সিরাজউদ্দৌলা নাটকের প্রশ্ন উত্তরঃ আপনি কি সিরাজউদ্দৌলা নাটকের প্রশ্ন উত্তর খুজতেছেন? আজকের আর্টিকেলে পিডিএফ সহ সিরাজউদ্দৌলা নাটকের সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর শেয়ার করা হয়েছে। বোর্ড পরিক্ষায় আসা সিরাজউদ্দৌলা নাটকের অনুধাবন প্রশ্ন গুলো (পিডিএফ সহ) দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
সিরাজউদ্দৌলা নাটকের প্রশ্ন উত্তর – ০১
সিংহজানী পরগনার এক প্রতাপশালী জমিদারের নাম সিংহ নারায়ণ রায়। প্রজাবাৎসল্য তার চরিত্রের অন্যতম দিক। প্রজাদের সুখের জন্য তিনি দিঘি খনন, রাস্তাঘাট নির্মাণ, স্কুল-কলেজ-মাদরাসা প্রতিষ্ঠা, খাদ্যাভাব মোকাবিলায় খাদ্য মজুদসহ নানারকম জনহিতকর কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতেন। তার জমিদারির অন্যতম সদস্য ছিলেন একমাত্র ভগ্নিপতি সমর সমাদ্দার। তিনি তাকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন এবং বিশ্বাস করতেন। এই বিশ্বাসের সুযোগে সমর সমাদ্দার আত্মস্বার্থ চরিতার্থে ব্যস্ত থাকত। তার কৃতকর্ম অনেকবার ধরা পড়লেও জমিদার ঔদার্যবশত তাকে ক্ষমা করে দিতেন। এক বছর খাজনা পরিশোধের জন্য সমরকে দায়িত্ব দিলে সে সমস্ত অর্থ নিয়ে আত্মগোপন করে। সূর্যাস্ত আইনে জমিদারির পতন ঘটে।
ক. উমিচাদ কোথা থেকে বাংলাদেশে এসেছে?
খ. “আমার শেষ যুদ্ধ পলাশিতেই।”— কেন?
গ. উদ্দীপকের সমর সমাদ্দার কীভাবে ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের মিরজাফরের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ?
ঘ. উদ্দীপকের প্রজাবৎসল সিংহ নারায়ণ রায় যে কারণে জমিদারি হারিয়েছেন একই কারণে ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে বাংলার স্বাধীনতা সূর্য অস্ত যায়।”— উদ্দীপক ও ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের আলোকে উক্তিটি যাচাই করো।
১ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক। উমিচাঁদ লাহোর থেকে বাংলাদেশে এসেছে।
খ।মোহনলাল পলাশির যুদ্ধে আসন্ন পরাজয় ও নিজের মৃত্যু অনিবার্য মনে করে সিরাজউদ্দৌলাকে আলোচ্য কথাটি বলেছে। পলাশির যুদ্ধে মিরজাফর, রায়দুর্লভ, ইয়ার লুৎফ তাদের সৈন্যবাহিনী নিয়ে পুতুলের মতো দাঁড়িয়ে ছিল। যে কারণে বিশাল সৈন্যবাহিনী থাকা সত্ত্বেও নবাবকে পরাজয় বরণ করতে হয়। কিন্তু নবাবের পক্ষে দেশপ্রেমিক মোহনলাল, নৌবে সিং, বদ্ৰিআলি প্রমুখ জীবন বাজি রেখে লড়াই করে। যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে মোহনলাল সিরাজউদ্দৌলাকে মুর্শিদাবাদে ফিরে গিয়ে সৈন্য সংগ্রহের পরামর্শ দেয়। নবাব একাই ফিরে যাবেন কি না- এমন প্রশ্নের উত্তরে মোহনলাল প্রশ্নোত্ত উক্তিটি করেছিল।
গ। বিশ্বাসঘাতকতার প্রেক্ষাপটে উদ্দীপকের সমর সমাদ্দার ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের মিরজাফরের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে মিরজাফর একটি বিশ্বাসঘাতক চরিত্র। সে নবাবের সরলতার সুযোগ নিয়ে আত্মস্বার্থ চরিতার্থ করতে মগ্ন হয়ে পড়ে। নবাব মিরজাফরের চরিত্র বুঝতে পেরেও বারবার তাকে ক্ষমা করে দেন। নবাবের এই মহানুভবতার সুযোগে মিরজাফর দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে গোপনে ইংরেজদের সাথে হাত মেলায়। তার এরূপ কর্মকাণ্ডের কারণেই পলাশির যুদ্ধে নবাবের তথা বাংলার পতন ঘটে। উদ্দীপকে সমর সমাদ্দার জমিদার সিংহ নারায়ণ রায়ের সরলতার সুযোগ নিয়ে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। স্নেহপরায়ণ জমিদার সমর সমাদ্দারের স্বার্থবাদী চরিত্র বুঝতে পেরেও বারবার ক্ষমা করে দিয়েছেন। কিন্তু সমর সমাদ্দারের চরিত্রে কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। বরং জমিদারের সমস্ত অর্থ আত্মসাৎ করে আত্মগোপন করেছে। তার এরূপ কর্মকাণ্ডের কারণে জমিদার সিংহ নারায়ণ রায়কে জমিদারিও হারাতে হয়েছে সূর্যাস্ত আইনের খড়ো। আর সমর সমাদ্দারের এই বিশ্বাসঘাতকতা ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের মিরজাফরের বিশ্বাসঘাতকতারই প্রতিরূপ।
ঘ। উদ্দীপকের সিংহ নারায়ণ রায় এবং ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের নবাব উভয়ের রাজত্ব হারানোর কারণ তাদের উদারতা ও মহানুভবতা এবং সরল বিশ্বাস যা প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটিকে যথার্থ করে তুলেছে। ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে নবাব সিরাজউদ্দৌলা ছিলেন সরলপ্রাণ। তিনি সহজেই তাঁর সভাসদদের বিশ্বাস করেছিলেন। আর তাঁর এই সরল বিশ্বাসের সুযোগ নিয়েছিল ষড়যন্ত্রকারীরা। সেনাপতি মিরজাফর নবাবের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল অবলীলায়। গোপনে ইংরেজদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে নবাবের পতন ত্বরান্বিত করেছিল সে। অথচ নাবাব সিরাজউদ্দৌলা মিরজাফরের এহেন কর্মকাণ্ড পলাশির যুদ্ধের পূর্বেই অনুধাবন করেছিলেন। তার পরও তিনি, স্বভাবগত মহানুভবতা ও উদারতার কারণে মিরজাফরসহ অন্য অমাত্যদের ক্ষমা করেছিলেন এবং তাদের প্রতিশ্রুতিতে বিশ্বাস স্থাপন করেছিলেন। ফলে তাঁর এই সরল বিশ্বাসই তাঁর পতনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। উদ্দীপকের সিংহ নারায়ণ রায় প্রজাবৎসল শাসক হলেও তিনি বিশ্বাসঘাতকতার শিকার হয়ে নিজের জমিদারি হারিয়েছেন। তিনি ভগ্নিপতি সমর সমাদ্দারকে অন্ধভাবে বিশ্বাস করেছিলেন। আত্মস্বার্থ চরিতার্থে নিমগ্ন সমর সমাদ্দারের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অবহিত হলেও স্বীয় মহানুভবতা হেতু তিনি তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেননি। বরং তাকে আবারও বিশ্বাস করে সুযোগ দিয়েছেন। আর জমিদারের এই বিশ্বাসরও মহানুভবতার সুযোগ নিয়েছে তাঁর ভগ্নিপতি। অর্থ আত্মসাৎ করে জমিদারকে পথে বসিয়েছে সে। ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের নবাব যেমন উদার ও সরলমনা ছিলেন, তেমনি উদ্দীপকের সিংহ নারয়ণ রায়ও মহানুভব ও সরল মনের অধিকারী ছিলেন। তাঁরা দুজনেই সভাসদের ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখেছিলেন এবং বিশ্বাস করেছিলেন। ফলে তাঁদের মহানুভবতা ও বিশ্বাসের সুযোগ নিয়েছে সুযোগসন্ধানীরা। এতে নাটকের নবাবকে হারাতে হয়েছে তাঁর সাম্রাজ্য আর উদ্দীপকের সিংহ নারায়ণ রায়কে হারাতে হয়েছে তাঁর জমিদারি। তাই বলা যায়, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।
সিরাজউদ্দৌলা নাটকের প্রশ্ন উত্তর -০২
প্রয়াত রফিক সাহেব নাম-পরিচয়হীন এক অনাথ বালককে আশ্রয় দিয়েছিলেন বিশ বছর আগে। নাম রেখেছিলেন সজল। অকৃত্রিম ভালোবাসা ও আদর-যত্নে রফিক সাহেবের সন্তান হিসেবেই সে বড়ো হয়। কিন্তু ন্যূনতম মানবিক মূল্যবোধের সৌরভ তার মধ্যে সৃষ্টি হয়নি। মনের দিক থেকে সে এতই কদর্য ও সংকীর্ণ যে রফিক সাহেবের বিশাল সম্পত্তির মালিক হয়ে যেতে চায় সে। এলাকায় রফিক সাহেবের যশ-খ্যাতি ও সুনামের যারা প্রতিপক্ষ, তাদের দ্বারা সজল প্রতিনিয়ত প্ররোচিত হয়। সে তার আশ্রয়দাতার সম্পত্তি হস্তগত করার জন্য সুযোগ খোঁজে। একদিন সে অস্ত্রের মুখে সমস্ত সম্পত্তি তার নামে লিখে দিতে রফিক সাহেবকে বাধ্য করে এবং পরে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে।
ক. “চারিদিকে শুধু অবিশ্বাস আর ষড়যন্ত্র।” —উক্তিটি কার?
খ. ভীরু প্রতারকের দল চিরকালই পালায়” – এর তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও।
গ. উদ্দীপকের সজলের আচরণ ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের কোন চরিত্রের সঙ্গে তুলনীয়? যুক্তি দেখাও।
ঘ. উদ্দীপকের রফিক সাহেব ও ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের সিরাজের পরিণতি এক হলেও প্রেক্ষাপট ভিন্ন।” — আলোচনা করো।
২ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক। “চারিদিকে শুধু অবিশ্বাস আর ষড়যন্ত্র।” —উক্তিটি রায়দুর্লভের।
খ। মানুষদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে ইংরেজ ও তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে উদ্বুদ্ধ করতে গেলে অনেকের পালিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে নবাবের প্রশ্নোক্ত কথায় আশায় বেঁচে থাকার দিকটি প্রকাশ পেয়েছে। পলাশির যুদ্ধে পরাজিত হয়ে নবাব সিরাজউদ্দৌলা রাজধানীতে ফিরে এসে পুনরায় সৈন্য সংগ্রহ করে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের চেষ্টা করেন। কিন্তু দিকে দিকে সমাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত অনেকের পালানোর কথা ছড়িয়ে পড়ে। এ খবর নবাবের কাছে এলে হতাশাগ্রস্ত মানুষকে আশান্বিত করতে তখনো তিনি বীরত্বের কথা বলেন। এ প্রসঙ্গেই পলায়নরতদের কাপুরুষ আখ্যা দিয়ে তিনি প্রশ্নোক্ত কথাটি বলেন। উত্তরের সারবস্তু: ইংরেজদের সাথে যুদ্ধের পর অনেকেই পালিয়ে যাওয়ায় নবাব সিরাজউদ্দৌলা প্রশ্নোত্ত মন্তব্যটি করেন।
গ। উদ্দীপকের সজলের আচরণ ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের মোহাম্মদি বেগ চরিত্রের সঙ্গে তুলনীয়। ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে মোহাম্মদি বেগ একজন প্রতারক ও কৃতঘ্ন চরিত্রের মানুষ। সে অনাথ হওয়ায় নবাব সিরাজউদ্দৌলার পিতামাতার আশ্রয়ে লালিত-পালিত হয়। অথচ অর্থলোভে মত্ত হয়ে সে উপকারীর অপকার করে। মিরনের আহ্বানে নবাবকে নির্দয়ভাবে হত্যা করে সে। মোহাম্মদি বেগের এ ধরনের কর্মকাণ্ড চরম নিমকহারামির পরিচায়ক। উদ্দীপকে অনাথ বালক সজল রফিক সাহেবের আশ্রয়ে লালিত-পালিত হয়। কিন্তু বিশ বছর পরে এসে সে আশ্রয়দাতার ঘাতক হয়ে ওঠে। সম্পদের লোভে পড়ে সে হীনস্বার্থ চরিতার্থ করে। সমাজের চক্রান্তকারীদের প্ররোচনায় প্ররোচিত হয়ে সজল রফিক সাহেবের কাছ থেকে জোরপূর্বক সমস্ত সম্পত্তি লিখে নেয়। শুধু সম্পত্তি লিখে নিয়ে সে ক্ষান্ত হয়নি, রফিক সাহেবকে নির্মমভাবে হত্যা করতেও কুণ্ঠিত হয় না সে। কৃতঘ্ন চরিত্রের প্রতিরূপ হিসেবে উদ্দীপকের সজল ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের মোহাম্মদি বেগ চরিত্রের সঙ্গে তুলনীয়।
ঘ। আশ্রিতের হাতে করুণ পরিণতি বরণের ক্ষেত্রে সাদৃশ্য থাকলেও উদ্দীপকের ঘটনা এবং ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের ঘটনা ভিন্ন প্রেক্ষাপটে রচিত হওয়ায় প্রশ্নোত্ত মন্তব্যটি যথার্থ। ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে করুণ পরিণতি বরণ করতে হয়েছে। অমাত্যবর্গের বিশ্বাসঘাতকতা এবং ষড়যন্ত্র নবাবের পতন ঘটাতে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রেখেছিল। নবাব তার সভাসদদের যাকেই আপন মনে করেছিলেন তারাই নবাবের ক্ষতি করেছিল। এমনকি নবাবের পরিবারে লালিত-পালিত মোহাম্মদি বেগ নবাবকে হত্যা করে অর্থের লোভে। উদ্দীপকে রফিক সাহেবকে নিজের আশ্রিত ও লালিত-পালিত মানুষের হাতে জীবন দিতে হয়েছে। অনাথ বালক সজলকে বিশ বছর লালন- পালন করেও তার হাতেই জীবন দিতে হয়েছে রফিক সাহেবকে। সম্পদলোভী সজল রফিক সাহেবের সমস্ত সম্পত্তি হস্তগত করার জন্য নিম্ন মানসিকতার পরিচয় দিয়েছে। সজলের এই কর্মকাণ্ডের সমর্থন করেছে কতিপয় হিংসুক মানুষ, যারা রফিক সাহেবের সম্পদের প্রতি ঈর্ষাকাতর ছিল। ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের নবাবকে যেমন ঘরের মানুষের হাতেই জীবন দিতে হয়েছে, তেমনি উদ্দীপকের রফিক সাহেবকেও ঘরের মানুষের হাতেই জীবন দিতে হয়েছে। তাদের দুজনের জীবনদানের প্রেক্ষাপট ছিল ভিন্ন। নাটকের নবাবকে যেখানে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে জীবন দিতে হয়েছে, সেখানে উদ্দীপকের রফিক সাহেবকে জীবন দিতে হয়েছে সম্পদলিপ্সু আশ্রিত মানুষের হাতে। সুতরাং প্রশ্নোত্ত মন্তব্যটি যথার্থ।
সিরাজউদ্দৌলা নাটকের প্রশ্ন উত্তর -০৩
পুরানগড়ের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে মাতামুহুরী নদী। একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী নদীতে শত শত মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করে যাচ্ছে। মেশিনের বিকট শব্দে এলাকা প্রকম্পিত। অন্যদিকে, তারা এলাকার ধানি জমিগুলোকে ইটভাটা বানিয়ে কৃষি উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে। ইট পোড়ানোর কাঠ জোগান দিতে তারা নির্বিচারে বৃক্ষনিধনযজ্ঞে লিপ্ত হয়েছে। এলাকার পরিবেশবাদী সচেতনমহল ব্যবসার নামে এই ধরনের পরিবেশ বিপর্যয়মূলক ভয়াবহ কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করে প্রশাসনের নিকট এর প্রতিকার চায়। কিন্তু ব্যবসায়ীরা প্রশাসনের নজর এড়িয়ে নানা কৌশলে তাদের কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখে। পরিবেশবাদীরা মনে করেন, এভাবে চলতে থাকলে অচিরেই মানবিক বিপর্যয়ও ঘটে যেতে পারে। তাই ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তাঁদের দ্বন্দ্ব-সংঘাত লেগেই আছে।
ক. কত সালে আলিনগরের সন্ধিচুক্তি সম্পাদিত হয়?
খ. “ঘরের লোক অবিশ্বাসী হলে বাইরের লোকের পক্ষে সবই সম্ভব” –এর তাৎপর্য লেখো।
গ. উদ্দীপকের পরিবেশবাদীদের সঙ্গে ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের কোন চরিত্রের আদর্শিক মিল খুঁজে পাওয়া যায়?
ঘ. “প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও উদ্দীপকের অসাধু ব্যবসায়ী এবং “সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের ইংরেজ বেনিয়াদের চরিত্র এক ও অভিন্ন।”— মন্তব্যটি যাচাই করো।
৩ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক। ১৭৫৭ সালের ৯ই ফেব্রুয়ারি আলিনগরের সন্ধিচুক্তি সম্পাদিত হয়।
খ। প্রশ্নোত্ত মন্তব্যটি দ্বারা নবাব সিরাজউদ্দৌলার অমাত্যবর্গের বিশ্বাসঘাতকতার দিকটির প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। দেশি রাজকর্মচারী বিশ্বাসভঙ্গ করে নানাবিধ ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হলে বিদেশাগত সুযোগসন্ধানীদের জন্য সুযোগের দ্বার অবারিত হয়ে পড়ে। নবাবের অমাত্যবর্গ বিশ্বাসভঙ্গ করে ষড়যন্ত্রে মেতে উঠলে ক্ষমতালিপ্সু ইংরেজদের জন্য যে তা সুবর্ণ সুযোগের দ্বার উন্মুক্ত করে দেবে তাতে আর সন্দেহ কী-এখানে এ শঙ্কাটিই প্রকাশিত হয়েছে। উত্তরের সারবস্তু: ঘরের লোক বিশ্বাসঘাতকতা করলে বাইরের মানুষ সহজেই তাদের হীনস্বার্থ চরিতার্থ করতে সুযোগ পায়। এ বিষয়টি বোঝাতে। প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি করা হয়েছে।
গ। দেশের প্রতি ভালোবাসা এবং অবৈধ দখলদারিত্বের বিরোধিতার ক্ষেত্রে উদ্দীপকের পরিবেশবাদীদের সঙ্গে সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের সিরাজউদ্দৌলা চরিত্রের আদর্শিক মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের নবাব সিরাজউদ্দৌলা একজন প্রকৃত দেশপ্রেমিক নেতা। তিনি দেশ ও দেশের মানুষের জন্য সবসময় ভাবতেন। তিনি দেশের মানুষের ভালোর জন্য নিরলস চেষ্টা করে গেছেন। তাঁর শাসনামলে ইংরেজরা ব্যবসায়ের নামে এ দেশীয় মানুষের ওপর শোষণ ও নির্যাতন শুরু করে। সিরাজউদ্দৌলা এর বিরোধিতা করেন। তিনি দেশ থেকে ইংরেজদের উৎখাত করতে চেষ্টা করেন। কিন্তু এ দেশীয় কিছু ষড়যন্ত্রকারীর কারণে তিনি কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হন। উদ্দীপকের অসাধু ব্যবসায়ীরা অবৈধভাবে বালি উত্তোলন ও ফসলি জমি নষ্ট করে ইটভাটা করতে গিয়ে পরিবেশের ক্ষতি করছে। তাদের এই কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করেছেন পরিবেশবাদীরা। প্রতিবাদের পরও অসাধু ব্যবসায়ীরা প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে তাদের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে বারবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছেন পরিবেশবাদীরা। বস্তুত পরিবেশবাদীরা যে কাজ করেছেন তা স্বদেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়েই করেছেন। আর এমন স্বদেশপ্রেমের পরিচয় মেলে নবাব সিরাজউদ্দৌলার চরিত্রে। ফলে উদ্দীপকের পরিবেশবাদীদের সঙ্গে নবাব সিরাজউদ্দৌলার আদর্শিক মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
ঘ। ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের ইংরেজ এবং উদ্দীপকের অসাধু ব্যবসায়ী উভয়েই অসৎ মানসিকতাসম্পন্ন হলেও উদ্দীপক এবং নাটকের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের প্রেক্ষাপটে আছে ১৭৫৭ সালের পলাশির যুদ্ধ এবং সেই যুদ্ধকে ঘিরে গড়ে ওঠা রাজনীতি। ইংরেজরা এখানে নিপুণ ষড়যন্ত্রকারী। নবাব সিরাজউদ্দৌলা তাদের ব্যবসার নামে চালানো লুণ্ঠন-শোষণকে বন্ধ করতে চান। অন্যদিকে, ইংরেজরা চায় বাংলার শাসনক্ষমতা নিজেদের করতে। বস্তুত তারা দখলদারি মানসিকতার অধিকারী। উদ্দীপকের অসাধু ব্যবসায়ীরা অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করে পরিবেশ বিপর্যয়ের কাজ করছে। তারা নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য ফসলি জমি নষ্ট করে ইটভাটা তৈরি করেছে। এ ব্যাপারে পরিবেশবাদীদের আপত্তিও তারা শোনেনি। প্রশাসনের চোখও ফাঁকি দিয়ে তারা নিজেদের কাজ করে চলেছে অবিরত। ফলে পরিবেশবাদীদের সঙ্গে তাদের দ্বন্দ্বও হয়ে পড়েছে নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাটক এবং উদ্দীপকের প্রেক্ষাপট আলাদা। উদ্দীপকের বিষয়টি স্থানিক কিন্তু নাটকের বিষয়টি রাষ্ট্রীক। উদ্দীপকের অসাধু ব্যবসায়ীরা অর্থনৈতিক লাভের প্রতি বেশি মনোযোগী ছিল। আবার নাটকের ইংরেজ বেনিয়ারাও কোম্পানির স্বার্থে বেশি মনোযোগী ছিল। বাংলাকে শোষণ করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়াই ছিল তাদের উদ্দেশ্য। তাই নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও উদ্দীপকের অসাধু ব্যবসায়ী আর ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের ইংরেজ বেনিয়াদের চরিত্র এক ও অভিন্ন।
সিরাজউদ্দৌলা নাটকের প্রশ্ন উত্তর -০৪
‘বিসর্জন’ নাটকে সন্তানতুল্য ছাগশিশুকে দেবীর মন্দিরে বলি দেওয়ার কারণে শোকার্ত ভিখারি অপর্ণা। সে রাজা গোবিন্দ মাণিক্যের কাছে বিচারপ্রার্থী হয়। সন্তানহারা ভিখারির দুঃখ রাজচিত্তকে আহত করে। রাজা রাজ্যে পশুবলি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। কিন্তু ‘তাঁর এ আদেশ মেনে নিতে পারেন না রাজপুরোহিত রঘুপতি। তিনি রাজার অনুজ নক্ষত্র রায়কে রাজ্যলোভে বশ করে রাজাকে হত্যা করতে রাজি করান।
ক. নবাব সিরাজউদ্দৌলা কোথায় বন্দি হন?
খ. “ভীরু প্রতারকের দল চিরকালই পালায়।” –ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকের নক্ষত্র রায়ের সঙ্গে ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের ঘসেটি বেগমের সাদৃশ্য দেখাও।
ঘ. ‘‘উদ্দীপকে ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের বিষয়বস্তুর আংশিক প্রতিফলন ঘটেছে।” —বিশ্লেষণ করো।
৪ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক। নবাব সিরাজউদ্দৌলা ভগবানগোলায় বন্দি হন।
খ। মানুষদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে ইংরেজ ও তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে উদ্বুদ্ধ করতে গেলে অনেকের পালিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে নবাবের প্রশ্নোক্ত কথায় আশায় বেঁচে থাকার দিকটি প্রকাশ পেয়েছে। পলাশির যুদ্ধে পরাজিত হয়ে নবাব সিরাজউদ্দৌলা রাজধানীতে ফিরে এসে পুনরায় সৈন্য সংগ্রহ করে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের চেষ্টা করেন। কিন্তু দিকে দিকে সমাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত অনেকের পালানোর কথা ছড়িয়ে পড়ে। এ খবর নবাবের কাছে এলে হতাশাগ্রস্ত মানুষকে আশান্বিত করতে তখনো তিনি বীরত্বের কথা বলেন। এ প্রসঙ্গেই পলায়নরতদের কাপুরুষ আখ্যা দিয়ে তিনি প্রশ্নোক্ত কথাটি বলেন।
গ। উদ্দীপকের নক্ষত্র রায়ের ক্ষমতার লোভে মত্ত হয়ে রাজার বিরুদ্ধাচরণ করার দিকটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের ঘসেটি বেগমের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে ঘসেটি বেগম নবাব সিরাজউদ্দৌলার আপন খালা। তা সত্ত্বেও সে নবাবের ক্ষতি করার জন্য উঠেপড়ে লাগে। কেননা ক্ষমতার লোভ ঘসেটি বেগমকে বেপরোয়া করে তোলে। এজন্য নবাবকে কীভাবে ক্ষমতার মসনদ থেকে সরানো যায় সেই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকে সে। গোপনে মিরজাফর ও অন্যদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে শওকত জঙ্গকে সমর্থন জানায় ঘসেটি বেগম। উদ্দীপকের নক্ষত্র রায়ও ক্ষমতালোভী। সে ক্ষমতার লোভে নিজের ভাইকে হত্যা করতে রাজি হয়েছে। রাজ-পুরোহিত রঘুপতি রাজার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে রাজাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করে। আর এই ষড়যন্ত্রে রাজার ছোটো ভাই নক্ষত্র রায়কে ব্যবহার করে সে। ক্ষমতার লোভ নক্ষত্র রায়কে প্ররোচিত করে এ কাজ করতে। আর নক্ষত্র রায়ের এ দিকটিই ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের ঘসেটি বেগমের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।
ঘ। উদ্দীপকে ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের দিকটি প্রকাশ পেলেও অন্য দিকগুলো প্রকাশ না পাওয়ায় প্রশ্নোত্ত মন্তব্যটি যথার্থ হয়ে উঠেছে। ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে নবাব সিরাজউদ্দৌলার অপরিসীম দেশপ্রেম এবং তার বিপরীতে বিশ্বাসঘাতক শ্রেণির প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের কাহিনি বর্ণিত হয়েছে। নবাব সিরাজউদ্দৌলা ক্ষমতার মসনদে বসার পরই তাঁর বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র শুরু হয়। দেশীয় চক্রান্তের পাশাপাশি বহিরাগত ইংরেজ বণিকদের প্রবল বাধার মুখে পড়তে হয় তাঁকে। ছোটোখাটো দু-একটি যুদ্ধে তাদের কোণঠাসা করতে পারলেও প্রাসাদ ষড়যন্ত্রে তাঁকে অবশেষে পরাজিত হতে হয়। ‘উদ্দীপকে রাজা গোবিন্দ মাণিক্যের সিদ্ধান্তে অখুশি রাজ পুরোহিতের ষড়যন্ত্রের দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে। রাজপুরোহিত রঘুপতি রাজার প্রতি অখুশি হয়ে রাজাকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করেন। এজন্য তিনি কৌশলে রাজার ছোটো ভাই নক্ষত্র রায়কে হাত করেন। নক্ষত্র রায়ও ক্ষমতার লোভে রাজপুরোহিতের প্রস্তাবে রাজি হয়। ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে বর্ণিত সকল বিষয় উদ্দীপকে পরিলক্ষিত হয় না। উদ্দীপকে কেবল প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের দিকটিই বর্তমান। এছাড়া নবাবের দেশপ্রেম, ইংরেজদের চাতুর্য, যুদ্ধক্ষেত্রে নবাব ও তার অমাত্যদের ভূমিকা এসব কিছুর ইঙ্গিত উদ্দীপকে নেই। তাই বলা যায়, “উদ্দীপকে ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের বিষয়বস্তুর আংশিক প্রতিফলন ঘটেছে।” —প্রশ্নোত্ত এই মন্তব্যটি যথার্থ।
সিরাজউদ্দৌলা নাটকের প্রশ্ন উত্তর -০৫
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে রাঙামাটির ‘বুড়িঘাট’ যুদ্ধে শত্রুপক্ষ মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পের কাছাকাছি চলে আসে। সহযোদ্ধাদের অপ্রস্তুতির বিষয়টি টের পেয়ে মুন্সি আবদুর রউফ মেশিনগানের গুলি চালিয়ে পাকিস্তানি সৈন্যের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। পরে সহযোদ্ধারা প্রস্তুতি নিয়ে যুদ্ধ চালিয়ে শত্রুপক্ষকে ঘায়েল করার প্রাক্কালে সহযোদ্ধাদের জীবন বাঁচাতে শহিদ হন বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্স নায়েক মুন্সি আবদুর রউফ। পরাস্ত হয় শত্রুপক্ষ।
ক. মিরজাফরের গুপ্তচর কে?
খ. “ভীরু প্রতারকের দল চিরকালই পালায়”- উক্তিটি ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকের বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আবদুর রউফের সাথে ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে যুদ্ধক্ষেত্রে মোহনলালের ভূমিকার তুলনা করো।
ঘ. উদ্দীপকে বিজয়ের বারতা থাকলেও ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে পরাজয় ঘটেছে দেশপ্রেমিক শক্তির।” —মন্তব্যটির যথার্থতা নিরূপণ করো।
৫ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক। মিরজাফরের গুপ্তচর হলো উমর বেগ।
খ। মানুষদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে ইংরেজ ও তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে উদ্বুদ্ধ করতে গেলে অনেকের পালিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে নবাবের প্রশ্নোক্ত কথায় আশায় বেঁচে থাকার দিকটি প্রকাশ পেয়েছে। পলাশির যুদ্ধে পরাজিত হয়ে নবাব সিরাজউদ্দৌলা রাজধানীতে ফিরে এসে পুনরায় সৈন্য সংগ্রহ করে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের চেষ্টা করেন। কিন্তু দিকে দিকে সমাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত অনেকের পালানোর কথা ছড়িয়ে পড়ে। এ খবর নবাবের কাছে এলে হতাশাগ্রস্ত মানুষকে আশান্বিত করতে তখনো তিনি বীরত্বের কথা বলেন। এ প্রসঙ্গেই পলায়নরতদের কাপুরুষ আখ্যা দিয়ে তিনি প্রশ্নোক্ত কথাটি বলেন।
গ। দেশের জন্য জীবন বাজি রাখার ক্ষেত্রে উদ্দীপকের বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আবদুর রউফের সঙ্গে ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের মোহনলাল তুলনীয়। ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে মোহনলাল ছিলেন একজন দেশপ্রেমিক বীর। তিনি নবাব সিরাজউদ্দৌলার নির্দেশে পলাশির প্রান্তরে প্রাণপণে লড়াই করেছেন। প্রধান সেনাপতি মিরজাফর যেখানে বিশ্বাসঘাতকতা করে যুদ্ধক্ষেত্রে ইংরেজদের পক্ষাবলম্বন করেছিল, সেখানে মোহনলাল দেশের জন্য শেষ রক্তবিন্দু থাকা পর্যন্ত লড়াই করেছিলেন। ইংরেজদের প্রবল আক্রমণে মৃত্যু আসন্ন জেনেও তিনি একাই প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। আর নবাবকে রাজধানীতে ফেরত পাঠিয়েছিলেন পুনরায় সৈন্য সংগঠিত করতে। উদ্দীপকে বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আবদুর রউফ দেশাত্মবোধে অবিচল ছিলেন। তিনি দেশের জন্য জীবন বাজি রেখেছেন। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সম্মুখে একাই প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন। সহযোদ্ধাদের জীবন বাঁচাতে নিজের জীবনকে তুচ্ছ করে তিনি শত্রুর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছেন । আর বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আবদুর রউফের এই বীরত্ব ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে মোহনলালের যুদ্ধক্ষেত্রের কর্মকাণ্ডেরই সমতুল্য।
ঘ। উদ্দীপকে তীব্র লড়াইয়ে শত্রুপক্ষ পরাজিত হলেও ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে নবাবের পতন ঘটায় প্রশ্নোত্ত মন্তব্যটি যথার্থ। ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে নবাব সিরাজউদ্দৌলা ছিলেন দেশপ্রেমিক বীর। তাঁর পক্ষে ছিল মোহনলাল, মিরমর্দান, সাঁফ্রেসহ দেশপ্রেমিক শক্তি। তাঁরা নিজেদের জীবন বাজি রেখে দেশের জন্য লড়াই করেছেন। কিন্তু বিশ্বাসঘাতক মিরজাফর ও তার দোসরদের প্রতারণায় পলাশির যুদ্ধে নবাব পরাজিত হন। ফলে প্রবল দেশপ্রেম ও দৃঢ় প্রত্যয় থাকা সত্ত্বেও সেই যুদ্ধে দেশপ্রেমিক শক্তির পরাজয় ঘটে। উদ্দীপকে মুন্সি আবদুর রউফ ও তাঁর সহযোদ্ধারা দেশপ্রেমিক যোদ্ধা। তাঁরা প্রবল পরাক্রমে শত্রুসেনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। তাঁদের নৈপুণ্যে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তীব্র প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়। এই যুদ্ধে মুন্সি আবদুর রউফ শহিদ হলেও তাঁর রক্ত বৃথা যায় না। তাঁর রক্তের বদলায় শত্রুরা পরাস্ত হয়। বিজয়ী হন দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধারা। ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে নবাব সিরাজউদ্দৌলা ও তাঁর সঙ্গী দেশপ্রেমিক যোদ্ধারা শত্রুর কাছে পরাজিত হলেও উদ্দীপকে ঘটে উল্টো ঘটনা। সেখানে শত্রুসেনারা পরাস্ত হয় এবং দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধাদের বিজয়ী হওয়ার আভাস পাওয়া যায়। তাই সার্বিক বিচারে বলা যায়, “উদ্দীপকে বিজয়ের বারতা থাকলেও ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে পরাজয় ঘটেছে দেশপ্রেমিক শক্তির” –প্রশ্নোত্ত এই মন্তব্যটি যথার্থ।
সিরাজউদ্দৌলা নাটকের প্রশ্ন উত্তর -০৬
কেউ তো জানে না প্রাণের আকুতি বারেবারে সে কী চায়, স্বার্থের টানে প্রিয়জন কেন দূরে সরে চলে যায়? ধরণীর বুকে পাশাপাশি তবু কেউ বুঝি কারো নয়।
ক. ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের তৃতীয় অঙ্কের দৃশ্যসংখ্যা কত?
খ. ”আসামীর সে অধিকার থাকে নাকি?” –কে, কাকে, কখন বলেছিল? বর্ণনা করো।
গ. উদ্দীপকের দ্বিতীয় লাইনটি যেন ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের ঘসেটি বেগমকে ইঙ্গিত করছে” —মন্তব্যটি বুঝিয়ে লেখো।
ঘ. উদ্দীপকের আলোকে ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের ঘৃণিত ও নিন্দিত অধ্যায়টি বিশ্লেষণ করো।
৬ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক। ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের তৃতীয় অঙ্কের দৃশ্যসংখ্যা চারটি।
খ। কারাগারের ভিতর নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে হত্যা করার প্রেক্ষাপটে মিরন নবাবকে উদ্দেশ করে প্রশ্নোক্ত কথাটি বলেছিল। ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে মিরন ও মোহাম্মদি বেগ কারাগারের ভিতর হত্যা করে। মিরন রবার্ট ক্লাইভের যোগসাজশে নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে অন্যায়ভাবে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করে। এজন্য সে মোহাম্মদি বেগকে দশ হাজার টাকার বিনিময়ে ভাড়া করে। মিরন এবং মোহাম্মদি বেগ তাদের হীন স্বার্থ পূরণের জন্য কারাগারে নবাবের কাছে যায়। সেখানে মিরন নবাবকে মিথ্যে দণ্ডাজ্ঞা শোনায়। তখন সিরাজউদ্দৌলা সেই দণ্ডাজ্ঞায় সত্যিই মিরজাফরের স্বাক্ষর আছে কি না তা জানতে চাইলে মিরন প্রশ্নোত্ত উক্তিটি করে।
গ। উদ্দীপকের দ্বিতীয় লাইনে স্বার্থের প্রয়োজনে কাছের মানুষও পর হয়ে যাওয়ার যে কথা বলা হয়েছে তার প্রেক্ষিতে ঘসেটি বেগমের ক্ষেত্রে প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ হয়ে উঠেছে। ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে ঘসেটি বেগম নবাব সিরাজউদ্দৌলার আপন খালা। অথচ নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য ঘসেটি বেগম নবাবের বিরুদ্ধাচরণ করেছেন। তিনি সবসময় নবাবের ধ্বংস কামনা করতেন। নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে সিংহাসনচ্যুত করার জন্য তিনি গোপনে অমাত্যদের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করেছেন। রাজদরবারে নিজের প্রভাব বজায় রাখার জন্য ঘসেটি বেগম তার পুত্রতুল্য নবাব সিরাজউদ্দৌলাকেও দূরে ঠেলে দিতে দ্বিধা করেননি। উদ্দীপকের দ্বিতীয় চরণে স্বার্থের কাছে রক্তের সম্পর্ককেও তুচ্ছ বলা হয়েছে। মানুষ অনেক সময় ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থের জন্য সর্বস্ব ত্যাগ করতেও দ্বিধা করে না। তারা স্বার্থ উদ্ধারের জন্য ভাইবোন, আত্মীয়-পরিজনকেও অবলীলায় দূরে ঠেলে দেয়। উদ্দীপকের দ্বিতীয় চরণে লেখক এই কথাটিই বোঝাতে তৎপর হয়েছেন। আর এ দিকটির বাস্তব রূপ দেখা যায় ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের ঘসেটি বেগমের কর্মকাণ্ডে। অতএব, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ বলেই বিবেচিত হয়।
ঘ। ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থের প্রয়োজনে বিশ্বাসঘাতকতার যে দিকটি প্রকাশিত হয়েছে, উদ্দীপকের আলোকে তা অত্যন্ত ঘৃণিত ও নিন্দিত বলে পরিগণিত। ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে বিশ্বাসঘাতকতার নিকট দেশপ্রেমের পরাজয় ঘটেছে। নবাব সিরাজউদ্দৌলা দেশের জন্য ভাবলেও তাঁর অমাত্যবর্গের কিছু অংশ ছিল তাঁর বিপরীত। তারা আত্মস্বার্থ চরিতার্থের জন্য গোপনে ইংরেজদের সাথে হাত মিলিয়েছে। নবাব আপন ভেবে দায়িত্ব দিলেও তারা সেই বিশ্বাসের মূল্য দেয়নি। বরং নবাবকে কীভাবে সিংহাসনচ্যুত করা যায়, সেই পরিকল্পনাতেই সর্বদা ব্যতিব্যস্ত থেকেছে তারা। তাদের এ ধরনের ঘৃণ্য কর্মকাণ্ডই নবাব সিরাজউদ্দৌলার তথা বাংলার পতন ত্বরান্বিত করেছে। উদ্দীপকে স্বার্থের কাছে সম্পর্ককে তুচ্ছ করে দেখানো হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, পৃথিবীতে স্বার্থবাদী মানুষের কারণে পাশাপাশি থেকেও যেন কেউ কারো নয়। প্রয়োজনের সময় এসব মানুষকে পাশে পাওয়া যায় না। স্বার্থবাদী চেতনার কারণে প্রিয়জনও দূরে চলে যায়। ফলে রক্তের সম্পর্কের কাছেও মানুষের প্রত্যাশা অবহেলিতই থেকে যায় প্রতিনিয়ত। ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে স্বার্থবাদী চেতনার যে প্রতিফলন ঘটেছে, তা যেন উদ্দীপকেরই মূল বক্তব্যকে ধারণ করেছে। নাটকের মিরজাফর- ঘসেটি বেগমেরা যেন উদ্দীপকের প্রিয়জনদেরই প্রতিরূপ। তারা নিজেদের স্বার্থের জন্যই সর্বদা ব্যতিব্যস্ত। এরূপ মানসিকতা ইতিহাসে ঘৃণিত এবং নিন্দনীয় হিসেবেই পরিগণিত হবে সর্বকালে।
সিরাজউদ্দৌলা নাটকের প্রশ্ন উত্তর -০৭
জবেদা খাতুনের খুব কাছের লোক ছিল মোখলেছার রহমান। জবেদা খাতুন বিশ্বাস করে তার জমিজমা দেখাশোনার ভার দেন মোখলেছার রহমানকে। কিন্তু একদিন জবেদা খাতুন দেখেন তার সম্পত্তি মোখলেছার রহমানের নামে হয়ে আছে। তিনি ভাবলেন, এতদিন ভুল মানুষকে বিশ্বাস করেছেন। বিশ্বাস করা ভালো কিন্তু অন্ধবিশ্বাস কখনো কখনো মানুষকে পথে বসিয়ে দেয়।
ক. সিরাজউদ্দৌলার স্ত্রীর নাম কী?
খ. “রজার ড্রেক প্রাণভয়ে কুকুরের মতো ল্যাজ গুটিয়ে পালিয়েছে” —ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকের মোখলেছার যেন ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের মিরজাফরকে ইঙ্গিত করে।”— ব্যাখ্যা করো।
ঘ. “বিশ্বাস করা ভালো কিন্তু অন্ধবিশ্বাস মানুষকে কখনো কখনো পথে বসিয়ে দেয়” – সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের আলোকে মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো।
৭ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক। সিরাজউদ্দৌলার স্ত্রীর নাম লুৎফুন্নেসা।
খ। নবাব সিরাজউদ্দৌলার সৈন্য কলকাতা আক্রমণের সময় গভর্নর রজার ড্রেকের পালিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে নবাব প্রশ্নোক্ত কথাটি বলেছেন। ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে ইংরেজদের নিয়মবহির্ভূত শক্তি বৃদ্ধির চেষ্টার প্রাক্কালে নবাব সিরাজউদ্দৌলা কলকাতায় ইংরেজদের দুর্গ আক্রমণ করেন। নবাব সৈন্যের কলকাতা আক্রমণে ইংরেজদের শোচনীয় পরাজয় ঘটে। তখন গভর্নর রজার ড্রেক ভয় পেয়ে গোপনে পালিয়ে যায়। কিন্তু হলওয়েল প্রকৃত সত্য গোপন করে নবাবকে জানায়, রজার ড্রেক কলকাতার বাইরে গেছেন। তখন রজার ড্রেকের কাপুরুষতার কথা জানিয়ে নবাব প্রশ্নোক্ত কথাটি বলেছেন।
গ। বিশ্বাসঘাতকতার ক্ষেত্রে সাদৃশ্যপূর্ণ হওয়ায় উদ্দীপকের মোখলেছার ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের মিরজাফরকে ইঙ্গিত করে। ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে মিরজাফর ছিল একজন বিশ্বাসঘাতক চরিত্র। সে নবাবের দরবারে থেকে নবাবের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। গোপনে ইংরেজদের সঙ্গে আঁতাত করে নবাবের পতন ত্বরান্বিত করেছে সে। নবাব সিরাজউদ্দৌলা মিরজাফরকে বিশ্বাস করে সেনাপতির দায়িত্ব দিলেও মিরজাফর তার মর্যাদা রাখেনি। বরং কীভাবে নবাবকে সিংহাসন থেকে সরানো যায় সেই চেষ্টাই করেছে অবিরত। উদ্দীপকের মোখলেছার জবেদা খাতুনের সরলতার সুযোগ নিয়ে তার সম্পত্তি নিজের নামে করে নেয়। অথচ মোখলেছারকে বিশ্বাস করে জবেদা খাতুন তার জমিজমা দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। মোখলেছার এই বিশ্বাসের মর্যাদা রাখেনি। সে নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য বিশ্বাসের অমর্যাদা করেছে। আর মোখলেছারের মতোই বিশ্বাসঘাতকতার আশ্রয় নিয়েছিল ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের মিরজাফর। তাই উদ্দীপকের মোখলেছারকে নাটকের মিরজাফরের প্রতিরূপ বলা যায় ।
ঘ। অন্ধবিশ্বাসের কারণেই উদ্দীপকের জবেদা খাতুন এবং ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের নবাবকে করুণ পরিণতি বরণ করতে হয়, যা প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটিকে যথার্থ করে তুলেছে। ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে নবাব সিরাজউদ্দৌলা ছিলেন সরল মনের অধিকারী। তিনি দরবারের অমাত্যবর্গকে প্রচণ্ড বিশ্বাস করেছেন। মিরজাফর ও তার সহযোগীরা বারবার ভুল করা সত্ত্বেও নবাব তাদের ক্ষমা করে দিয়েছেন এবং সবাইকে নিজেদের পদে বহাল রেখেছেন। নবাবের এই বিশ্বাসের সুযোগ নিয়েছে স্বার্থলোভী মিরজাফর ও তার সহযোগীরা। তারা গোপনে ইংরেজদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পতন ত্বরান্বিত করেছে। উদ্দীপকের জবেদা খাতুনের অন্ধবিশ্বাসই তার ক্ষতির কারণ হয়েছে। তিনি মোখলেছার রহমানকে বিশ্বাস করে জমিজমা দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। কিন্তু মোখলেছার রহমান তার সেই বিশ্বাসের কোনো মূল্য দেয়নি। বরং সুযোগ বুঝে জবেদা খাতুনের সম্পত্তি নিজের নামে লিখে নিয়েছেন। অথচ জবেদা খাতুন যদি সহজেই মোখলেছারের প্রতি বিশ্বাস না করতেন, তাহলে তার এই ক্ষতি হতো না। ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের নবাব এবং উদ্দীপকের জবেদা খাতুন উভয়ই করুণ পরিণতির শিকার হয়েছেন। তারা সহজেই মানুষকে বিশ্বাস করেছেন। কোনোকিছু না ভেবেই তারা দায়িত্ব দিয়েছেন সম্পূর্ণ বিশ্বাসের ওপর ভর করে। কিন্তু তাদের সেই বিশ্বাসের মর্যাদা রাখেনি বিশ্বাসঘাতকের দল। অন্ধবিশ্বাসের কারণে তাদের পথে বসতে হয়েছে। তাই বলা যায়, “বিশ্বাস করা ভালো, কিন্তু অন্ধবিশ্বাস মানুষকে কখনো কখনো পথে বসিয়ে দেয়” – প্রশ্নোত্ত এই মন্তব্যটি যথার্থ।
সিরাজউদ্দৌলা নাটকের প্রশ্ন উত্তর -০৮
মির্জা জহিরউদ্দিন মুহাম্মদ বাবর ছিলেন ভারতের মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা। তাঁর মৃত্যুর পর বড়ো ছেলে হুমায়ুন অল্প বয়সে সিংহাসনে আরোহণ করেন। দুঃখের বিষয় এই যে, সিংহাসনে আরোহণের পরই নানামুখী ষড়যন্ত্র শুরু হয়। তথাপি সাহসিকতার সাথে তরুণ হুমায়ুন তাঁর শাসনকার্য চালিয়ে যান। হুমায়ুন তাঁর অন্যান্য ভাইসহ আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে অসহযোগিতা পাওয়া সত্ত্বেও শক্ত হাতে সবকিছু ধরে রাখতে সক্ষম হন।
ক. রবার্ট ক্লাইভ কাকে সেরা বিশ্বাসঘাতক বলেছেন?
খ. “কত বড় শক্তি, তবু কত তুচ্ছ।” —উক্তিটি ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকের হুমায়ুনের সিংহাসনে আরোহণ এবং নবাব সিরাজউদ্দৌলার সিংহাসনে আরোহণের সাদৃশ্য তুলে ধরো।
ঘ. “আংশিক সাদৃশ্য থাকলেও হুমায়ুন ও সিরাজউদ্দৌলার পরিণতি এক নয়” – বিশ্লেষণ করো।
৮ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক। রবার্ট ক্লাইভ উমিচাঁদকে সেরা বিশ্বাসঘাতক বলেছেন।
খ। ইংরেজদের তুলনায় শক্তি ও সামর্থ্যে বেশি হওয়া সত্ত্বেও বিশ্বাসঘাতকদের কারণে পরাজয় অবশ্যম্ভাবী জেনেই নবাব সিরাজউদ্দৌলা প্রশ্নোত্ত কথাটি বলেছেন। ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে পলাশির প্রান্তরে যুদ্ধের ময়দানে ইংরেজদের তুলনায় নবাব সিরাজউদ্দৌলার সৈন্য সংখ্যা ছিল অধিক এবং শক্তিশালী। কিন্তু নবাবের বাহিনীতে বিশ্বাসঘাতক মিরজাফর এবং তার অনুসারী সৈন্যও ছিল। মিরজাফর নবাবের সেনাপ্রধান হলেও তার প্রতি নবাবের বিশ্বাস ছিল না। তাই সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও পরাজয় ঠেকানো যাবে না ভেবে নবাব প্রশ্নোত্ত উক্তিটি করেছেন।
গ। ক্ষমতারোহণের পর দেশি-বিদেশি চক্রান্ত-ষড়যন্ত্রের মতো কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার দিক থেকে উদ্দীপকের হুমায়ুন ও নবাব সিরাজউদ্দৌলার ক্ষমতারোহণের সাদৃশ্য রয়েছে। ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের সিরাজউদ্দৌলা অল্প বয়সে সিংহাসনে আরোহণ করেন। তাঁর এই সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হওয়া পরিবার ও দরবারে অনেকের কাছেই ঈর্ষার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তারা নবাবের বিরুদ্ধে গভীর চক্রান্ত-ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। শাসনকার্য পরিচালনা করতে গিয়ে নবাব এসব চক্রান্তকারীর অসহযোগিতার শিকার হন।
উদ্দীপকে সম্রাট বাবরের মৃত্যুর পর তার পুত্র হুমায়ূন অল্প বয়সে সিংহাসনে আরোহণ করেন। কিন্তু সিংহাসনে বসার পরই নানা দিক থেকে ষড়যন্ত্র শুরু হয়ে যায়। তাঁর স্বজনরাও তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। সম্রাট হুমায়ুন কঠোর হস্তে নানামুখী ষড়যন্ত্রের মোকাবিলা করে শাসনকার্য চালান। এমনিভাবে নবাব সিরাজউদ্দৌলাও ক্ষমতারোহণের পর নানামুখী ষড়যন্ত্রের সম্মুখীন হন। ক্ষমতারোহণের পর বৈরী পরিস্থিতিতে পড়ার ক্ষেত্রে উদ্দীপকের হুমায়ুনের সাথে নবাব সিরাজউদ্দৌলার সাদৃশ্য রয়েছে।
ঘ। ষড়যন্ত্রকারীদের মোকাবিলার ক্ষেত্রে জয়-পরাজয়ের দিক থেকে উদ্দীপকের হুমায়ুনের পরিণতি এবং নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরিণতি ভিন্ন ধারায় প্রবহমান। ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরিণতি ছিল খুবই করুণ। অল্প বয়সে সিংহাসনে আরোহণের পর থেকে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের জালে আটকা পড়ে তাঁকে বরণ করতে হয় নির্মম পরিণতি। ষড়যন্ত্রকারী আত্মীয়স্বজন ও অমাত্যবর্গের কারণে তাঁকে হারাতে হয় সিংহাসন। অবশেষে মৃত্যুই হয় তাঁর শেষ পরিণতি। উদ্দীপকের সম্রাট হুমায়ুন ষড়যন্ত্রের মুখোমুখি হলেও তাঁকে করুণ পরিণতির সম্মুখীন হতে হয় না। উদ্দীপকের অল্পবয়সি সম্রাট হুমায়ুনও ক্ষমতারোহণের পর কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হন। কিন্তু তিনি রাজকার্য পরিচালনা করতে গিয়ে সিরাজউদ্দৌলার মতো বেসামাল হয়ে পড়েননি। সম্রাট হুমায়ুনের স্বজনরা তাঁর বিরোধিতা করলেও তিনি বিব্রত না হয়ে শক্ত হাতে তা দমন করে শাসনকার্য পরিচালনা করতে সক্ষম হন। নাটকের নবাব সিরাজউদ্দৌলা মানবীয় গুণাবলিতে আচ্ছন্ন হয়ে শাসনকার্যে কঠোর হতে পারেননি। তিনি শওকতজঙ্গ ও মিরজাফরকে যথার্থ শাস্তি দেননি, ঘসেটি বেগমের প্রতিও ছিলেন স্বভাবজাত দুর্বল। আর তিনি নিজের বিশ্বাসঘাতক অমাত্যদের সরলমনে বিশ্বাস করেছিলেন। তাই তাঁর ভাগ্যে জুটেছে করুণ পরিণতি তথা মৃত্যু। ঐতিহাসিক এমন নির্মম বাস্তবতার প্রেক্ষিতে বলা যায়, ‘উদ্দীপকের হুমায়ুনের শেষ পরিণতি এবং নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরিণতি ভিন্ন ধারায় প্রবহমান।’— প্রশ্নোত্ত মন্তব্যটি সঠিক ও যথার্থ।
সিরাজউদ্দৌলা নাটকের প্রশ্ন উত্তর -০৯
বর্গি এলো খাজনা নিতে মারল মানুষ কত। পুড়ল শহর, পুড়ল শ্যামল গ্রাম যে শত শত। হানাদারের সঙ্গে জোরে লড়ে মুক্তিসেনা, তাদের কথা দেশের মানুষ কখনো ভুলবে না।
ক. সিরাজউদ্দৌলার হত্যাকারীর নাম কী?
খ. আমরা এমন কিছু করলাম, যা ইতিহাস হবে।”- উক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
গ. উদ্দীপকটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের কোন দিকটিকে নির্দেশ করে? আলোচনা করো।
ঘ. উদ্দীপকের মুক্তিসেনা এবং ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের সিরাজউদ্দৌলা একই সূত্রে গাঁথা।” —মন্তব্যটির যথার্থতা প্রমাণ করো।
৯ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক। সিরাজউদ্দৌলার হত্যাকারীর নাম মোহাম্মদি বেগ।
খ। ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে ইংরেজ সেনাপতি রবার্ট ক্লাইভ এ উক্তিটি করেছেন। নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে সিংহাসনচ্যুত করে বাংলার সিংহাসন করায়ত্ত করতে চায় বিশ্বাসঘাতকের দল। তাই নিজ নিজ সংকীর্ণ স্বার্থকে বাস্তবে রূপদান করার জন্য তারা ইংরেজদের সাথে একটি ঘৃণ্য চুক্তি করে। এ ঘটনার মাধ্যমেই পাকভারত উপমহাদেশে ইংরেজদের দীর্ঘ শাসনের বীজ রোপিত হয়। চুক্তিপত্রে একেক করে জগৎশেঠ, মিরজাফর, রাজবল্লভ সবাই স্বাক্ষর দেয়। এই চুক্তির মাধ্যমে বাংলার পরাধীনতার পথ সুগম হয়। এ সনদই শত্রুদের বিজয় বার্তা ঘোষণা করে ১৭৫৭ সালে ২৩শে জুন ঐতিহাসিক পলাশির প্রান্তরে যা পাকভারতকে সুদীর্ঘ পরাধীনতার জালে আবদ্ধ করে। উক্তিটি এ ইঙ্গিত বহন করে।
গ। উদ্দীপকের বর্গিরা ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রতিনিধিত্ব করে। দৗলা’ নাটকের ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ইংরেজ সেনাপতি ও কর্মকর্তারা এ দেশে বাণিজ্য করার নামে এ দেশের মানুষের সহায় সম্পদ অবাধ লুণ্ঠনের অপচেষ্টা চালায়। তারা সুযোগ পেলেই এ দেশের লবণ চাষি কৃষকের লবণ লুণ্ঠন, কৃষকের কৃষিপণ্য বিনা টাকায় ছিনিয়ে নিত। তাদের অবাধ লুণ্ঠনের কারণে বাংলার মানুষ তৎকালে হিমশিম খাচ্ছিল। ইংরেজ বেনিয়াদের এই অপকর্মের দিকটি ছিল ঠিক বর্গি লুটেরাদের মতোই।
উদ্দীপকের বর্গিরা এ দেশের মানুষের ওপরে খাজনা আদায় ও নানা অজুহাতে অর্থ-সম্পদের অবাধ লুণ্ঠন চালায়। ওই বর্গি দস্যুদের মতোই ১৯৭১ সালে এ দেশের মানুষের জানমাল লুণ্ঠন ও ধ্বংস করার অপকর্মে লিপ্ত হয় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। পাকিস্তানি হানাদারদের অপকর্ম ও অন্যায় আচরণ রুখে দিতে এ দেশের সূর্যসন্তান মুক্তিসেনা শহিদ হন, যুদ্ধ করে এ দেশকে স্বাধীন করেন। উদ্দীপকের বর্গিদের মতো ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের ইংরেজ বণিক দস্যুরা এ দেশের মানুষের অর্থ-সম্পদ লুণ্ঠন করে। তাদের অবাধ লুণ্ঠন অব্যাহত রাখার জন্য বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজের পতন ঘটায় ষড়যন্ত্রমূলক অন্যায্য ও প্রহসনের যুদ্ধে। এসব দিক বিচারে, উদ্দীপকের বর্গিরা ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের ইংরেজ ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রতিনিধিত্ব করে বলা যায়।
ঘ। ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য যুদ্ধ করে শহিদ হওয়ার দিক থেকে উদ্দীপকের মুক্তিসেনা এবং ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের সিরাজউদ্দৌলা একই সূত্রে গাঁথা।’— মন্তব্যটি যথার্থ। দেশের বীর দেশপ্রেমিক সাহসী সন্তানরা দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে দেশের স্বাধীনতা অর্জন ও দেশের মানুষের অধিকার সুরক্ষার জন্য আগ্রাসী দেশবিরোধী অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হন। প্রয়োজনে দেশের স্বাধীনতার জন্য লড়াই-সংগ্রাম করে রণাঙ্গনে জীবন উৎসর্গ করে শহিদ হন। ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের দেশপ্রেমিক নবাব সিরাজউদ্দৌলা এবং উদ্দীপকের মুক্তিসেনারা এ দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য যুদ্ধ করে জীবন উৎসর্গ করে গেছেন। ১৯৭১ সালে হানাদার পাকিস্তানি মিলিটারিরা অন্যায় যুদ্ধে এ দেশের লাখ লাখ মানুষকে হত্যা করে। এ দেশের মানুষের বসতঘর জ্বালিয়ে- পুড়িয়ে ছারখার করে দেয়। ওই সকল দেশবিরোধী স্বাধীনতা ক্ষুণ্নকারী হানাদারের অপকর্ম রুখে দিতে এ দেশের দেশপ্রেমিক সাহসী বীর মুক্তিসেনা প্রাণপণে মুক্তিসংগ্রামে লিপ্ত হন। অনেক মুক্তিসেনা বীরত্বপূর্ণ লড়াই করে শত্রুর হাতে শহিদ হন। কিন্তু তাঁরা পিছপা হননি। একইভাবে ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের দেশপ্রেমিক স্বাধীনতাপ্রেমিক বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলা দেশের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য ১৭৫৭ সালে পলাশির প্রান্তরে যুদ্ধ করে করুণ পরিণতির মুখে পতিত হন। ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের বীর দেশপ্রেমিক সিরাজ শত্রুর অন্যায় দাবি মেনে নিয়ে জীবন বাঁচাননি। তিনি ইংরেজ বেনিয়া ও এ দেশীয় ষড়যন্ত্রকারী অশুভ শক্তিকে রুখে দিতে যুদ্ধ করে শহিদ হন। তাঁর কাছে নিজের জীবনের চেয়ে দেশের মানুষের অধিকার রক্ষার জন্য লড়াই করে জীবন উৎসর্গ করাই শ্রেয় বলে প্রতীয়মান হয়েছে। সেদিক থেকে উদ্দীপকের ১৯৭১ সালের হানাদার অপশক্তির সাথে দেশপ্রেমিক মুক্তিসেনাদের শহিদ হওয়ার অনুষঙ্গে মিল রয়েছে। এসব দিক বিবেচনায় প্রশ্নোত্ত মন্তব্যটি যথার্থ বলা যায়।
সিরাজউদ্দৌলা নাটকের প্রশ্ন উত্তর -১০
বিথি ও সাথি দুই বোন। দীর্ঘদিন বিদেশে থেকে বিথি যখন দেশে ফিরল তখন তার বাবার মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর পূর্বে বৃদ্ধ তার সম্পত্তির কিছু অংশ সাথিকে দান করে যান। এই নিয়ে বিথি ভীষণ গোলযোগ সৃষ্টি করে। সে মনে করে বৃদ্ধ পিতাকে ভুলিয়ে সাথি সম্পত্তি আত্মসাৎ করেছে। সম্পত্তির জন্য সে ভয়ংকর হয়ে ওঠে এবং সাথির কলেজপড়ুয়া ছেলের পেছনে সন্ত্রাসী লেলিয়ে দেয়।
ক. সিরাজের কোন সেনাপতি যুদ্ধে প্রথম মৃত্যুবরণ করেন?
খ. “আমার সারা অস্তিত্ব জুড়ে কেবল যেন দেয়ালের ভিড়।” —উক্তিটির সম্প্রসঙ্গ ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকের বিথি ও ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের ঘসেটি বেগম চরিত্রের তুলনা করো।
ঘ. “বিথি ও সাথির দ্বন্দ্ব নিতান্তই পারিবারিক। পক্ষান্তরে ঘসেটি বেগম ও সিরাজের দ্বন্দ্ব অনেকটা রাজনৈতিক।” —উক্তিটির যথার্থতা মূল্যায়ন করো।
১০ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক। সিরাজের সেনাপতি নৌবে সিং হাজারি যুদ্ধে প্রথম মৃত্যুবরণ করেন।
খ। ‘আমার সারা অস্তিত্ব জুড়ে কেবল যেন দেয়ালের ভিড়’- উক্তিটিতে নবাব সিরাজউদ্দৌলার বেদনাভারাক্রান্ত ও ঘনায়মান অসহায় অবস্থার প্রকাশ পেয়েছে। শাসনকার্য পরিচালনার শুরু থেকেই নবাব সিরাজউদ্দৌলা চিন্তা ও কাজের মাঝে বাধা পেয়েছেন। ঘরে-বাইরে ষড়যন্ত্র নবাবের শাসনকার্য পরিচালনায় প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। তাই ঘরে, বাইরে, দরবারে, সবখানে তাঁর মনে হয়েছে শুধু প্রতিবন্ধকতার দেয়াল। আর এই দেয়ালগুলো তাঁর অস্তিত্বকে সংকটে ফেলেছে, যা আলোচ্য উক্তিতে প্রকাশ পেয়েছে।
গ। স্বার্থবাদী চেতনার দিক থেকে উদ্দীপকের বিথি এবং ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের ঘসেটি বেগম সাদৃশ্যপূর্ণ। ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে ঘসেটি বেগম ক্ষমতালোভী চরিত্র। তিনি নবাব সিরাজউদ্দৌলার আপন খালা হয়েও নবাবের ধ্বংস কামনা করেন। নবাবকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য তিনি গোপনে ষড়যন্ত্র করেন। এছাড়া মিরজাফর ও তার দোসরদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ইংরেজদের সহযোগিতা করেন তিনি। ঘসেটি বেগমের এসব করার মূল কারণ ক্ষমতার প্রতি প্রবল আকর্ষণ। তিনি মনে করেন, ক্ষমতা থেকে নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে সরাতে পারলে শাসনকার্যে তার প্রভাব বৃদ্ধি পাবে।
ঘ। পলাশির যুদ্ধে নবাবের বিশাল সৈন্যবহর থাকার পরও ইংরেজ চাতুর্যের কাছে নবাবের পরাজয় ঘটায় প্রশ্নোত্ত মন্তব্যটি যথার্থ বলে প্রতীয়মান হয়। ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে পলাশির প্রান্তরে নবাবের বিপুল সমরসামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও নবাবকে পরাজয় বরণ করতে হয়েছে। কেননা নবাবের প্রধান সেনাপতি মিরজাফর ও তার অনুসারীরা নবাবের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। তারা ইংরেজদের ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পড়ে নবাবের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল যুদ্ধের ময়দানে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে ছিল। ফলে ইংরেজরা সহজেই নবাবের বিরাট বাহিনীকে পরাজিত করতে পেরেছিল। উদ্দীপকে লক্ষ্মণ সেনের বিরাট সৈন্যবাহিনী ছিল। তাদের সামনে বখতিয়ার খলজির সামান্য সতেরো জন সৈন্য টিকে থাকার কথা নয়। কিন্তু বখতিয়ার খলজি চাতুর্য, সাহস ও শৃঙ্খলা দিয়ে সেই বাহিনীকে পরাস্ত করেছে। লক্ষ্মণ সেনের বাহিনী যুদ্ধ না করে পালিয়ে গিয়েছে। প্রকৃতার্থে সেদিন বখতিয়ার খলজিকে যুদ্ধ করতে হয়নি, বরং যুদ্ধের অভিনয় করে সহজেই রাজ্য লাভ করেছে সে। উদ্দীপকে যেমন লক্ষ্মণ সেনের বিরাট সৈন্যবাহিনী যুদ্ধ না করে সহজেই রাজ্য ছেড়ে দিয়েছে, তেমনি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকেও সেনাপতি মিরজাফর ও তার অনুসারীরা যুদ্ধ না করে শত্রুকে সহজেই জিতিয়ে দিয়েছে। ফলে “মূলত সেদিন যুদ্ধ হয়নি, হয়েছে যুদ্ধের অভিজ্ঞতা।” —এই উক্তিটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের ক্ষেত্রেও সমভাবে প্রযোজ্য।
সিরাজউদ্দৌলা নাটকের প্রশ্ন উত্তর -১১
মহাকবি বাল্মীকির ‘রামায়ণ’ এক অর্থে আর্য ও অনার্য সংস্কৃতির প্রতিভূ। রামায়ণের কাহিনিকে নব আঙ্গিকে ঢেলে সাজান মাইকেল মধুসূদন দত্ত। মেঘনাদ চরিত্রটি তাঁর এক অসাধারণ সৃষ্টি। সীমাহীন দেশপ্রেম ও অসাধারণ বীরত্ব সত্ত্বেও গৃহশত্রু বিভীষণের কারণে তাকে করুণ পরিণতি বরণ করতে হয়। মেঘনাদের পরাজয়ের মধ্য দিয়ে রাম-রাবণ যুদ্ধে বিজয় সূচিত হয় আর্য শক্তির।
ক. “আমাদের কারো অদৃষ্ট মেঘমুক্ত থাকবে না শেঠজি।”— উক্তিটি কার?
খ. “আমার সারা অস্তিত্ব জুড়ে কেবল দেয়ালের ভিড়।”— বুঝিয়ে দাও।
গ. উদ্দীপকে ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের কোন দিকটি ফুটে উঠেছে? আলোচনা করো।
ঘ. ‘‘উদ্দীপকের মেঘনাদ এবং ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের সিরাজ চরিত্র দেশপ্রেমের এক অনুপম প্রতীক।”— বিশ্লেষণ করো।
১১ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক। ‘‘আমাদের কারো অদৃষ্ট মেঘমুক্ত থাকবে না শেঠজি।” – উক্তিটি মিরজাফরের।
খ। কপি করে দিবো।
গ। উদ্দীপকে ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে বর্ণিত বিশ্বাসঘাতকতার প্রেক্ষিতে দেশপ্রেমিক শক্তির পরাজয়ের দিকটি ফুটে উঠেছে। ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে নবাব সিরাজউদ্দৌলা করুণ পরিণতি বরণ করেছিলেন। প্রবল সমরসামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও দরবারের বিশ্বাসঘাতক অমাত্যবর্গের কারণে নবাব সিরাজউদ্দৌলা পলাশির যুদ্ধে ইংরেজদের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। তাঁর প্রধান সেনাপতি মিরজাফর তার সহযোগীদের নিয়ে ইংরেজদের পক্ষে কাজ করেছিল। ফলে নবাব পলাশির যুদ্ধে ইংরেজদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারেননি। উদ্দীপকে গৃহশত্রুর কারণে দেশপ্রেমিক শক্তির পরাজয়ের দিকটি তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে মাইকেল মধুসূদন দত্ত দেখিয়েছেন মেঘনাদ প্রবল দেশপ্রেম নিয়ে কীভাবে গৃহশত্রুর চক্রান্তের শিকার হয়েছিল। বিশ্বাসঘাতকতার বলি হয়ে মেঘনাদের পরাজয় ঘটে এবং রাম-রাবণের বিজয় সূচিত হয়। আর উদ্দীপকের এ দিকটি ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের মিরজাফরের বিশ্বাসঘাতকতা ও নবাবের পরাজয়ের দিকটির প্রতিফলনই নির্দেশ করে।
ঘ। উদ্দীপকের মেঘনাদ এবং ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের নবাব সিরাজউদ্দৌলা উভয়ই দেশের জন্য করুণ পরিণতি বরণ করায় প্রশ্নোত্ত মন্তব্যটির যথার্থতা প্রতিপন্ন হয়েছে। ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে নবাব সিরাজউদ্দৌলা ছিলেন দেশপ্রেমে বলীয়ান। তিনি দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আমৃত্যু লড়াই করেছেন। অমাত্যবর্গের বিশ্বাসঘাতকতা ও প্রাসাদ ষড়যন্ত্র এবং ইংরেজ বেনিয়াদের আগ্রাসন তাঁকে টলাতে পারেনি। তাই পলাশির যুদ্ধে পরাজিত হয়েও তিনি দেশপ্রেমিক জনতাকে আহ্বান জানিয়েছেন ইংরেজদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য । উদ্দীপকের মেঘনাদ দেশপ্রেমের এক অনুপম দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। পৌরাণিক কাহিনি ‘রামায়ণ’-এ বাল্মীকি যে আর্য-অনার্যের দ্বন্দ্ব তুলে ধরেছেন তার একটি চরিত্র মেঘনাদকে মাইকেল মধুসূদন দত্ত নতুন রূপে উপস্থাপন করেছেন। মেঘনাদ সীমাহীন দেশপ্রেম এবং অসাধারণ বীরত্ব সত্ত্বেও পরাজিত হয়েছিলেন আর্য শক্তির কাছে। গৃহশত্রু বিভীষণের বিশ্বাসঘাতকতা তাঁকে পরাস্ত করলেও তাঁর দেশপ্রেমিক সংকল্প থেকে তাঁকে টলাতে পারেনি। ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে নবাব যেমন দৃঢ়চিত্ত ছিলেন নিজের সংকল্পে, তেমনি উদ্দীপকের মেঘনাদও নিজের সংকল্পে দৃঢ়চিত্ত। তাঁরা দুজনেই সীমাহীন দেশপ্রেমের অধিকারী এবং সাহসী বীর। বিশ্বাসঘাতকদের চাতুর্যের কাছে যদিও তাঁরা পরাজিত হয়েছেন, তবুও মাথা নত করেননি। তাঁদের এই দেশপ্রেম ইতিহাসে অতুলনীয়। তাই প্রশ্নোত্ত মন্তব্যটি যথার্থ বলে প্রতীয়মান।
আশাকরি আমাদের আজকের আর্টিকেল টি আপনাদের ভালো লেগেছে। প্রথম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত সকল শ্রেণির প্রশ্নোত্তর ও সাজেশন পেতে আমাদের সাথেই থাকুন। ভালো থাকবেন সবাই, ধন্যবাদ। এছাড়াও আমাদের কোন আপডেট মিস না করতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে আমাদের সাথে ফেসবুকে কানেক্ট থাকতে পারেন।