ফরজ গোসলের নিয়ম

ফরজ গোসলের নিয়ম, রোযা রেখে ফরজ গোসল যেভাবে আদায় করবেন

আসসালামু আলাইকুম, কেমন আছেন সবাই? আশাকরি সবাই ভালো আছেন। পিডিএফ মেলার আজকের আর্টিকেলে আপনাদের স্বাগতম। আজকের আর্টিকেলে ফরজ গোসলের নিয়ম, রোযা রেখে ফরজ গোসল যেভাবে আদায় করবেন সম্পর্কে আলোচনা করা হবে। কথা না বাড়িয়ে তাহলে চলুন শুরু করি।

সালাত আদায় এর বা পবিত্র কোরআন তেলওয়াত এর প্রথম শর্ত হচ্ছে শরীর পাক। পাক পবিত্রতা অর্জন ছাড়া সালাত আদায় বা কোরআন তেলাওয়াত বা স্পর্শ করা যাবে না।

নামাজের ভিতরে ও বাহিরে মোট ১৩ ফরজ রয়েছে, এর মধ্যে ৭ টি বাহিরে এবং ৬ টি ভিতরে। বাহিরের ফরজ গুলোর ১ম টি হচ্ছে শরীর পাক আর শরীরের পাক পবিত্রতা অর্জনের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে গোসল। গোসল ছাড়া সম্পূর্ণ ভাবে পবিত্রতা অর্জন করা সম্ভব নয়।

গোসল কি?

গোসল আরবি শব্দ। অঞ্চলভেদে একে অনেকে গোসল করা বললেও কেউ স্নান করা, নাইতে যাওয়াও বলে থাকে। তবে আরবি গোসল শব্দের অর্থ হচ্ছে পুরো শরীর ধোয়া। আর ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায় পবিত্রতা ও আল্লাহর নৈকট্য পাওয়ার উদ্দেশ্যে পবিত্র পানি দ্বারা পুরো শরীর ধোয়াকে ‘গোসল’ বলা হয়।

গোসল ফরজ হওয়ার কারণ

সুনির্দিষ্ট চার কারণের যে কোনে একটি সংঘটিত হলেই গোসল ফরজ হয়। তাহলো-

  • জানাবাত থেকে অপবিত্রতা থেকে পবিত্রতা হওয়ার গোসল। এটি নারী-পুরুষের যৌন মিলন, স্বপ্নদোষ বা যে কোনো উপায়ে বীর্যপাত হলে। আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দেন- ‘আর যদি তোমরা অপবিত্র হও তবে সারা দেহ পবিত্র করে নাও।’ (সুরা : মায়েদা, আয়াত : ৬)
  • মাসিক বন্ধ হওয়ার পর নারীদের পবিত্র হওয়ার জন্য গোসল করা ফরজ।
  • সন্তান প্রসবের পর নেফাসের রক্ত বন্ধ হলে পবিত্র হওয়ার জন্য নারীদের গোসল করা ফরজ।
  • আর জীবতদের জন্য মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়া ফরজ।

গোসলের ফরজ কাজ

উল্লেখিত অপবিত্রতা থেকে পবিত্র হতে ৩টি কাজ করা ফরজ। যথাযথভাবে এ ৩ কাজ আদায় না করলে গোসলের ফরজ আদায় হবে না। কাজ তিনটি হলো-

  • কুলি করা (গরগরা সহ) । (বুখারি, ইবনে মাজাহ)
  • নাকে পানি দেওয়া। (বুখারি, ইবনে মাজাহ)
  • সারা শরীর পানি দিয়ে এমনভাবে ধোয়া যাতে দেহের চুল পরিমাণ জায়গাও শুকনো না থাকে। (আবু দাউদ)

তবে ফরজ গোসল সম্পন্ন করার সর্বোত্তম নিয়ম হলো-

  • বিসমিল্লাহ বলে শুরু করা। বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম (بِسْمِ اللهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيْم) বলে গোসল শুরু করা। তবে গোসলখানা ও টয়লেট একসঙ্গে থাকলে বিসমিল্লাহ মুখে উচ্চারণ করে বলা যাবে না।
  • হাত ধোয়া। অর্থাৎ উভয় হাতের কব্জি পর্যন্ত ধোয়া।
  • লজ্জাস্থান ধোয়া। বাম হাতে পানি দ্বারা লজ্জাস্থান পরিস্কার করা। সম্ভব হলে ইস্তিঞ্জা তথা পেশাব করে নেওয়া। এতে নাকাপি সম্পূর্ণরূপে বের হয়ে যাবে।
  • নাপাকি ধোয়া। কাপড়ে বা শরীরের কোনো অংশে নাপাকি লেগে থাকলে তা ধুয়ে নেওয়া।
  • ওজু করা। পা ধোয়া ছাড়া নামাজের অজুর ন্যয় অজু করে নেওয়া।
  • অতঃপর ফরজ গোসলের তিন কাজ- কুলি করা, নাকে পানি দেওয়া এবং পুরো শরীর ভালোভাবে ধুয়ে নেওয়া। যাতে শরীরের একটি লোমকুপও শুকনো না থাকে।
  • পা ধোয়া। সবশেষে গোসলের স্থান থেকে একটু সরে এসে উভয় পা ভালোভাবে ধোয়া।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ফরজ গোসল করার সময় এ বিষয়গুলো খেয়াল রাখার এবং যথাযথভাবে গোসল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

রোযা রেখে ফরজ গোসল যেভাবে আদায় করবেন

আমরা জানি যে রোজা অবস্থায় গড়গড়া কুলি করা যাবে না। এখন ফরজ গোসলে গড়াগড়া কুলি করা আবশ্যক। এক্ষেত্রে রোজাদার কীভাবে গোসল করবে? গড়াগড়া কুলি না করলে এবং নাকের নরম অংশে পানি না পৌঁছলে তাঁর গোসল সম্পূর্ণ হওয়ার নিশ্চয়তা কী?

গোসলের মাঝে গরগরা করা ও নাকের গভীর পর্যন্ত পানি পৌঁছানো ফরজ নয়। বরং সুন্নত। তাই রোযা রাখা অবস্থায় যেহেতু গড়গড়া করে কুলি করলেও নাকের গভীরের নরম স্থানে পানি পৌছানোতে ভিতরে পানি প্রবেশ করার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই গড়গড়া ও নাকের নরম স্থানে পানি পৌছানোতে বেশি চেষ্টা করা প্রয়োজন নেই। স্বাভাবিকভাবে কুলি ও নাকে পানি দিবে। গড়গড়া ও নাকের গভীরে পানি প্রবেশের চেষ্টা না করাই উচিত। গোসল আদায় হবে যাবে। পেরেশান হবার কোন কারণ নেই।


1️⃣ You Can Also Read: তারাবীর নামাজের নিয়ম, ফজিলাত ও গুরুত্ব
2️⃣ You Can Also Read: তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও আদায়ের ফজিলত
3️⃣ You Can Also Read: ইশরাক নামাজ পড়ার নিয়ম ও ফজিলাত
4️⃣ You Can Also Read: তিন ও জয়তুন ফল খাওয়ার নিয়ম এবং উপকারিতা জেনে নিন


আশাকরি আমাদের আজকের আর্টিকেল টি আপনাদের ভালো লেগেছে। ভালো লাগলে আমাদের সাথেই থাকুন। ভালো থাকবেন সবাই, ধন্যবাদ।

[এই আর্টিকেল টির সম্পূর্ণ অংশ অনলাইনের বিভিন্ন সোর্স থেকে কালেক্ট করা, তাই এর আর্টিকেলের কপিরাইট ওনার পিডিএফ মেলা নয়]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *