ভাব-সম্প্রসারণ: তুমি অধম, তাই বলিয়া আমি উত্তম না হইব কেন?

তুমি অধম, তাই বলিয়া আমি উত্তম না হইব কেন?

ভাব-সম্প্রসারণ: মানুষ বিবেকবান প্রাণী। তার বিবেক স্বাধীন এবং শক্তিশালী। তার উত্তম বা অধম হওয়ার পেছনে পারিপার্শ্বিকতার যতই প্রভাব থাকুক না কেন, তা অতিক্রমযােগ্য। সুষ্ঠুভাবে নিজের বিবেকের যথাশক্তি প্রয়ােগের মাধ্যমে মানুষ নিজের ওপর থেকে অধমের কুপ্রভাব অনায়াসে ঝেড়ে ফেলে দিয়ে নিজেকে উত্তমের স্তরে উন্নীত করতে পারে।

মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। সমাজে ন্যায়, সত্য ও সুন্দরকে প্রতিষ্ঠা করাই মানুষের একান্ত কর্তব্য। জীবনে প্রতিনিয়ত ভাল আর মন্দ দিয়ে প্রভাবিত হচ্ছে মানুষ। নিজেকে মহৎ গুণাবলির আদর্শে পরিচালিত করতে পারলেই জীবনে সার্থকতা লাভ করা যায়। তাই চারদিকের অন্যায় অবিচার থেকে নিজেকে রক্ষা করে মানবিক গুণে সমৃদ্ধ করতে হবে জীবনকে। অপরের মন্দকর্ম কখনােই আদর্শ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে না। চারদিকের পরিবেশ যদি বিরূপ থাকে তাহলে তা থেকে নিজেকে সাবধানে সরিয়ে নিতে হবে এবং শ্রেষ্ঠ মানবিক আদর্শে জীবনকে গঠন করতে হবে। আন্তরিক ইচ্ছা থাকলে মানুষ শত অধমের মধ্যে থেকেও নিজে উত্তম হতে পারে। কারণ প্রকৃত উত্তমের বিবেক কখনই দুর্বল নয়, ‘উত্তম নিশ্চিন্তে চলে অধমের সাথে’, তাতে অধমেরই তার দিকে প্রভাবিত হবার কথা, উল্টোটা নয়। উত্তম হবার সাধনাই মনুষ্যত্বের সাধনা । কুকুর মানুষকে কামড়াবে বলে মানুষও কুকুরকে পাল্টা কামড়াতে যাবে এমন নয়। কোনাে হীন বা নীচ ব্যক্তি ক্ষতিকর কাজ করলেও তার প্রতিবিধান হীন কাজ দিয়ে করতে নেই। উত্তম ব্যবহার ও ক্ষমার আদর্শ স্থাপন করেই তার প্রতিবিধান করা উচিত। মনে রাখতে হবে, জগতের সকল ভাল জিনিস ও কাজের আধার হল উত্তম কর্ম। উত্তম কর্ম ও আদর্শই প্রকৃত জীবন। অধম— নরক, অধম নিকৃষ্ট, দুর্গন্ধযুক্ত ও সম্পূর্ণরূপে বর্জনীয়।

মানুষের সাধনা হওয়া উচিত উত্তম হওয়ার সাধনা। উত্তম হওয়াই মনুষ্যত্বের পরিচায়ক। প্রকৃত উত্তম তার মনের দুর্বার শক্তি দিয়ে অধমের বিরুদ্ধে নিজের প্রতিরােধের মূলমন্ত্র উচ্চারণ করেন : তুমি অধম, তাই আমাকে উত্তম হতে বাধা কোথায়?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *