তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও আদায়ের ফজিলত

আসসালামু আলাইকুম, কেমন আছেন সবাই? আশাকরি মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে আপনারা সবাই ভালো আছেন। পিডিএফ মেলার আজকের আর্টিকেলে তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও ফজিলাত বর্ণনা করা হবে। কথা না বাড়িয়ে তাহলে চলুন শুরু করি।

আরবি ‘তাহাজ্জুদ’ শব্দের আভিধানিক অর্থ রাত জাগরণ বা নিদ্রা ত্যাগ করে রাতে নামাজ পড়া। শরিয়তের পরিভাষায় রাত দ্বিপ্রহরের পর ঘুম থেকে জেগে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যে নামাজ আদায় করা হয় তা-ই ‘সালাতুত তাহাজ্জুদ’ বা তাহাজ্জুদ নামাজ।

তাহাজ্জুদ নামাজ নফল নাকি সুন্নত?

তাহাজ্জুদ সালাত সুন্নত এই অর্থে যে রাসুল (সা.) পড়েছেন। রাসুল (সা.)-এর যেকোনো আমল আল্লাহর বান্দাগণ অনুসরণ করলে সেটা সুন্নাহ। আর ফরজ ছাড়া যত ইবাদত রয়েছে, সবই নফল ইবাদতের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। তাই আল্লাহ পাঁচ ওয়াক্ত সালাতকে ফরজ বলে ঘোষণা করেছেন। এ ছাড়া যত সালাত আছে, সব নফল বা অতিরিক্ত। সুতরাং নফল সালাত হুকুমের মধ্যে আসেনি। সুন্নাহকে ওলামায়ে কেরামগণ হুকুমের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। হুকুম হলো বিধান।

রাসুল (সা.)-এর সুন্নাহ দুই প্রকার। একটা হলো, সেই সুন্নাহ যার ওপর গুরুত্ব বেশি দেওয়া হয়েছে। আরেকটা হলো, অতিরিক্ত সুন্নাহ হিসেবে যে সুন্নাহ প্রমাণিত হয়েছে। তাহাজ্জুদ এই পর্যায়ের সালাত। তাহাজ্জুদ সালাত নফল এই দিক থেকে, যেহেতু এটা ফরজ বা ওয়াজিব নয়। আর যেহেতু রাসুল (সা.) আদায় করেছেন, সেহেতু এটি সুন্নাহ।

তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়ের ফজিলত

আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘আর রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদ পড়বে। এটা তোমার অতিরিক্ত দায়িত্ব। অচিরেই তোমার রব তোমাকে প্রশংসিত স্থানে প্রতিষ্ঠিত করবেন।’ (সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৭৯)

আয়াতে নবী করিম (সা.)-কে সম্বোধন করা হয়েছে। তাকে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করতে বলা হয়েছে। তাহাজ্জুদের নামাজ একটি অতিরিক্ত ফরজ, যা নবী (সা.)-এর জন্য নির্দিষ্ট ছিল। অবশ্য উম্মতের জন্য তাহাজ্জুদের নামাজ ফরজ নয়। তাহাজ্জুদের নামাজ সুন্নতে মুয়াক্কাদা। এই নামাজ নেককারদের বৈশিষ্ট্য।

তাহাজ্জুদ নামাজ কুপ্রবৃত্তি দমনে অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এ নামাজ মন ও মননকে নির্মল করে। ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই রাতে ঘুম থেকে ওঠা মনকে দমিত করার জন্য অধিক কার্যকর। ওই সময়ে পাঠ করা (কোরআন তেলাওয়াত বা জিকির) একেবারে যথার্থ।’ (সুরা মুজ্জাম্মিল, আয়াত: ০৬)

তাহাজ্জুদ নামাজ হলো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর শ্রেষ্ঠ নামাজ। মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘রমজানের পর সর্বশ্রেষ্ঠ রোজা হলো আল্লাহর মাস মহররমের রোজা। আর ফরজ নামাজের পর সর্বশ্রেষ্ঠ নামাজ হলো রাতের (তাহাজ্জুদের) নামাজ।’ (মুসলিম, হাদিস: ১১৬৩)

আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনু আ’স (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেনঃ হে আবদুল্লাহ! তুমি অমুক ব্যাক্তির মত হয়ো না, সে রাত জেগে ইবাদাত করত, পরে রাত জেগে ইবাদাত করা ছেড়ে দিয়েছে। (বুখারি, হাদিস: ১১৫২)

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম

ইশার নামাজ আদায়ের পর থেকে সুবহে সাদেকের আগ পর্যন্ত সালাতুল লাইল বা তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া যায়। তবে অর্ধ রাতের পর থেকে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া ভালো। শেষ রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা সর্বোত্তম।

তাহাজ্জুদ নামাজ ২ থেকে ১২ রাকাআত পর্যন্ত পড়া বর্ণনা পাওযা যায়। সর্ব নিম্ন ২ রাকাআত আর সর্বোচ্চ ১২ রাকাআত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ৮ রাকাআত তাহাজ্জুদ পড়তেন। তাই ৮ রাকাআত তাহাজ্জুদ পড়াই ভালো। তবে এটা পড়া আবশ্যক নয়।

সম্ভব হলে ১২ রাকাআত তাহাজ্জুদ আদায় করা। তবে ৮ রাকাআত আদায় করা উত্তম। সম্ভব না হলে ৪ রাকাআত আদায় করা। যদি তাও সম্ভব না হয় তবে ২ রাকাআত হলেও তাহাজ্জুদ আদায় করা ভালো। তবে তাহাজ্জুদ নামাজের কোনো কাজা নেই।

প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুই দুই রাকাআত করে এ নামাজ আদায় করতেন। যে কোনো সুরা দিয়েই এ নামাজ পড়া যায়। তবে তিনি লম্বা কেরাতে নামাজ আদায় করতেন। তাই লম্বা কেরাতে তাহাজ্জুদ আদায় করা উত্তম।
– তাকবিরে তাহরিমা ‘আল্লাহু আকবার’ বলে নিয়ত বাঁধা।
– অতঃপর ছানা পড়া।
– সুরা ফাতেহা পড়া।
– সুরা মিলানো তথা কেরাত পড়া। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনেক লম্বা কেরাত পড়তেন। অতঃপর অন্যান্য নামাজের ন্যায় রুকু, সেজদা আদায় করা। এভাবেই দ্বিতীয় রাকাআত আদায় করে তাশাহহুদ, দরূদ ও দোয়া মাছুরা পড়ে সালাম ফেরানোর মাধ্যমে নামাজ সম্পন্ন করা।

এভাবে দুই দুই রাকাআত করে ৮ রাকাআত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা উত্তম।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে যথাযথভাবে রাতের শেষ প্রহরে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।


1️⃣ You Can Also Read: তারাবীর নামাজের নিয়ম, ফজিলাত ও গুরুত্ব
2️⃣ You Can Also Read: তারাবীর নামাজের নিয়ম, ফজিলাত ও গুরুত্ব
3️⃣ You Can Also Read: তারাবীর নামাজের নিয়ম, ফজিলাত ও গুরুত্ব
5️⃣ You Can Also Read: জান্নাতের হুরদের নাম | জান্নাতের হুরদের পরিচয়


আশাকরি আমাদের আজকের আর্টিকেল টি আপনাদের ভালো লেগেছে। ভালো লাগলে আমাদের সাথেই থাকুন। ভালো থাকবেন সবাই, ধন্যবাদ।

[এই আর্টিকেল টির সম্পূর্ণ অনলাইনের বিভিন্ন সোর্স থেকে কালেক্ট করা, তাই এর আর্টিকেলের কপিরাইট ওনার পিডিএফ মেলা নয়]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *