বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞান চর্চার পটভূমি

বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞান চর্চার পটভূমি

বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞান চর্চার পটভূমি: আপনি কি একাদশ শ্রেণিতে পড়েন? বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞান চর্চার পটভূমি খুজতেছেন? তাহলে আজকের আর্টিকেল টি আপনার জন্য। আজকের আর্টিকেলে বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞান চর্চার পটভূমি ও বিকাশধারা সম্পর্কে আলোচনা করা হবে। কথা না বাড়িয়ে তাহলে চলুন শুরু করি।


বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞান চর্চার পটভূমি

সমাজবিজ্ঞান মানবতাবাদী বিজ্ঞান হিসেবে স্বীকৃত। কারণ মানুষের আশা-আকাঙ্খা ও সামাজিক প্রয়োজনের আলোকেই সমাজবিজ্ঞানের বিকাশধারা প্রবাহিত। বাংলাদেশের সমাজের কতগুলো নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এসব বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতেই বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞানের যাত্রা শুরু হয়েছে।

ভারতীয় উপমহাদেশে সমাজচিন্তার ইতিহাস প্রায় দু’হাজার বছরের পুরানো। মৌর্য যুগের কুটনীতিবিদ কৌটিল্যের ‘অর্থশাস্ত্র’, গুপ্ত যুগের দার্শনিক বাৎসায়নের ‘কামসূত্র’, সুলতান মাহমুদের সভাসদ ও পারস্যের পন্ডিত আবু রায়হান আল-বেরুনির ‘ভারততত্ত্ব’, মুঘল যুগের ইতিহাসবিদ আবুল ফজলের ‘আইন-ই-আকবরী’,‘আকবর নামা’, ইত্যাদি গ্রন্থে উপমহাদেশের সমাজের চমৎকার বিবরণ পাওয়া যায়।

এ ছাড়া মধ্যযুগের ঐতিহাসিক সৈয়দ গোলাম হোসেন খান এর ‘সিয়ার-উল-মোতাখখিরিন’-গ্রন্থে তৎকালীন বাংলার সামাজিক অবস্থা ও ঘটনাবলীর বর্ণনা পাওয়া যায়। ইংরেজ আমলে স্যার উইলিয়াম জোনসের উদ্যোগে ১৭৮৪ খীষ্টাব্দে ‘রয়েল এশিয়াটিক সোসাইটি অব বেঙ্গল’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ভারতীয় উপমহাদেশে সমাজ চর্চার প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়ার সূচনা হয়। ঊনিশ শতকের শেষের দিকে স্কটিশ ইতিহাসবিদ উইলিয়াম উইলসন হান্টারের সম্পাদনায় সামাজিক তথ্যের আকর গ্রন্থ “The Imperial Gazetteer-1881”-প্রকাশিত হয়। এ গ্রন্থে ব্রিটিশ শাসনামলের বাংলার সাথে ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের পার্থক্য,বিশেষ করে ভূমব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।

এ ছাড়া ইংরেজ লেখক Henry James Sumner Maine এর “Village-community in the East and West, Sir William Hunter এর ‘Annals of Rural Bengal’, এবং Lewis Sydney Steward O’Malley এর ‘Bengal,Bihar and Orissa’,-গ্রন্থে তৎলালীন বাংলাদেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, ইতিহাস ও প্রথা পদ্ধতির সম্যক পরিচয় পাওয়া যায়।

ব্রিটিশদের পাশাপাশি বাঙালী বুদ্ধিজীবীরাও তাদের নানা রচনায় সমকালীন সমাজ চিত্রের ছবি ফুটিয়ে তুলেছিলেন। এ সব রচনার মধ্যে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপধ্যায়ের ‘লোক রহস্য’, ‘সাম্য’, রামকমল সেনের ‘নীতিকথা’, ‘হিতোপদেশ’, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ‘বোধোদয়’, ‘ব্রজবিলাস’, অক্ষয় কুমার দত্তের ‘ভারত বর্ষীয় উপাসক সম্প্রদায়’, ভূদেব মুখোপধ্যায়ের ‘সামাজিক প্রবন্ধ’ ইত্যাদি গ্রন্থে সমাজ বিশ্লেষণের প্রচেষ্টা লক্ষ্য করা যায়।

পরবর্তী সময়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক বিনয় কুমার সরকার “The Positive Background of Hindu Sociology”, ‘Sociology of Race’, ‘Culture and Human Progress’ ইত্যাদি গ্রন্থ রচনা করেন,যা বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞান চর্চার পথকে সুগম করেছিল। ১৮৫৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞান চর্চার আনুষ্ঠানিক সূত্রপাত হয়।

১৯২৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা কলেজকে কেন্দ্র করে একটি বুদ্ধিজীবী গোষ্টীর বিকাশ ঘটে,যারা ‘শিখা গোষ্টী’ নামে পরিচিত ছিল। মুক্ত চিন্তা ও প্রগতিশীলতার চর্চাকারী এ গোষ্টীর কর্ণধার ছিলেন কাজী মোতাহার হোসেন,কাজী আব্দুল ওদুদ এবং আবুল হুসেন। শিখা গোষ্টীর অন্তর্ভূক্ত লেখকদের রচনা বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।

চল্লিশের দশকের বাঙালী জাতীয়তাবাদী লেখক রাধাকমল মুখার্জি,ডি এন মুজুমদার,নির্মল কুমার বসু ও বিনয় কুমার সরকার বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞানের চর্চার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। এ ছাড়া মার্ক্সবাদী লেখক এম এন রায়, মোজাফফর আহমদ,সুশোভন সরকার,গোপাল হালদার,নরহরি কবিরাজ প্রমূখ চিন্তাবিদ বাংলার সমাজ ও সংস্কৃতি বিষয়ক অনেক আলোচনা-সমালোচনা করেছেন এবং সমাজ পরিবর্তনের কথা ভেবেছেন। তাদের মাধ্যমে বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞান চর্চার পটভূমি নির্মিত হয়েছে।


বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞান চর্চার বিকাশধারা

সমাজবিজ্ঞান সামাজিক বিজ্ঞানের শাখাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কনিষ্ঠতম বিজ্ঞান। যদিও মানব সভ্যতায় যখন থেকে সমাজ নামক প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু হয়েছে তখন থেকেই চিন্তাশীল ও প্রজ্ঞাবান ব্যক্তিরা এ বিষয়ে আলোচনা আরম্ভ করেছেন। কিন্তু জ্ঞানের একটি স্বতন্ত্র শাখা হিসেবে ঊনবিংশ শতকের আগে সমাজবিজ্ঞানের যাত্রা শুরু হয়নি।

ফরাসী বিপ্লব ও শিল্প বিপ্লবের ফলাফল হিসেবে সমগ্র ইউরোপের সমাজজীবনে যে অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়েছিল তা থেকে উত্তরণের দিক নির্দেশনা প্রদান সামাজিক বিজ্ঞানের প্রচলিত শাস্ত্রগুলোর (যেমন-রাষ্ট্রবিজ্ঞান,অর্থনীতি,সমাজ-দর্শন ইত্যাদি) পক্ষে সম্ভব ছিল না। এ অবস্থায় ফরাসী দার্শনিক Henry Saint Simon একটি নতুন সামাজিক বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেন।

Henry Saint Simon এর পথ অনুসরণ করে তাঁর সুযোগ্য অনুসারী ও ছাত্র অগাষ্ট কোঁৎ ১৮৩৯ সালে সর্বপ্রথম সমাজের বিক্ষিপ্ত চিন্তা ও তত্ত্ব সমুহকে একটি বিশেষ বিজ্ঞানের অধীনে এনে জ্ঞানের একটি স্বতন্ত্র শাখা হিসেবে সমাজবিজ্ঞানের ভিত্তি ও দৃষ্টিকোন তৈরী করেন এবং তার নামকরণ করেন Sociology বা সমাজবিজ্ঞান।

সমাজবিজ্ঞান সামাজিক বিজ্ঞানের শাখাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কনিষ্ঠতম বিজ্ঞান। যদিও মানব সভ্যতায় যখন থেকে সমাজ নামক প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু হয়েছে তখন থেকেই চিন্তাশীল ও প্রজ্ঞাবান ব্যক্তিরা এ বিষয়ে আলোচনা আরম্ভ করেছেন। কিন্তু জ্ঞানের একটি স্বতন্ত্র শাখা হিসেবে ঊনবিংশ শতকের আগে সমাজবিজ্ঞানের যাত্রা শুরু হয়নি।

ফরাসী বিপ্লব ও শিল্প বিপ্লবের ফলাফল হিসেবে সমগ্র ইউরোপের সমাজজীবনে যে অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়েছিল তা থেকে উত্তরণের দিক নির্দেশনা প্রদান সামাজিক বিজ্ঞানের প্রচলিত শাস্ত্রগুলোর (যেমন-রাষ্ট্রবিজ্ঞান,অর্থনীতি,সমাজ-দর্শন ইত্যাদি) পক্ষে সম্ভব ছিল না। এ অবস্থায় ফরাসী দার্শনিক Henry Saint Simon একটি নতুন সামাজিক বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেন।


🔰🔰 আরও দেখুন: (উত্তর সহ) সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্র ২য় অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
🔰🔰 আরও দেখুন: (উত্তর সহ) সমাজবিজ্ঞান ১ম পত্র ১ম অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর


 

Henry Saint Simon এর পথ অনুসরণ করে তাঁর সুযোগ্য অনুসারী ও ছাত্র অগাষ্ট কোঁৎ ১৮৩৯ সালে সর্বপ্রথম সমাজের বিক্ষিপ্ত চিন্তা ও তত্ত্ব সমুহকে একটি বিশেষ বিজ্ঞানের অধীনে এনে জ্ঞানের একটি স্বতন্ত্র শাখা হিসেবে সমাজবিজ্ঞানের ভিত্তি ও দৃষ্টিকোন তৈরী করেন এবং তার নামকরণ করেন Sociology বা সমাজবিজ্ঞান।

ইউরোপ ও আমেরিকাতে সমাজবিজ্ঞানের উদ্ভব ও বিকাশের ফলশ্রুতিতে সারা বিশ্বব্যাপী এর বিস্তৃতি ঘটে। এরই ধারাবাহিকতায় ভারতীয় উপমহাদেশে বিশেষ করে কলকাতাবিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকাবিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিভিন্ন বিষয়ের পাঠ্যসূচীতে সমাজবিজ্ঞানের বিভিন্ন প্রত্যয়ের অবতারণা করা হয় এবং ক্রমে কোর্স হিসেবে অন্তর্ভূক্তি লাভ করে।

পরবর্তীতে ১৯৫৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বতন্ত্রভাবে সমাজবিজ্ঞান বিভাগ চালুর পর থেকে বাংলাদেশে শুরু হয় সমাজবিজ্ঞানের পথ চলা। তার পর থেকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং কলেজগুলোতে সমাজবিজ্ঞান বিষয়ের অন্তর্ভূক্তি ঘটে। নিম্নে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞান বিকাশের ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগ প্রতিষ্ঠা একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ১৯৫০ সালে প্রখ্যাত ফরাসী সামাজিক নৃবিজ্ঞানী Claude Levi Strass এর নেতৃত্বে ইউনেস্কো বিশেষজ্ঞ মিশন সমাজবিজ্ঞান পাঠের প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি স্থাপনের জন্য ঢাকায় আসেন।

এ মিশনের উদ্দেশ্য ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগ নামে একটি নতুন বিভাগে সমাজবিজ্ঞান,নৃবিজ্ঞান ও সমাজমনোবিজ্ঞান শিক্ষার ব্যবস্থা করা। তারা বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞান ও সামাজিক নৃবিজ্ঞান পঠন-পাঠনের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের উদ্দেশ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম পরিদর্শন করেন। অধ্যাপক Claude Levi Strass সেখানকার বিভিন্ন উপজাতির আদিম স্বতন্ত্র জীবনধারা দেখে মুগ্ধ হয়ে বাংলাদেশকে সমাজবিজ্ঞানী ও নৃবিজ্ঞানীদের ‘স্বর্গরাজ্য’বলে মন্তব্য করেন।

Claude Levi Strass, ইউনেস্কো ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ সহযোগিতা ও সাহায্যে ১৯৫৭-৫৮ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে “সমাজবিজ্ঞান বিভাগ”নামে একটি স্বতন্ত্র বিভাগ আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে। এই নতুন বিভাগের প্রথম অধ্যক্ষ হিসেবে নিযুক্ত করা হয় ইউনেস্কো বিশেষজ্ঞ Dr. Pierre Bessaignet কে। Dr. Pierre Bessaignet এর তিনজন সহকর্মী ড.মার্গারেট এলিজাবেথ, ড.হাফিজ যায়েদী এবং এ.কে.নাজমুল করিমকে সঙ্গে নিয়ে বিভাগের কার্যক্রম শুরু করেন।

কিন্তু ১৯৫৮ সালের শুরুতেই ড.মার্গারেট এলিজাবেথও ড.হাফিজ যায়েদী অন্যত্র চলে যাওয়াতে পাঠদানের ক্ষেত্রে সাময়িক ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়। ঐ বছরেই জুলাই মাসে মুহাম্মদ আফসার উদ্দীনকে লেকচারার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় এবং আগষ্ট মাসে এ.কে.নাজমুল করিম রীডার নিযুক্ত হয়ে Dr. Pierre Bessaigne এর কাছ থেকে বিভাগের দায়িত্বভার গ্রহন করেন। মুলত তিনিই সমাজবিজ্ঞানের প্রথম বাঙালী অধ্যক্ষ। এ সময় বিভাগে সমাজবিজ্ঞানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বাঙালী শিক্ষকের অভাব ছিল। বিভিন্ন সময়ে আগত ইউনেস্কো বিশেষজ্ঞগণ সে শুন্য স্থান পূরণে সচেষ্ট ছিলেন। উল্লেখ্য যে ১৯৬১ সাল পর্যন্ত সমাজবিজ্ঞান বিভাগে যোগদানকারী বাঙালী শিক্ষকদের মধ্যে একমাত্র এ.কে.নাজমুল করিম ছিলেন সমাজবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী। বাকীরা ছিলেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান থেকে আগত।

১৯৫৭-৫৮ শিক্ষাবর্ষের প্রথম ব্যাচটি মাস্টার্স ডিগ্রি নিয়ে ১৯৬১ সালে বের হলে ঐ ব্যাচের ছাত্র ফজলুর রশীদ খান ১৯৬২ সালে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান। তার পরই ফজলুর রশীদ খানের সহপাঠি নিযাম উদ্দীন আহমদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে যোগদান করেন। এর ফলে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত শিক্ষক সমস্যার সমাধান হতে শুরু করে।

১৯৬৩-৬৪ সালে ইউনেস্কো বিশেষজ্ঞ মি.মেয়ার বারাশ ও মি.ডাব্লিউ.এইচ.পি.ফ্লিক সমাজবিজ্ঞান বিভাগে যোগদান করেন। ১৯৬৩ সালের অক্টোবর মাসে যোগদান করেন সৈয়দ আলী নকী ও কে.এ.এস.সাদউদ্দীন। এর পর ১৯৬৪-৬৫ সালে এ বিভাগের তৃতীয় ব্যাচের আফসার আহমদ,রাবেয়া রহমান ও রঙ্গলাল সেন এই তিনজনকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেন। ১৯৬৬-৬৭ সালে ইউনেস্কো বিশেষজ্ঞগণ চলে যাবার ফলে সমাজবিজ্ঞান বিভাগটি দেশীয় শিক্ষকদের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হওয়া শুরু করে।

পরবর্তীতে ১৯৮০-৮১ শিক্ষা বর্ষ থেকে এ বিভাগে এম ফিল ও পি এইচ ডি কোর্স চালু করা হয়। এক্ষেত্রে এ.কে.নাজমুল করিমের অবদান অনস্বীকার্য। অধ্যাপক এ.কে.নাজমুল করিম হলেন প্রথম বাঙালী যিনি সমাজবিজ্ঞানের উপর ‘Changing Society in India,Pakistan and Bangladesh’, ‘The Dynamics of Bangladesh’ ও ‘সমাজবিজ্ঞান সমীক্ষণ’ শিরোনামে তিনটি পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ রচনা করেছেন। সমাজবিজ্ঞান পাঠের একটি গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক গ্রন্থ হিসেবে সবার কাছে এখনও সমাদৃত। এভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ নানা চড়াই-উৎরাই অতিক্রম করে অন্যতম বিভাগ হিসেবে সগৌরবে পাঠদান কর্মসূচী অব্যাহত রেখেছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ৩২ বছর পর প্রতিষ্ঠিত হয় উত্তরবঙ্গের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। এর প্রায় ১১ বছর পর ১৯৬৪ সালের ২৪ আগষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের একটি কোর্স হিসেবে সমাজবিজ্ঞানের পঠন-পাঠন শুরু হয়। কিন্তু একটি পৃথক বিভাগ হিসেবে ১৯৬৯ সালের ৭ অক্টোবর সমাজবিজ্ঞান বিভাগ আত্নপ্রকাশ করে এবং ১৯৭০ সালে সন্মান কোর্স চালুর মধ্য দিয়ে এর অগ্রযাত্রা সূচিত হয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগ চালুর পেছনে

প্রফেসর এ.কে.নাজমুল করিম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এছাড়াও ফজলুর রশীদ খান,আব্দুল কাদির ভূঁইয়া এবং ঝরনা নাথও অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। তাদের গবেষণাধর্মী বিভিন্ন বই এদেশের সমাজবিজ্ঞান বিকাশের গতিকে আরও বেশী বেগবান ও ত্বরান্বিত করেছে। তাছাড়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভূক্ত ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজ(IBS) সমাজবিজ্ঞানে উচ্চ শিক্ষার দ্বার উন্মোচনে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

১৯৬৬ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে বাংলাদেশের সমাজবিজ্ঞানের দ্বার আরো উন্মোচিত হয়.১৯৭০ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে “সমাজতত্ত্ব বিভাগ”নামে একটি নতুন বিভাগ চালু হয়;যেখানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে সমাজতত্ত্বের নানা বিষয়ে শিক্ষার্থীর পাঠ অর্জনের সুযোগ সৃষ্টি হয়। ঐ বিভাগের প্রথম অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালিন করেন ড.মোহাম্মদ বদরুদ্দৌজা।

তাছাড়া খ্যাতিমান শিক্ষক হিসেবে ড. অনুপম সেনও ছিলেন। আরো ছিলেন মিজানুর রহমান মিয়া ও আহমদ ফজল চৌধুরী। বস্তুত্তাঁদের মেধা, শ্রম ও লেখনীর মাধ্যমে সমাজবিজ্ঞানের অগ্রযাত্রা সূচিত হয়।

ঢাকা, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগ প্রতিষ্ঠার পর স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগ চালু হয় এবং এ বিভাগের প্রথম প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন অধ্যপক বজলুল মোবিন চৌধুরি। পরবর্তী দশকে ২০০২ সালে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের কার্যক্রম শুরু হয় এবং এ ডিসিপ্লিনের প্রথম ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন অধ্যাপক সেলিনা আহমেদ।

এ ছাড়া ২০১০ সালে রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং ২০১২ সালে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ও বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকেই সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স কোর্স চালু আছে। পাশাপাশি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভূক্ত বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী কলেজে এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়,বাংলাদেশ প্রকৌশল ও কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয়,রাজশাহী প্রকৌশল ও কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা প্রকৌশল ও কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয় প্রভৃতি বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান পড়ানো হয়ে থাকে। পাশাপাশি এনসিটিবি’র অধীনে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরেও সমাজবিজ্ঞান পড়ানো হয় এবং শিক্ষার্থীদের কাছে একটি স্বতন্ত্র বিষয় হিসেবে এটি জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।

বর্তমান বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞানের উপর ব্যাপক গবেষণা হচ্ছে। বিভিন্ন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রচুর গবেষণাধর্মী লেখা প্রকাশিত হচ্ছে এবং প্রতিবছর সমাজবিজ্ঞানের উপর এম.ফিল, পি.এইচ.ডি ডিগ্রী অর্জিত হচ্ছে। মুলত এভাবেই সমাজবিজ্ঞান ক্রমশ বিকাশ হচ্ছে।


আশাকরি আমাদের আজকের আর্টিকেল টি আপনাদের ভালো লেগেছে। শিক্ষা, পাঠ্যপুস্তক, গল্পের বই সহ যে কোন পিডিএফ ডাউনলোড করতে আমাদের সাথেই থাকুন। আমাদের যে কোন আপডেট মিস করতে না চাইলে ফেসবুক ও ইউটিউবে সাবক্রাইব করে আমাদেস দাথে কানেক্ট থাকতে পারেন। ভালো থাকবেন সবাই, ধন্যবাদ।