আপনি কি বিজ্ঞান বিষয়ক রচনা খুজতেছেন? তাহলে আজকের আর্টিকেলে আপনাদের স্বাগতম। আজকের আর্টিকেলে একসাথে সবগুলো বিজ্ঞান বিষয়ক রচনা শেয়ার করা হবে। কথা না বাড়িয়ে তাহলে চলুন শুরু করি।
বিজ্ঞান বিষয়ক রচনা #০১ – মানবকল্যাণে বিজ্ঞান
মানবকল্যাণে বিজ্ঞান
ভূমিকা : বর্তমান যুগ বিজ্ঞানের জয়যাত্রার এক যুগান্তকারী যুগ। বিজ্ঞানের বদৌলতে মানুষ আজ ছুটে চলেছে গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে। বিজ্ঞান মানুষকে দিয়েছে অভাবনীয় গতি, সভ্যতার অগ্রযাত্রাকে করেছে দ্রুততর ও বহুমাত্রিক । বিজ্ঞান ঘুচিয়ে দিয়েছে দূর-দূরান্তরের ব্যবধান; মানুষকে দিয়েছে অনিঃশেষ সম্ভাবনা।
মানবসভ্যতায় বিজ্ঞান : প্রাচীনকালে গুহাবাসী মানুষ ছিল প্রকৃতির হাতের অসহায় ক্রীড়নক। আদিম মানুষ যখন প্রথম পাথর দিয়ে হাতিয়ার তৈরি করে, পাথরে পাথর ঘষে আগুন জ্বালায় তখন থেকেই শুরু হয় মানুষের বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার। তারপর যুগ যুগ ধরে বিজ্ঞানকে ব্যবহার করেই মানুষ সমগ্র পৃথিবীর ওপর বিস্তার করেছে কর্তৃত্ব।
মানবজীবনে বিজ্ঞানের বহুমাত্রিক অবদান : মানবজীবনের প্রতিটি শাখা আজ বিজ্ঞানের বহুবিধ অবদানে সমৃদ্ধ। যাতায়াত, কৃষি, শিক্ষা, চিকিৎসা, প্রকৌশলসহ মানবজীবনের সবক্ষেত্রে বিজ্ঞানের রয়েছে অপরিহার্য ভূমিকা । বিজ্ঞানকে এখন বিভিন্ন ভাগে ভাগ করে আরও বিশদভাবে ব্যাখ্যা ও প্রয়োগ করা হচ্ছে।
কৃষিক্ষেত্রে বিজ্ঞান : বিজ্ঞানের বদৌলতে কৃষিতে মানুষ এনেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। মানুষ আবিষ্কার করেছে ট্রাক্টরসহ নানারকম কৃষি-সরঞ্জাম। পাম্প ব্যবহার করে ভূ-অভ্যন্তর থেকে পানি উত্তোলন করে সেচ-কাজ সম্পন্ন করছে। কীটনাশকের সাহায্যে পোকামাকড় ও পঙ্গপালের হাত থেকে ফসল রক্ষা করছে। বর্তমানে ক্লোনিং পদ্ধতি ব্যবহার করে উন্নত জাতের অধিক উৎপাদনশীল বীজ তৈরি করা হচ্ছে। মরুভূমির মতো ঊষর জায়গায়ও কৃষিকাজ সম্ভব হচ্ছে।
যাতায়াত ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিজ্ঞান : বিজ্ঞানের অবদানে মানুষ আবিষ্কার করেছে দ্রুতগামী যানবাহন, বুলেট ট্রেন, শব্দাতিগ উড়োজাহাজ। আজ মানুষ পৃথিবীর একপ্রান্তে বসে অপরপ্রান্তের মানুষের সাথে টেলিফোনে কথা বলতে পারে। টেলিভিশন, ফ্যাক্স, রেডিও, ই-মেইল, মুঠোফোন ইত্যাদির মাধ্যমে সারা বিশ্বের খবর যে-কোনো মুহূর্তে পেয়ে যেতে পারে। শুধু তাই নয়, রকেটে করে পৃথিবীর বাইরে মহাকাশে পাড়ি জমাতে প্রস্তুত এখন মানুষ। যোগাযোগের ক্ষেত্রে আলোকতত্ত্ব নিয়ে এসেছে নতুন প্রযুক্তি। ইন্টারনেটের মাধ্যমে লেনদেন করা হচ্ছে কম্পিউটারের তথ্যাবলি। এককথায় বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি সারা বিশ্বকে মানুষের হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে।
চিকিৎসা-ক্ষেত্রে বিজ্ঞান : চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের সাফল্যগুলোও কম বিশ্বয়কর নয়। জন্মপূর্ব রোগ নির্ণয়ের সাফল্যের ক্ষেত্রে বড় রকমের উত্তরণ ঘটেছে। জিন-প্রতিস্থাপন চিকিৎসা প্রায়োগিক ক্ষেত্রে এক বিশাল সম্ভাবনা হাজির করেছে। চোখের কর্নিয়া থেকে শুরু করে যকৃতের মতো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপনে চিকিৎসা-বিজ্ঞানের সাম্প্রতিক সাফল্য অভাবনীয়। চিকিৎসা-বিজ্ঞানে আলোকতন্তু বিদ্যা ব্যবহারের ফলে মানবদেহের অভ্যন্তরস্থ ফুসফুস, পাকস্থলী, শিরা, ধমনি ইত্যাদির অবস্থা যন্ত্রের সাহায্যে অবলোকন করে নির্ভুলভাবে রোগ নির্ণয় করা সম্ভব হচ্ছে। অতিকম্পনশীল শব্দ ও লেজারকে কাজে লাগিয়ে বিজ্ঞান চিকিৎসাক্ষেত্রে বিপ্লব সাধন করেছে। এর ফলে শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গের অবস্থা দেখা যেমন সম্ভব হচ্ছে, তেমনি মূত্রথলি ও পিত্তকোষের পাথর চূর্ণ করার কাজেও এর সফল ব্যবহার হচ্ছে। বহুমূত্র রোগীর অন্ধত্ব প্রতিরোধে ব্যবহৃত হচ্ছে লেজাররশ্মি। কম্পিউটার প্রযুক্তি চিকিৎসা-বিজ্ঞানকে নিয়ে এসেছে সর্বাধুনিক পর্যায়ে। এর মাধ্যমে ছবি তুলে রোগ নির্ণয় সম্ভব হচ্ছে।
শিক্ষাক্ষেত্রে বিজ্ঞান : শিক্ষাক্ষেত্রেও বিজ্ঞানের অবদান অনস্বীকার্য। শিক্ষার প্রয়োজনীয় উপাদানগুলোর প্রায় সবই বিজ্ঞানের উদ্ভাবন। বর্তমানে বিজ্ঞান শিক্ষাব্যবস্থাকে করেছে আরও আধুনিক ও উন্নত। এখন বিভিন্ন শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান প্রচারের মাধ্যমে রেডিও-টেলিভিশন শিক্ষার মাধ্যমে পরিণত হয়েছে। কম্পিউটার বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় যুক্ত করেছে এক নতুন শিক্ষাপদ্ধতি।
আবহাওয়ায় বিজ্ঞান : আবহাওয়ার খবরাখবর বের করতে গিয়ে বিজ্ঞান তার প্রচণ্ড ক্ষমতার পরিচয় দিয়েছে। এখন ৭/৮ দিন আগে থেকেই আবহাওয়ার পূর্বাভাস জানিয়ে আসন্ন ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের হাত থেকে জীবন ও সম্পদ রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে। তা ছাড়াও কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে খনিজ সম্পদ, তেল ও গ্যাসের উৎস, মাটির উপাদান ও জলজ সম্পদ সম্পর্কে জানা যাচ্ছে। জানা যাচ্ছে, পঙ্গপালের আক্রমণের আশঙ্কা সম্পর্কে।
বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ : বিজ্ঞান মানবসভ্যতার উন্নতির সর্ববৃহৎ হাতিয়ার। কিন্তু তাই বলে বিজ্ঞান শুধু মানুষের উপকারই করেনি। স্বয়ংক্রিয় বৈজ্ঞানিক যন্ত্র মানুষের কাজ সম্পাদন করতে শুরু করার পরপরই অসংখ্য মানুষ বেকারে পরিণত হয়েছে। বৈজ্ঞানিক যন্ত্রসংবলিত বড় বড় শিল্প-কারখানা ও মোটরচালিত গাড়ি ও যন্ত্রপাতি, বৈজ্ঞানিক গবেষণায় ব্যবহৃত বিভিন্ন তেজস্ক্রিয় পদার্থ অনেক সময় পরিবেশ ও মানুষের ক্ষতি করছে। পরিবেশদূষণের ফলে পৃথিবীর উত্তাপ বেড়ে যাচ্ছে ও মেরুদ্বয়ের বরফ গলা শুরু করছে। মানুষ বিজ্ঞানের অপব্যবহার দেখে চমকে উঠেছিল দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময়। তখন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করে হিরোশিমা-নাগাসাকির মতো শহর ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছিল। তাই প্রশ্ন উঠেছে—বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ?
উপসংহার : বিজ্ঞানের অপপ্রয়োগ হলেও বিজ্ঞানের অবদানকে মানুষ কখনোই অস্বীকার করতে পারবে না। সচেতন শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের কাজ হলো বিজ্ঞানের সার্থক ও ইতিবাচক প্রয়োগ ঘটানো। বিজ্ঞানের আলোকে মানবজীবনকে আলোকিত করা। বিজ্ঞানের অপব্যবহার রোধে সচেতন হয়ে বিজ্ঞানকে কাজে লাগাতে পারলে তা মানবজীবনে আরও ফলপ্রসূ অবদান রাখতে সক্ষম হবে।
বিজ্ঞান বিষয়ক রচনা #০২ – কৃষিকাজে বিজ্ঞান
কৃষিকাজে বিজ্ঞান
মানবজীবনে কৃষির গুরুত্ব : কৃষি মানুষের অস্তিত্বের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত। মানবজীবন ও মানবসমাজে এর গুরুত্ব অপরিসীম। জীবনযাত্রার ক্ষেত্রে এটি মানুষের আদিমতম জীবিকার উপায়। দেশে দেশে কৃষিই সমাজের মেরুদণ্ড, কৃষিই সমাজের ভিত্তি। স্বভাবতই কৃষির ক্রমোন্নতিতেই সমাজের ও দেশের সর্বাঙ্গীণ উন্নতি। এই উন্নতিতে অনন্য ও অভাবনীয় ভূমিকা রেখেছে বিজ্ঞান। আজকের বিশ্বে প্রতিটি ক্ষেত্রের মতো কৃষিক্ষেত্রেও বিজ্ঞানই আজ বাড়িয়ে দিয়েছে তার সুদূরপ্রসারী কল্যাণী হাত।
কৃষির আধুনিকায়নে বিজ্ঞান : আঠারো শতকের শেষদিকে এবং উনিশ শতকের গোড়ার দিকে শিল্পবিপ্লবের মাধ্যমে কৃষির আধুনিকায়নের সূচনা ঘটে। এর ফলে কৃষকেরা কৃষিক্ষেত্রে উন্নত ধরনের যন্ত্রপাতি ও কৃষিপদ্ধতির সাথে পরিচিত হয়। জন্তু আর কাঠের লাঙলের পরিবর্তে কৃষকদের হাতে আসে কলের লাঙল, ট্রাক্টর ও পাওয়ার টিলার। বিজ্ঞানের কল্যাণে উন্নত দেশগুলোতে জমিকর্ষণের পুরোনো পদ্ধতিগুলো লোপ পেয়েছে। সেচব্যবস্থাতেও বিজ্ঞান অনেক পরিবর্তন এনেছে। কৃষকদের এখন ফসলের জন্যে প্রকৃতির মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হয় না। গভীর ও অগভীর নলকূপের সাহায্যে জমিতে পানিসেচের ব্যবস্থা করতে পারে। এ ক্ষেত্রে সেচের জন্যে ভূগর্ভস্থ পানি তুলতে ব্যবহৃত হচ্ছে বিদ্যুৎশক্তি চালিত পাম্প। অতিবৃষ্টিও আজ কৃষককে ভীত করছে না।
বিজ্ঞানের বদৌলতে জমির অতিরিক্ত জল নিষ্কাশন আজ অত্যন্ত সহজ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিজ্ঞানীরা এখন কৃত্রিম বৃষ্টিপাত ঘটিয়ে কৃষিক্ষেত্রে নতুন অকল্পনীয় অগ্রগতি অর্জন করেছেন। উন্নতমানের বীজ উৎপাদনে বিজ্ঞান কৃষিক্ষেত্রে যে ভূমিকা রেখেছে তাও অভাবনীয়। বিশেষ করে কৃত্রিম উপায়ে উচ্চফলনশীল বীজ উৎপাদনে সাফল্য বিস্ময়কর। এসব বীজ সাধারণ বীজের তুলনায় ফসল উৎপাদনে তুলনামূলকভাবে সময়ও কম নেয়। সুতরাং বীজ নিয়ে কৃষকদের অতীতের অনিশ্চয়তা দূর করেছে বিজ্ঞান। শক্তিশালী রাসায়নিক সার আবিষ্কৃত হওয়ায় ফসল উৎপাদনে এসেছে অভূতপূর্ব সাফল্য। সাম্প্রতিককালে বিশ্বের বৃষ্টিহীন শুষ্ক মরু অঞ্চলে চাষাবাদ শুরু করার প্রচেষ্টা চলছে বিজ্ঞানের সহায়তায়। সেদিন দূরে নয় যেদিন এ ক্ষেত্রেও বিজ্ঞানীরা সাফল্য অর্জন করবেন।
🔆🔆 আরও দেখুন: চারিত্রিক সনদপত্র লেখার নিয়ম (Word+PDF ফাইল)
🔆🔆 আরও দেখুন: চিঠি লেখার নিয়ম। পত্র লেখার সঠিক নিয়ম জানুন
🔆🔆 আরও দেখুন: চাকরি থেকে অব্যাহতির জন্য আবেদন (নমুনা উদাহরণ সহ)
উন্নত বিশ্বের কৃষি : উন্নত দেশগুলোর কৃষিব্যবস্থা সম্পূর্ণ বিজ্ঞাননির্ভর। জমিতে বীজ বপন থেকে শুরু করে ঘরে ফসল তোলা পর্যন্ত সমস্ত কাজেই রয়েছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ছোঁয়া। বিভিন্ন ধরনের বৈজ্ঞানিক কৃষিযন্ত্র, যেমন : মোয়ার (শস্য-ছেদনকারী যন্ত্র), রপার (ফসল কাটার যন্ত্র), বাইন্ডার (ফসল বাঁধার যন্ত্র), থ্রেশিং মেশিন (মাড়াই যন্ত্র), ম্যানিউর স্প্রেডার (সার বিস্তারণ যন্ত্র) ইত্যাদি উন্নত দেশগুলোর কৃষিক্ষেত্রে এনেছে বৈপ্লবিক সাফল্য।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া প্রভৃতি দেশের খামারে একদিনে ১০০ একর পর্যন্ত জমি চাষ হচ্ছে কেবল এক-একটি ট্রাক্টরের মাধ্যমে। সেগুলো আবার একসাথে তিন- চারটি ফসল কাটার যন্ত্রকে একত্রে কাজে লাগাতে সক্ষম। তারা বিভিন্নভাবে কৃষিকাজের এমন অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করছে যার ফলে প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা সত্ত্বেও তারা কৃষিকাজে ব্যাপকভাবে অগ্রগামী। যেমন বলা যায় জাপানের কথা। জাপানে জমির উর্বরাশক্তি বাংলাদেশের তুলনায় এক-চতুর্থাংশ। কিন্তু বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে তারা এ দেশের তুলনায় ৬ গুণ বেশি ফসল উৎপাদন করছে।
কৃষি ও বাংলাদেশ : বাংলাদেশ একটি কৃষিনির্ভর দেশ। এ দেশের মাটি ও জলবায়ু বিশ্বের অন্য দেশগুলো অবস্থা উৎপাদনের বৈজ্ঞানিক কৃষকেরা তার কাঠের লাঙল আর একজোড়া জীর্ণ-শীর্ণ বলদ নিয়ে হচ্ছে। বর্তমানে ঘুচিয়ে ফসল তুলনায় কৃষির অনুকূলে। কিন্তু উন্নত দেশগুলো যখন প্রতিকূল নেশায় মেতেছে, সেখানে বাংলাদেশের চেয়ে আছে আকাশের পানে বৃষ্টির প্রতীক্ষায়। তবে ধীরে ধীরে এ অবস্থার পরিবর্তন বাংলাদেশে জমি চাষের জন্য প্রায় ১ লক্ষ ইঞ্জিন চালিত চাষযন্ত্র ব্যবহৃত হচ্ছে।
এ ছাড়াও কৃষিকাজে ট্রাক্টর, সিডড্রিল (গতখনক), ধান-বুনন যন্ত্র, বিরিড্রাম সিডার, স্প্রেয়ার, উন্নত সেচ-পাম্প, ড্রায়াফ্রাম পাম্প, ট্রেডল পাম্প, রোয়ার পাম্প, শস্যকাটা যন্ত্র, ঘাসকাটা যন্ত্র, মাড়াই যন্ত্র ইত্যাদির ব্যবহার বাড়ছে। এ কথা অবশ্য সত্যি যে বাংলাদেশেও কৃষি নিয়ে গবেষণা হচ্ছে এবং বিভিন্ন ধরনের গবেষণায় সফলতা এসেছে। কিন্তু বাংলাদেশের শতকরা আশিভাগ কৃষক এখনও সনাতন পদ্ধতিতে কৃষিকাজ করে চলেছে। শিক্ষা, সচেতনতা, মূলধন, পুঁজি ইত্যাদির অভাবে তারা কৃষিকাজে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। তারা শ্রম দিচ্ছে কিন্তু উপযুক্ত ফসল পাচ্ছে না। কেননা তারা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কৃষিকাজ করতে পারছে না।
উপসংহার : বিজ্ঞান আজ অসম্ভবকে সম্ভব করেছে। উন্নত দেশগুলোতে বিজ্ঞানের সাহায্যে পাহাড় কেটে জঙ্গল পরিষ্কার করে বিভিন্নভাবে কৃষিজমি তৈরি করা হচ্ছে। ফসল আবাদের প্রতিটি পদক্ষেপে তারা বিজ্ঞানকে কাজে লাগাচ্ছে। এর ফলস্বরূপ তারা কৃষিক্ষেত্রে লাভ করছে বিরাট সাফল্য। কৃষিক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক পন্থা অবলম্বনের ক্ষেত্রে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। সুজলা-সুফলা আমাদের এই দেশে বিজ্ঞানের জাদুর ছোঁয়া আমরা যত বেশি কাজে লাগাতে পারব ততই কৃষি আমাদের দেবে সোনালি ফসলসহ নানা ফসলের সম্ভার। কৃষকদের সচেতনতা, সরকারি ও বেসরকারিভাবে তাদের সাহায্য প্রদান এবং বাংলাদেশে কৃষি নিয়ে বৈজ্ঞানিক গবেষণাই পারে আমাদের স্বপ্ন পূরণ করতে বাংলাদেশকে একটি সুজলা-সুফলা শস্য-শ্যামলা দেশ হিসেবে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করতে।
বিজ্ঞান বিষয়ক রচনা #০৩ – কম্পিউটার
কম্পিউটার
ভূমিকা: আধুনিক বিজ্ঞানের বিস্ময়কর আবিষ্কার হচ্ছে কম্পিউটার। ‘কম্পিউটার’ শব্দটি ইংরেজি। এর অর্থ হলো যন্ত্রগণক। কম্পিউটার যোগ-বিয়োগ, গুণ-ভাগ ইত্যাদি সবধরনের অঙ্ক কষতে পারদর্শী। কিন্তু এর কাজ শুধু গণনা কাজেই সীমাবদ্ধ নয়। তথ্য-উপাত্তের বিশ্লেষণ ও তুলনা করা এবং সিদ্ধান্ত দেওয়ার বিস্ময়কর ক্ষমতা আছে এ যন্ত্রটির। কাজের গতি, বিশুদ্ধতা ও নির্ভরশীলতার দিক থেকে কম্পিউটারের ক্ষমতা মানুষের চেয়ে অনেক বেশি ও অনেক উন্নত। তাই বিশ শতকের শেষপ্রান্তে কম্পিউটার ঘরে, অফিসে, ব্যাংকে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, বিমানে, পত্রিকায়, কারখানায় ইত্যাদি প্রায় সর্বত্র বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে।
কম্পিউটারের আবিষ্কার : আধুনিক কম্পিউটারের জনক ব্রিটিশ গণিতবিদ চার্লস ব্যাবেজ। পাঁচটি অংশে বিভক্ত আধুনিক কম্পিউটারের গঠনকৌশল আবিষ্কারের কৃতিত্বও তার। ১৯৫২ সালে আমেরিকার বিজ্ঞানী জন ডন নিউম্যানের পরিকল্পনা মতে ইলেক্ট্রনিক অটোমেটিক ক্যালকুলেটর আবিষ্কৃত হয়। ১৯৫৪ সাল থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত কম্পিউটার তৈরির কাজ ধাপে ধাপে এগিয়ে চলে।
গঠন ও শ্রেণিবিভাগ : কম্পিউটারের গঠনরীতির প্রতি লক্ষ করলে এর প্রধান দুটি দিক আমাদের নজরে পড়ে। একটি হলো এর যান্ত্রিক সরঞ্জাম এবং অপরটি হলো প্রোগ্রাম সরঞ্জাম। কম্পিউটারের যন্ত্রপাতির সাধারণ নাম ‘হার্ডওয়্যার’। যান্ত্রিক সরঞ্জামের আওতায় আসে তথ্য সংরক্ষণের স্মৃতি, অভ্যন্তরীণ ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার জন্য ব্যবহৃত বহির্মুখ অংশ। কম্পিউটারকে প্রদেয় নির্দেশাবলির নাম ‘প্রোগ্রাম’। প্রোগ্রাম ইত্যাদিকে বলা হয়। ‘সফটওয়্যার’। কাজের ধরন বা পদ্ধতি অনুসারে কম্পিউটার দু ধরনের : ডিজিটাল ও এনালগ। কাজের গতি এবং গঠন-প্রকৃতি অনুসারে কম্পিউটারকে কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করা যায়। যেমন : সুপার কম্পিউটার, মেইনফ্রেম কম্পিউটার, মিনি কম্পিউটার ও মাইক্রো কম্পিউটার।
ব্যবহার : কম্পিউটার মানবজীবনের নানা ক্ষেত্রে দিনদিন খুলে দিচ্ছে নিত্যনতুন দিগন্ত। কম্পিউটার শুধু ব্যবসা-বাণিজ্যের হিসাব-নিকাশই কষে না, নানা কাজে কম্পিউটারের রয়েছে ব্যাপক ব্যবহার। বহু মানুষের কাজ সে একাই করে; করে নির্ভুলভাবে এবং বলতে গেলে চোখের পলকে। কম্পিউটারের সাহায্যে জটিল হিসাব সহজেই নিরূপণ করা হচ্ছে। সর্বাধুনিক কল-কারখানা ও পারমাণবিক চুল্লি নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে কম্পিউটারের সাহায্যে। চিকিৎসা ক্ষেত্রে কম্পিউটার সূচনা করেছে নতুন যুগের। এর সাহায্যে রোগ নিরূপণে খুলে গেছে বিস্ময়কর ও অভাবনীয় দিক-দিগন্ত। তা ছাড়া বহুতল ভবন, বিমান, ডুবোজাহাজসহ বড় বড় কাজের জটিল নকশা কম্পিউটারের মাধ্যমে তৈরি হচ্ছে।
বড় বড় শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করছে কম্পিউটার। বিমান ও রেলের যোগাযোগব্যবস্থা সংরক্ষণ ও টিকিট বিক্রিতেও তা তৎপর। কম্পিউটারের সাহায্যে বর্তমানে বই-পুস্তক ও পত্র-পত্রিকা ইত্যাদির কম্পোজ ও মুদ্রণের কাজ নির্ভুল এবং দ্রুততার সাথে সম্পন্ন করা সম্ভব হচ্ছে। পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, নৈর্ব্যক্তিক উত্তরপত্র মূল্যায়ন ও ফলাফল তৈরির কাজে কম্পিউটার পালন করছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। কম্পিউটার খেলার জগতেও অসামান্য চৌকস। কম্পিউটারে দাবাসহ নানারকম খেলা খেলা যায়। তার মধ্যে রয়েছে নানারকম ভিডিও গেমস। সেগুলো ইতোমধ্যেই বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। এসবের মধ্যে রয়েছে : কার গেমস, যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা, ভিনগ্রহীদের মোকাবেলা, জলে-জঙ্গলে শিকার এবং এমনি আরও কত কী। রয়েছে শিক্ষামূলক নানা তাকঁ-লাগানো খেলা। খেলার মাধ্যমে টাইপ শেখার সুযোগও এনে দিয়েছে কম্পিউটার।
কম্পিউটারে চলচ্চিত্র দেখা যায়, গান শোনা যায়, ছবি স্ক্যানিং করে সংরক্ষণ করা যায়। কম্পিউটারের সাহায্যে ইন্টারনেটের মাধ্যমে দূর-দূরান্তে যোগাযোগ করা যায় ই-মেইলের মাধ্যমে; পড়া যায় দেশবিদেশের পত্রপত্রিকা; সংগ্রহ করা যায় যে-কোনো বিষয়ের তথ্য। সেখানে নানা তথ্য সংরক্ষণও করা যায়। শিক্ষাক্ষেত্রেও কম্পিউটারের অবদান অনেক। কম্পিউটারের মাধ্যমে বর্ণপরিচয় থেকে শুরু করে ইতিহাস, ভূগোল, বিজ্ঞান, গণিত সবই শেখা যায়।
কম্পিউটার ও বেকার সমস্যা : কম্পিউটার মানুষের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে অনেক কাজ। বহু লোকের কাজ একা করার ফলে কলকারখানাসহ বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে বসানো হয়েছে কম্পিউটার-চালিত স্বয়ংক্রিয় বা অটোমেটিক ব্যবস্থা। এর ফলে নিয়োগ কমছে, বেকারত্ব বাড়ছে। তাই আমাদের দেশের মতো জনবহুল ও উন্নয়নশীল দেশে অর্থনৈতিক সাশ্রয় ও বহুমুখী কর্মসংস্থানের দিক বিবেচনায় রেখে কম্পিউটার ব্যবহারের পরিকল্পনা নেওয়া দরকার। বহুমুখী কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও কম্পিউটার শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধির মাধ্যমে যে এই সমস্যা সমাধান করা যায় সেই বিষয়টি ভেবে দেখা দরকার।
উপসংহার: কম্পিউটার আধুনিক বিজ্ঞানের এক বিস্ময়কর উদ্ভাবন। তা মানুষকে বেকার করলেও তার বিশ্বয়কর কার্যক্ষমতা মানুষের মনকে জয় করেছে। আমাদের দেশও তাই কম্পিউটারকে স্বাগত জানিয়েছে। সেদিন বেশি দূরে নয়, যেদিন অধিকাংশ মানুষ কম্পিউটারের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে। আমাদের দেশেও কম্পিউটারের প্রতি মানুষের আগ্রহ দিনদিন বেড়ে চলেছে। মানুষ ক্রমেই হয়ে পড়ছে কম্পিউটারনির্ভর।
বিজ্ঞান বিষয়ক রচনা #০৪ – প্রত্যাহিক জীবনে বিদ্যাৎ
প্রাত্যহিক জীবনে বিদ্যুৎ
ভূমিকা: একুশ শতক সর্বতোভাবে বিজ্ঞানের বিস্ময়কর অগ্রগতির যুগ। এ যুগে বিজ্ঞানের সর্বমুখী যে অগ্রাভিযান চলছে তার মূলে রয়েছে বিদ্যুতের অবদান।
আধুনিক জীবনে বিদ্যুৎ: বিদ্যুৎ ছাড়া আধুনিক জীবন বলতে গেলে অচল। কল-কারখানায়, কৃষিকাজে, চিকিৎসা কেন্দ্রে, অফিস-আদালতে, ঘরে-বাইরে সর্বত্র বিদ্যুৎ এখন অপরিহার্য।
আবাসিক জীবনে বিদ্যুৎ: বহুতল ভবনে ওঠানামায় লিফট এবং পানীয় জল সরবরাহ বিদ্যুৎ ছাড়া চলে না। গৃহস্থালি কাজে হিটার, কুকার, ফ্রিজ চালাতে দরকার পড়ে বিদ্যুতের। বিনোদনের জন্য রেডিও, টিভি, ক্যাসেটপ্লেয়ার চালাতে বিদ্যুতের দরকার। বিদ্যুৎ ছাড়া কম্পিউটার অচল। বাতি জ্বালাতে কিংবা পাখা চালাতেও বিদ্যুৎ অপরিহার্য।
চিকিৎসাক্ষেত্রে বিদ্যুৎ: বিদ্যুতের সাহায্যে নিখুঁতভাবে রোগ নিরূপণ সম্ভব হচ্ছে। ইলেকট্রো থেরাপি নামে একটি শাখাও রয়েছে চিকিৎসা-বিজ্ঞানে।
যোগাযোগ-ব্যবস্থায় বিদ্যুৎ: বিদ্যুৎ পৃথিবীর দূরত্ব ঘুচিয়ে দিয়েছে। বিদ্যুতের কল্যাণে রাতারাতি সংবাদপত্র মুদ্রিত হয়। টেলিফোন, মোবাইল ফোন, ইন্টারনেটের সাহায্যে মুহূর্তে দেশের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে যোগাযোগ করা যায়, তথ্য আদান-প্রদান করা যায়।
উপসংহার: জীবনের সর্বক্ষেত্রে দিনদিন বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে। শিল্প বিকাশেও বিদ্যুতের ভূমিকা বিস্ময়কর। অথচ দেশে বিদ্যুৎ সংকট রয়েছে। তাই উন্নয়নের স্বার্থে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করা দরকার।
বিজ্ঞান বিষয়ক রচনা #০৫ – চিকিৎসাক্ষেত্রে বিজ্ঞান
চিকিৎসাক্ষেত্রে বিজ্ঞান
ভূমিকা: বিজ্ঞানের অগ্রগতি বহুমুখী। তা চিকিৎসা ক্ষেত্রে যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে। রোগ নির্ণয়, রোগ প্রতিরোধ ও রোগ নিরাময়ে এক কথায় মানুষের স্বাস্থ্য সংরক্ষণে বিজ্ঞান আজ পরম আশীর্বাদ হয়ে দেখা দিয়েছে।
রোগ নির্ণয়ে বিজ্ঞান: রোগ নির্ণয়ে বিজ্ঞানের ভূমিকা অভাবনীয়। এক্স-রে, ইসিজি, এন্ডোসকপি, সিটি স্ক্যান, আলট্রাসনোগ্রাফি, এম আর আই ইত্যাদি আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে বিজ্ঞান রোগ নিরূপণে অভাবনীয় সাফল্য এনে দিয়েছে।
রোগ প্রতিরোধে বিজ্ঞান: বৈজ্ঞানিক গবেষণার ফলে রোগ প্রতিরোধে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জিত হয়েছে। এখন হাম, যক্ষ্মা, কাশি, ধনুষ্টংকার, বসন্ত, ডিপথেরিয়া ইত্যাদি জটিল রোগ প্রতিরোধের ব্যবস্থা আবিষ্কৃত হয়েছে।
রোগ নিরাময়ে বিজ্ঞান: রোগ নিরাময়ে আশ্চর্য ও জাদুকরী ক্ষমতাসম্পন্ন বিভিন্ন ওষুধ আবিষ্কার করেছে বিজ্ঞান। এসব ওষুধের কল্যাণে দুরারোগ্য ব্যাধি নিরাময় করা সম্ভব হচ্ছে। এমনকি ক্যান্সার, এইডস ইত্যাদি চিকিৎসায়ও ভালো ফল পাওয়া যাচ্ছে। বিজ্ঞানের কল্যাণে মানবদেহে চক্ষু, হৃৎপিণ্ড, কিডনি ইত্যাদি সংস্থাপন করা সম্ভব হচ্ছে। কোনো অঙ্গ হানি হলে কৃত্রিম অঙ্গ সংযোজন সম্ভব হচ্ছে।
উপসংহার: চিকিৎসা-বিজ্ঞান মানুষকে কঠিন রোগের হাত থেকে বাঁচাচ্ছে। বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রা অবধারিত অকালমৃত্যুর হাত থেকে অনেক রোগীকে সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনছে।
আশাকরি আমাদের আজকের আর্টিকেল টি আপনাদের ভালো লেগেছে। শিক্ষা, পাঠ্যপুস্তক, গল্পের বই সহ যে কোন পিডিএফ ডাউনলোড করতে আমাদের সাথেই থাকুন। আমাদের যে কোন আপডেট মিস করতে না চাইলে ফেসবুক ও ইউটিউবে সাবক্রাইব করে আমাদেস দাথে কানেক্ট থাকতে পারেন। ভালো থাকবেন সবাই, ধন্যবাদ।