বই পড়া গল্পের অনুধাবন প্রশ্ন

বই পড়া গল্পের অনুধাবন প্রশ্ন

বই পড়া গল্পের অনুধাবন প্রশ্ন: মননশীল প্রবন্ধকার প্রমথ চৌধুরী ‘বই পড়া’ প্রবন্ধে বই পড়ার উপযোগিতা ও পাঠকের মনমানসিকতা নিয়ে আলোচনা করেছেন। এই প্রবন্ধে লেখক বই পড়ার প্রয়োজনীয়তা ও অপরিহার্যতা সম্পর্কে তাঁর মতামত ও যুক্তি-প্রমাণ উপস্থাপন করেছেন।

আমাদের পাঠে অনভ্যাসের কারণ হিসেবে লেখক মূলত শিক্ষাব্যবস্থাকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেছেন, প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা আমাদেরকে অর্থ উপার্জন করতে শেখায়, কিন্তু সুপ্ত হৃদয়বৃত্তিকে প্রস্ফুটিত করে না। যে কারণে সবাই শিক্ষার ফল হাতে হাতে পেতে আগ্রহী।

যে শিক্ষার সাথে আর্থিক যোগ নেই সেই শিক্ষা আমাদের কাছে অনর্থক বলে বিবেচিত হয়। তাই বই পড়ার প্রতি আমাদের প্রবল অনিচ্ছা, অনাগ্রহ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে যে শিক্ষা দেওয়া হয় তা অপূর্ণ হওয়ায়ই এই মারাত্মক অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।

সুশিক্ষিত ব্যক্তিমাত্রই স্বশিক্ষিত। যথার্থ শিক্ষিত হতে হলে মনের প্রসারতা দরকার, যা পাঠ-অভ্যাসের মাধ্যমেই কেবল সম্ভব। একজন স্বশিক্ষিত মানুষ নীচতা, স্পর্শকাতরতা, হিংসা-বিদ্বেষের ঊর্ধ্বে। স্বশিক্ষিত ব্যক্তি নিজেকে প্রকৃতভাবে চিনতে ও জানতে পারে।

এই কারণে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। এজন্য সুপরিকল্পিতভাবে লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর বাধ্য না হলে যে লোকে বই পড়ে না- এই ধারণার অবসান ঘটাতে হবে, তবেই উন্নতি সম্ভব। প্রগতিশীল বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে বই পড়ার কোনো বিকল্প নেই।


বই পড়া গল্পের অনুধাবন প্রশ্ন 

প্রশ্ন ১। “লাইব্রেরির সার্থকতা হাসপাতালের চাইতে কিছু কম নয়।” প্রাবন্ধিক এ কথা কেন বলেছেন?
উত্তর : লাইব্রেরিতে মনের শুশ্রূষা হয় বলে প্রাবন্ধিক “লাইব্ররির সার্থকতা হাসপাতালের চাইতে কিছু কম নয়” কথাটি বলেছেন। মানুষের শরীরের মতো মনও অসুস্থ হয়। তখন সেই অসুস্থতার জন্য চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। বই পড়ার মাধ্যমে মানুষের অসুস্থতা দূর করা সম্ভব। বই মনের ক্ষুদ্রতা, জড়তা, নীচতা, হীনতা দূর করে। মনকে সজীব ও প্রাণময় করে তোলে। মনের অসুস্থতা দূর হয়। এসব কারণে মানুষ লাইব্রেরিতে গিয়ে খুব সহজে নিজের পছন্দমতো বই নির্বাচন করে পড়তে পারে। তাই প্রাবন্ধিক লাইব্রেরিকে মনের হাসপাতাল বলে অভিহিত করেছেন।

প্রশ্ন ২। শিক্ষা কেউ কাউকে দিতে পারে না- কেন?
উত্তর : শিক্ষার ন্যায় অন্তর্লোকের মনোরাজ্যের অর্জন গ্রহণসাপেক্ষ বিধায় শিক্ষা কেউ কাউকে দিতে পারে না। সুশিক্ষিত লোক মাত্রই স্বশিক্ষিত। শিক্ষকের সার্থকতা শিক্ষাদান করায় নয়, ছাত্রকে তা অর্জন করতে সক্ষম করায়। যিনি যথার্থ গুরু তিনি শিষ্যের আত্মাকে উদ্বোধিত করেন এবং তার অন্তর্নিহিত সকল প্রচ্ছন্ন শক্তিকে ব্যক্ত করে তোলেন। সেই শক্তির বলে শিষ্য নিজের মন নিজে গড়ে তোলে, নিজের অভিমত বিদ্যা নিজে অর্জন করে। বিদ্যার সাধনা শিষ্যকে নিজে অর্জন করতে হয়। গুরু উত্তরসাধক মাত্র।

প্রশ্ন ৩। “শিক্ষা আমাদের গায়ের জ্বালা ও চোখের জল দুই-ই দূর করবে।’ উক্তিটি ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : “শিক্ষা আমাদের গায়েল জ্বালা ও চোখের জল, দুই-ই দূর করবে”— উক্তিটির মধ্য দিয়ে শিক্ষা সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ভুল ধারণা প্রকাশ পেয়েছে। “আমাদের দেশ রোগ-শোক, দুঃখ-দারিদ্র্যের দেশ। সুন্দর জীবনধারণ করা এখানে কঠিন। তাই শখ করে বই পড়ার প্রস্তাব অনেকের কাছে নিরর্থক ও নির্মম ঠেকবে বলে প্রমথ চৌধুরী মনে করেন। তিনি বলেন, আমরা সকলে শিক্ষার ফললাভের জন্য সব সময় উদ্বাহু। কারণ আমাদের বিশ্বাস শিক্ষা আমাদের গায়ের জ্বালা ও চোখের জল দুই-ই দূর করবে।

প্রশ্ন ৪। সাহিত্যের রস উপভোগ করতে আমরা প্রস্তুত নই কেন?
উত্তর : সাহিত্যের ফল হাতে হাতে পাওয়া যায় না বলে আমরা সাহিত্যের রস উপভোগ করতে প্রস্তুত নই । সাহিত্য মানুষের সুকুমার বৃত্তিকে জাগিয়ে তোলে। মানুষকে বিকশিত করে তোলে। সাহিত্যের রস মানুষের আত্মাকে সজীব করে তোলে। কিন্তু আমরা যেকোনো পাঠের ফল সরাসরি প্রত্যাশা করি। আর এ কারণেই আমরা সাহিত্যের রস উপভোগ করতে প্রস্তুত নই।

প্রশ্ন ৫। সাহিত্যচর্চার সুফল সম্পর্কে অনেকেই সন্দিহান কেন?
উত্তর : সাহিত্যচর্চার কোনো নগদ বাজার দর নেই বলে এর সুফল সম্পর্কে অনেকেই সন্দিহান। সমাজের অনেকেই সাহিত্যের রস উপভোগ করতে প্রস্তুত না থাকলেও শিক্ষার ফললাভের জন্য উদ্বাহু হয়ে থাকেন। তাদের বিশ্বাস– শিক্ষা তাদের গায়ের জ্বালা ও চোখের জল দুই-ই দূর করবে। সাহিত্যচর্চার সুফল সম্পর্কে লোকে যে সন্দেহ করে, তার কারণ এ শিক্ষার ফল হাতে হাতে পাওয়া যায় না, অর্থাৎ তার কোনো নগদ বাজার দর নেই।

প্রশ্ন ৬। “সাহিত্যচর্চার জন্য চাই লাইব্রেরি।”― ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : বই পড়া অর্থাৎ সাহিত্যচর্চার জন্য লাইব্রেরি অপরিহার্য। বাস্তবতার দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই যে, বিভিন্ন ধরনের চর্চা. ভিন্ন ভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত হয়। যেমন- ধর্মের চর্চা মন্দির কিংবা মসজিদে, দর্শনের চর্চা গুহায়, নীতির চর্চা ঘরে এবং বিজ্ঞানের চর্চা জাদুঘরে। ঠিক তেমনই সাহিত্যের চর্চার জন্য লাইব্রেরির কোনো বিকল্প নেই।

প্রশ্ন ৭। লেখকের কাউকে শখ হিসেবে বই পড়তে পরামর্শ দিতে না চাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : বই পড়া মানুষের সর্বশ্রেষ্ঠ শখ হওয়া সত্ত্বেও লেখক কাউকেই বই পড়তে পরামর্শ দিতে চাননি। প্রথম কারণ, লেখকের সেই পরামর্শ কেউ গ্রাহ্য করবেন না এজন্য যে আমরা জাতি হিসেবে শৌখিন নই। আর দ্বিতীয় কারণ হলো- রোগ-শোক, দুঃখ-দারিদ্র্যের দেশে যেখানে স্বাভাবিকভাবে জীবনধারণই প্রধান সমস্যা সেখানে শখ করে বই পড়ার প্রস্তাব পাঠকের কাছে খুব নির্মম ঠেকবে।

প্রশ্ন ৮। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা পূর্ণাঙ্গ না হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে যে শিক্ষা দেওয়া হয় তা অপূর্ণাঙ্গ শিক্ষা। আমাদের দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ স্কুল-কলেজগুলোতে যে ধরনের শিক্ষা দেওয়া হয়ে থাকে তা অনেক ক্ষেত্রেই জ্ঞান বিকাশে সহায়ক নয়। শুধু পরীক্ষায় পাস করার দিকে শিক্ষার্থীদের নজর থাকে। শিক্ষকরাও পাসের লক্ষ্য নিয়েই তাদের শিক্ষা দেন। নোটসর্বস্ব বিদ্যা অর্জন করে উদরপূর্তির ব্যবস্থা হয়তো তাতে হয়, কিন্তু অপূর্ণ শিক্ষার কারণে আত্মবিকাশের সুযোগ হয় না।

প্রশ্ন ৯। “কিন্তু এই গেলা আর ওগলানো দর্শকের কাছে তামাশা হলেও বাজিকরের কাছে তা প্রাণান্তকর ব্যাপার”- ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : উদ্ধৃত বাক্যটি দ্বারা বাজিকরের প্রাণান্তকর চেষ্টা ও তার সাধনার ফলাফল বোঝানোর মধ্য দিয়ে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। বাজিকর বিভিন্ন আকার ও আয়তনের বস্তু গিলে আবার দর্শকের সামনে তা উদগিরণ করে। এটা দর্শকের কাছে নিতান্ত তামাশা ও অদ্ভুত কৌশল মনে হলেও মূলত এ কাজটা করতে বাজিকরের বহু শ্রম ব্যয়ের দরকার হয়। তেমনই আমাদের এই সময়ে ছাত্ররা নোটের লেখা তোতাপাখির মতো মুখস্থ করে পরীক্ষার খাতায় লিখে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। মানুষ এতে বাহবা দেয়। মূলত এই ছাত্র ঐ বাজিকরের মতোই প্রাণান্তকর চেষ্টার মাধ্যমে পরীক্ষায় নম্বর পেয়েছে।

প্রশ্ন ১০। স্কুল-কলেজের শিক্ষাকে লেখক ত্রুটিপূর্ণ বলেছেন কেন?
উত্তর : প্রাবন্ধিক প্রমথ চৌধুরী আমাদের দেশে প্রচলিত স্কুল- কলেজের শিক্ষাকে ত্রুটিপূর্ণ বলেছেন। লেখকের মতে, শিক্ষা মানুষের আত্মাকে উদ্বোধিত করে, মনুষ্যত্ববোধ জাগ্রত করে। কিন্তু বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় সেই সুযোগ নেই। বর্তমানে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের দেওয়া নোট মুখস্থ করে এবং পরীক্ষার খাতায় তা ওগরায়। তাই লেখক স্কুল-কলেজের প্রচলিত শিক্ষাকে ত্রুটিপূর্ণ বলেছেন।

প্রশ্ন ১১। পুঁজিবাদী সমাজে সাহিত্যপাঠের পরিস্থিতি কেমন তা বুঝিয়ে লেখ।
উত্তর : সাহিত্যের বই কেনা যেখানে অপচয় ও অনর্থক মনে হয় সেখানে সাহিত্যপাঠের পরিস্থিতি সমাজে যথার্থই নাজুক বলে প্রতীয়মান হয় । পুঁজিবাদী সমাজের সাধারণ দৃষ্টিভঙ্গি হলো- শিক্ষা বা জ্ঞান কেবল অর্থ উপার্জনের জন্যই প্রয়োজনীয়। মননশীলতা আর বুদ্ধিবৃত্তিক জ্ঞান অর্জনের জন্য কারও তেমন কোনো আগ্রহ দেখা যায় না। ব্যবসায়িক স্বার্থে অর্থ ব্যয় করতে কেউ কার্পণ্য না করলেও সাহিত্য বা কাব্যচর্চার জন্য কানাকড়িও খরচ করতে সবার অনীহা দেখা যায়।

প্রশ্ন ১২। ‘আমাদের স্কুল-কলেজের শিক্ষার পদ্ধতি ঠিক উল্টো।’— উক্তিটি ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : আমাদের দেশের ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি ইঙ্গিত করে প্রাবন্ধিক প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করেছেন। ‘বই পড়া’ প্রবন্ধে লেখক আমাদের দেশের শিক্ষাপদ্ধতি সম্পর্কে। আলোচনা করতে গিয়ে বলেছেন- ‘আমাদের স্কুল-কলেজে ছেলেদের বিদ্যা গেলানো হয়। তারা তা জীর্ণ করতে পারবে কি পারবে না তা যাচাই করা হয় না। লেখাপড়া তাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়। এর ফলে ছেলেরা শারীরিক ও মানসিকভাবে বিষণ্ণ হয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে এবং তাদের প্রকৃত বিকাশ ঘটে না। তারা সমাজের উপযোগী মানুষ হয়েও গড়ে ওঠে না।’ শিক্ষাব্যবস্থার এই অসংগতির দিকে ইঙ্গিত করে লেখক প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করেছেন।

প্রশ্ন ১৩। পাস করা ও শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয় কেন?
উত্তর : পাস করা বলতে বুঝায় আমাদের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষা অর্জনের এক ধাপ অতিক্রম করা। কিন্তু প্রকৃত শিক্ষা মানুষের মনের সুন্দর পরিবর্তন ঘটায় বলে পাস করা ও শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয়। মানুষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে যে জ্ঞান লাভ করে তা পূর্ণাঙ্গ নয়। সেখানে পাস করার উদ্দেশ্যে মানুষ সীমিত পরিসরে পড়াশুনা করে। অথচ প্রকৃত শিক্ষা মানুষের মনের চেতনা খুলে দেয়। যারা শুধু পাস করার জন্য পড়ে তাদের মানসিক বিকাশ পরিপূর্ণভাবে হয় না। শুধু পাস করা বিদ্যায় মানুষের আত্মার অপমৃত্যু হয়। পাস করা বিদ্যা অর্জন করতে গিয়ে মানুষ তার মনুষ্যত্ববোধ হারিয়ে ফেলে। স্বশিক্ষায় শিক্ষিত হয়েই মানুষ সুশিক্ষিত হয়ে ওঠে। তাই বলা হয়েছে, পাস করা ও শিক্ষিত হওয়া এক বস্তু নয়।


🔰🔰 আরও দেখুন: বইপড়া প্রবন্ধের সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
🔰🔰 আরও দেখুন: বই পড়া প্রবন্ধের জ্ঞানমূলক প্রশ্ন (PDF সহ)


আশাকরি আমাদের আজকের আর্টিকেল টি আপনাদের ভালো লেগেছে। শিক্ষা, পাঠ্যপুস্তক, গল্পের বই সহ যে কোন পিডিএফ ডাউনলোড করতে আমাদের সাথেই থাকুন। ভালো থাকবেন সবাই, ধন্যবাদ। এছাড়াও আমাদের কোন আপডেট মিস না করতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে আমাদের সাথে ফেসবুকে কানক্ট থাকতে পারেন।