মানুষ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

মানুষ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

মানুষ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর: কাজী নজরুল ইসলামের ‘সাম্যবাদী’ কাব্যগ্রন্থ থেকে ‘মানুষ’ কবিতাটি সম্পাদনা করে সংকলিত হয়েছে ধর্মকে ব্যবহার করে মনুষ্যত্বের অবমাননা না করা এবং জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র পরিচয়ের উর্ধ্বে সমগ্র মানবসমাজকে শ্রদ্ধা করতে উদ্বুদ্ধ করা।

‘মানুষ’ কবিতায় কবি সাম্যবাদের দৃষ্টিতে পৃথিবীর সব মানুষ এক ও অভিন্ন জাতি এই সত্যটি তুলে ধরেছেন। কবি এখানে ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, জাতি প্রভৃতির বাইরে মানুষের আসল পরিচয় সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন। মানবসেবা মহান কাজ, ক্ষুধার্তকে অন্নদান সব ধর্মে স্বীকৃত। কিন্তু ‘মানুষ’ কবিতায় ক্ষুধার্ত ব্যক্তিটি মন্দিরের পূজারি এবং মসজিদের মোল্লা দ্বারা নিগৃহীত হয়েছে।

সাত দিন ভুখা ফাকা থাকার কথা বলেও সে খাবার প্রার্থনা করে তাদের কাছে বঞ্চিত হয়েছে। অথচ আশি বছর ধরে কোনো প্রার্থনা ছাড়াই প্রভুর দেওয়া খাবার খেয়ে বেঁচে আছে। মানুষের মর্যাদা, সম্মান, উচ্চাসন সবকিছু স্রষ্টার কাছে সমানভাবে বিচার্য। অথচ মানুষ তাকে ধর্মের নামে, জাতের নামে ভিন্ন ভিন্ন করে দেখে। মসজিদে-মন্দিরে মোল্লা-পুরুতের আধিপত্য চলে।

ভজনালয়ে, খোদার ঘরে কপাট লাগিয়ে যারা তালা দেয়, তারা মানবতার শত্রু, সাম্যের শত্রু। তাদের প্রতিহত করতে সাধারণ মানুষ হাতুড়ি, শাবল নিয়ে একদিন এগিয়ে আসবে। আর তাতে জগতে মানবতার, সাম্যের, সত্যের, জয়ের নিশান উড়বে। কাজেই মানুষকে ঘৃণা করে শুধু ধর্মগ্রন্থ পাঠ, ধর্মালয়ের সেবা অযৌক্তিক, অধর্মের নামান্তর।


এসএসসি বাংলা ১ম পত্রের সকল গদ্য ও কবিতার সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: সুভা
🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: বইপড়া
🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: আম আঁটির ভেঁপু
🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: মানুষ মুহাম্মদ (সাঃ)
🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: নিমগাছ
🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব
🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: প্রবাস বন্ধু
🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: মমতাদি
🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: সাহিত্যের রুপ ও রীতি
🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: একাত্তরের দিনগুলি
🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: বঙ্গবানী
🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: কপোতাক্ষ নদ
🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: জীবন-সঙ্গীত
🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: মানুষ
🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: পল্লিজননী
🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: রানার
🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা
🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: আমার পরিচয়
🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: স্বাধীনতা এ শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো


মানুষ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

সৃজনশীল ০১: বায়তুল মামুর মসজিদের সভাপতি মজিদ সাহেব। তিনি মসজিদের নির্মাণ কাজের ইট-সিমেন্ট দিয়ে নিজের বাড়িতে দালান নির্মাণের উদ্যোগ নেন। ভয়ে কেউ তার বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পায় না। কিন্তু মসজিদের ইমাম সাহেব এ ব্যাপারে সোচ্চার হন এবং এলাকার মানুষদের নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন।

ক. মুসাফির কত বছর প্রভুকে ডাকেনি?
খ. “ঐ মন্দির পূজারীর, হায় দেবতা, তোমার নয়!”— ডুখারির এ উত্তির কারণ কী?
গ. উদ্দীপকের মজিদের কর্মকাণ্ডে ‘মানুষ’ কবিতার কোন দিকের সাদৃশ্য রয়েছে? ব্যাখ্যা কর ।
ঘ. উদ্দীপকের ইমাম সাহেবই ‘মানুষ’ কবিতার কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রত্যাশিত ব্যক্তি।”— বিশ্লেষণ কর।

🔷১ নং প্রশ্নের উত্তর🔷

ক। মুসাফির আশি বছর প্রভুকে ডাকেনি।

খ। “ঐ মন্দির পূজারীর, হায় দেবতা, তোমার নয়!”- ভুখারির এ উক্তির কারণ পূজারির কাছ থেকে খাদ্য চেয়ে না পাওয়া।

‘মানুষ’ কবিতায় কবি অসহায়, নিরন্ন এক পথিক সারা দিন পথে পথে ঘুরে ক্ষুধায় ক্লান্ত হয়ে মন্দিরে গিয়ে পূজারির কাছে সামান্য খাবার প্রার্থনা করে না পাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেছেন। অন্যদিকে দুয়ার খোলার আগে পূজারি ভেবেছে দেবতা বুঝি তার ডাকে সাড়া। দিয়ে দরজায় এসেছেন, তিনি তাকে বর দেবেন। এই ভেবে দ্বার খুলে পথিককে দেখে এবং তার ক্ষুধার কথা শোনামাত্র পুরোহিত রাগে দ্বার বন্ধ করে দিয়েছে। এভাবে প্রত্যাখ্যাত হয়ে ব্যথিত হৃদয়ে পথিক বলেছে যে, ঐ মন্দির দেবতার। তা পূজারির দখলে বলে তাতে মানুষের স্থান হয় না।

গ। উদ্দীপকের মজিদের কর্মকাণ্ডে ‘মানুষ’ কবিতার মোল্লা-পুরোহিতের স্বার্থপরতার সাদৃশ্য রয়েছে। স্রষ্টার সৃষ্টি মানুষকে ঘৃণা করে স্রষ্টাকে খুশি করা যায় না। স্বার্থপর ভণ্ড ধর্মব্যবসায়ীরা এই সত্য স্বীকার করতে চায় না। তাই তারা আত্মস্বার্থে ধর্ম ও ধর্মীয় উপাসনালয়কে ব্যবহার করে।

‘মানুষ’ কবিতায় কবি ক্ষুধার্ত এক ভিখারিকে খাবার দিতে নারাজ মোল্লা ও পুরোহিতের আচরণের মধ্য দিয়ে সমাজে ধর্মের অপব্যবহারের দিকটি তুলে ধরেছেন। এখানে স্বার্থপর ধর্মব্যবসায়ীরা উপাসনালয়কে তাদের স্বার্থে ব্যবহার করেছে। মানুষের কল্যাণের জন্য তা ব্যবহার করেনি। তারা ভিখারিকে খাবার না দিয়ে মসজিদ-মন্দিরের দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। কবিতার মোল্লা ও পুরোহিতের এই হীন আচরণের সঙ্গে উদ্দীপকের মজিদের আচরণ সাদৃশ্যপূর্ণ। মজিদ কৌশলে মসজিদ নির্মাণের ইট-সিমেন্ট আত্মসাৎ করে নিজের বাড়ি তৈরির কাজে লাগান। উভয় ক্ষেত্রেই স্বার্থান্বেষী ও অনৈতিক আচরণের দিকটি ফুটে উঠেছে

ঘ। “উদ্দীপকের ইমাম সাহেবই ‘মানুষ’ কবিতার কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রত্যাশিত ব্যক্তি।”— মন্তব্যটি যথার্থ। • সাম্যবাদের দৃষ্টিতে পৃথিবীর সব মানুষ সমান। কারণ তারা একই স্রষ্টার সৃষ্টি এবং একই চন্দ্র-সূর্যের জোছনা ও উত্তাপ নিয়ে বাঁচে। তাদের জন্ম-মৃত্যুর প্রক্রিয়াও এক ও অভিন্ন। কাজেই ধর্ম, বর্ণ, অর্থ-বিত্ত দিয়ে কাউকে বিচার করা উচিত নয়। উদ্দীপকের ইমাম সাহেব স্বার্থান্বেষী মজিদ সাহেবের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সরব হন এবং এলাকার মানুষদের নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন।

উদ্দীপকে নৈতিকতা ও মানবিকতার যে প্রতিফলন ঘটেছে তা ‘মানুষ’ কবিতার কবিও প্রত্যাশা করেছেন। তিনি সাম্যবাদের দৃষ্টিতে সব মানুষকে সমান হিসেবে দেখতে চেয়েছেন। সেখানে ধর্ম-বর্ণ কিংবা অর্থ-বিত্ত দিয়ে মানুষকে পার্থক্য করা হবে না। প্রত্যেকেই মানুষ পরিচয়ে প্রত্যেকের কাছে মর্যাদা লাভ করবে।

‘মানুষ’ কবিতায় একজন ক্ষুধার্ত পথিক মন্দিরের পুরোহিত এবং মসজিদের মোল্লার কাছে ক্ষুধার অন্ন প্রার্থনা করে প্রত্যাখ্যাত ও বিতাড়িত হয়েছে। তারা খাবার নিয়ে মসজিদ-মন্দিরে তালা লাগিয়েছে। কবি তাদের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ হয়ে এর প্রতিকারের জন্য হাতুড়ি, শাবল চালাতে চেঙ্গিস, গজনি মামুদ, কালাপাহাড়কে স্মরণ করেছেন। কবির এই প্রত্যাশা মূলত মানুষ হিসেবে মানুষের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা, যা উদ্দীপকে ইমাম সাহেবের কর্মকাণ্ডে প্রতিফলিত হয়েছে। এ দিক থেকে প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।

সৃজনশীল ০২: আনিস সাহেব তাঁর পিতার কুলখানিতে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সাথে গ্রামের গরিব অসহায় মানুষদের দাওয়াত করেন। তিনি নিজে উপস্থিত হয়ে সকলকে সমান আপ্যায়ন করান। তিনি ধনী-গরিবে কোনো পার্থক্য করেন না। তাঁর ভাই সবুর সাহেব বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘অভিজাত ব্যক্তিদের সাথে গ্রামের গরিব মানুষকে একসাথে খাওয়ানো ঠিক হয়নি।’

ক. কালাপাহাড়ের প্রকৃত নাম কী?
খ. “তব মসজিদ মন্দিরে প্রভু নাই মানুষের দাবি”- বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
গ. উদ্দীপকের সবুর সাহেবের সাথে ‘মানুষ’ কবিতায় বর্ণিত চরিত্রের সাদৃশ্য দেখাও।
ঘ. “উদ্দীপকের আনিস সাহেব ও ‘মানুষ’ কবিতার কবির দৃষ্টিভঙ্গি একই।”- মন্তব্যটির যথার্থতা নিরূপণ কর।

🔷২ নং প্রশ্নের উত্তর🔷

ক। কালাপাহাড়ের প্রকৃত নাম রাজচন্দ্র বা রাজকৃষ্ণ বা রাজনারায়ণ ।

খ। “তব মসজিদে মন্দিরে প্রভু নাই মানুষের দাবি”— এ কথা বলতে কিছু ভণ্ড ব্যক্তির সেবকের মুখোশ পরে ধর্মীয় উপাসনালয়গুলোকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করাকে বোঝানো হয়েছে।

স্রষ্টার কাছে মানুষে মানুষে কোনো প্রভেদ নেই। সব ধর্ম-বর্ণ পেশার মানুষই সমান। অথচ ভণ্ড ধার্মিকেরা এই সত্যটিকে ভুলে উপাসনালয়গুলোকে নিজেদের সম্পত্তি বানিয়ে ফেলে। তারা সেখানে ধর্মচর্চা করলেও মানবতা সেখানে উপেক্ষিত থাকে। ক্ষুধার্তকে খাদ্য দেওয়ার জন্য এরা ধর্মের মানদণ্ডে বিচার করে। ফলে অসহায় নিরন্ন পথিক তাদের কাছে ক্ষুধার জন্য অন্ন চেয়ে পায়নি। এই সত্যটিকে তুলে ধরতেই কবি আক্ষেপ করে বলেছেন যে, “তব মসজিদ মন্দিরে প্রভু নাই মানুষের দাবি।

গ। উদ্দীপকের সবুর সাহেবের সাথে ‘মানুষ’ কবিতায় বর্ণিত মোল্লা-পুরুতের হীন ও আত্মকেন্দ্রিক মানসিকতার সাদৃশ্য রয়েছে। সাম্যবাদের দৃষ্টিতে পৃথিবীর সব মানুষ সমান। কারণ তারা সবাই একই স্রষ্ট্রার সৃষ্টি। স্রষ্টার কাছে ধর্ম, বর্ণ, গোত্র প্রভৃতি বিচারে মানুষের ভেদ নেই। সব ভেদ-বৈষম্য মানুষেরই সৃষ্টি।

উদ্দীপকে দেখা যায়, বড় ভাই আনিস সাহেব বাবার কুলখানিতে গ্রামের গণ্যমান্যদের সঙ্গে গরিব অসহায়দের সমানভাবে আপ্যায়ন করিয়েছেন বলে সবুর সাহেব বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি। সবুর সাহেব মনে করেন অভিজাত ব্যক্তিদের সঙ্গে গ্রামের গরিব মানুষদের একসঙ্গে খাওয়ানো ঠিক হয়নি। এখানে সবুর সাহেবের বর্ণবাদী ও বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ ঘটেছে। একইভাবে ‘মানুষ’ কবিতায়ও দেখা যায়, এক অসহায় নিরন্ন ভিখারি মন্দিরে গিয়ে পুরোহিতের কাছে খাবার ভিক্ষা চায় বলে তাকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিয়েছে। তারপর মসজিদের মোল্লা সাহেবও নামাজ পড়ে না বলে তাকে খেতে দেয়নি।

ঘ। “উদ্দীপকের আনিস সাহেব ও ‘মানুষ’ কবিতার কবির দৃষ্টিভঙ্গি একই।”- মন্তব্যটি যথার্থ। কিছু মানুষ স্বার্থের দৌরাত্ম্যে হৃদয়হীন অমানবিক হয়ে ওঠে। তখন মানুষের প্রতি মানুষের দয়া-মায়া থাকে না। তারা শুধু নিজেদের বৈষয়িক স্বার্থ উদ্ধারের জন্য কপটতার আশ্রয় নেয়। আর যারা মানবিক তারা মানুষের প্রতি সদয় আচরণ করেন, তাদের প্রতি সর্বদা সহানুভূতিশীল থাকেন।

‘মানুষ’ কবিতার কবি সাম্যবাদের কথা বলেছেন। যেসব ধর্মান্ধ, কপট, ভণ্ড ধার্মিক উপাসনালয়গুলোকে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের কাজে ব্যবহার করছে তাদেরকে কবি তিরস্কার করেছেন। ক্ষুধার্ত, নিরন্ন, অসহায় পথিককে যে ‘মোল্লা-পুরুতেরা খাবার দেয় না কবি তাদের ভর্ৎসনা করেছেন। একইভাবে উদ্দীপকের আনিস সাহেব সাম্যবাদী মনোভাবের ধারক-বাহক। তিনি নিজের বাবার কুলখানিতে ধনী-দরিদ্র সবাইকে একসঙ্গে নিজ হাতে সমানভাবে আপ্যায়ন করিয়েছেন। তিনি ধনী-দরিদ্রের মধ্যে কোনো পার্থক্য করেননি।

উদ্দীপকের আনিস সাহেব গবির অসহায় মানুষদের নিমন্ত্রণ করে তাদের প্রতি ভালোবাসা ও সম্মান জ্ঞাপন করেছেন। তার এ চেতনা ‘মানুষ’ কবিতার কবির চেতনার সমার্থক। কারণ কবিতায় কবিও বৈষম্যের প্রতি প্রতিবাদ জানিয়ে সাম্যবাদী সমাজ গড়তে চেয়েচেন। এসব বিচারে বলা যায়, উদ্দীপকের আনিস সাহেব ও ‘মানুষ’ কবিতার কবির দৃষ্টিভঙ্গি একই। সুতরাং মন্তব্যটি যথার্থ।

সৃজনশীল ০৩:
হাশরের দিন খোদা বলিবেন, ‘হে আদম সন্তান,
আমি চেয়েছিনু ক্ষুধায় অন্ন, তুমি কর নাই দান।’
মানুষ বলিবে, ‘তুমি জগতের প্রভু,
আমরা তোমারে কেমনে খাওয়াব, সে কাজ কি হয় প্রভু?’
বলিবেন খোদা, ‘ক্ষুধিত বান্দা গিয়েছিল তব দ্বারে
মোর কাছে ফিরে পেতে তাহা যদি খাওয়াইতে তারে।’

ক. ‘মানুষ’ কবিতায় কবি কালাপাহাড়কে আহ্বান জানিয়েছেন কেন?
খ. ‘তব মসজিদ মন্দিরে প্রভু নাই মানুষের দাবি।’ ― চরণটিতে কী বোঝানো হয়েছে?
গ. উদ্দীপকের ‘আদম সন্তান’ ‘মানুষ’ কবিতার কোন চরিত্রের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকটি ‘মানুষ’ কবিতার মূলভাবের ধারক।”— বিশ্লেষণ কর ।

🔷৩ নং প্রশ্নের উত্তর🔷

ক। ‘মানুষ’ কবিতায় কবি কালাপাহাড়কে আহ্বান জানিয়েছেন যারা পবিত্র উপাসনালয়ের দরজা বন্ধ করে তাদের ধ্বংস করার জন্য।

খ। ‘তব মসজিদ মন্দিরে প্রভু নাই মানুষের দাবি।’― চরণটি দ্বারা কিছু ভণ্ড ব্যক্তির সেবকের মুখোশ পরে ধর্মীয় উপাসনালয়গুলোকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করাকে বোঝানো হয়েছে।

সৃষ্টিকর্তার কাছে মানুষে মানুষে কোনো ভেদাভেদ নেই, সব মানুষ সমান। অথচ ধার্মিকের লেবাসধারী ভণ্ডরা এই সত্যটি ভুলে গিয়ে উপাসনালয়গুলোকে নিজেদের সম্পত্তি বানিয়ে ফেলে। সেখানে তারা ধর্মচর্চার নামে ভণ্ডামি করে কে মানবতা উপেক্ষা করে। এ সত্যটিকে তুলে ধরে কবি আক্ষেপ করে বলেছেন যে, মসজিদ-মন্দিরে মানুষের দাবি নেই। সেখানে কেবল ধর্মের লেবাস পরে ভণ্ডরা তাদের স্বার্থ হাসিল করে।

গ। উদ্দীপকের ‘আদম সন্তান’ ‘মানুষ’ কবিতার মোল্লা-পুরোহিত চরিত্রের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। ধর্ম মানুষের জীবনকে সুশৃঙ্খল করে, মানুষকে সত্য ও কল্যাণের পথে পরিচালিত করে। সব ধর্মের মানুষেরই নিজ ধর্মের প্রতি দুর্বলতা থাকে। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে একদল ভণ্ড ধর্মব্যবসায়ী তাদের স্বার্থ উদ্ধার করে। তারা মিথ্যা বলে এবং মানবতাকে অস্বীকার করে।

উদ্দীপকে আদম সন্তানের কথা বলা হয়েছে। এ আদম সন্তান আত্মস্বার্থে মগ্ন থাকে। সে ক্ষুধার্তকে অন্ন দান করে না। অথচ ক্ষুধার্তকে অন্ন দান করলে, তাকে খাওয়ালে স্রষ্টার সেবা করা হয়। এতে হাশরের দিনে খোদা খুশি হতেন। ‘মানুষ’ কবিতায় মোল্লা ও পুরোহিত দুজনই স্বার্থপর, কপট ও অমানবিক। তারা শুধু ধর্মগ্রন্থ ও উপাসনালয়কে সামনে রেখে অন্যায় করে। স্রষ্টার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষকে অবহেলা করেছে। ক্ষুধায় কাতর পথিককে ক্ষুধার অন্ন দান করেনি। তাই বলা যায় যে, অমানবিকতার দিক থেকে উদ্দীপকের ‘আদম সন্তান’ ‘মানুষ’ কবিতার মোল্লা-পুরোহিত চরিত্রের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ। “উদ্দীপকটি ‘মানুষ’ কবিতার মূলভাবের ধারক।”- মন্তব্যটি যথার্থ।

জাতি, ধর্ম, বর্ণের ঊর্ধ্বে হলো মানুষ। অথচ কিছু মানুষ আছে যারা ধর্মকে আশ্রয় করে মানবতাকে ডুলুণ্ঠিত করে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার করে। তারা ধর্ম ও মানবতার শত্রু।

উদ্দীপকের কবিতাংশে আদম সন্তানের অমানবিকতা প্রকাশ পেয়েছে। আদম সন্তান আত্মস্বার্থে মগ্ন হয়ে মানবিকতাকে ভূলুণ্ঠিত করেছে। উদ্দীপকের কবিতাংশে মানবসেবার মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি লাভের কথা বলা হয়েছে। কবি বলেছেন মানবসেবার মধ্য দিয়েই সৃষ্টিকর্তাকে পাওয়া যায়। ‘মানুষ’ কবিতার মোল্লা ও পুরোহিতও স্রষ্টাকে পাওয়ার জন্য উপাসনালয় আঁকড়ে ধরেছে। তারা আত্মস্বার্থে মগ্ন হয়ে ক্ষুধার্ত পথিককে ফিরিয়ে দেয়। অথচ তারা বোঝে না যে, মানুষের মাঝেই স্রষ্টার বাস।

উদ্দীপক ও ‘মানুষ’ কবিতা উভয় ক্ষেত্রেই মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের কথা প্রকাশ পেয়েছে। উভয় ক্ষেত্রেই মানুষকে বড় করে দেখানো হয়েছে। মানুষের চেয়ে বড় অন্য কিছুই হতে পারে না। ধর্মও সেই কথা বলে। এ দিক থেকে উদ্দীপকটি ‘মানুষ’ কবিতার মূলভাবের ধারক। সুতরাং মন্তব্যটি যথার্থ।

সৃজনশীল ০৪: বন্যাদুর্গত মানুষের জন্য আসা ত্রাণসমাগ্রী চেয়ারম্যান সাহেব দুর্গতদের মধ্যে বিতরণ না করে নিজে আত্মসাৎ করে ফেলেন। এসব দেখে গ্রামের বৃদ্ধ এখলাস উদ্দিন অত্যন্ত ব্যথিত হয়ে বলেন, “যারা গরিবের হক মেরে খায়, আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করবেন না।”

ক. ‘মানুষ’ কবিতাটি কাজী নজরুল ইসলামের কোন কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলন করা হয়েছে?
খ. “হায় রে ভজনালয়, তোমার মিনারে চড়িয়া ভণ্ড গাহে স্বার্থের জয়”- ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের চেয়ারম্যান সাহেবের সাথে ‘মানুষ’ কবিতার যে সাদৃশ্য রয়েছে তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের এখলাস উদ্দিনের কথায় ‘মানুষ’ কবিতার কবির মানোভাব প্রকাশ পেয়েছে কি? তোমার উত্তরের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন কর।

🔷৪ নং প্রশ্নের উত্তর🔷

ক। ‘মানুষ’ কবিতাটি কাজী নজরুল ইসলামের ‘সাম্যবাদী’ কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলন করা হয়েছে।

খ। “হায় রে ভর্জনালয়,/ তোমার মিনারে চড়িয়া ভণ্ড গাহে স্বার্থের জয়”- এ কথার মধ্য দিয়ে কবি ভণ্ড ধর্মব্যবসায়ীদের হীন কর্মকাণ্ড ও তাদের স্বার্থ উদ্ধারের দিকটি নির্দেশ করেছেন।

‘মানুষ’ কবিতায় কবি একশ্রেণির ধর্মব্যবসায়ীর হীনস্বার্থ হাসিলের স্বরূপ উন্মোচন করেছেন। তাদের অন্যায়ের অবসান করে কবি সাম্যবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠার কথা বলেছেন। যারা ধর্মের দোহাই দিয়ে মসজিদ ও মন্দিরে আধিপত্য বিস্তার করে, কবি তাদের প্রতি তীব্র ঘৃণা প্রকাশ করেছেন। এ কবিতায় ধর্মব্যবসায়ীরা সাত দিনের অভুক্ত ভিখারিকে তাড়িয়ে দিয়ে খাবার নিয়ে মসজিদ-মন্দিরের দরজায় তালা দিয়েছে। এখানে ভণ্ডদের হীনস্বার্থের জয় হয়েছে। প্রশ্নোক্ত লাইনে কবি এ বিষয়টিকে বোঝাতে চেয়েছেন।

গ। উদ্দীপকের চেয়ারম্যান সাহেবের কর্মকাণ্ডের সাথে ‘মানুষ’ কবিতার মোল্লা-পুরোহিতের স্বার্থপরতার সাদৃশ্য রয়েছে। স্রষ্টার সৃষ্টি মানুষকে ঘৃণা করে স্রষ্টাকে খুশি করা যায় না। স্বার্থপর ভণ্ড ধর্মব্যবসায়ীরা এ সত্য স্বীকার করতে চায় না। তাই তারা আত্মস্বার্থে ধর্ম ও ধর্মীয় উপাসনালয়কে ব্যবহার করে থাকে।

‘মানুষ’ কবিতায় কবি ক্ষুধার্ত এক ভিখারিকে খাবার দিতে নারাজ মোল্লা ও পুরোহিতের আচরণের মধ্য দিয়ে সমাজে ধর্মের অপব্যবহারের দিকটি তুলে ধরেছেন। এখানে স্বার্থপর ধর্মব্যবসায়ীরা উপাসনালয়কে তাদের স্বার্থে ব্যবহার করেছে। মানুষের কল্যাণের জন্য তা ব্যবহার করেনি। তারা ভিখারিকে খাবার না দিয়ে মসজিদ-মন্দিরের দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। কবিতার মোল্লা ও পুরোহিতের এই হীন আচরণের সঙ্গে উদ্দীপকের চেয়ারম্যান সাহেবের আচরণ সাদৃশ্যপূর্ণ। চেয়ারম্যান বন্যাদুর্গত মানুষের জন্য আসা ত্রাণসামগ্রী আত্মসাৎ করেছে। অসহায় মানুষের কথা সে ভাবেনি। উভয় ক্ষেত্রেই দরিদ্র ও অসহায় মানুষের প্রতি অমানবিকতার দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে। সারকথা : উদ্দীপকের চেয়ারম্যান সাহেব বন্যাদুর্গত মানুষের জন্য আসা ত্রাণসামগ্রী আত্মসাৎ করেছেন।

ঘ। না, উদ্দীপকের এখলাস উদ্দিনের কথায় ‘মানুষ’ কবিতার কবির মনোভাব সম্পূর্ণ প্রকাশ পায়নি।

মানুষকে তার ন্যায্য অধিকার বুঝিয়ে দেওয়াই যথার্থ মানবতা। যারা মনুষ্যত্ববোধসম্পন্ন তারা মানুষের বিপদে এগিয়ে আসে মানুষকে সাহায্য করার জন্য। আর যারা স্বার্থপর, ভণ্ড, প্রতারক তারা মানুষের কাছে এগিয়ে আসে তাদের সমস্ত কিছু ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য। এটা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়।

উদ্দীপকের মনুষ্যত্বহীন এক ব্যক্তির অমানবিকতা এবং মনুষ্যত্বসম্পন্ন একজন মানুষের সৃষ্টিকর্তার কাছে নালিশ জানানোর বিষয় প্রতিফলিত হয়েছে। এখানে বন্যাদুর্গতদের ত্রাণসামগ্রী চেয়ারম্যান সাহেব আত্মসাৎ করলে মনুষ্যত্বসম্পন্ন মানুষ এখলাস উদ্দিন অত্যন্ত ব্যথিত হয়ে আল্লাহর কাছে নালিশ করেছেন। তিনি বলেছেন, যারা গরিবের হক মেরে খায়, আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করবেন না। উদ্দীপকের এ বিষয়টিতে ‘মানুষ’ কবিতার কবির মনোভাব সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ পায়নি। কারণ ‘মানুষ’ কবিতায় কবির যে সাম্যবাদী চেতনা এবং ধর্মব্যবসায়ী, স্বার্থপর, ভণ্ডদের প্রতিকার করার জন্য যে বিদ্রোহী মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে, তা উদ্দীপকে প্রকাশ পায়নি।

‘মানুষ’ কবিতায় কবি সাম্য প্রতিষ্ঠায় সোচ্চার হয়েছেন। মানুষে মানুষে বৈষম্য সৃষ্টিকারীদের প্রতি তিনি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এসব বিষয় উদ্দীপকের এখলাস উদ্দিনের কথার মধ্যে প্রকাশ পায়নি। তার যে প্রার্থনা তা প্রতিবাদ-প্রতিরোধের চেষ্টার বাইরে। ‘মানুষ’ কবিতায় কবি চেঙ্গিস, গজনি মামুদ, কালাপাহাড়কে স্মরণ করেছেন। উদ্দীপকের এখলাস উদ্দিনের কথায় এর প্রভাব নেই। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের এখলাস উদ্দিনের কথায় ‘মানুষ’ কবিতার কবির মনোভাব সম্পূর্ণ প্রকাশ পায়নি।


আশাকরি আমাদের আজকের আর্টিকেল টি আপনাদের ভালো লেগেছে। শিক্ষা, পাঠ্যপুস্তক, গল্পের বই সহ যে কোন পিডিএফ ডাউনলোড করতে আমাদের সাথেই থাকুন। ভালো থাকবেন সবাই, ধন্যবাদ। এছাড়াও আমাদের কোন আপডেট মিস না করতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে আমাদের সাথে ফেসবুকে কানক্ট থাকতে পারেন।

About মেরাজুল ইসলাম

আমি মেরাজুল ইসলাম, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী পাশাপাশি একজন ব্লগার। এডুকেশন এর প্রতি ভালোবাসাও অনলাইল শিক্ষার পরিসর বাড়ানোর জন্য এডুকেশন ব্লগের পথচলা। ব্লগিং এর পাশাপাশি আমি ওয়েবসাইট ডিজাইন, কন্টেন্ট রাইটিং, কাস্টমাইজ সহ ওয়েব রিলেটেড সকল কাজ করি।

View all posts by মেরাজুল ইসলাম →