অপরিচিতা গল্পের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন উত্তর

(PDF সহ) অপরিচিতা গল্পের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন উত্তর

অপরিচিতা গল্পের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন উত্তর: ‘অপরিচিতা’ গল্পে অপরিচিতা বিশেষণের আড়ালে যে বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্বের অধিকারী নারীর কাহিনী বর্ণিত হয়েছে, তার নাম কল্যাণী। অমানবিক যৌতুক প্রথার নির্মম বলি হয়েছে এমন নারীদের গল্প ইতঃপূর্বে রচনা করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। কিন্তু এই গল্পেই প্রথম যৌতুক প্রথার বিরুদ্ধে নারী-পুরুষের সম্মিলিত প্রতিরোধের কথকতা শোনালেন তিনি। এ গল্পে পিতা শম্ভুনাথ সেন এবং কন্যা কল্যাণীর স্বতন্ত্র বীক্ষা ও আচরণে সমাজে গেড়ে-বসা ঘৃণ্য যৌতুকপ্রথা প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়েছে। পিতার বলিষ্ঠ প্রতিরোধ এবং কন্যা কল্যাণীর দেশচেতনায় ঋদ্ধ ব্যক্তিত্বের জাগরণ ও তার অভিব্যক্তিতে গল্পটি সার্থক। ‘অপরিচিতা’ উত্তম পুরুষের জবানিতে লেখা গল্প।

গল্পের কথক অনুপম বিশ শতকের দ্বিতীয় দশকের যুদ্ধ সংলগ্ন সময়ের সেই বাঙালি যুবক, যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চতর উপাধি অর্জন করেও ব্যক্তিত্বরহিত,পরিবারতন্ত্রের কাছে অসহায় পুতুলমাত্র। তাকে দেখলে আজো মনে হয়, সে যেন মায়ের কোলসংলগ্ন শিশুমাত্র। তারই বিয়ে উপলক্ষে যৌতুক নিয়ে নারীর চরম অবমাননাকালে শম্ভুনাথ সেনের কন্যা-সম্প্রদানে অসম্মতি গল্পটির শীর্ষ মুহূর্ত। অনুপম নিজের গল্প বলতে গিয়ে ব্যাঙ্গার্থে জানিয়ে দিয়েছে সেই অঘটন সংঘটনের কথাটি। বিয়ের লগ্ন যখন প্রস্তুত তখন কন্যার লগ্নভ্রষ্ট হওয়ার লৌকিকতাকে অগ্রাহ্য করে শম্ভুনাথ সেনের নির্বিকার অথচ বলিষ্ঠ প্রত্যাখ্যান নতুন এক সময়ের আশু আবির্ভাবকেই সংকেতবহ করে তুলেছে।

কর্মীর ভূমিকায় বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্বের জাগরণের মধ্য দিয়ে গল্পের শেষাংশে কল্যাণীর শুচিশুভ্র আত্মপ্রকাশও ভবিষ্যতের নতুন নারীর আগমনীর ইঙ্গিতে পরিসমাপ্ত। ‘অপরিচিতা’ মনস্তাপে ভেঙেপড়া এক ব্যক্তিত্বহীন যুবকের স্বীকারোক্তির গল্প, তার পাপস্খালনের অকপট কথামালা। অনুপমের আত্মবিবৃতির সূত্র ধরেই গল্পের নারী কল্যাণী অসামান্যা হয়ে উঠেছে। গল্পটিতে পুরুষতন্ত্রের অমানবিকতার স্ফুরণ যেমন ঘটেছে, তেমনি একই সঙ্গে পুরুষের ভাষ্যে নারীর প্রশস্তিও কীর্তিত হয়েছে।

অপরিচিতা গল্পের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন উত্তর

০১. অন্নপূর্ণার কোলে গজাননের ছােট ভাইটি’- উক্তিটি ব্যাখ্যা করাে।
উত্তর: প্রশ্নোক্ত উক্তিটিতে ব্যঙ্গার্থে দেবতা কার্তিকের সঙ্গে অনুপমের তুলনা করা হয়েছে। দেবী দুর্গার দুই পুত্র অগ্রজ গণেশ ও অনুজ কার্তিকেয়। দেবী দুর্গার কোলে দেব সেনাপতি কার্তিকেয় অপূর্ব শােভা পায়। বড় হয়েও অনুপম কার্তিকের মতাে মায়ের কাছাকাছি থেকে মাতৃআজ্ঞা পালনে ব্যস্ত থাকে। তাই পরিণত বয়সেও তার স্বাধীন ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটে না। পাঠ্য গল্পের অনুপম পরিবারতন্ত্রের কাছে অসহায় ও ব্যক্তিত্বহীন একটি চরিত্র। উচ্চ শিক্ষিত হলেও তার নিজস্বতা বলতে কিছু নেই। তাকে দেখলে মনে হয় আজও সে যেন মায়ের কোলে থাকা শিশুমাত্র। এজন্যই ব্যঙ্গ করে অনুপমকে গজাননের ছােট ভাই কার্তিকের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।

০২. অনুপমের বিবাহ যাত্রার বর্ণনা দাও।
উত্তর: অনুপম মহাসমারােহের সাথে বিয়ে করতে গিয়েছিল ধনী ঘরের ছেলে অনুপম। তাই তার বিয়েতে ছিল আভিজাত্যের ছোঁয়া। ব্যান্ড, বাঁশি, কন্সর্ট কোনাে কিছুরই কমতি ছিলাে না। দামি পােশাক ও বাহারি গয়নাতে জড়ানাে ছিল অনুপমের শরীর। তাকে দেখে মনে হচ্ছিল সে ভাবী শ্বশুরের সঙ্গে আভিজাত্যের মােকাবিলা করতে বিয়ের আসরে যাচ্ছে।

০৩. অনুপমের মামার মন কিভাবে নরম হয়েছিল?
উত্তর: ‘অপরিচিতা’ গল্পের হরিশ অনুপমের মামার কাছে কল্যাণী ও তার পরিবারের প্রশংসা করার ফলে মম মন নরম হলে । বিয়ের পাত্রী তথা কল্যাণীর পারিবারিক অবস্থা, বংশমর্যাদার ব্যাপারে অনুপমের মামাকে বিশদ বর্ণনা দেয় হরিশ। সেসব কথা শুনে তিনি আশ্বস্ত হলেও কল্যাণীর বয়স বেশি মনে করে বিয়ে নিয়ে দ্বিধাগ্রস্তও হন। কিন্তু হরিশের ছিল নিজের সরস কথা দ্বারা মানুষের মনকে প্রভাবিত করার বিশেষ গুণ । তাই তাে পরবর্তীতে তার কাছ থেকে পাত্রীর নির্ভরযােগ্য প্রশংসা বাক্য শুনে মামার মন নরম হয়েছিল।

০৪. অনুপমের মামা সেকরাকে বিয়ে বাড়িতে এনেছিল কেন?
উত্তর: অনুপমের মামা যৌতুকলােভী ও হীন মানসিকতার মানুষ হওয়ায় বিয়ের গয়না পরীক্ষা করতে সেকরাকে বিয়ে বাড়িতে এনেছিল। কল্যাণীর বিয়েতে তার বাবা শম্ভুনাথ সেন নগদ পণের সঙ্গে গয়না দিতে চান। অনুপমের মামা শম্ভুনাথ সেনের কথায় আস্থাশীল ছিলেন না। কন্যাপক্ষ যে গয়না দেবে তা আসল না নকল সেটি পরীক্ষা করার জন্য অনুপমের মামা বিয়ে বাড়িতে সেকরাকে সঙ্গে এনেছিল। সেকরা সমস্ত গয়নার খাঁটিত্ব প্রমাণ করেন।

০৫. আমার ভাগ্যে প্রজাপতির সঙ্গে পঞশরের কোনাে বিরােধ নাই’- বাক্যটির তাৎপর্য কী?
উত্তর: প্রশ্নোক্ত বাক্যটিতে অনুপমের ভাগ্যের সুপ্রসন্নতার কথা বলা হয়েছে। অনুপমের বিবাহের জন্যে কন্যাকে আশীর্বাদ করতে তার পিসতুতাে ভাই বিনুকে পাঠানাে হলাে। সে ফিরে এসে কন্যার প্রশংসা করে। বিনু খুবই রুচিশীল মানুষ, সে অল্প কথায় অনেক অর্থ প্রকাশ করে। সে যখন বলে খাটি সােনা, তখন অনুপমের বুঝতে বাকি থাকে না যে তার জন্যে যে পাত্রী পছন্দ করা হয়েছে সে অনন্যা গুণসম্পন্না নারী। তার ভাগ্যে বিবাহের দেবতা প্রজাপতি ও প্রেমের দেবতা মদনের শুভদৃষ্টি পড়েছে। উভয় দেবতার মধ্যে কোনাে রকম আশীর্বাদের বিরােধ নেই।

০৬. কিন্তু ভাগ্য আমার ভালাে, এই তাে আমি জায়গা পাইয়াছি’— বক্তার এমন অনুভূতির কারণ বুঝিয়ে লেখাে।
উত্তর: প্রশ্নোক্ত উক্তিটি দ্বারা অনুপম কল্যাণীর কাছাকাছি থাকা বলতে হৃদয়ে জায়গা পাওয়ার কথা বুঝিয়েছে। কানপুরে পেীছে কল্যাণীর পরিচয় জানতে পেরে অনুপমের হৃদয় আবারাে কল্যাণীর চিন্তায় আচ্ছন্ন হয়। সে কল্যাণীকে বিয়ে করতে চাইলেও কল্যাণী রাজি হয় না। কল্যাণীর কাছাকাছি থাকার জন্য সে কানপুরেই বসবাস করতে শুরু করে। সুযােগ পেলেই সে কল্যাণীর কাজে সাহায্য করে আর মনে করে হয়তাে এভাবেই সে কল্যাণীর হৃদয়ে স্থান পেয়েছে।

০৭. “ঠাট্টার সম্পর্কটাকে স্থায়ী করিবার ইচ্ছা আমার নাই”- উক্তিটি কোন প্রসঙ্গে করা হয়েছে? ব্যাখ্যা করাে।
উত্তর: অনুপমের সাথে কল্যাণীর বিয়ে ভেঙে দেওয়াটাকে অনুপমের মামা ঠাট্টা মনে করলে শম্ভুনাথ সেন একথা বলেছিলেন। অনুপমের মামা বিয়ের আগেই সেকরা দিয়ে কনের গায়ের গয়না যাচাই করে দেখেতে চান তা আসল কি না। এ কারণে শম্ভুনাথ সেন অপমানিত বােধ করেন। গয়না যাচাইয়ের ব্যাপারে পাত্রের নির্লিপ্ততা দেখে তিনি এমন ব্যক্তিত্বহীন ছেলের সাথে মেয়ে বিয়ে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তাই তিনি পাত্রপক্ষকে যথাযথ আপ্যায়নের পর গাড়ি ডেকে বিদায় দিতে চাইলে অনুপমের মামা এ বিষয়টি ঠাট্টা মনে করেন। এর জবাবে তিনি বলেন – “ঠাট্টার সস্কর্ককে স্থায়ী করিবার ইচ্ছা আমার নাই।’

০৮. মন্দ নয় হে! খাটি সােনা বটে’- কার প্রসঙ্গে কেন বলা হয়েছে?
উত্তর: মন্দ নয় হে! খাঁটি সােনা বটে।’ এ কথাটি কল্যাণীর রূপ বর্ণনা করতে গিয়ে অনুপমকে বলা হয়েছে। অনুপমের বিবাহের জন্য কন্যাকে আশীর্বাদ করতে তার পিসতুতাে ভাই বিনুদাদাকে পাঠানাে হয়েছিল। বিনুদাদা ফিরে এসে কন্যার প্রশংসা করে। বিনু রুচিশীল মানুষ। তাই অনুপম তার মন্তব্যকে প্রাধান্য দেয়। বিনুদাদার ভাষাটিও অত্যন্ত আঁট। তিনি চমৎকারের জায়গায় বলেন ‘চলনসই। তাই তিনি যখন অনুপমকে উদ্দেশ্য করে বলেন মন্দ নয় তখন তার মন পুলকিত হয়ে ওঠে। বিনুদাদার বক্তব্যে মূলত কন্যার রূপের পাশাপাশি চারিত্রিক যে দৃঢ়তা সেটিও ব্যক্ত করেছেন।

০৯. কন্যার পিতা মাত্রেই স্বীকার করিবেন আমি সৎপাত্র’- কেন?
উত্তর: ‘অপরিচিতা’ গল্পে অনুপমকে মাতৃ-আজ্ঞাবহ, নিরীহ এক চরিত্র হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে এখানে সে বিষয়টিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে। ভালাে মানুষ হওয়ার কোনাে ঝাট না থাকায় অনুপম স্বভাবতই একজন ভালাে মানুষ। এমএ পাস অনুপম মায়ের আদেশ যথাযথভাবে পালন করে। এমনকি সে তামাক পর্যন্ত খায় না। আমাদের সমাজে বিয়ের প্রসঙ্গে সৎপাত্র সম্পর্কে যে ধারণা পােষণ করা হয়, এ সকল বৈশিষ্ট্য তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তাই অনুপমের বিশ্বাস কন্যার পিতা মাত্রেই স্বীকার করবেন সে সৎপাত্র।

১০. “ভালাে মানুষ হওয়ার কোনাে ঝঞ্জাট নাই”- ব্যাখ্যা করাে।
উত্তর: মামার অভিভাবকত্বে বড় হওয়া অনুপম সমাজ-সংসারের প্রতি তার দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন সম্পর্কে সর্বদাই উদাসীন ছিল। অনুপম এমএ পাস করলেও সংসার বা সমাজের প্রতি তাকে কোনাে দায়িত্ব পালন করতে হয় না। তার পিতার মৃত্যুর পর সংসারের অভিভাবকের দায়িত্ব তার মামাই পালন করেন। এমন দায়িত্ব-কর্তব্যহীন ভালাে, মানুষ হওয়া বেশ সহজ। কেননা যেখানে কোনাে দায়িত্ব-কর্তব্য নেই সেখানে ভুল বা ঝঞাটের কোনাে সম্ভাবনাই নেই। তাই গল্পে বলা হয়েছে, ‘ভালােমানুষ হওয়ার কোনাে ঝাট নাই।

১১. কল্যাণীর ‘মাতৃ-আজ্ঞা’র ধরন ব্যাখ্যা করাে।
উত্তর: অনুপমের সাথে বিয়ে ভাঙ্গার পর কল্যাণী নারী শিক্ষার ব্রত গ্রহণ করে। কানপুরে অনুপম কল্যাণীকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে কল্যাণী তা প্রত্যাখ্যান করে। এই প্রত্যাখ্যানের কারণ তার মাতৃ-আজ্ঞা। বস্তুত এ মাতৃ-আজ্ঞা আর কিছু নয়, দেশমাতৃকার সেবা করা। আর এ সেবার পথ হলাে মেয়েদের সুশিক্ষিত করে তােলা। মেয়েরা শিক্ষিত হলেই একটা সমাজ পরিপূর্ণ রূপে প্রতিষ্ঠিত হয়ে ওঠে। কল্যাণীর মাতৃ-আজ্ঞার ধরন বলতে নারী শিক্ষার এই বিষয়টিকেই বােঝানাে হয়েছে।

১২. ঠাট্টা তাে আপনিই করিয়া সারিয়াছেন’— বুঝিয়ে দাও।
উত্তর: কল্যাণীর সাথে অনুপমের বিয়ে ভেঙে দেওয়ার মাধ্যমে অনুপমের মামার প্রতি শম্ভুনাথ সেনের ক্ষোভ প্রকাশ পেয়েছে। বিয়ের পূর্বমুহূর্তে অনুপমের মামা কনের পরিহিত সকল গয়না পরখ করে দেখতে চান। তার এ অসংগত প্রস্তাব দৃঢ়চিত্ত শম্ভুনাথ সেনের আত্মমর্যাদাকে ক্ষুন্ন করে। তাই কৌশলে বরযাত্রীদের খাইয়ে দিয়ে তাদের তিনি বিদায় জানান। এরূপ আচরণে অনুপমের মামা আশ্চর্য হয়ে মন্তব্য করলে তার প্রত্যুত্তরে শদ্ভুনাথ সেন প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি করেন। মূলত বিয়ের আগে গহনা নিয়ে মামার অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণের কারণেই শম্ভুনাথ বিয়ে ভাঙার কথা বলেছেন।

১৩. “এ কেবল একটি মানুষের গলা, শুনিলেই মন বলিয়া ওঠে, এমন তাে আর শুনি নাই।” অনুপমের এমন মনে হওয়ার কারণ কী? ব্যাখ্যা করাে।
উত্তর: অনুপমের কানপুর স্টেশনে অচেনা এক নারীর মধুর কণ্ঠস্বর শুনে এরকম মনে হয়। অনুপম চিরকাল গলার স্বরের পূজারী। তার মতে, মানুষের মধ্যে যা অন্তরতম এবং অনির্বচনীয় তার চেহারাই হচ্ছে কণ্ঠস্বর। হঠাৎ অচেনা এক নারীর কণ্ঠস্বর শুনে তিনি মুগ্ধ হয়ে যান। কিন্তু শুধুমাত্র নারীর গলার স্বর বলে সেটিকে তিনি সুন্দর বলতে চান না। বরং এ কণ্ঠস্বরটি নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবার মধ্যেই ভালাে। অনুপমের মতে, যে কেউ এ গলার স্বর শুনে মুগ্ধ হবে।

১৪. ব্যাখ্যা কর, আমার ভাগ্যে প্রজাপতির সাথে পঞশরের কোনাে বিরােধ নাই।
উত্তর: প্রশ্নোক্ত বাক্যটিতে অনুপমের ভাগ্যের সুপ্রসন্নতার কথা বলা হয়েছে। অনুপমের বিবাহের জন্যে কন্যাকে আশীর্বাদ করতে তার পিসতুতাে ভাই বিনুকে পাঠানাে হলাে। সে ফিরে এসে কন্যার প্রশংসা করে। বিনু খুবই রুচিশীল মানুষ, সে অল্প কথায় অনেক অর্থ প্রকাশ করে। সে যখন বলে খাটি সােনা, তখন অনুপমের বুঝতে বাকি থাকে না যে তার জন্যে যে পাত্রী পছন্দ করা হয়েছে সে অনন্যা গুণসম্পন্না নারী। তার ভাগ্যে বিবাহের দেবতা প্রজাপতি ও প্রেমের দেবতা মদনের শুভদৃষ্টি পড়েছে। উভয় দেবতার মধ্যে কোনাে রকম আশীর্বাদের বিরােধ নেই।

১৫. কিন্তু ভাগ্য আমার ভালাে, এই তাে আমি জায়গা পাইয়াছি।’ বক্তার এমন অনুভূতির কারণ বুঝিয়ে লেখাে।
উত্তর: প্রশ্নোক্ত উক্তিটি দ্বারা অনুপম কল্যাণীর কাছাকাছি থাকা বলতে হৃদয়ে জায়গা পাওয়ার কথা বুঝিয়েছে। কানপুরে পৌছে কল্যাণীর পরিচয় জানতে পেরে অনুপমের হৃদয় আবারাে কল্যাণীর চিন্তায় আচ্ছন্ন হয়। সে কল্যাণীকে বিয়ে করতে চাইলেও কল্যাণী রাজি হয় না। কল্যাণীর কাছাকাছি থাকার জন্য সে কানপুরেই বসবাস করতে শুরু করে। সুযােগ পেলেই সে কল্যাণীর কাজে সাহায্য করে আর মনে করে হয়তাে এভাবেই সে কল্যাণীর হৃদয়ে স্থান পেয়েছে।

১৬. ঠাট্টা করিতেছেন নাকি!’ –কেন এই উক্তিটি করা হয়েছে?
উত্তর: কল্যাণীর সাথে অনুপমের বিয়ে শম্ভুনাথ সেন ভেঙে দিলে অনুপমের মামা আশ্চর্য হয়ে আলােচ্য উক্তিটি করেন। বিয়ের পূর্বমুহূর্তে অনুপমের মামা কনের পরিহিত সকল গয়না পরখ করে দেখতে চান। তার এ অসংগত প্রস্তাব শম্ভুনাথ সেনের আত্মমর্যাদাকে ক্ষুন্ন করে। তাই কৌশলে বরযাত্রীদের খাইয়ে দিয়ে তাদের তিনি বিদায় জানান। এরূপ আচরণে অনুপমের মামা আশ্চর্য হয়ে মন্তব্যটি করেন।

১৭. আমি তাে চমকিয়া উঠিলাম’- কথাটি বুঝিয়ে লেখাে।
উত্তর: আলােচ্য কথাটির মাধ্যমে কল্যাণীর সুমধুর কণ্ঠ শুনে অনুপমের চমকে ওঠা ভাবকে বােঝানাে হয়েছে। কানপুর স্টেশনে অনুপম একটি নারীকণ্ঠ শুনে মুগ্ধ হয়ে যায়। তারপর থেকে অনুপমের হৃদয়পটে সেই কণ্ঠস্বরটি বাজতে থাকে। পরে যখন অনুপম গাড়িতে জায়গা পাচ্ছিল না, এমন সময় সেই মেয়েটি অনুপমের মাকে লক্ষ করে বলে, তাদের গাড়িতে জায়গা আছে এবং সেখানে গিয়ে বসতে। আর এভাবেই সেই কণ্ঠটি আবার শুনে অনুপম চমকে ওঠে। এখানে মূলত, কল্যাণীর আশ্চর্যসুন্দর কণ্ঠস্বর শুনে বিরহী অনুপমের একটি মানসিক অবস্থাকে বােঝানাে হয়েছে।

১৮. এসব কথায় আমার সম্পূর্ণ অনধিকার’- কোন প্রসঙ্গে কেন বলা হয়েছে?
উত্তর: অপুপমের যৌতুকলােভী মামা যখন কনের সব গহনা যাচাই করতে চাইলেন তখন কনের বাবা অনুপমের মতামত জানতে চাইলেন তখন কনের বাবা অনুপমের মতামত জানতে চাইলে অনুপম এ কথাটি বলেন। অনুপমের বিয়ের লগ্ন উপস্থিত হলে তার লােভী মামা কল্যাণীর সমস্ত গয়না পরখ করার জন্য স্যাকরাকে ডেকে নিয়ে আসেন। তখন কনের বাবা শম্ভুনাথ সেন অনুপমের মতামত জানতে চান। কিন্তু অনুপমের ব্যক্তিত্বের দৃঢ়তার অভাবের কারণে সে তার মামার বিরুদ্ধে কিছু বলতে পারে না। তাই মামার অন্যায় আবদারেও চুপ করে থাকে এবং বলে এসব ব্যাপারে কথা বলার অধিকার তার নেই।

১৯. প্রমাণ হইয়া গেছে আমি কেহই নই’- ব্যাখ্যা করাে।
উত্তর: আলােচ্য উক্তিটির মধ্যে অনুপমের ব্যক্তিত্বহীনতার দিকটি প্রকাশ পেয়েছে। অনুপম শিক্ষিত যুবক হয়েও ব্যক্তিত্ববিবর্জিত পরিবারতন্ত্রের কাছে অসহায় পুতুল। শম্ভুনাথ বাবুর কাছে একথা প্রমাণিত হওয়ায় বিয়ে ভেঙে দেওয়ার সময় অনুপমের সাথে তিনি একটি কথা বলাও প্রয়ােজন মনে করেননি। তাই অনুপম নিজের অবস্থানটি বােঝাতে গিয়ে এই অভিমতটি ব্যক্ত করে যে, ‘প্রমাণ হইয়া গেছে আমি কেহই নই।’

২০. বাবাজি একবার এইদিকে আসতে হচ্ছে’- কে, কাকে বলেছে? ব্যাখ্যা করাে।
উত্তর: বিয়ের আগেই কনের স্বর্ণ যাচাই করে দেখা প্রসঙ্গে ডা, শম্ভুনাথ অনুপমকে উদ্দেশ্য করে আলােচ্য কথাটি বলেছিলেন। অনুপমের বিয়ের অনুষ্ঠানে কনেকে যৌতুক হিসেবে দেওয়া স্বর্ণলঙ্কারগুলাে খাটি কি না তা যাচাই করতে চায় অনুপমের মামা। কনের পিতা শম্ভুনাথকে তিনি স্বর্ণগুলাে নিয়ে আসতে বললে হবু বর অনুপমের ব্যক্তিত্ব ও মানসিকতা অনুধাবন করার মানসে শম্ভুনাথ অনুপমকে বলেছিলেন, ‘বাবাজি একবার এইদিক আসতে হচ্ছে।’ ন্তুি অনুপম মামার অনুমতি ছাড়া এক পাও নড়তে চায়নি তার ব্যক্তিত্বহীনতার কারণে।

২১. শম্ভুনাথ বাবু অনুপমের সাথে মেয়ের বিয়ে দিলেন না কেন?
উত্তর: বিয়ের দিনে অনুপমের মামা যৌতুক নিয়ে হীন মানসিকতা দেখালেও অনুপম তার কোনাে প্রতিবাদ করেনি বলে শম্ভুনাথ সেন অনুপমের সঙ্গে মেয়ে বিয়ে দিলেন না। অনুপমের যৌতুকলােভী মামা মেয়ের বিয়েতে শম্ভুনাথ সেনের দেয়া স্বর্ণালঙ্কার সেকরা দিয়ে যাচাই করে। তার এ হীন মানসিকতা শম্ভুনাথের ব্যক্তিমর্যাদা ভূলুণ্ঠিত করে। অন্যদিকে, মামার এ আচরণে অনুপমের নির্বিকার থাকা তার পৌরুষহীন ব্যক্তিত্বরহিত চরিত্রকেই সুস্পষ্ট করে তােলে। আত্মমর্যাদাসম্পন্ন শম্ভুনাথ সেন স্বাভাবিকভাবেই এমন নীচ পরিবারে মেয়ের বিয়ে দিতে অস্বীকৃতি জানান।

ডাউনলোড পিডিএফ

আশাকরি আমাদের আজকের আর্টিকেল টি আপনাদের ভালো লেগেছে। শিক্ষা, পাঠ্যপুস্তক, গল্পের বই সহ যে কোন পিডিএফ ডাউনলোড করতে আমাদের সাথেই থাকুন। ভালো থাকবেন সবাই, ধন্যবাদ।

এইচএসসি ২০২২ সাজেশন