মিনতি করে বলেন- যদি কোনোদিন তিনি কপোতাক্ষের তীরে আর ফিরে যেতে নাও পারেন তবু যেন কপোতাক্ষ কবিকে মনে রাখে, বাংলার কোটি মানুষের কাছে তাঁর কথা পৌছে দেয়; তাঁকে যেন সন্নেহে স্মরণ করে।

কপোতাক্ষ নদ কবিতা pdfকপোতাক্ষ নদ কবিতা pdf

এসএসসি বাংলা ১ম পত্রের সকল গদ্য ও কবিতার সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: সুভা
🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: বইপড়া
🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: আম আঁটির ভেঁপু
🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: মানুষ মুহাম্মদ (সাঃ)
🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: নিমগাছ
🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব
🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: প্রবাস বন্ধু
🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: মমতাদি
🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: সাহিত্যের রুপ ও রীতি
🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: একাত্তরের দিনগুলি
🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: বঙ্গবানী
🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: কপোতাক্ষ নদ
🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: জীবন-সঙ্গীত
🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: মানুষ
🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: পল্লিজননী
🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: রানার
🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা
🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: আমার পরিচয়
🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: স্বাধীনতা এ শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো


কপোতাক্ষ নদ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

সৃজনশীল ০১: আবেদীন সাহেব উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেও স্বদেশে কোনো ভালো চাকরি জোগাড় করতে না পেরে সুদূর আমেরিকায় চলে যান। সেখানে তিনি ভালো বেতনে একটি চাকরি পেলেও কোনোভাবেই মন বসাতে পারছেন না। তাঁর শুধু মনে পড়ে স্বদেশের কথা, দেশের মানুষের কথা এবং দেশের রূপ-বৈচিত্র্যের কথা।

ক. ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায় কবির স্মৃতিকাতরতার আবরণে কী প্রকাশিত হয়েছে?
খ. কবি স্বদেশের জন্য হৃদয়ের কাতরতা বঙ্গবাসীর প্রতি কীভাবে প্রকাশ করেছেন?
গ. উদ্দীপকের আবেদীন সাহেবের প্রবাসে মন না বসা ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার কোন দিকটি ইঙ্গিত করে তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকের ভাববস্তুতে ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার সমগ্র দিক প্রতিফলিত হয়নি।”- মন্তব্যটির সত্যতা নির্ণয় কর।

১নং প্রশ্নের উত্তর

ক। ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায় কবির স্মৃতিকাতরতার আবরণে তাঁর অত্যুজ্জ্বল দেশপ্রেম প্রকাশিত হয়েছে।

খ। বিদেশ-বিভুঁয়ে থেকেও জন্মভূমির শৈশব-কৈশোরের বেদনা-বিধুর স্মৃতি, প্রিয় কপোতাক্ষ নদের স্নেহাতুর আবাহন প্রভৃতির মধ্য দিয়ে কবি স্বদেশের জন্য হৃদয়ের কাতরতা বঙ্গবাসীর কাছে প্রকাশ করেছেন।

‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার কবি স্মৃতিকাতরতার আবরণে অনন্য দেশপ্রেমের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন। কবি যশোর জেলার সাগরদাঁড়ি গ্রামে জন্মেছিলেন, যার কূল ঘেঁষে রয়েছে কপোতাক্ষ নদ। জীবনের প্রয়োজনে তিনি বিদেশে থেকেছেন কিন্তু জন্মভূমির স্মৃতি তিনি ভুলতে পারেননি। জন্মভূমির শৈশব-কৈশোরের বেদনাবিধুর স্মৃতি তাঁকে কাতর করেছে। দূরে থেকে যেন তিনি কপোতাক্ষ নদের শব্দ শুনতে পান। এসব মিলিয়েই কবি স্বদেশের জন্য তাঁর হৃদয়ের কাতরতা বঙ্গবাসীর কাছে প্রকাশ করেছেন।

গ। উদ্দীপকের আবেদীন সাহেবের প্রবাসে মন না বসা ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার কবির স্বদেশের জন্য বেদনার্ত ও স্মৃতিকাতর হওয়ার দিকটির প্রতি ইঙ্গিত করে।

মাতৃভূমির সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। প্রয়োজনের তাগিদে কখনো এ সম্পর্ক ছিন্ন হলেও হৃদয়জুড়ে স্বদেশের স্মৃতি আন্দোলিত হয়। উদ্দীপকের আবেদীন সাহেব উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেও দেশে ভালো চাকরি না পেয়ে আমেরিকায় চলে যান এবং ভালো বেতনের চাকরিও করেন। কিন্তু প্রবাসে তিনি মন বসাতে পারছেন না।

স্বদেশের মানুষ, স্বদেশের রূপ-বৈচিত্র্য তাকে স্মৃতিকাতর করে রাখে, ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায়ও কবির স্বদেশের জন্য স্মৃতিকাতরতা স্থান পেয়েছে। কৈশোরের স্মৃতি, দেশের প্রকৃতি, প্রকৃতির নানা অনুষঙ্গ কবিকে বেদনার্ত করে তোলে। এসব বিবেচনায় আবেদীন সাহেবের সঙ্গে ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার কবির ভাবনার সাদৃশ্য রয়েছে।

ঘ। “উদ্দীপকের ভাববস্তুতে ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার সমগ্র দিক প্রতিফলিত হয়নি।”- মন্তব্যটির সঙ্গে একমত পোষণ করছি। দেশপ্রেম মানুষকে মহৎ ও গৌরবান্বিত করে। স্বদেশ ও স্বদেশের প্রকৃতির কথা মানুষ সহজে ভুলতে পারে না। বাহ্যিক কোনো কারণে শৈশব-কৈশোরের স্মৃতিবিজড়িত স্থান ও প্রকৃতির সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটলেও স্মৃতিতে তা জাগরিত থাকে।

উদ্দীপকে দেখা যায়, উচ্চশিক্ষিত আবেদীন সাহেব দেশে যথার্থ চাকরি না পেয়ে আমেরিকায় পাড়ি জমান। সেখানে তিনি ভালো বেতনে চাকরিও করেন। কিন্তু সেখানে তার মন বসে না। কেবলই তার দেশের মানুষের কথা ও দেশের রূপ-সৌন্দর্যের কথা মনে পড়ে। ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার কবির ক্ষেত্রেও এই স্থানান্তরের ঘটনা ঘটলেও কিছু ব্যাপারে পার্থক্য রয়েছে।

কবিতায় যতটা আবেগীয়ভাবে কবি স্বদেশের জন্য ব্যকুলতা প্রকাশ করেছেন, বেদনার্ত হয়েছেন উদ্দীপকে তা দেখা যায় না। আবার দেশের ছোট ছোট স্মৃতিময় অনুযঙ্গ কবি যেভাবে কবিতায় চিত্রিত করেছেন উদ্দীপকে তা অনুপস্থিত।

‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায় কবির স্মৃতিকাতরতার আবরণে অত্যুজ্জ্বল স্বদেশপ্রেম প্রকাশিত হয়েছে। শৈশবের নদ, প্রবাসজীবন, জন্মভূমির প্রতি মনে রাখার জন্য মিনতি ইত্যাদি বিষয় কবিতায় বর্ণিত হলেও উদ্দীপকে এগুলো অনুপস্থিত। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের ভাববস্তুতে কবিতার সমগ্র দিক প্রতিফলিত হয়নি। সুতরাং উক্তিটি যথার্থ সত্য।

সৃজনশীল ০২: তাওসীফ চৌধুরী পেশায় ডাক্তার। ডাক্তারি পাস করে প্রথমেই নিজ গ্রামে নিয়োগ পেয়ে এলাকার মানুষকে চিকিৎসা সেবা দেন। অতুলনীয় মেধা আর সর্বোচ্চ আন্তরিকতা দিয়ে বিনা ফি-তে কিংবা নামমাত্র ফি-তে চিকিৎসা সেবা দেওয়ায় অতি অল্প সময়ের মধ্যেই সকলের প্রিয় মানুষে পরিণত হন তিনি। পেশাগত উৎকর্ষের জন্য গত বছর তিনি আমেরিকায় গেলেও নিজ দেশের কথা, গবির অসহায় রোগীদের কথা ভুলতে পারেন না ডা. তাওসীফ চৌধুরী। অন্যদিকে তাঁরই বন্ধু ইশমাম চৌধুরী পড়াশুনা শেষ করে সপরিবার লন্ডনে বসবাস করছেন। তিনি অনেক বিত্তবৈভবের মালিক। এতদসত্ত্বেও দেশে ফেরা কিংবা এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কথা চিন্তাও করেন না তিনি।

ক. অষ্টক কী?
খ. লইছে যে তব নাম বঙ্গের সঙ্গীতে’- চরণটি ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের ডা. তাওসীফ চৌধুরীর মধ্যে ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায় বর্ণিত কোন বিশেষ দিকটি ফুটে উঠেছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকের ইশমাম চৌধুরীর মধ্যে ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার কবির চেতনা অনুপস্থিত”- উক্তিটি বিশ্লেষণ কর ।

২নং প্রশ্নের উত্তর

ক। চতুর্থর্দশপদী কবিতার প্রথম আট চরণ হলো অণ্টক।

খ। “লইছে যে তব নাম বঙ্গের সংগীতে”- চরণটির মধ্য দিয়ে কবির মাতৃভূমি ও কপোতাক্ষ নদের প্রতি প্রবল ভালোবাসা প্রকাশ পেয়েছে।

প্রবাসে থাকার কারণে কবি মাতৃভূমি ও কপোতাক্ষ নদের ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত। তাই মাতৃভূমির প্রিয় কপোতাক্ষ নদের জন্য তাঁর মনে ব্যথা অনুভূত হয়। কৈশোরের স্মৃতিবিজড়িত কপোতাক্ষ নদ তাঁর মনকে প্রবলভাবে নাড়া দেয়। তাই নিজ হৃদয়ের কাতরতা কবি বঙ্গবাসীদের কাছে ব্যক্ত করেন। প্রবাসজীবনে তিনি অনেক গান ও কবিতা রচনা করেন। সেখানে তিনি শৈশব-কৈশোরের স্মৃতিবিজড়িত নদ কপোতাক্ষের কথাও লিখেছেন। তাই কবির মনে হচ্ছে, বাংলা গান বা সংগীতও কপোতাক্ষ নদের নাম নিচ্ছে প্রতিমুহূর্তে।

গ। উদ্দীপকের ডা. তাওসীফ চৌধুরীর মধ্যে ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায় বর্ণিত কবির দেশপ্রেমের দিকটি ফুটে উঠেছে।

জন্মভূমির সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। কোনো কারণে মানুষ দেশের বাইরে গেলেও স্বদেশ তার স্মৃতিতে সদা জাগরূক থাকে। যত ভালো জায়গায়ই সে থাকুক না কেন, জন্মভূমিকে সে কখনো ভুলতে পারে না। উদ্দীপকের ডা. তাওসীফ চৌধুরী একজন ডাক্তার। তিনি একজন মানবিক মানুষ। ডাক্তারি পাস করে তিনি এলাকার মানুষের সেবা করেন। পেশাগত কারণে তিনি আমেরিকায় যান। বিদেশে গিয়েও তিনি দেশের কথা আর গরিব অসহায় মানুষদের কথা ভুলতে পারেন না। তিনি তাদের স্মরণ করেন। তার এই চিন্তা-চেতনার মধ্য দিয়ে গভীর দেশপ্রেমের প্রকাশ ঘটে।

অন্যদিকে ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায়ও স্মৃতিকাতরতার আবরণে কবির অত্যুজ্জ্বল দেশপ্রেম প্রকাশ পেয়েছে। প্রবাসে বসে তাই কবি জন্মভূমির স্মৃতি, প্রিয় কপোতাক্ষ নদের স্মৃতি স্মরণ করেছেন। তাই বলা যায় যে, উদ্দীপকের ডা. তাওসীফ চৌধুরীর মধ্যে আলোচ্য কবিতায় বর্ণিত কবির দেশপ্রেমের দিকটি ফুটে উঠেছে। ” দিকটিকে নির্দেশ করে। ।

ঘ। “উদ্দীপকের ইশমাম চৌধুরীর মধ্যে ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার কবির চেতনা অনুপস্থিত”- উক্তিটি যথার্থ।

স্বদেশের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক আত্মার। স্বদেশের মাটির সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করে মানুষ ধন্য হয়। কিন্তু কিছু মানুষ রয়েছে যাদের চেতনা সম্পূর্ণ বিপরীত।

উদ্দীপকের ইশমাম চৌধুরী লন্ডন প্রবাসী। স্বদেশের প্রতি তার কোনো প্রেম নেই। তাই তার কাজে ও চেতনায় স্বদেশের প্রতি দায়বদ্ধতার কোনো পরিচয় পাওয়া যায় না। দেশ ও দেশের মানুষ তার কাছে কোনোভাবেই মূল্যায়িত হয় না। অন্যদিকে ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার কবির স্মৃতিকাতরতার আড়ালে অত্যুজ্জ্বল দেশপ্রেম প্রকাশ পেয়েছে। শৈশবের মাতৃসম নদের স্নেহধারা লাভের জন্য তিনি ব্যাকুল হয়েছেন। তিনি কপোতাক্ষকে ভুলতে পারেননি।

‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায় কবি জন্মভূমি থেকে বহু দূরে অবস্থান করেও শৈশবের প্রিয় নদকে গভীর মমতায় স্মরণ করেছেন। কবির এই ব্যাকুলতা তার স্বদেশপ্রেম চেতনাকেই প্রকাশ করে। যা উদ্দীপকের ইশমাম চৌধুরীর মধ্যে প্রকাশিত হয়নি। তাই বলা যায় যে, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।

সৃজনশীল ০৩: শুভ বাবু প্রায় এক যুগ আগে সরকারি বৃত্তি নিয়ে আমেরিকায় যান। পড়াশোনা শেষে সেখানেই একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরিতে যোগদান করেন। ব্যক্তিজীবনে তিনি প্রচুর বিত্ত-বৈভবের মালিক হয়েছেন। কিন্তু, তারপরও তিনি সুখী নন। বিদেশে থেকেও সেখানকার প্রকৃতি-পরিবেশ, লোকালয় কোনোকিছুই তাকে আকৃষ্ট করতে পারেনি। কাজের অবসরে মনটা শুধু পড়ে থাকে বাংলার সবুজ শ্যামল প্রান্তরে। যেখানে রয়েছে আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ, নদীতীরের সূর্যাস্তের দৃশ্য, সবুজ বনানী— কেটেছে তার শৈশব থেকে যৌবনের অফুরান সোনালি দিন।

ক. সনেটের অষ্টকে মূলত কী রয়েছে?
খ. ‘আর কি হে হবে দেখা?’— কবির এ সংশয়ের কারণ কী? ব্যাখ্যা কর।
গ. সাদৃশ্যগত দিক হতে শুভ বাবুর উপলব্ধিটি ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার কবির উপলব্ধির সাথে কতটুকু সঙ্গতিপূর্ণ? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার মূলভাবের প্রতিফলন ঘটেছে। মন্তব্যটির যথার্থতা নিরূপণ কর।

৩নং প্রশ্নের উত্তর

ক। সনেটের অষ্টকে রয়েছে মূলত ভাবের প্রবর্তনা।

খ। ‘আর কি হে হবে দেখা?’— কবির এই সংশয়ের কারণ তাঁর প্রবাসজীবন।

স্মৃতিবিজড়িত কপোতাক্ষ নদের তীরে কবির শৈশব কাটলেও যৌবনে তিনি পাড়ি দিয়েছিলেন বিদেশে। সেখানে বসবাসকালে শৈশব- কৈশোরের স্মৃতি তাঁর মনে জাগিয়েছে কাতরতা। দূরে বসেও তিনি কপোতাক্ষের কলকল ধ্বনি শুনতে পান। স্বদেশের এই নদ যেন তাকে স্নেহডোরে বেঁধে রেখেছে। কিছুতেই তিনি একে ভুলতে পারছেন না। কপোতাক্ষ নদের কোলে ফিরে যেতে তিনি ব্যাকুল। কিন্তু কবি জানেন না তিনি আর ফিরতে পারবেন কিনা, কপোতাক্ষ নদের সঙ্গে তাঁর আর দেখা হবে কিনা। তাই তিনি সংশয় করে আলোচ্য কথাটি বলেছেন।

গ। সাদৃশ্যগত দিক থেকে শুভ বাবুর উপলব্ধিটি ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার কবির উপলব্ধির সঙ্গে প্রায় সবটুকুই সংগতিপূর্ণ। • জন্মভূমি স্বদেশের কাছে মানুষ চিরঋণী। কেউ প্রবাসে গেলেও তার অন্তরজুড়ে স্বদেশের প্রতি গভীর ভালোবাসা বিরাজ করে। জন্মভূমির প্রতি মানুষের আবেগ, অনুরাগ বিলীন হওয়ার নয়

উদ্দীপকে এক প্রবাসীর স্বদেশানুরাগ তুলে ধরা হয়েছে। এখানে ‘শুভ বাবু সরকারি বৃত্তি নিয়ে আমেরিকায় গিয়ে পড়াশুনা করে সেখানকার কোনো এক বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করতে শুরু করেন। সেখানে তিনি অনেক অর্থ-বিত্তের মালিক হয়েও সুখী নন। কারণ, জন্মভূমি বাংলার শ্যামল প্রকৃতিকে তিনি ভুলতে পারেন না। তার জন্মভূমির আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ, নদীতীরের সূর্যাস্তের দৃশ্য মনে পড়ে। ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায় কবির ‘স্মৃতিকাতরতার আবরণে তাঁর অত্যুজ্জ্বল দেশপ্রেম প্রকাশিত হয়েছে। তিনি শৈশব-কৈশোরের স্মৃতিবিজড়িত কপোতাক্ষ নদকে ভুলতে পারেন না। তাই প্রবাসজীবনে তিনি স্বদেশের স্মৃতিচারণ করেছেন। তিনি দেশমাতার হৃদয়ে বেঁচে থাকার আকুতি প্রকাশ করেছেন। তাই বলা যায় যে, স্বদেশানুরাগের উপলব্ধিতে উদ্দীপকের শুভ বাবু এবং ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার কবি পরস্পর সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ। উদ্দীপকে ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার মূলভাবের প্রতিফলন ঘটেছে।— মন্তব্যটি যথার্থ।

জন্মভূমির প্রতি ভালোবাসা মানুষকে মহত্ত্ব ও গৌরব দান করে। স্বদেশ ও দেশের প্রকৃতির কথা মানুষ সহজে ভুলতে পারে না। শৈশব-কৈশোরের স্মৃতিবিজড়িত স্থান ও প্রকৃতির সঙ্গে সাময়িক বিচ্ছেদ ঘটলেও সেটা দীর্ঘস্থায়ী হয় না।

উদ্দীপকে জন্মভূমির প্রতি শুভ বাবুর গভীর অনুরাগ ও ভালোবাসা প্রকাশ পেয়েছে। প্রবাসের বিলাসী জীবন তাকে সুখী করতে পারেনি। তার হৃদয়জুড়ে বিরাজ করে শৈশব-কৈশোরের স্মৃতিবিজড়িত গ্রামখানি। জন্মভূমির প্রতি এই অনুরাগ ও ভালোবাসা শুভ বাবুকে ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের কপোতাক্ষ নদ তথা প্রিয় জন্মভূমির প্রতি গভীর ভালোবাসার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।

‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায় কবির স্মৃতিকাতরতার আবরণে তাঁর অত্যুজ্জ্বল দেশপ্রেম প্রকাশিত হয়েছে। কবি শৈশব-কৈশোরের স্মৃতিবিজড়িত কপোতাক্ষ নদ এবং এই নদের তীরবর্তী ছায়াসুনিবিড় গ্রামকে স্মরণ করেছেন। কপোতাক্ষের জলে যে তৃপ্তি, তা পৃথিবীর অন্য কোথাও তিনি পাননি। তাই প্রবাসজীবনে জন্মভূমির শৈশব-কৈশোরের স্মৃতি তাঁর মনে কাতরতা জাগিয়েছে। তিনি যেন কপোতাক্ষ নদের কলকল ধ্বনি শুনতে পান।

কবির মিনতি মাতৃভূমি ও মাতৃভূমির মানুষ যেন তাঁকে স্মরণ করে। উদ্দীপকের শুভ বাবুও বাংলার সবুজ-শ্যামল প্রান্তরের কথা, আঁকাবাঁকা পথের কথা, নদীতীরের সূর্যাস্তের মনোমুগ্ধকর দৃশ্যের কথা ভুলতে পারেন না। এভাবে দেশপ্রেমই কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত ও শুভ বাবুকে এক সুতোয় গেঁথেছে। এসব দিক বিচারে তাই বলা যায় যে, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।

সৃজনশীল ০৪:

উদ্দীপক #১:
সেই সাতজন নেই আজ টেবিলটা তবু আছে
সাতটা পেয়ালা আজও খালি নেই,
একই সে বাগানে আজ এসেছে নতুন কুঁড়ি
শুধু সেই সেদিনের মালী নেই।

উদ্দীপক # ২:
ঋতু বৈচিত্র্যের সুন্দর জন্মভূমি আমার
বিচিত্র রূপ তার শস্য শ্যামল ক্ষেত খামার
‘প্রিয় জন্মভূমি মা তোমায় ভালোবাসি বেশুমার।

ক. মধুসূদনের অমর কীর্তি কোনটি?
খ. ‘দুগ্ধস্রোতোরূপী তুমি জন্মভূমি-স্তনে’— কথাটি বুঝিয়ে লেখ।
গ. উদ্দীপক ১ অংশে ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার যে দিকটি ফুটে উঠেছে তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপক ২ অংশের আড়ালে কবির মূল চেতনারই প্রকাশ ঘটেছে’— মন্তব্যটি ব্যাখ্যা কর ।

৪নং প্রশ্নের উত্তর

ক। মধুসূদনের অমর কীর্তি হচ্ছে ‘মেঘনাদবধ কাব্য’।

খ। ‘দুগ্ধ-স্রোতোরূপী তুমি জন্মভূমি-স্তনে’— এই কথাটি দিয়ে কবি কপোতাক্ষ নদের স্নেহধারাকে বুঝিয়েছেন।

কপোতাক্ষ নদের স্নেহধারায় সিক্ত হয়ে কবির শৈশব-কৈশোর কেটেছে। কপোতাক্ষ নদকে ঘিরে তাঁর অনেক আনন্দ-বেদনার স্মৃতি রয়েছে। মায়ের দুধ পান করে যেমন সন্তান পুষ্ট হয়, ঠিক তেমনই কপোতাক্ষ নদের জলধারা কবির হৃদয়কে তৃপ্ত করেছে। এই কারণেই কবি কপোতাক্ষ নদকে মায়ের সঙ্গে তুলনা করে আলোচ্য কথাটি বলেছেন।

গ। উদ্দীপক ১ অংশে ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার স্মৃতিকাতরতার দিকটি ফুটে উঠেছে। ।

স্মৃতিবিজড়িত অতীত মানুষকে কাতর করে তোলে। মানুষ তার সুখের অতীত বারবার ফিরে পেতে চায়। অতীতের অনুরাগ, আবেগ, ভালোবাসা কখনো বিচ্ছিন্ন হওয়ার নয়।

উদ্দীপক ১-এ লেখক তার সোনালি অতীতের কথা স্মরণ করেছেন। সবাই মিলে কফি হাউজে যে আড্ডা দিত সেই সোনালি সময়, সোনালি বিকেলের কথা ভেবে কাতর হন। এর মাধ্যমে তার সেই দিনগুলো ফিরে পাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশিত হয়। ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায় কবি দূর প্রবাসে গিয়ে মাতৃভূমি ও শৈশবের প্রিয় কপোতাক্ষ নদের কথা মনে করে কাতর হয়েছেন। কবি শৈশবে কপোতাক্ষের তীরের প্রাকৃতিক পরিবেশে হেসে-খেলে বেড়ে উঠেছেন। তাই এই নদের কথা তিনি গভীর আবেগে স্মরণ করেন। এই নদের কাছে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন। ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার এই স্মৃতিকাতরতার দিকটিই উদ্দীপক ১ অংশে ফুটে, উঠেছে। সাদৃশ্যপূর্ণ। ।

ঘ। ‘উদ্দীপক ২ অংশের আড়ালে কবির মূল চেতনারই প্রকাশ ঘটেছে’— মন্তব্যটি যথার্থ।

মাতৃভূমি মায়ের সমান। নিজ দেশ বা মাতৃভূমিকে ভালোবাসা সকলের দায়িত্ব। সেই ভালোবাসা গড়ে ওঠে দেশের প্রকৃতিকে ভালোবাসার মধ্য দিয়ে। মাতৃভূমির সবকিছুর সাথেই মানুষের আত্মিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। প্রিয় জন্মভূমির আলো-বাতাসে মানুষ বেড়ে ওঠে।

উদ্দীপক ২-এর কবিতাংশে স্বদেশপ্রেমের গভীর প্রকাশ লক্ষ করা যায়। স্বদেশের ঋতুবৈচিত্র্যের বিচিত্র রূপ, শস্য-শ্যামল খেতখামার কবিকে মুগ্ধ করেছে। তিনি তাঁর জন্মভূমির প্রতি গভীর বন্ধন ও ভালোবাসার কথা প্রকাশ করেছেন। অন্যদিকে ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায় কবির স্মৃতিকাতরতার আবরণে তাঁর অত্যুজ্জ্বল দেশপ্রেম প্রকাশিত হয়েছে। শৈশবের স্মৃতিচারণে স্বদেশের প্রতি গভীর অনুরাগ ব্যক্ত করেছেন। কপোতাক্ষের জলে তৃষ্ণা মেটানোর কথা বলা হয়েছে। এই নদ ছাড়া অন্য কোনো নদ-নদীর জল কবির তৃষ্ণা মেটাতে পারে না।

উদ্দীপক ২ অংশে স্বদেশের রূপবৈচিত্র্যের বর্ণনার দিকটি কবির স্বদেশপ্রেমের দিককেই নির্দেশ করে। আর ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায় নদ- নদীর প্রতি কবির প্রীতির নেপথ্যে স্বদেশপ্রেমের চেতনা কাজ করছে, যা উদ্দীপক ২-এর কবির চেতনায়ও প্রতিফলিত। তাই বলা যায়, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।


আশাকরি আমাদের আজকের আর্টিকেল টি আপনাদের ভালো লেগেছে। শিক্ষা, পাঠ্যপুস্তক, গল্পের বই সহ যে কোন পিডিএফ ডাউনলোড করতে আমাদের সাথেই থাকুন। ভালো থাকবেন সবাই, ধন্যবাদ। এছাড়াও আমাদের কোন আপডেট মিস না করতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে আমাদের সাথে ফেসবুকে কানক্ট থাকতে পারেন।