প্রবন্ধ রচনা: অধ্যবসায় রচনা

অধ্যবসায় রচনা

অধ্যবসায় শব্দটি জীবনের যে কোনও পরিস্থিতিতে ব্যবহার করা যেতে পারে। অধ্যবসায় রচনা টি পড়লে আপনাদের কাছে পুরো বিষয় টি ক্লিয়ার হয়ে যাবে। অবিচল থাকার জন্য আপনার অবশ্যই একটি স্পষ্ট উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য থাকতে হবে যা একটি সাধারণ দীর্ঘ সময়ের মধ্যে প্রচেষ্টা বা উত্সর্গকে ন্যায্য করে। এই কারণেই অধ্যবসায়কে অনেক পরিস্থিতিতে সাফল্যের মূল চাবিকাঠি বলা হয়, যদিও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হ’ল কখন অধ্যবসায় করতে হবে এবং কখন না করা উচিত তা জানা উচিত।


নবম-দশম শ্রেনির ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য অধ্যবসায় রচনা

অধ্যবসায় রচনা

অধ্যবসায় রচনা

ভূমিকা

যে-কোনো লক্ষ্য অর্জনের জন্যে নিরবচ্ছিন্ন ও একনিষ্ঠ প্রচেষ্টার নাম অধ্যবসায়। অবিচল সংকল্প নিয়ে, সকল প্রতিকূলতা অতিক্রম করে, অপরিসীম ধৈর্যের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সাফল্য লাভ করা চরিত্রের এই গুণটিই অধ্যবসায়। সেইসঙ্গে উদ্যম, উদ্যোগ, নিরস্তর কর্মপ্রচেষ্টা আর আন্তরিক কঠোর পরিশ্রম অধ্যবসায়কে দেয় পূর্ণতা।

অধ্যবসায়ের গুরুত্ব

মানবসভ্যতার বিকাশের অন্যতম চালিকাশক্তি অধ্যবসায়। আদিম মানুষ মাটিতে, পানিতে, আকাশে বৈরীশক্তিকে মোকাবেলা করে নিজের অস্তিত্ব রক্ষায় সফল হয়েছে অধ্যবসায়ের মাধ্যমে। অনাবাদি জমি আবাদ করে ফসল ফলানো, জলাভূমি ভরাট করে নগর পত্তন, মরুভূমিকে মরূদ্যানে রূপান্তর— সবই অধ্যবসায়ের দান। আদিম গুহাচারী মানুষ আজ মহাশূন্যে পাড়ি জমিয়েছে। জ্ঞান-বিজ্ঞান, সাহিত্য-দর্শন, চিকিৎসা-শিল্পকলা ইত্যাদি প্রতিটি শাখায় মানুষের যে অভাবনীয় অগ্রগতি তার মূলে রয়েছে নিরন্তর সাধনা, উদ্যম, উদ্যোগ আর নিরবচ্ছিন্ন কর্মপ্রচেষ্টা। বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থেও অধ্যবসায়কে একটি চারিত্রিক গুণের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।

ব্যক্তিজীবনে অধ্যবসায়

জীবনের পথ পরিক্রমায় নানা সমস্যা মোকাবেলার উপায় অধ্যবসায়। অধ্যবসায়ী ব্যক্তির পক্ষেই জীবনসংগ্রামে জয়ী হওয়া সম্ভব। যে অধ্যবসায়ী নয়, তার দ্বারা কোনো মহৎ কাজ সম্ভব নয়। মানবজীবনে অধ্যবসায়ের এ গুণটি চমৎকারভাবে প্রকাশিত হয়েছে নিম্নলিখিত কাব্যপঙ্ক্তিতে : ‘কেন পান্থ ক্ষান্ত হও হেরি দীর্ঘ পথ? উদ্যম বিহনে কার পুরে মনোরথ?’ এ উদ্যম অধ্যবসায়েরই নামান্তর মাত্র।

প্রতিভা ও অধ্যবসায়

কেউ কেউ মনে করেন, প্রতিভাই সফলতার মূল নিয়ামক। এ ধারণা পুরোপুরি গ্রহণযোগ্য নয়। অধ্যবসায় ছাড়া সুপ্ত প্রতিভা বিকশিত হয় না। প্রতিভাবানদের জীবনেও আত্মপ্রতিষ্ঠা আসে অধ্যবসায়ের মাধ্যমে।

ছাত্রজীবনে অধ্যবসায়

ছাত্রজীবন ভবিষ্যৎ জীবন রচনার অনুশীলনক্ষেত্র। তাই অধ্যবসায় ছাত্রজীবনের সবক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। অধ্যয়ন এবং অধ্যবসায়ের মধ্যে রয়েছে অবিচ্ছেদ্য সংযোগ। বারবার পাঠ অনুশীলনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীকে জ্ঞান আহরণ করতে হয়। ছাত্রজীবনে অধ্যবসায়কে সর্বাধিক গুরুত্ব দিলে রচিত হয় জীবনের সাফল্যের বুনিয়াদ। অধ্যবসায় না থাকলে কেবল মেধা কাজে লাগে না। অনেক মেধাবী বিদ্যার্থী যথেষ্ট প্রয়াসের অভাবে জীবনে সফলতা অর্জনে ব্যর্থ হয়।

মনীষীদের জীবনে অধ্যবসায়

জগতে যাঁরা মানুষের শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার আদর্শ হয়েছেন তাঁদের প্রত্যেকেই ছিলেন অধ্যবসায়ী। মহাকবি ফেরদৌসীর অমর মহাকাব্য ‘শাহানামা’ দীর্ঘ তিরিশ বছরের কাব্যপ্রয়াস। জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাশ বিশ বছরের সাধনায় রচনা করেন ‘বাংলা ভাষার অভিধান’। কোনো প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা ছাড়াই একক প্রচেষ্টায় প্রায় দু হাজার প্রাচীন পুঁথি সংগ্রহ করেন খ্যাতনামা সংগ্রাহক আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ। স্কটল্যান্ডের রাজা রবার্ট ব্রুস পরপর ছয়বার ইংরেজদের সাথে যুদ্ধে পরাজিত হয়েও হাল ছাড়েননি। শেষপর্যন্ত তিনি জয়ী হয়েছিলেন। বিশ্ববিশ্রুত বিজ্ঞানী নিউটনের অকুণ্ঠ স্বীকৃতি : বিজ্ঞানে তাঁর অবদানের মূলে আছে বহু বছরের একনিষ্ঠ সাধনা ও নিরবচ্ছিন্ন পরিশ্রম।

জাতীয় জীবনে অধ্যবসায়

সামগ্রিকভাবে জাতির সগৌরব প্রতিষ্ঠার জন্যে প্রত্যেক নাগরিকেরই অধ্যবসায়ী হওয়া প্রয়োজন। জাতীয় জীবনে অধ্যবসায়ের প্রতিষ্ঠা করতে হলে ব্যক্তিজীবনে তার অনুশীলন প্রয়োজন। এদিক থেকে জাতির বৃহত্তর কল্যাণে অধ্যবসায়ী ব্যক্তির গুরুত্ব অনেকখানি।

উপসংহার

জীবনে সাফল্য লাভ করে জাতিকে গৌরবান্বিত করার ক্ষেত্রে অধ্যবসায়ের বিকল্প নেই। লক্ষ্যে পৌঁছানোর উদ্যমী নিরন্তর প্রচেষ্টা থাকলে কোনো প্রতিকূলতাই জাতিকে নিরস্ত করতে পারে না। অধ্যবসায়ী মানুষ ধৈর্য ও অবিচলতার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে একসময়-না-একসময় সাফল্য ছিনিয়ে আনে। প্রতিটি সফল জীবন এক অর্থে অধ্যবসায়েরই চালচিত্র। তাই ছোটবেলা থেকে প্রত্যেকের এই বিশেষ গুণের অধিকারী হওয়া।


একাদশ-দ্বাদশ শ্রেনির ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য অধ্যবসায় রচনা

অধ্যবসায় রচনা

ভূমিকা

অধ্যবসায় অর্থ হচ্ছে ধৈর্যধারণ করা। অর্থাৎ কোনো কাজে সাফল্য অর্জনের জন্য চেষ্টা এবং ধৈর্য ধরা। জীবনের সাফল্য অর্জন করার জন্য অধ্যবসায় অপরিহার্য। অধ্যাবসায় ছাড়া ব্যক্তি জীবন কিংবা জাতীয় জীবন কোন জীবনে সফলতা পাওয়া সম্ভব নয়। জীবনে বাধা-বিপত্তি মোকাবেলা করার জন্য প্রয়োজন হয় অধ্যবসায়।

অধ্যবসায় অর্থ কি?

অর্থ শব্দের অর্থ অবিরাম চেষ্টা করা। অর্থাৎ আপনি যদি কোন কাজ করতে চান তাহলে সেই কাজ সাফল্য পাওয়ার জন্য অবিরাম চেষ্টা করতে হবে। যতক্ষণ না আপনি সফলতা পাচ্ছেন ততক্ষণ চেষ্টা করে যেতে হবে। এর নাম অধ্যবসায়।  অর্থাৎ ধৈর্য ধারণ করে সফলতার দিকে এগিয়ে যাওয়া।  অধ্যবসায় হলাে মানসিক বল। যার মানসিক বল যত বেশি, সে তত বেশি অধ্যবসায়ী। পরাজয় কখনও অধ্যবসায়ীর পথে বাধা হয়ে আসতে পারে না।

মানসিক বল বেশি থাকলে শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি পায়। অর্থাৎ শরীরের বিভিন্ন রোগ ব্যাধি থেকে মুক্ত থাকা যায়। তেমনই আপনি যদি এমনটা ভাবেন, আপনি একটি কাজ করবেেই। তাহলে আপনি একসময় না একসময় সেই কাজ করতে পারবেন। অর্থাৎ অধ্যাবসায়ের সাথে মানসিক শক্তি এর সম্পর্ক রয়েছে।

কবি বলেছেন,

পারিব না এ কথাটি বলিও না আর,
একবার না পারিলে দেখ শতবার।’

অধ্যবসায় চর্চা

একজন মানুষের মাঝে সকল গুণ থাকবে না। এটাই স্বাভাবিক। কেউ অনেক কষ্ট সহ্য করতে পারে। আবার কেউ পারে না। এটাই বাস্তবতা। এজন্য প্রয়োজন অধ্যবসায় চর্চা। মানুষ ইচ্ছা করলে অনেক কিছুই করতে পারবে। এজন্য প্রয়োজন সঠিক পদক্ষেপ। জীবনে বাধা বিপত্তি আসবে। এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এখানে হতাশ হয়ে গেলে জীবনের উত্থান সম্ভব নয়। জীবনের এই বাধা-বিপত্তি উত্তরের জন্য প্রয়োজন অধ্যবসায়। যেহেতু অধ্যবসায় একটি গুণ, তাই সবার মাঝে এই গুণ নাও থাকতে পারে। এজন্য প্রয়োজন অধ্যবসায় চর্চা। ছোটবেলা থেকে পরিবার থেকে অধ্যবসায় চর্চা প্রয়োজন। তেমনি বিদ্যালয় অধ্যবসায় চর্চা এর ভালো উৎস। এজন্য প্রয়োজন প্রতিটি বিদ্যালয়ে একজন করে মনোবিজ্ঞানী নিয়োগ দেওয়া। কারণ তারা শিক্ষার্থীদের মনের ভাব বুঝে তাদের অধ্যবসায় চর্চায় সাহায্য করতে পারবে।

অধ্যবসায়ের স্বরূপ

আমরা প্রকৃতির পানে একটু তাকালেই অধ্যবসায় সম্পর্কে বুঝতে পারব। এই যে বৃক্ষ একদিনে ছোট থেকে বড় হয়নি। এক দিনেই আপনাকে ফল দিবে না। বৃক্ষ প্রথমে অঙ্কুরোদ্গম হয়। এরপর ধীরে ধীরে বিভিন্ন প্রতিকূল অবস্থায় সে বড় হয়। এর মাঝে সে অনেক বাধা-বিপত্তি পাড়ায়। যেমন অনেক সময় ঝড় বাতাসে বৃক্ষ ভেঙে যেতে পারে। কিন্তু তার মনোবল ভাঙ্গে না। সে আবার উঠে দাঁড়ায়। সে আবার আপন শক্তিতে বড় হতে থাকে এবং একসময় সে পরিপূর্ণতা লাভ করে। তাহলে আমরা কেন পারব না ?এজন্য প্রয়োজন অধ্যবসায়। বৃক্ষ যেমন অধ্যবসায় নিয়ে বেড়ে উঠেছে, আমাদের জীবনেও প্রয়োজন অধ্যাবসায়। তাহলে আমরাও পারবো এগিয়ে যেতে।

‘কেন পান্থ ক্ষান্ত হও, হেরি দীর্ঘ পথ
উদ্যম বিহনে কার পুরে মনােরথ ?

অধ্যবসায়ের প্রয়োজনীয়তা

আল্লাহ বলেছেন,” আল্লাহ সে জাতির ভাগ্য পরিবর্তন করেন না, যে জাতি নিজের ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা করে না। ”হাদিসে বলা আছে, ”যে চেষ্টা করে সেই পায়” .এর মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি, মানবজীবনে অধ্যবসায়ের বিকল্প কিছু নেই। এমনভাবে প্রতিটি ধর্মগ্রন্থে অধ্যবসায়ের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বলা আছে। কারণ অধ্যাবসায় ছাড়া মানুষ সফলতার দিকে যেতে পারে না। সফলতার প্রথম ধাপ এবং শেষ ধাপ হচ্ছে এই অধ্যবসায়। অধ্যবসায়ের ফলে মানুষ যুগে যুগে জয় করেছে বিভিন্ন অজয় কে। যেমন মহাসাগর এর অতলগর্ভ, পর্বত শৃঙ্গ। আর বর্তমানে মহাকাশেও মানুষের পদচারণা। সুতরাং মানব জীবন, জাতীয় জীবন সকল ক্ষেত্রেই অধ্যবসায়ের প্রয়োজনীয়তা ব্যাপক।

মনে রাখতে হবে , Failure is the pillar of success. ব্যর্থতাই সফলতার স্তম্ভ। ব্যর্থতা থেকেই নতুন গন্ত্যেব্যের শুরু, আর সফলতার মাধ্যমে সে গন্ত্যেব্য সমাপ্ত হয়। অধ্যবসায়ী ব্যক্তির কাছে ব্যর্থতা বলে কোনো শব্দ নেই। অধ্যবসায় দ্বারা মানুষ অসাধ্যকে সাধন করে। আত্মপ্রতিষ্ঠার সর্বোকৃষ্ট পন্থা অধ্যবসায়। জ্ঞানে, বিজ্ঞানে, নৈপুণ্যে, দক্ষতায়, শিল্পে, সাহিত্যে, সঙ্গীতে , আবিষ্কারে, উদ্ভাবনে পৃথিবীর এই উন্নতি ও সাফল্যের মূলে রয়েছে অনেক বছরের নিরলস অধ্যবসায়।

ছাত্রজীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্ব

ছাত্রজীবন হচ্ছে মোক্ষম সময় জীবনে ভালো গুণগুলো অর্জন করার জন্য। এ সময়ে আপনার পারিবারিক চিন্তা, ক্যারিয়ার চিন্তা, অর্থনৈতিক চিন্তা, রাজনৈতিক চিন্তা ইত্যাদি খুব কম থাকে। তাই এ সময়ে যত বেশি পারা যায় ভালো গুণ অর্জন করা উচিত। এজন্য ছাত্রজীবনকে বলা হয় বীজ বপনের সময়। অর্থাৎ জীবনকে গঠন করার জন্য ছাত্রজীবন শ্রেষ্ঠ এবং উপযুক্ত সময়। তাহলে কেন আমরা ছাত্রজীবনে অধ্যবসায়ের মত গুরুত্বপূর্ণ গুণ অর্জন করব না ? অলস এবং পরিশ্রমী নয় এমন ছাত্রছাত্রী যত মেধাবী হোক না কেন সে সফলতা লাভ করতে পারে না। যেমন অনেক ক্ষেত্রে আমরা বলি তার মেধা আছে কিন্তু পড়ালেখা করে না। পড়ালেখা না করার কারণ হচ্ছে তার অধ্যবসায় নেই।

অন্যদিকে একজন ছাত্র -ছাত্রী স্বল্প মেধা সম্পন্ন হলেও তার চেষ্টার মাধ্যমে ভালো কিছু করতে পারে। যেমন একজন মেধাবী ছাত্রের একটি পড়া মুখস্থ হতে দুইবার পড়া লাগে। আর একজন স্বল্প মেধাবীর সেই বাক্যটি মুখস্থ হতে পাঁচবার করা লাগতে পারে। কিন্তু সে পারবে। হয়তো তার কিছুটা বেশি সময় লাগছে। এজন্য সে থেমে থাকবে না। তাই যে চেষ্টা করবে সে সফলতা পাবে। একবার অকৃতকার্য হলে হতাশ হয়ে হাল ছেড়ে দেওয়া বোকামী লক্ষণ। তাই ছাত্রজীবনে অধ্যবসায় নামক মহৎ গুণ অর্জন করে নিজেকে সফলতার দিকে এগিয়ে নিতে হবে। ছাত্র জীবন শেষ হলে যতই চেষ্টা করুন আপনি অধ্যবসায় চর্চা করতে পারবেন না। তখন অল্পেই ভেঙে পড়বেন। তাই ছাত্রজীবনে অধ্যবসায় নামক সোনার হরিণ কে নিজের জীবনের সাথে একাগ্র করে ফেলুন।

ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেছেন,

কোন কাজ ধরে যে উত্তম সেই জন
হউক সহস্র বিঘ্ন ছাড়ে না কখন।’

জাতীয় জীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্ব

ইতিমধ্যে আমরা বুঝতে পারলাম সকল ক্ষেত্রে অধ্যবসায় প্রয়োজনীয়। যখন কেউ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে থাকে, তখন সে যদি অধ্যবসায়ী না হয়, তাহলে রাষ্ট্রের ক্ষতি হতে পারে। যেমন একটি প্রজেক্ট করার সময় বিভিন্ন বাধা আসতে পারে। কিন্তু সেই বাঁধাগুলো পেরিয়ে তাকে প্রজেক্ট সম্পন্ন করতে হবে। কিন্তু সে যদি অধ্যবসায়ী না হয়, তাহলে পারবে না। এতে রাষ্ট্রের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে।

কোনাে একটি দেশের সকল নাগরিক যখন ব্যক্তিজীবনে অধ্যবসায়ী হয়ে উঠবে, তখন ঐ জাতির উন্নতি সম্ভব। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, সেসব দেশের নাগরিক গণ অধ্যবসায়ী। সেসব দেশগুলাের উন্নতির মূলমন্ত্র অধ্যবসায়। কেবলমাত্র অধ্যবসায়ের গুণেই এসব দেশ মানচিত্রে উন্নতির শীর্ষে।

প্রতিভা ও অধ্যবসায়

অনেকেই মনে করেন যার প্রতিভা বেশি সে সফলতা অর্জন করে। কিন্তু বিষয়টি এমন নয় ,বরং তার সফলতার পেছনে লুকিয়ে রয়েছে হাজারো পরিশ্রম ,আমরা শুধু মানুষের সফলতা দেখতে পাই। কিন্তু তার পেছনের অধ্যবসায় আমরা দেখি না। এজন্য অধ্যবসায় এর প্রয়োজনীয়তা আমরা অনুভব করতে পারি না। বিজ্ঞানী নিউটন বলেছিলেন, আমার আবিষ্কারের কারণ প্রতিভা নয়। বহু বছরের পরিশ্রম এবং চিন্তা এর ফলে আমি আবিষ্কারের রহস্য উদঘাটন করতে পেরেছি। অন্য এক বিজ্ঞানী ডাল্টন বলেছিলেন, বিভিন্ন লোক আমাকে প্রতিভাবান বলে। কিন্তু আমি পরিশ্রম ছাড়া কিছুই জানিনা। আমরা অনেক সময় বলি কারো বেশী মেধা কারো মেধা কম। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা সকলের মাঝে মেধা দিয়েছেন। এজন্য আমাদের পরিশ্রম করতে হবে।

পরিশ্রম করার মাঝে আমরা আমাদের সুপ্ত প্রতিভা ফুটিয়ে তুলতে পারব। লক্ষ্য করলে দেখবেন, প্রত্যেক মানুষের মাঝে কিছু প্রতিভা রয়েছে। সকল মানুষের মাঝে একই প্রতিভা নেই। কেউ কবিতা লিখতে পছন্দ করে, কেউ কবিতা আবৃতি করতে পছন্দ করে। দুজনের প্রতিভা কিন্তু একই নয়। আমাদের এই প্রতিভা গুলোকে খুজে বের করতে হবে এবং সফলতা অর্জন করার জন্য চেষ্টা করতে হতে হবে। সুতরাং আমরা বুঝতে পারি, প্রতিভা সফলতা অর্জন করার জন্য মুখ্য বিষয় নয়। বরং চেষ্টা এবং অধ্যবসায় এর ফলে আমরা নিজেকে সফলতার দিকে নিয়ে যেতে পারি।

ফরাসি দার্শনিক ভলতেয়ার বলেছিলেন, প্রতিভা বলে কিছু নেই। পরিশ্রম ও সাধনা করতে থাকো, তাহলে প্রতিভাকে অগ্রাহ্য করতে পারবে।

অধ্যবসায়ের উদাহরণ

জগতে যারা বড় শিল্পী সাহিত্যিক বৈজ্ঞানিক রয়েছে তারা সবাই ছিলেন অধ্যবসায়ী। কারণ একটি তথ্য প্রমাণ করতে যথেষ্ট অধ্যবসায় প্রয়োজন। মহাকবি ফেরদৌসী প্রায় 30 বছর ধরে মহাকাব্য শাহনামা রচনা করেছিলেন। আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ নিজের চেষ্টায়, দারিদ্রতার সঙ্গে লড়াই করে সংগ্রহ করেছেন প্রায় 2000 প্রাচীন পুথি। অথচ তার কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল না। আমরা প্রতিনিয়ত যে উদাহরণ পড়ি তা হচ্ছে মাকড়সার কাহিনী। কটি মাকড়সা ছয়বার কড়িকাঠে সুতা বাঁধবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হওয়ার পর সপ্তমবারে  সফল হয়।

এভাবে জগতে যারা ভালো কাজ করেছেন, তাঁরা সকলেই ছিলেন অধ্যাবসয়ী।  অধ্যাবসায় ছাড়া সফলতা লাভ করা সম্ভব নয়। হ্যাঁ শুধু অধ্যবসায় হলেই হবেনা। স্রষ্টার রহমতে প্রয়োজন হবে। সুতরাং স্রষ্টার রহমত ও অধ্যবসায় থাকলে অজয় কে জয় করা সম্ভব। পৃথিবীতে যত মনীষী দেখবেন তারা সকলেই ছিলেন অধ্যাবসয়ী। পৃথিবীতে যে যত বেশি অধ্যবসায় করতে পারবে, সে তত উচ্চশিখরে যেতে পারবে। আপনি খোঁজ নিয়ে দেখেন যে পরীক্ষায় ৯০ পেয়েছে, সে যে ৮০ পেয়েছে তার থেকে বেশি পড়ালেখা করেছে। সুতরাং অধ্যবসায় এর বিকল্প নেই। চারিদিকে যত সফলতা দেখবেন বুঝতে হবে এর পেছনে লুকিয়ে আছে অধ্যবসায়।

এজন্যই নেপোলিয়ন বোনাপার্ট বলেছেন, ‘Impossible is a word, which is only found in the dictionary of fools.’

‘ধৈর্য ধরো, ধৈর্য ধরো! বাঁধো বাঁধো বুক,
সংসারে সহস্র দুঃখ আসিবে আসুক।’

অধ্যবসায় এর পরিচর্চা না করার পরিণাম

বর্তমান সমাজে তরুণদের মাঝে অধ্যাবসায় নেই। এর কারনে আমরা প্রতিনিয়ত দেখতে পাই সুইসাইড নামক ভয়ানক ব্যাধি। দুঃখ হলেও সত্য যে এই ভয়ানক ব্যাধি দিনে দিনে বাড়ছে। তার মানে হচ্ছে দিনে দিনে অধ্যবসায় কমে যাচ্ছে। একটি পরীক্ষায় খারাপ করা মানেই সুইসাইড নয়। অথচ তার ভবিষ্যৎ আরো ভালো হতে পারতো। যদি সে অধ্যাবসায় করতে পারতো। আমাদের এর কারণ খুঁজে বের করতে হবে। আমাদেরকে এর প্রতিকার করতে হবে। অধ্যবসায় না থাকার কারণে শুধু একটি জীবন নয়, একটি দেশ বা রাষ্ট্র ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। যে দেশে অধ্যবসায় নাগরিক পাওয়া যায়না সে দেশ দুর্নীতির সেখানে শিখরে চলে যায়। অধ্যবসায় এর কোন বিকল্প নেই।

উপসংহার

‘মন্ত্রের সাধন কিংবা শরীর পাতন’

অধ্যাবসায় ছাড়া সহজ কোনো সাফল্য অর্জন করা সম্ভব নয়। আমাদের জীবনের সফলতা বিফলতা নির্ভর করে অধ্যবসায়ের উপর। তাই আমাদের সকলের উচিত অধ্যবসায়ের মত এই মহৎ গুণ নিজের জীবন ধারণ করা। সোনার কাঠির মত অধ্যবসায় কে অর্জন করা। অর্থাৎ অধ্যবসায়ই জীবন, জীবনই অধ্যবসায়।

আশাকরি অধ্যবসায় রচনা টি আমরা খুব সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করতে পেরেছি এবং আপনারা অধ্যবসায় রচনা টি বুঝতে পেরেছেন। এই অধ্যবসায় রচনা টি শুরুমাত্র এসএসসি বা এইচএসসি পরিক্ষার জন্য নয় সকল শ্রেণির অন্য অধ্যবসায় রচনা সমান ভাবে ইমপরট্যান্ট।

আমাদের পোস্ট ভালো লাগলে আমাদের সাথেই থাকুন। ভালো থাকবেন সবাই, ধন্যবাদ।

ssc suggestion 2022

About মেরাজুল ইসলাম

আমি মেরাজুল ইসলাম, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী পাশাপাশি একজন ব্লগার। এডুকেশন এর প্রতি ভালোবাসাও অনলাইল শিক্ষার পরিসর বাড়ানোর জন্য এডুকেশন ব্লগের পথচলা। ব্লগিং এর পাশাপাশি আমি ওয়েবসাইট ডিজাইন, কন্টেন্ট রাইটিং, কাস্টমাইজ সহ ওয়েব রিলেটেড সকল কাজ করি।

View all posts by মেরাজুল ইসলাম →