মরু-ভাস্কর প্রবন্ধের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন উত্তর

মরু-ভাস্কর প্রবন্ধের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন উত্তর

মরু-ভাস্কর প্রবন্ধের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন উত্তর: ‘মরু-ভাস্কর’ প্রবন্ধে লেখক মহানবি (স.)-এর জীবন ও জীবনাদর্শের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেছেন, যা আমাদের ধর্মীয় চেতনা ও নৈতিকতার বিকাশে অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত হতে পারে।

হযরত মুহাম্মদ (স.) ছিলেন সেই মহাপুরুষদের একজন, যিনি চরিত্রবান; মানবপ্রেমে, জীবপ্রেমে মহীয়ান। বিপদে ধৈর্যশীলতা, দারিদ্র্যে অচঞ্চলতা, শত্রুর প্রতি ক্ষমাশীলতার মহৎ দৃষ্টান্তে তাঁর জীবন সমুজ্জ্বল। অনেক মহাপুরুষের জীবন প্রকৃত তথ্যের চেয়ে কাল্পনিক নানা তথ্যে ভরা। কিন্তু হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর জীবনের যাবতীয় তথ্য সবই ঐতিহাসিক সত্য হিসেবে স্বীকৃত।


মরু-ভাস্কর প্রবন্ধের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন উত্তর

প্রশ্ন ১। “হযরতের চরিত্রে সংমিশ্রণ হয়েছিল কোমল আর কঠোরের।”— ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: হযরত মুহাম্মদ (স.) সত্যের সংগ্রামে ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে ছিলেন বজ্রের মতো কঠোর আর সবার সঙ্গে তাঁর আচরণ ছিল কুসুমের মতো কোমল জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত হযরত মুহাম্মদ (স.) অনাড়ম্বর ও সহজ-সরল জীবনযাপন করেছেন। জীবনের কোনো অবস্থায়ই তিনি অন্যায়কে প্রশ্রয় দেননি; অসত্যের সঙ্গে আপস করেননি; মিথ্যা বলেননি। সত্যের সংগ্রামে তিনি ছিলেন বজ্রের মতো কঠোর আর পর্বতের মতো অটল। অন্যদিকে সবার সঙ্গে ব্যবহারে কোমলতা ছিল তাঁর চরিত্রের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য। তিনি সবসময় হাসিমুখে কথা বলতেন। বন্ধু-বান্ধবদের জন্য তাঁর প্রীতির অন্ত ছিল না। বন্ধুবিয়োগে তিনি অশ্রুসিক্ত হতেন। এভাবেই “হযরতের চরিত্রে সংমিশ্রণ হয়েছিল কোমল আর কঠোরের।”

প্রশ্ন ২। “ভয় করছ কেন? আমি রাজা নই, কারও মুনিবও নই”- ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: “ভয় করছ কেন? আমি রাজা নই, কারও মুনিবও নই” – এ কথা বলেছেন মহানবি হযরত মুহাম্মদ (স.)। মহানবি হযরত মুহাম্মদ (স.) ছিলেন মানবতার গৌরব। ক্ষমা, উদারতা, ধৈর্য, সত্যবাদিতা ইত্যাদি মানবীয় গুণের আধার। মক্কা বিজয়ের পর তিনি একদিন সাফা পর্বতের পাদদেশে বসে বক্তৃতা করছিলেন। তখন একজন লোক তাঁর সামনে এসে ভয়ে কাঁপতে লাগল। মহানবি (স.) তাকে অভয় দেওয়ার জন্য এবং লোকটির মতো যারা মহানবি (স.)-কে ভয় পান তাদের তিনি প্রশ্নোত্ত কথাটি বলেন।

প্রশ্ন ৩। মুখস্ত না করে লিখে রাখাকে আরবের লোকেরা লজ্জার মনে করত কেন?
উত্তর: আরবের লোকদের স্মৃতিশক্তি অত্যন্ত প্রখর ছিল। তাই মুখস্ত না করে লিখে রাখাকে তারা লজ্জার মনে করত। আরবের লোকেদের স্মৃতিশক্তি অসাধারণ। তারা বিরাট বিরাট কাব্যগ্রন্থ সহজেই মুখস্থ করে ফেলত। মুখস্ত না করে কোনোকিছু লিখে রাখা তারা লজ্জার মনে করত। স্মৃতিশক্তি প্রখর হওয়ায় সাহাবিরা ও অন্যান্য হাদিসজ্ঞরা হাজার হাজার হাদিস মুখস্ত করে রাখত।

প্রশ্ন ৪। মহানবি হযরত মুহাম্মদ (স.)-কে সর্বশ্রেষ্ঠ মানব বলা হয় কেন?
উত্তর: মানবীয় গুণের অপূর্ব সমাবেশ ঘটেছিল মহানবি (স.) চরিত্রে। তাই তাঁকে সর্বশ্রেষ্ঠ মানব বলা হয়। পৃথিবীতে মানুষের জীবনে যাঁরা কল্যাণ এনেছেন, সত্য ও সুন্দরে ভরিয়ে তুলেছেন, তাঁদের মধ্যে মহানবি (স.) সর্বশ্রেষ্ঠ। মানবপ্রেমে, জীবপ্রেমে মহীয়ান। বিপদে ধৈর্যশীল, দারিদ্র্যে অচল, ক্ষমাশীল, কুসংস্কারমুক্ত, সাম্যবাদী চেতনা ইত্যাদি মহৎ দৃষ্টান্তে তাঁর জীবন সমুজ্জ্বল। তাঁর জীবনের প্রতিটি ঘটনা, ঘটনার প্রেক্ষিত সত্যের কষ্টিপাথরে ঘষে যাচাই করা হয়েছে।

প্রশ্ন ৫। “হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর জীবনযাপন ছিল অতি সাধারণ।” – ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: মহানবি হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর জীবনযাপন ছিল অতি সাধারণ তিনি কখনো বিলাসী জীবনযাপন করেননি। মহানবি (স.) ছিলেন মানবকল্যাণ সাধনে ব্রতী, শান্তির বার্তাবাহক। আল্লাহর নবি হওয়া সত্ত্বেও তিনি কখনো অহংকার বোধ করেননি। মদিনার অধিনায়ক হলেও তাঁর ঘরে আসবাব বলতে কিছুই ছিল না। তাঁর ছিল একখানা খেজুর পাতার বিছানা আর একটি পানির সুরাহি বহু দিন তিনি অনাহারে কাটিয়েছেন। এমনকি অনেক সময় তাঁর উনুনে আগুনও জ্বলত না।

প্রশ্ন ৬। আরবে প্রচলিত সমাজব্যবস্থায় মানবাত্মার দুর্দশা দূর করতে মহানবি (স.) কী করেছিলেন? কেন?
ব্যাখ্যা কর। উত্তর: আরবে প্রচলিত সমাজব্যবস্থায় দাস ব্যবসায়ের অত্যাচারে জর্জরিত হয়ে মানবাত্মা যখন গুমরে মরছিল, মহানবি (স.) তখন সাম্যবাদের বাণী প্রচার করেছিলেন। জগতে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সাম্যবাদ প্রচার মহানবি (স.)-এর অন্যতম বিশেষ কাজ। তিনি গরিব-আমিরের ভেদ ঘোচাতে সাম্যের বাণী প্রচার করেছেন। চরম দুরবস্থার হাত থেকে দাসদের পরিত্রাণের জন্যও তিনি কাজ করেছেন। তিনি দাসদের মুক্তিদানের মাধ্যমে সমাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তিনি হাবশি গোলাম বেলালকে মুয়াযযিন হিসেবে নিযুক্ত করেছেন মানুষকে সালাতে আহ্বান করার জন্য। ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠী প্রভৃতির ভেদ এবং মানুষে- মানুষে বিদ্বেষ ভাবকে তিনি ঘৃণা করতেন। তাই তিনি সমাজে সাম্য ও ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেন।

প্রশ্ন ৭। হযরত মুহাম্মদ (স.) আরববাসীদের কুসংস্কার থেকে মুক্তি পেতে কী করতে বলেছেন? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: হযরত মুহাম্মদ (স.) আরববাসীদের কুসংস্কার থেকে মুক্তি পেতে জ্ঞানচর্চা করতে বলেছেন। মহানবি (স.)-এর পুত্রের মৃত্যু দিবসে একবার সূর্যগ্রহণ দেখা যায়। তখন লোকে বলাবলি করতে লাগল যে, হযরতের বিপদে প্রকৃতি শোকাবেশ পরিধান করেছে। তিনি তখনই এর প্রতিবাদ করে বলেন, আল্লাহর বহু নিদর্শনের মধ্যে দুটি চন্দ্র ও সূর্য। কারও জন্ম বা মৃত্যুতে চন্দ্ৰ-সূর্যে গ্রহণ লাগতে পারে না। তিনি তাঁদের কুসংস্কার দূর করতে জ্ঞানচর্চার ওপর জোর দিয়েছেন।


🔆🔆 আরও দেখুন: মরু-ভাস্কর প্রবন্ধের জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর
🔆🔆 আরও দেখুন: মরু-ভাস্কর প্রবন্ধের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর
🔆🔆 আরও দেখুন: মরু-ভাস্কর প্রবন্ধের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর


আশাকরি আমাদের আজকের আর্টিকেল টি আপনাদের ভালো লেগেছে। শিক্ষা, পাঠ্যপুস্তক, গল্পের বই সহ যে কোন পিডিএফ ডাউনলোড করতে আমাদের সাথেই থাকুন। আমাদের যে কোন আপডেট মিস করতে না চাইলে ফেসবুক ও ইউটিউবে সাবক্রাইব করে আমাদের সাথে কানেক্ট থাকতে পারেন। ভালো থাকবেন সবাই, ধন্যবাদ।