সুভা গল্পের অনুধাবন প্রশ্ন ও উত্তর

সুভা গল্পের অনুধাবন প্রশ্ন ও উত্তর

সুভা গল্পের অনুধাবন প্রশ্ন ও উত্তর: ‘সুভা’ গল্পে বাকপ্রতিবন্ধী কিশোরী সুভার প্রতি লেখকের হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা ও মমতার প্রকাশ ঘটেছে। সুভা কথা বলতে পারে না। তাই সে মনের ভাব সবার মতো করে প্রকাশ করতে পারে না।

বাবা-মা ও আপনজনেরা তাকে নিয়ে যে দুশ্চিন্তা করেন, তা সে বুঝতে পারে। তাই সে নিজেকে সবার কাছ থেকে আড়াল করে রাখার চেষ্টা করে। মা এমন মেয়ের জন্য লজ্জা ও বিরক্তি বোধ করেন, কিন্তু বাবা তাকে খুব ভালোবাসেন। সমবয়সী ছেলেমেয়েরা সুভাকে ভয় পায়। তাই সে বন্ধুত্ব পাতায় গোয়ালের দুটি গাভী সর্বশী ও পাঙ্গুলির সঙ্গে। ছাগল বিড়াল তার বন্ধু।

যারা কথা বলতে পারে না সেই পোষা প্রাণীদের কাছে সুভা মুখর। আর বিপুল নির্বাক প্রকৃতির কাছে সে পায় মুক্তির আনন্দ। আরেকজন ছিল— গোঁসাইদের ছোট ছেলে প্রতাপ। নিতান্ত অকর্মণ্য এই ছেলেটির শখ ছিল- নদীতে ছিপ ফেলে মাছ ধরা। বাক্যহীন সঙ্গী হিসেবে সে সুভার মর্যাদা বুঝত। সুভা তেঁতুলতলায় বসে কখনো জলের দিকে, কখনো ছিপের দিকে তাকিয়ে থেকে প্রতাপের কোনো কাজ করে দেওয়ার কথা ভাবত।

সুভা প্রতাপের জন্য পান সাজিয়ে আনত। জগৎ-সংসারে সে আশ্রয় খুঁজে ফেরে প্রকৃতি ও মানুষের মাঝে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘মূলত প্রতিবন্ধী মানুষের আশ্রয়ের জন্য একটি জগৎ তৈরি করেছেন এবং তাদের প্রতি আমাদের মনে স্নেহ-মমতা-ভালোবাসা জাগাতে চেয়েছেন।


সুভা গল্পের অনুধাবন প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্ন ১। প্রতাপ সুভার মর্যাদা বুঝত কেন? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : মাছ ধরার সময় বাক্যহীন সঙ্গীই সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ- এজন্যই প্রতাপ সুভার মর্যাদা বুঝত। ‘সুভা’ গল্পে প্ৰতাপ নিতান্ত অকর্মণ্য ছেলে। তার বাবা-মায়ের পক্ষে অনেক চেষ্টা করেও তাকে দিয়ে সংসারের কোনো কাজ করানো সম্ভব হয়নি। মা-বাবা প্রতাপকে নিয়ে সব প্রত্যাশা বাদ দিয়েছিল। প্রতাপ অবহেলায় সময় কাটানোর জন্য অপরাহে নদীতীরে ছিপ ফেলে মাছ ধরত। বড়শি দিয়ে মাছ ধরার সময় নীরব পরিবেশের প্রয়োজন। কারণ পরিবেশ কোলাহলপূর্ণ হলে ভয় পেয়ে মাছ অন্য কোথাও চলে যায়। এজন্য প্রতাপ চুপচাপ থাকে এমন কাউকে সঙ্গী হিসেবে পছন্দ করত। কারণ মাছ ধরার সময় একজন নীরব সঙ্গী থাকলে তার সময়টা ভালো কাটত। তাই বাক্যহীন সঙ্গী সুভার মর্যাদা সে বুঝত।

প্রশ্ন ২। “সে ভাষাবিশিষ্ট জীব”— কার সম্পর্কে কোন প্রসঙ্গে বলা হয়েছে?
উত্তর : ‘সে ভাষাবিশিষ্ট জীব’— কথাটি সুভার সঙ্গী প্রতাপ সম্পর্কে বলা হয়েছে। সুভার গুটিকয়েক সঙ্গীর মধ্যে প্রতাপই একমাত্র কথা বলতে পারে, সেই প্রসঙ্গে লেখক প্রশ্নোক্ত কথাটি বলেছেন। সুভা কথা বলতে পারে না। পরিবার ও প্রতিবেশীদের কাছ থেকে সে নিজেকে দূরে সরিয়ে নেয়। বাড়ির দুটি গাভী, বিড়াল, গাছপালা ও নদীর সঙ্গে সে সখ্য গড়ে তোলে। এরাও সুভার মতো ভাষাহীন । এই ভাষাহীনদের বাইরে সুভার আরেকজন সঙ্গী আছে। লেখকের মতে সে উন্নত শ্রেণির জীব, সে ভাষাবিশিষ্ট প্রাণী। তার নাম প্রতাপ, গোঁসাইদের ছোট ছেলে। তার পরিচয় দিতে গিয়েই লেখক প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করেছেন। 

প্রশ্ন ৩। প্রতাপের প্রতি তার বাবা-মায়ের নিরাশ হওয়ার কারণ কী?
উত্তর : প্রতাপের প্রতি তার বাবা-মায়ের নিরাশ হওয়ার কারণ হলো— প্রতাপ সংসারের কাজের প্রতি যত্নবান বা মনোযোগী নয়, বরং সে বড় বেশি উদাসীন। প্রতাপকে তার বাবা-মা সংসারের দায়িত্ব বারবার দিয়ে দেখে যে, সে কোনো কাজ করতে চায় না, কাজের প্রতি তার কোনো আগ্রহই নেই। নিতান্ত অকর্মণ্য হয়ে ঘুরে বেড়ানোতেই প্রতাপের বেশি আনন্দ। সে সারাদিন এদিক ওদিক ঘুরে বেড়ায়। আর বিকেলে নদীর পাড়ে ছিপ ফেলে মাছ ধরে সময় ব্যয় করে। নিজের কাজের প্রতি তার উৎসাহ নেই। তবে অন্যের কাজের প্রতি তার উৎসাহ ছিল। মূলত প্রতাপের বাবা-মা অনেক চেষ্টা করেও প্রতাপকে ঘর-সংসারের কাজে মনোযোগী করতে পারেননি বলেই তার প্রতি তারা নিরাশ হয়েছেন।

প্রশ্ন ৪। সুভার কালো চোখকে তর্জমা করতে হয় না কেন?
উত্তর : সুভার মনের ভাব তার চোখে ফুটে ওঠে, তাই তার কালো চোখকে তর্জমা করতে হয় না। আমরা কথার মধ্য দিয়ে যে ভাষা প্রকাশ করি তা আমাদের নিজের চেষ্টায় গড়ে নিতে হয়। ঠিক কোনোকিছু তর্জমা করার মতো, যা সবসময় ঠিক হয় না। সুভার বড় বড় কালো চোখের যে ভাষা, যে উজ্জ্বলতা তাতে অবর্ণনীয় ভাবের প্রকাশ রয়েছে। যার দিকে তাকালে আর কোনো তর্জমা করার দরকার হয় না। তার চোখ দুটোই কথা বলে। সুভার মনের ভাব তার চোখের উপরে কখনো উজ্জ্বল হয়ে জ্বলে উঠত, আবার কখনো স্নানভাবে নিভে আসত। কখনো চঞ্চল বিদ্যুতের মতো, আবার কখনো ডুবে যাওয়া চাঁদের মতো হয়ে তার মনের ভাব প্রকাশ করত। সুভার মুখের ভাষা না থাকলেও দৃষ্টির গভীরতা স্পর্শ করা যায়। তাই সুভার কালো চোখকে তর্জমা করতে হয় না।

প্রশ্ন ৫। সুভা মনে মনে কী কল্পনা করত?
উত্তর : সুভা মনে মনে জলকুমারী হওয়ার কথা কল্পনা করত। সুভা কল্পনা করত সে যদি জলপরী হতো, তাহলে জল থেকে উঠে সাপের একটা মণি ঘাটে রেখে আসত। প্রতাপ তার তুচ্ছ মাছ ধরা ছেড়ে সাপের মাথার সেই মণি নিয়ে জলে ডুব দিত। তারপর পাতালে গিয়ে দেখত রুপার অট্টালিকার সোনার পালঙ্কে সুভা বসে আছে। সে পাতালপুরীর একমাত্র রাজকন্যা। সে পাতালপুরীর রাজকন্যা না হয়ে ভুল করে বাণীকণ্ঠর পরিবারে জন্ম নিয়েছে। সে মনে মনে এসব বিষয় কল্পনা করত।

প্রশ্ন ৬। “দস্তুরমতো অনুসন্ধান ও অর্থব্যয়ে বড়ো দুটি মেয়ের বিবাহ হইয়া গেছে”- এখানে ‘অর্থব্যয়’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর : “দস্তুরমতো অনুসন্ধান ও অর্থব্যয়ে বড়ো দুটি মেয়ের বিবাহ হইয়া গেছে”— এখানে ‘অর্থব্যয়’ বলতে পণের টাকার পরিমাণকে বোঝানো হয়েছে। সেকালে হিন্দু সমাজে পণপ্রথা প্রচলিত ছিল। কন্যাকে পাত্রস্থ করতে হলে পণ দিতে হতো। এ পণের অঙ্ক সামাজিক অবস্থানের ওপর নির্ভর করত। সামাজিক অবস্থানের তারতম্যে কন্যাপক্ষের সঙ্গে বরপক্ষের দূরত্ব যত বেশি হতো, পণের পরিমাণ তত বেশি হতো। আর দূরত্ব যত কম হতো, পণের অঙ্কও তত কম হতো। এ ছাড়া বর আর কনের সৌন্দর্য বিচারের ওপরও বিষয়টি নির্ভর করত। কনে যদি বেঁটে বা খাটো হতো, তবে পণ বেশি দিতে হতো। আর মেয়ে বরের তুলনায় সুন্দরী হলে পণের পরিমাণ কম হলেও চলত। আলোচ্য লাইনে ‘অর্থব্যয়’ দ্বারা এই বিষয়টিই বোঝানো হয়েছে।

প্রশ্ন ৭। “তখন কে জানিত সে বোবা হইবে”- ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : সুভার বোবা হওয়া সম্পর্কে এ কথা বলা হয়েছে। ‘সুভা’ গল্পের সুভা একটি বোবা মেয়ে। তিন বোনের মধ্যে সে ছোট। তার বড় দুই বোন সুকেশিনী ও সুহাসিনী কথা বলতে পারে। তাই দুই বোনের নামের সাথে মিল রেখে তার নাম রাখা হয় সুভাষিণী। সুভাষিণী অর্থ ‘যার কথা সুন্দর’। সুভাষিণীর যখন জন্ম হয় তখন কেউ জানত না যে সে কথা বলতে পারবে না। আর যে কথা বলতে পারে না, তার নাম সুভাষিণী এই বিষয়টি অনেকটা দুঃখজনক। তাই এখানে লেখক মেয়েটির শারীরিক প্রতিবন্ধিতার সাথে তার নামের বৈপরীত্য প্রকাশ করতে এমন কথা বলেছেন।

প্রশ্ন ৮। সুভা কেন বাবা-মায়ের হৃদয়ভারের কারণ হয়েছিল?
উত্তর : সুভা বোবা হওয়ার কারণে বাবা-মায়ের হৃদয়ভারের কারণ হয়েছিল। সুভার বড় দুই বোন সুস্থ ও স্বাভাবিক। তাই তাদেরকে বিয়ে দিতে তার বাবা-মাকে কোনো সমস্যায় পড়তে হয়নি। অনেক টাকা-পয়সা খরচ করে এবং ধুমধাম করে তিনি তাদের বিয়ে দেন। আর সুভা বোবা হওয়ার কারণে তার বাবা দুশ্চিন্তায় পড়ে যান। কারণ বোবা মেয়েকে বিয়ে দেওয়াটা অন্য দুই মেয়ের বিয়ে দেওয়ার মতো সহজ কাজ নয়। তাই সুভার বাবা-মা প্রতিনিয়ত এই বিষয়টি নিয়ে দুশ্চিন্তা করেন এবং সুভার অস্তিত্ব যেন তাদের নীরব হৃদয়ভারের মতো হয়ে অবস্থান করে। 

প্রশ্ন ৯। সুভা শিশুকাল থেকেই কী বুঝে নিয়েছিল?
উত্তর : সুভা যে বিধাতার অভিশাপম্বরূপ পিতার ঘরে জন্ম নিয়েছে সে তা শিশুকাল থেকেই বুঝে নিয়েছিল। সুভা জন্ম থেকেই বোবা। মুখে কথা বলতে না পারলেও তার মাঝে অনুভূতি ছিল। সে তার চারপাশের সবকিছুই অনুভব করত এবং বুঝতে পারত। ছোটবেলা থেকেই তার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে যেসব কথাবার্তা হতো সেগুলো থেকেই সে বুঝে নিয়েছিল যে, সে বিধাতার কাছ থেকে আশীর্বাদ নিয়ে জন্মায়নি। পরিবারের লোকজনের আলোচনার মধ্য থেকেই বুঝে নিয়েছিল যে, সে তার বাবার ঘরে বিধাতার অভিশাপম্বরূপ জন্ম নিয়েছে। 

প্রশ্ন ১০। নদীকে গৃহস্থ ঘরের মেয়ের সাথে তুলনা করা হয়েছে কেন?
উত্তর : নদীকে গৃহস্থ ঘরের মেয়ের সাথে তুলনা করার কারণ হলো- গৃহস্থ ঘরের মেয়ে নিপুণা কিন্তু তার বিস্তার সংসারের ছোট গণ্ডির মধ্যে। নদীটিও তেমনই। গৃহস্থ ঘরের মেয়েরা সাধারণত কর্মে পটু হয়। স্বভাব হয় শান্ত। সংসারের প্রতি তাদের আকর্ষণ চিরন্তন। আবার মমত্বে তারা মায়ের মতো, স্বল্পভাষী, চাহনিতে সৌম্য ভাব আর নিরলস পরিশ্রমী। তার বিস্তার সংসারের ছোট্ট গণ্ডির মধ্যে, বেশি দূর পর্যন্ত নয়। নদীটিও তেমনি সরু ও দীর্ঘ। মানুষের ক্ষতি করে না, কারণ বুকে ঢেউয়ের প্রাবল্য নেই। দুপাশের মানুষের প্রয়োজন ও তৃষ্ণা দুই-ই মেটায়। দুই তীরের গাছপালাকে রসসিক্ত করে প্রাণবন্ত করে তোলে। তার প্রসারতাও বেশি নয়। এই কারণেই নদীকে গৃহস্থ ঘরের মেয়ের সাথে তুলনা করা হয়েছে।

প্রশ্ন ১১। সুভার প্রতি তার মায়ের আচরণ কেমন ছিল?
উত্তর : সুভার প্রতি তার মায়ের আচরণ ছিল বিরক্তিপূর্ণ। মায়েরা কন্যাসন্তানকে নিজেদের অংশ মনে করে। মেয়েদের কোনো অঙ্গ যদি ত্রুটিপূর্ণ থাকে তাহলে মায়েরা তা নিজেদের ত্রুটি হিসেবে ধরে নেয়। ‘সুভা’ গল্পে সুভা জন্ম থেকে বোবা ছিল। তাই মা সুভার প্রতি বিরক্ত ছিলেন। এই ত্রুটিকে সুভার মা নিজের গর্ভের কলঙ্ক মনে করতেন। সুভাকে দেখলে সুভার মা নিজের ত্রুটির কথা স্মরণ করতেন বলে তিনি সুভার ওপরে বিরক্ত ছিলেন।

প্রশ্ন ১২। প্রকৃতি কীভাবে সুভার ভাষার অভাব পূরণ করেছিল?
উত্তর : প্রকৃতির বিভিন্ন শব্দ ও কোলাহল দিয়ে প্রকৃতি সুভার ভাষার অভাব পূরণ করেছিল। নদীর কলধ্বনি, পাখির ডাক, মাঝির গান, লোকের কোলাহল ইত্যাদি দিয়ে প্রকৃতি সুভার ভাষার অভাব পূরণ করে দেয়। সে সময় পেলেই নদীর পাড়ে এসে বসত। তখন প্রকৃতির নানান উপাদান নিজের সমস্ত ভাষা নিয়ে সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো সুভার হৃদয়ে আঁছড়ে পড়ত। এই ভাষার বিস্তার যেন বিশ্বব্যাপী। এভাবেই প্রকৃতি বিভিন্ন শব্দের মধ্য দিয়ে সুভার ভাষার অভাব পূরণ করেছিল।

প্রশ্ন ১৩। সুভার সাথে গাভী দুটির সম্পর্ক কেমন ছিল?
উত্তর : সুডার অন্তরঙ্গ বন্ধু ছিল গাভী দুটি। সুডার অন্তরঙ্গ বন্ধু গাভী দুটি হলো সর্বশী ও পাঙ্গুলি। এদের সাথে সুভার অত্যন্ত নিবিড় সম্পর্ক ছিল। সুডা কখন এদের আদর করত এবং কখন ভর্ৎসনা করত— এরা সব বুঝত। সুভা নিয়মিত তিনবার গোয়ালঘরে গিয়ে এদের খোঁজ নিত। এমনকি সুভার মনের ভাষা, মর্মবেদনা এরা বুঝতে পারত। সুভার বাহুতে শিং ঘষে সুভাকে এরা সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করত। সুভার কথাহীন করুণ সুর এরা ভালো করে চিনত। সুভাকে এরা বন্ধুই মনে করত।

প্রশ্ন ১৪। বিড়ালটি সুভার কাছে গিয়ে কী করত?
উত্তর : বিড়ালটি সুভার কাছে গিয়ে আদর নিত। সুভার ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের মধ্যে অন্যতম একটি প্রাণী বিড়াল। সুভা বসে থাকলে বিড়ালটি যখন তখন নিঃসংকোচে এসে তার গরম কোলে বসে সুখনিদ্রার আয়োজন করত। সুভা গলায় ও পিঠে হাত বুলিয়ে দিলে বিড়ালটির ঘুমিয়ে পড়ত।

প্রশ্ন ১৫। প্রতাপ কেমন ছিল?
উত্তর : প্রতাপ নিতান্ত অকর্মণ্য ছিল। গোঁসাইদের ছোট ছেলে প্রতাপ অকর্মণ্য বলে বাবা-মা তার ওপর থেকে সব রকম আশা ত্যাগ করেছিল। সে তার সংসারের কোনো কাজে না লাগলেও অন্য সবার সব কাজে লাগত। সে ছিপ ফেলে মাছ ধরতে পছন্দ করত। গ্রামে দু-চারটে অকর্মণ্য লোক থাকেই যারা সব সময় অন্যের উপকারে লাগে, প্রতাপ ছিল তেমনই একজন পরোপকারী ব্যক্তি।

প্রশ্ন ১৬। সুভা ও প্রতাপের সম্পর্ক কেমন ছিল?
উত্তর : সুভা ছিল প্রতাপের মাছ ধরার সঙ্গী। তাদের সম্পর্ক ভালো ছিল । প্রতাপ ছিপ ফেলে মাছ ধরতে খুব পছন্দ করত। তেঁতুলতলায় সুভা বসে থাকত এবং প্রতাপ কিছু দূরে ছিপ ফেলে পানির দিকে তাকিয়ে থাকত। প্রতাপের জন্য সুভা একটি করে পান বানিয়ে নিয়ে যেত। সুভা খুব চেষ্টা করত প্রতাপকে কোনো একটা কাজে সাহায্য করার জন্য, যেন সে বুঝতে পারে যে সুভাও কারও কাজে লাগতে পারে। প্রতাপ মাছ ধরায় ব্যস্ত থাকলে সুভা মনে মনে অলৌকিক কোনো ক্ষমতা আশা করত, যেন সে তা দেখে অবাক হয়। সুভার সাথে প্রতাপের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল।

প্রশ্ন ১৭। পূর্ণিমার রাতে সুভা কী করেছিল?
উত্তর : পূর্ণিমার রাতে সুভা নিজেকে চেনার চেষ্টা করেছিল পূর্ণিমার রাতে একবার সুভা দরজা খুলে ভয়ে ভয়ে মুখ বের করে দিয়ে পূর্ণিমা দেখছিল । তার কাছে মনে হয়েছিল এই পূর্ণিমা রাতও যেন তার মতো একা এবং নির্বাক। সে নিজের অস্তিত্ব এবং নিজের বেড়ে ওঠা সম্পর্কে অনুভূতি লাভ করে। অনেক কিছু বুঝতে চায়, কথা বলতে চায়, পারে না। চারদিকের সমস্ত নির্জনতা যেন তাকে ছাপিয়ে ওঠে। আর এই নিস্তব্ধ প্রকৃতির মধ্যে একটি মেয়ে একা দাঁড়িয়ে থাকে, সুভা সেই বিষয়টিও অনুভব করে।

প্রশ্ন ১৮। প্রতাপের দিকে সুডা কেন মর্মবিদ্ধ হরিণীর মতো তাকিয়ে ছিল?
উত্তর : সুভার বর পাওয়া গেছে, সে বিয়ে করে চলে যাবে, বিয়ের পর যেন সুভা তাকে না ভোলে প্রতাপের মুখে এমন কথা শুনে সুভা তার দিকে মর্মবিদ্ধ হরিণীর মতো তাকিয়ে ছিল। প্রতাপ মাছ ধরার সময় সুভা একদিন তার কাছে গেলে প্রতাপ তাকে বলে যে, তার বর খুঁজে পাওয়া গেছে। তার বিয়ে হবে। বিয়ের পর সে যেন সবাইকে ভুলে না যায়। এ কথা শুনে সুভা প্রতাপের দিকে এমনভাবে তাকায়, যেন মর্মবিদ্ধ হরিণী শিকারির দিকে তাকিয়ে থাকে। কারণ সুভা বিয়ের জন্য রাজি ছিল না। প্রতাপের কাছ থেকে কথাটি শুনে তার মোটেই ভালো লাগেনি। অত্যন্ত কষ্ট পায় বলে সুভা এভাবে তার দিকে তাকিয়ে ছিল।

প্রশ্ন ১৯। মাছ ধরার সময় বাক্যহীন সঙ্গীই সর্বাপেক্ষা শ্রেয়’- বাক্যটির মানে কী?
উত্তর : “মাছ ধরার সময় বাক্যহীন সঙ্গীই সর্বাপেক্ষা শ্রেয়”_ বাক্যটির মানে হচ্ছে- শব্দ শুনলে মাছ চলে যায় বলে শব্দ করে না এমন নীরব সঙ্গী সবচেয়ে ভালো। নিশ্চুপ পরিবেশে ছিপ ফেলে মাছ ধরার সুবিধার কথা ভেবে প্রতাপ মাছ ধরার সময় বাক্যহীন সঙ্গী কামনা করেছে। কারণ মাছ ধরার সময় শব্দ শুনতে পেলে মাছ এক জায়গায় একত্র না হয়ে অন্যত্র চলে যায়। এতে ছিপ দিয়ে মাছ ধরতে অসুবিধা হয়। সুভা কথা বলতে পারে না। সে প্রায়ই কোনো না কোনো কাজে নদীর তীরে যেত। সেখানে সুভার সঙ্গে প্রতাপের দেখা হতো। মাছ ধরার সময় সুভা কাছাকাছি থাকলেও প্রতাপের ছিপ ফেলে মাছ ধরতে কোনো অসুবধিা হতো না। প্রতাপেরও নিজেকে একা মনে হতো না। এ কারণেই সে মাছ ধরার সময় সুভার মতো বাক্যহীন সঙ্গী কামনা করেছে।


আশাকরি আমাদের আজকের আর্টিকেল টি আপনাদের ভালো লেগেছে। শিক্ষা, পাঠ্যপুস্তক, গল্পের বই সহ যে কোন পিডিএফ ডাউনলোড করতে আমাদের সাথেই থাকুন। ভালো থাকবেন সবাই, ধন্যবাদ।

About মেরাজুল ইসলাম

আমি মেরাজুল ইসলাম, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী পাশাপাশি একজন ব্লগার। এডুকেশন এর প্রতি ভালোবাসাও অনলাইল শিক্ষার পরিসর বাড়ানোর জন্য এডুকেশন ব্লগের পথচলা। ব্লগিং এর পাশাপাশি আমি ওয়েবসাইট ডিজাইন, কন্টেন্ট রাইটিং, কাস্টমাইজ সহ ওয়েব রিলেটেড সকল কাজ করি।

View all posts by মেরাজুল ইসলাম →