(PDF উত্তরসহ) তোলপাড় গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন

তোলপাড় গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন 

তোলপাড় গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন: মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। এই যুদ্ধে পাকিস্তানিদের অত্যাচারের মাত্রা অনুধাবন করে একজন কিশোর কীভাবে তাদের প্রতিরোধ করার জন্য সংকল্পবদ্ধ হয়— শওকত ওসমানের ‘তোলপাড়’ গল্পে তাই ব্যক্ত হয়েছে।

গ্রামের ছেলে সাবু বাড়ি থেকে বেরিয়ে সামনের সদর সড়কে শহর থেকে পলায়নপর হাজার হাজার মানুষ দেখে স্তম্ভিত হয়। সে অত্যাচারিত ও -ক্লান্ত মানুষদের মুড়ি খাইয়ে ও পানি পান করিয়ে সান্ত্বনা খোঁজে।

সে দেখতে পায়, নারী, শিশু, বৃদ্ধ নির্বিশেষে সবাই শহর থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে যাচ্ছে। পুরুষদের পাকিস্তানি সেনারা হত্যা করেছে বলে তারা সংবাদ পায়। পুত্রবধূ ও শিশু নাতি-নাতনিদের নিয়ে পলায়নপর এক বৃদ্ধের কাছ থেকে জানা গেল, বুড়োর তিন ছেলেকেই তার সামনে পাঞ্জাবি সেনারা গুলি করে মেরেছে।

মানুষের প্রতি হানাদার বাহিনীর এই নিষ্ঠুরতা অনুভব করে সাবু ক্ষুব্ধ হয়। শহরত্যাগী মানুষের অসহায়ত্ব ও দুঃখ-কষ্ট দেখে তার মন বেদনায় সিক্ত হয়ে ওঠে। পাকিস্তানি সেনাদের প্রতি তার ঘৃণা বাড়তে থাকে। তাদের মোকাবিলা করার জন্য তার কিশোর মন চঞ্চল হয়ে ওঠে।


তোলপাড় গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন

সৃজনশীল ০১: ভদ্রলোকের গাড়িটি নতুন। সাদা রঙের টয়োটা করোলা। …ভদ্রলোক গাড়ির দরজা খুললেন। ছেলেটি শীতল কণ্ঠে বলল, গাড়িতে উঠবেন না। আপনার গাড়িটি আমাদের দরকার। চিৎকার-চেঁচামেচি কিছু করবেন না।… ছেলেটি বলল, আমরা মুক্তিযোদ্ধার একটি গেরিলা ইউনিট, কিছুক্ষণের ভেতর ঢাকা শহরে অপারেশন চালাব। আপনার গাড়িটা দরকার। ভদ্রলোক চাবি তুলে দিলেন। তেল নেই। আপনাদের তেল নিতে হবে। তেল কিনবার টাকা আছে তো? টাকা না থাকলে আমার কাছ থেকে নিতে পারেন।

ক. সমস্ত কাফেলা কেমন ছিল?
খ. সাবু কল্পনায় সিপাইদের লাথি মেরে ফুটবলের মতো গড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে কেন?
গ. উদ্দীপকের ভদ্রলোকটির সঙ্গে ‘তোলপাড়’ গল্পের কার মিল রয়েছে?
ঘ. উদ্দীপকটি আলোচ্য গল্পের একটি বিষয়কে নির্দেশ করে মাত্র— মন্তব্যটির যৌক্তিকতা বিচার কর।

১ নং প্রশ্নের উত্তর

ক. সমস্ত কাফেলা নীরব ছিল।

খ. এদেশের অসংখ্য মানুষকে নির্যাতনে জর্জরিত করছিল বলেই সাবু কল্পনায় পাকিস্তানি সিপাইদের ফুটবলের মতো লাথি মেরে গড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

১৯৭১ সালে এ দেশের অসংখ্য মানুষের ওপর পাকিস্তানি সেনাদের ব্যাপক অত্যাচার দেখে সাবু প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠে। সে কল্পনার চোখে দেখতে থাকে তার সামনে পাকিস্তানি সিপাই; আর সে তাদেরকে যেন ফুটবলের মতো লাথি দিয়ে দিয়ে গড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এখানে একজন দেশপ্রেমিক কিশোরের প্রতিবাদী চেতনা প্রকাশ পেয়েছে।

গ. উদ্দীপকের ভ্রদলোকটির সঙ্গে ‘তোলপাড়’ গল্পের সাবুর মিল রয়েছে।

বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে সর্বস্তরের মানুষ। কেউ সরাসরি অংশগ্রহণ করে, আবার কেউ পরোক্ষভাবে দেশকে শত্রুমুক্ত করতে কাজ করে। তারা সবাই সম্মিলিতভাবে শত্রু হননে কাজ করে।

উদ্দীপকে এক ভদ্রলোকের কথা বলা হয়েছে, যার গাড়িটি নতুন। মুক্তিযোদ্ধাদের একটি গেরিলা ইউনিট অপারেশনের জন্য তার কাছ থেকে গাড়িটি চাইলে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের গাড়িটি দিয়ে দেন। শুধু তাই নয়, তিনি গাড়িতে তেল ভরার জন্য টাকাও দিতে চান। তার এই সাহায্যপ্রবণ মানসিকতা ‘তোলপাড়’ গল্পের সাবুর কথা মনে করিয়ে দেয়। সে তার মায়ের মুড়ি ভাজা আর পানি দিয়ে মানুষকে সাহায্য করে। শহর থেকে পাকিস্তানি মিলিটারির আক্রমণে যারা প্রাণ ভয়ে পালাতে থাকে তাদের সে বিনামূল্যে মুড়ি ও পানি খাওয়ায়।

তাদের বোঝা বয়ে দেয়। তাই বলা যায় যে, দেশপ্রেম ও সাহায্যকারী মনোভাবের দিক থেকে উদ্দীপকের ভদ্রলোকটির সঙ্গে ‘তোলপাড়’ গল্পের সাবুর মিল রয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকটি আলোচ্য গল্পের একটি বিষয়কে নির্দেশ করে মাত্র- মন্তব্যটি যৌক্তিক।

১৯৭১ সালে পাকিস্তানিদের অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হয় বাংলার মানুষ। এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে তারা প্রতিরোধও গড়ে তোলে। দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করে বাংলার মানুষ স্বাধীনতা অর্জন করে।

উদ্দীপকে মুক্তিযুদ্ধের সময়ের একটি ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে। যেখানে একজন সাধারণ মানুষ দেশের স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করেন। তিনি তার গাড়িটি মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যবহার করতে দেন গেরিলা আক্রমণের জন্য। তার এই সাহায্যকারী মনোভাবের সঙ্গে ‘তোলপাড়’ গল্পের সাবু ও তার মা জৈতুন বিবির মনোভাব সাদৃশ্যপূর্ণ। তারাও মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাদের হাত থেকে বাঁচতে পালিয়ে গ্রামের দিকে আসা মানুষদের সাহায্য করে। তারা সেই মানুষগুলোকে পানি পান করায়, মুড়ি খেতে দেয়, তাদের বোঝা বইয়ে দেয়।

উদ্দীপক ও ‘তোলপাড়’ গল্প উভয় জায়গায় মুক্তিযুদ্ধের সময় সাধারণ মানুষের সাহায্যকারী মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে। কিন্তু এ বিষয়টি ছাড়াও আলোচ্য গল্পে পাকিস্তানিদের নির্যাতন, মানুষের প্রাণভয়ে ছুটতে থাকা, সাবুর পাকিস্তানিদের প্রতি তীব্র ঘৃণা ইত্যাদি প্রকাশ পেয়েছে। কিন্তু এসব বিষয় উদ্দীপকে প্রকাশ পায়নি। তাই বলা যায় যে, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।

নিজে করো,

সৃজনশীল ০২: কিন্তু এবার মিলিটারি আসে জিপে করে। গুলি ছুড়তে ছুড়তে। বুটের শব্দ যেন চড়চড় শব্দে ফুটছিল। যেন যেখানে পা পড়ছে সেই মাটি ফেটে চৌচির হয়ে ফুটছে। ও দূরে দাঁড়িয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। বড় সড়কের মাঝ বরাবর মিলিটারির জিপ থেকে ওরা ঝপঝপিয়ে নামে। ও ওদের বাজারের দিকে ছুটে যেতে দেখে। ও ধানগাছের আড়ালে লম্বা হয়ে শুয়ে থাকে। একটু পর পর মাথা ওঠায় । কোন দিকে গেল লোকগুলো? পরক্ষণে ভেসে আসে আর্তনাদ। একটু পর বাজারের চালাগুলো দাউদাউ পুড়তে থাকে। ও আতঙ্কে ধানখেতের কাদায় মিশে যায়। অবাক কাণ্ড! ও বুঝতে পারে ওর মাথার মধ্য দিয়ে দ্রুত অনেক কিছু পার হয়ে যাচ্ছে। মিলিটারি চলে গেলে ও ছুটে বাজারের সামনে এসে দাঁড়ায়। কেউ কেউ হয় আগুনে পুড়ে, নয় গুলি খেয়ে মরেছে।

ক. প্রৌঢ় নারীর বয়স কত?
খ. সাবু কেন টাকা নিতে চাইল না? ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকে ‘তোলপাড়’ গল্পের কোন দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে ‘তোলপাড়’ গল্পের একটি দিকের প্রতিফলন ঘটেছে বটে তবে গল্পের সামগ্রিকতা আরও ব্যাপক।”- বিশ্লেষণ কর।

সৃজনশীল ০৩:দুমুঠো চাল মাটির কলসিতে জমিয়ে রাখে রাহেলা বানু। রাতে কোনো মুক্তিযোদ্ধা এলে তার জন্য ভাত রান্না করবে। দুই বোন শুকনো লাকড়ি কুড়িয়ে এনে রান্নাঘরে জমিয়ে রাখে। যদি লাকড়ির দরকার হয় তখন কী দিয়ে ভাত রান্না করবে মা? দুই বোন অধীর অপেক্ষায় থাকে।

ক. সাবু শহরফেরত মানুষদের কী খাওয়াচ্ছে?
খ. “তাহলে শহরেও গরিব আছে।”- বুঝিয়ে লেখ।
গ. উদ্দীপকের রাহেলা বানু ‘তোলপাড়’ গল্পের কোন চরিত্রের প্রতিনিধিত্ব করেছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকের দুই বোন এবং ‘তোলপাড়’ গল্পের সাবু প্রত্যেকেই মায়ের আদেশ পালন করে জাতির সেবা করছে।”— মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।

সৃজনশীল ০৪:পুলক রাতে ঘুমিয়ে ছিল। হঠাৎ স্বপ্নে দেখে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সে হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছে। প্রবল আক্রোশে পুলক বর্বর হানাদারদের ঘায়েল করছে। তার গুলিতে ধরাশায়ী হচ্ছে এক একটি শত্রু। এরপর ঘুম ভেঙে গেল তার। বাস্তব জগতে ফিরে সে পাকিস্তানিদের হত্যা করার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হলো।

ক. কিসে সকলেই অস্থির ছিল?
খ. ‘অসীম আক্রোশে তার রক্ত টগবগ করে ফুটতে থাকে’- কেন?
গ. উদ্দীপক ও গল্পের আলোকে পুলক ও সাবুর স্বপ্নের সাদৃশ্য নির্ণয় কর।
ঘ. প্রবল দেশপ্রেম এবং শত্রুহননের দৃঢ় প্রতিজ্ঞা নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন— উদ্দীপক ও ‘তোলপাড়’ গল্পের আলোকে বিশ্লেষণ কর।

সৃজনশীল ০৫:মুক্তিযোদ্ধা কাকন বিবি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন মুক্তিযোদ্ধাদের খাবার পৌঁছে দিয়েছেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অস্ত্র ও গোলাবারুদ মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে দিয়ে সাহায্য করেছেন। পাকিস্তানি সৈন্যদের তিনি নিজের কোলের সন্তানকে হত্যা করতে দেখেও পিছপা হননি। তার এই অসামান্য অবদানের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধার পদক পান। এই বীরাঙ্গনা নারীর অবদান বাংলাদেশের মানচিত্রে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

ক. সাবুর বড় লজ্জা লাগে কেন?
খ. ‘আমার মাকে আপনে চেনেন না’ এই কথা দ্বারা কী বুঝানো হয়েছে?
গ. উদ্দীপকের কাকন বিবির চরিত্রের সাথে সাবুর মায়ের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের কোন দিকটির মিল পাওয়া যায়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “জৈতুন বিবির মতো অসংখ্য নারীর আত্মত্যাগ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ফলক উন্মোচিত করেছে”- কথাটি ‘তোলপাড়’ গল্পের আলোকে আলোচনা কর।

সৃজনশীল উত্তর


আশাকরি আমাদের আজকের আর্টিকেল টি আপনাদের ভালো লেগেছে। শিক্ষা, পাঠ্যপুস্তক, গল্পের বই সহ যে কোন পিডিএফ ডাউনলোড করতে আমাদের সাথেই থাকুন। ভালো থাকবেন সবাই, ধন্যবাদ। এছাড়াও আমাদের কোন আপডেট মিস না করতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে আমাদের সাথে ফেসবুকে কানক্ট থাকতে পারেন।

About মেরাজুল ইসলাম

আমি মেরাজুল ইসলাম, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী পাশাপাশি একজন ব্লগার। এডুকেশন এর প্রতি ভালোবাসাও অনলাইল শিক্ষার পরিসর বাড়ানোর জন্য এডুকেশন ব্লগের পথচলা। ব্লগিং এর পাশাপাশি আমি ওয়েবসাইট ডিজাইন, কন্টেন্ট রাইটিং, কাস্টমাইজ সহ ওয়েব রিলেটেড সকল কাজ করি।

View all posts by মেরাজুল ইসলাম →