আমার পরিচয় কবিতার সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর 

SSC: আমার পরিচয় কবিতার সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

আমার পরিচয় কবিতার সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর: সৈয়দ শামসুল হকের ‘কিশোর কবিতা সমগ্র’ থেকে ‘আমার পরিচয়’ শীর্ষক কবিতাটি সম্পাদিত আকারে চয়ন করা হয়েছে। বাঙালি জাতিসত্তা প্রতিষ্ঠার নেপথ্যের সমৃদ্ধ ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির পটভূমি নির্দেশপূর্বক বাঙালির আত্মপরিচয় তুলে ধরা।

‘আমার পরিচয়’ কবিতায় কবি সৈয়দ শামসুল হক স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র ও আত্মমর্যাদাবোধসম্পন্ন জাতিসত্তা প্রতিষ্ঠার নেপথ্যের সমৃদ্ধ ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক পটভূমি তুলে ধরেছেন। কবিতায় কবি আত্মপরিচয় নির্দেশ করতে গিয়ে বাঙালির বহু পুরনো সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং সুদীর্ঘ সংগ্রামী ইতিহাস আমাদের সামনে এনেছেন।

এতে তাঁর আত্মমর্যাদাবোধ জাগ্রত হয়েছে। হঠাৎ করে পাওয়া বা রাতারাতি গড়ে ওঠা কোনো বিষয় কবির এই আত্মপরিচয়ের পেছনে কাজ করেনি। তাঁর আত্মপরিচয় এদেশের ঋদ্ধ, সমৃদ্ধ সংগ্রামী ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে ঘেরা একটি সমৃদ্ধ পরিচয়।

তাঁর আত্মপরিচয়ের সঙ্গে চর্যাপদের অসাম্প্রদায়িক চেতনা, চাঁদ সওদাগরের বাণিজ্য যাত্রা পালযুগের চিত্রকলা, বৌদ্ধবিহারের জ্ঞানচর্চা, মুসলিম ধর্ম ও সাহিত্য-সংস্কৃতির বিকাশ, জমিদারি প্রথা, মৈমনসিংহ গীতিকার জীবন, কৈবর্ত বিদ্রোহ থেকে শুরু করে তিতুমীর, হাজী শরিয়তুল্লাহ, সূর্য সেন, ক্ষুদিরাম প্রমুখের বিপ্লব-বিদ্রোহ একাকার হয়ে আছে।

রবীন্দ্রনাথের বিশাল সৃষ্টি, নজরুলের সমস্ত বিদ্রোহী চেতনা ও সাম্যবাদের মুক্তির চেষ্টার সঙ্গেও একাত্ম হয়ে আছে কবির আত্মপরিচয়। তিনি বাঙালির ভাষা আন্দোলনের পথপরিক্রমায় ১৯৭১ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যোগ্য নেতৃত্বে মুক্তিসংগ্রামের মাধ্যমে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বিজয় অর্জনের সঙ্গে আত্মপরিচয়টি জুড়ে দিয়েছেন। আমার পরিচয়’ কবিতায় মূলত ঐতিহ্যমণ্ডিত বাংলাদেশের অনবদ্য রূপটি প্রকাশ পেয়েছে।


এসএসসি বাংলা ১ম পত্রের সকল গদ্য ও কবিতার সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: সুভা
🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: বইপড়া
🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: আম আঁটির ভেঁপু
🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: মানুষ মুহাম্মদ (সাঃ)
🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: নিমগাছ
🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব
🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: প্রবাস বন্ধু
🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: মমতাদি
🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: সাহিত্যের রুপ ও রীতি
🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: একাত্তরের দিনগুলি
🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: বঙ্গবানী
🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: কপোতাক্ষ নদ
🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: জীবন-সঙ্গীত
🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: মানুষ
🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: পল্লিজননী
🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: রানার
🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা
🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: আমার পরিচয়
🔆🔆 সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: স্বাধীনতা এ শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো


আমার পরিচয় কবিতার সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

সৃজনশীল ০১: আমরা বাঙালি। আত্মমর্যাদাবোধসম্পন্ন এই জাতির রয়েছে সমৃদ্ধ অতীত ইতিহাস। জাতি হিসেবে আমাদের বর্তমান যে পরিচয় তা এক “দিনে সৃষ্টি হয়নি । যুগে যুগে নানা আন্দোলন, বিপ্লব-বিদ্রোহ আর মতাদর্শের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি এ পরিচয় লাভ করেছে।

ক. বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন কী?
খ. সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই’— কবি এ কথা বলেছেন কেন?
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত নানা আন্দোলন ও বিপ্লব-বিদ্রোহের পটভূমি ‘আমার পরিচয়’ কবিতার আলোকে বিশ্লেষণ কর।
ঘ. ‘আমার পরিচয়’ কবিতার সমগ্র ভাব উদ্দীপকে প্রতিফলিত হয়নি- তোমার মতামত দাও।

১নং প্রশ্নের উত্তর 

ক। বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন ‘চর্যাপদ’।

খ। ‘সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই’— কবি এ কথা বলেছেন মানুষের মর্যাদা এবং ধর্মীয় দিক থেকে অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে বোঝানোর জন্য। আমাদের এই দেশে নানা ধর্মের মানুষ মিলেমিশে বাস করে।

এখানে সবার এক পরিচয় সবাই বাঙালি। বাঙালি কোনো সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধিতে বিশ্বাস করে না। তারা মানবিকবোধে উন্নত এবং সহনশীল। তাই ধর্ম নয়, এখানে মানবসত্তাই তাদের কাছে প্রধান হয়ে উঠেছে। বাঙালির এই মানবিকবোধ, অসাম্প্রদায়িক চেতনা কবির প্রশ্নোক্ত বক্তব্যে প্রতিফলিত হয়েছে। ‘মানুষ’ হিসেবে মানুষের পরিচয়ই কবির কাছে মুখ্য, ধর্ম নয়।

গ। ‘আমার পরিচয়’ কবিতায় কবি নানা বিপ্লব ও বিদ্রোহের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতির উত্থানের প্রকৃত পরিচয় তুলে ধরেছেন, যা উদ্দীপকেও লক্ষ করা যায় । বহুকাল থেকে নানা প্রতিকূলতার সঙ্গে সংগ্রাম করে বাঙালি বর্তমান অবস্থায় উপনীত হয়েছে। ঘরের শত্রু ও বাইরের শত্রুকে পরাভূত করে বাঙালি বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। তাই বাঙালির জীবনের বাঁকে বাঁকে রয়েছে বিপ্লব, বিদ্রোহ আর সংগ্রাম।

‘আমার পরিচয়’ কবিতায় কবি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র ও বাঙালি জাতিসত্তা প্রতিষ্ঠার পশ্চাতে যে বিপ্লব-বিদ্রোহ রয়েছে তার পরিচয় বিবৃত করেছেন ৷ কৈবর্ত বিদ্রোহ, তিতুমীর আর হাজী শরীয়তউল্লাহর বিদ্রোহ, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন এবং সবশেষে স্বাধীনতা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আজকের বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা। এই বিপ্লব আর বিদ্রোহ বাঙালি জাতিকে এক নতুন পরিচয়ে পরিচিত করেছে, আর তা হলো ‘বাঙালি হার না মানা জাতি’। উদ্দীপকেও আত্মমর্যাদাসম্পন্ন জাতি হিসেবে বাঙালি জাতির পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে। যুগে যুগে নানা আন্দোলন, বিপ্লব-বিদ্রোহের মধ্য দিয়ে বাঙালি এ পরিচয় লাভ করেছে। স্বাধীনতা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে যে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা তার ভিত্তি রচিত হয়েছিল সুদূর অতীতকালে। অতীতের এসব বিপ্লব-বিদ্রোহের পটভূমি হলো বাঙালির স্বাধীনতার প্রত্যাশা, মুক্তির প্রত্যাশা।

ঘ। ‘আমার পরিচয়’ কবিতার সমগ্র ভাব উদ্দীপকে প্রতিফলিত হয়নি- মন্তব্যটি যথার্থ।

বাঙালি জীবনের প্রতিটি পরিবর্তন ও অর্জনের বাঁকে বাঁকে মিশে আছে বিপ্লব, বিদ্রোহ ও সংগ্রাম। এগুলো কখনো বিদেশি শক্তির বিরুদ্ধে, আবার কখনো দেশি শোষকের বিরুদ্ধে। তবে সব ক্ষেত্রেই তারা সাহস আর বীরত্বে অন্যায়কে প্রতিহত করেছে। ‘আমার পরিচয়’ কবিতায় কবি বাঙালির বীরত্ব, সাহসিকতা ও দৃঢ়তার দিক তুলে ধরেছেন।

অন্যায়, শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে তারা বিদ্রোহ করে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে। বাঙালির অসাম্প্রদায়িক জীবনবোধ, ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির প্রতিটি পর্যায়ে মিশে আছে তাদের বিপ্লবী চেতনা। উদ্দীপকেও আত্মমর্যাদাসম্পন্ন বাঙালি জাতির স্বাধীনচেতা ও সংগ্রামী চেতনার পরিচয়ই বিবৃত হয়েছে। জাতি হিসেবে বাঙালির এই যে পরিচয় তা দীর্ঘ সংগ্রামের ফসল। এর মধ্য দিয়েই বাঙালির আত্মপ্রতিষ্ঠা।

উদ্দীপকে আত্মমর্যাদাসম্পন্ন জাতি হিসেবে বাঙালির প্রতিষ্ঠার দিকটি বর্ণিত হয়েছে, যা ‘আমার পরিচয়’ কবিতায়ও প্রতিফলিত হয়েছে। তবে কবিতায় বাঙালির সাহিত্য, ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির যে পরিচয় কবি দিয়েছেন তা আলোচ্য উদ্দীপকে নেই। তাই বলা হয়েছে যে, আলোচ্য কবিতার সমগ্র ভাব উদ্দীপকে প্রতিফলিত হয়নি।

সৃজনশীল ০২: বহু প্রাচীনকাল থেকেই আমরা বাঙালিরা শত্রুর সাথে যুদ্ধ করে এদেশে টিকে আছি। ইংরেজদের অত্যাচার, পাকিস্তানিদের নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞ, সকল অনাচারকে শক্তি, সাহস ও মনোবল দিয়ে প্রতিহত করেছি। এখন আমরা স্বাধীন ও সার্বভৌম জাতি। এ স্বাধীনতা লাখো শহিদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে। আমরা তাদের প্রতি চিরকৃতজ্ঞ!

ক. চর্যাপদ কে আবিষ্কার করেন?
খ. কবি বারো ভূঁইয়াদের প্রসঙ্গ এনেছেন কেন?
গ. উদ্দীপকে ‘আমার পরিচয়’ কবিতার কোন দিকটি প্রকাশ পেয়েছে ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকটি ‘আমার পরিচয়’ কবিতার আংশিক প্রতিফলন মাত্র।”— মূল্যায়ন কর।

২নং প্রশ্নের উত্তর

ক। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী চর্যাপদ আবিষ্কার করেন।

খ। বাঙালির সুদীর্ঘ কালের ঐতিহ্য তুলে ধরার জন্য কবি বারো ভূঁইয়াদের প্রসঙ্গ এনেছেন।

ঐতিহাসিকতার দিক থেকে দেখা যায়, ১৫৭৫ সালে মোগল সম্রাট আকবর বাংলা জয় করার পরও যে কয়জন স্বাধীন জমিদার ঈশা খাঁর নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মোগল শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান তাঁরাই ‘বারো ভূঁইয়া’ নামে পরিচিত। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন ঈশা খাঁ, চাঁদ রায়, কেদার রায়, প্রতাপাদিত্য, লক্ষ্মণ মাণিক্য প্রমুখ। সংগ্রামী মনোভাব ও বীরত্বের জন্য তাঁরা ইতিহাসে বিখ্যাত হয়ে আছেন। বাঙালির এ স্বাধীনচেতা মনোভাব ও সাহসী চেতনাকে তুলে ধরতে কবি ‘আমার পরিচয়’ কবিতায় বারো ভূঁইয়াদের প্রসঙ্গ এনেছেন।

গ। ‘আমার পরিচয়’ কবিতায় অত্যাচার ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে বাঙালির অবস্থানের বিষয়টি উদ্দীপকে ফুটে উঠেছে।

বাঙালি সবসময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। যখনই তার ওপর অন্যায়-অত্যাচারের খড়গ নেমে এসেছে তখনই সে বিদ্রোহ করেছে। এভাবেই শত্রুর সঙ্গে যুদ্ধ করে প্রতিনিয়ত তারা দৃঢ় করেছে তাদের অবস্থান। আর এই দৃঢ়তা ও সংগ্রামী চেতনার পথ ধরেই এসেছে স্বাধীনতা। ‘আমার পরিচয়’ কবিতায় কবি বাঙালি জীবনের বাঁকে বাঁকে বিদ্রোহের যে ইতিহাস আছে তা তুলে ধরেছেন। বাংলাদেশ নামক এই স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পিছনে আছে বাঙালির আপসহীন, বিদ্রোহী ও সংগ্রামী মনোভাব। তারা অন্যায়ের কাছে পরাস্ত হয়নি বলেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশ।

উদ্দীপকেও বাঙালি জীবনের এ দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে। প্রাচীনকাল থেকেই বাঙালি শত্রুর সঙ্গে যুদ্ধ করে নিজ অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে। এর সর্বশেষ প্রমাণ— বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ। পাকিস্তানি সেনাদের নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞ, ধ্বংসযজ্ঞ ও অন্যায়কে বাঙালি সাহস ও মনোবল দিয়ে প্রতিহত করে বিজয় ছিনিয়ে এনেছে। “৯ প্রতিফলিত হয়েছে।

ঘ। “উদ্দীপকটি ‘আমার পরিচয়’ কবিতার আংশিক প্রতিফলন মাত্র।”- মন্তব্যটি যথার্থ।

বাঙালির জীবনের প্রতিটি বাঁকেই আছে সংগ্রামের এক-একটি সুদীর্ঘ ইতিহাস। বিভিন্ন সময় বহিঃশত্রু তাদের আক্রমণ করেছে। সেই আক্রমণ তারা সাহস ও শক্তি দিয়ে প্রতিহত করেছে। ‘আমার পরিচয়’ কবিতায় বাঙালি জীবনের সংগ্রামী দিকটি বর্ণনার পাশাপাশি কবি বাংলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য তুলে ধরেছেন।

বাঙালির সাহিত্য-সংস্কৃতির পরিচয়ও পাওয়া যায় ‘চর্যাপদ’, ‘গীতাঞ্জলি’, ‘অগ্নিবীণা’, ‘মহুয়ার পালা’ প্রভৃতির মধ্য দিয়ে। বাঙালির অসাম্প্রদায়িক জীবনবোধ, সাম্যবাদী মনোভাবও এখানে বাণীরূপ লাভ করেছে। অন্যদিকে উদ্দীপকে আমরা বাঙালির বিদ্রোহী ও সংগ্রামী জীবনের পরিচয় পাই। শত্রুর কালো থাবাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বাঙালি নিজ ভূমিতে আপন মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করেছে। লাখো শহিদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে স্বাধীনতা। । সংগ্রাম, বিদ্রোহ, বিপ্লব বাঙালির সত্তায় মিশে আছে, ইতিহাসও সেই প্রমাণ দেয়।

উদ্দীপক ও ‘আমার পরিচয়’ কবিতায় বাঙালি চরিত্রের এ দিকটি ফুটে উঠেছে। তবে আলোচ্য কবিতায় বাঙালির ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির পরিচয়ও বিধৃত হয়েছে, যা উদ্দীপকে নেই। এ কারণেই প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটিকে যথার্থ বলা হয়েছে।

সৃজনশীল ০৩: বাংলাদেশের একজন বিখ্যাত চিত্রশিল্পীর নাম জয়নুল আবেদীন। এই মহান শিল্পী বাংলাদেশের বিভিন্ন সংগ্রাম, প্রতিবাদ ইত্যাদি অনুষঙ্গ নিয়ে ছবি এঁকেছেন। এ সকল ছবিতে স্থান পেয়েছে শোষণ, বঞ্চনা ও দুর্ভিক্ষের চিত্র। তাঁর এই চিত্রের মাধ্যমে ফুটে উঠেছে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী মানসিকতা। আমরা এই মহান শিল্পীর কাছে চিরকাল ঋণী।

ক. বৌদ্ধবিহার কোথায় অবস্থিত?
খ. ‘একসাথে আছি একসাথে বাঁচি’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
গ. উদ্দীপকের কোন দিকটি ‘আমার পরিচয়’ কবিতায় ফুটে উঠেছে? বর্ণনা কর।
ঘ. “উদ্দীপকটি ‘আমার পরিচয়’ কবিতার খণ্ডিত রূপায়ণ মাত্র”— বিশ্লেষণ কর।

৩নং প্রশ্নের উত্তর

ক। বর্তমান নওগাঁ জেলার বদলগাছি থানার পাহাড়পুর গ্রামে প্রাচীন বৌদ্ধবিহার অবস্থিত।

খ। ‘একসাথে আছি, একসাথে বাঁচি’ বলতে কবি নানা প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে বাংলার মানুষের ঐক্যবদ্ধভাবে সংগ্রাম করে টিকে থাকাকে বুঝিয়েছেন।

‘আমার পরিচয়’ কবিতায় কবি অন্যান্য দিকের সঙ্গে বাঙালির সংগ্রামী মনোভাব ও ঐক্যবদ্ধ চেতনার পরিচয় দিয়েছেন। বাঙালি বহু সংগ্রামের পথ পাড়ি দিয়ে অবশেষে স্বাধীনতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছে। বাঙালির এ অর্জনের পেছনে ছিল পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও একাত্মতা। একতাবদ্ধ হওয়ার কারণেই শত সংগ্রাম, দুর্যোগের পরও বাঙালির অস্তিত্ব টিকে আছে। বাঙালির এই অটুট বন্ধনের কথা লতে গিয়েই কবি প্রশ্নোক্ত কথাটি বলেছেন।

গ। উদ্দীপকের জয়নুল আবেদিনের অবদানের দিকটি ‘আমার পরিচয়’ কবিতায় ফুটে উঠেছে।

একজন শিল্পী একটি দেশের প্রতিনিধি। তিনি তাঁর শিল্পকর্ম দিয়ে বিশ্বের দরবারে নিজের দেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। তাঁর শিল্পকর্মের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে সে দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য। উদ্দীপকে বাংলাদেশের বিখ্যাত চিত্রশিল্পী শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের কথা বলা হয়েছে। জয়নুল আবেদিন বাংলাদেশের একজন মহান শিল্পী। তিনি এ দেশের মানুষের বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রাম প্রতিবাদ, শোষণ-বঞ্চনা এবং অভাব-দুর্ভিক্ষের ছবি এঁকেছেন। তাঁর তুলির আঁচড়ে বিভিন্ন সময়ে প্রতিবাদ ফুটে উঠেছে।

‘আমার পরিচয়’ কবিতায় কবি তাঁকে স্মরণ করেছেন বাঙালির সংগ্রাম ও ঐতিহ্য চেতনায়। কবি নিজের পরিচয় দিতে গিয়ে বলেছেন বাংলাদেশের সমৃদ্ধ ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির কথা। বিপ্লব-বিদ্রোহের কথা চিন্তা করে তিনি শিল্পী জয়নুল আবেদিনের অবদানকেও নির্দেশ করেছেন। কারণ তিনি বাংলার মানুষের দুর্ভিক্ষতাড়িত জীবন ও জগতের ছবি এঁকে অসামান্য এক জীবন-তৃষ্ণার পরিচয় দিয়েছেন। নিজের পরিচয় দিতে গিয়ে কবি বাঙালি জয়নুল আবেদিন থেকে আসার কথা বলেছেন। তাঁর পরিচয়ে কবি গর্ববোধ করেছেন। এভাবে উদ্দীপকের জয়নুল আবেদিনের অবদানের দিকটি ‘আমার পরিচয়’ কবিতায় প্রতিফলিত হয়েছে।

ঘ। “উদ্দীপকটি ‘আমার পরিচয়’ কবিতার খণ্ডিত রূপায়ণ মাত্র”- মন্তব্যটি যথার্থ। বাঙালির ইতিহাস-ঐতিহ্য অনেক সমৃদ্ধ। এই ইতিহাস-ঐতিহ্যের পেছনে বাঙালির সংগ্রামী চেতনা বিদ্যমান। বাঙালি এর জন্য বুকে লালন করেছে ঐক্যবোধের চেতনা।

উদ্দীপকে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের অবদানের দিকটি তুলে ধরা হয়েছে। তিনি বাংলাদেশের এক মহান শিল্পী। তাঁর ছবিতে সংগ্রাম, প্রতিবাদ, বাঙালির জীবনসংগ্রাম, শোষণ-বঞ্চনা ও দুর্ভিক্ষের কথা ফুটে উঠেছে। বাঙালি জাতি এই মহান শিল্পীর কাছে চিরকাল ঋণী। কবি ‘আমার পরিচয়’ কবিতায় চর্যাপদের যুগ থেকে শুরু করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা পর্যন্ত বাঙালি জাতিসত্তার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা যে ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি তুলে ধরেছেন তার সঙ্গে তাঁকেও স্মরণ করেছেন। একইভাবে তুলে ধরেছেন সেই মহান ব্যক্তিদের কথা যাঁদের অবদানে আমরা আজ মাথা উঁচু করে বাঁচি। এখানে বাংলার মানুষের উদার ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রকাশ লক্ষ করা যায়।

উদ্দীপকে বাংলার একজন মহান চিত্রশিল্পীর অবদানের কথা প্রকাশ পেয়েছে। ‘আমার পরিচয়’ কবিতায় এ বিষয়টি ছাড়াও বাংলার সাহিত্য, ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির বিষয় ফুটে উঠেছে। কৈবর্ত বিদ্রোহ, পালযুগ, তিতুমীর, হাজী শরীয়ত, ক্ষুদিরাম, অবঠাকুর এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করা হয়েছে এই কবিতায়। এই প্রসঙ্গগুলো উদ্দীপকে নেই। এসব দিক বিচারে তাই বলা যায় যে, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।


আশাকরি আমাদের আজকের আর্টিকেল টি আপনাদের ভালো লেগেছে। শিক্ষা, পাঠ্যপুস্তক, গল্পের বই সহ যে কোন পিডিএফ ডাউনলোড করতে আমাদের সাথেই থাকুন। ভালো থাকবেন সবাই, ধন্যবাদ। এছাড়াও আমাদের কোন আপডেট মিস না করতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে আমাদের সাথে ফেসবুকে কানক্ট থাকতে পারেন।

ssc suggestion 2022