অনুচ্ছেদ রচনা মােবাইল ফোন

অনুচ্ছেদ রচনা মােবাইল ফোন

অনুচ্ছেদ রচনা মােবাইল ফোন

বিজ্ঞান তার বিস্ময়কর আবিষ্কারের দ্বারা মানুষের জীবনকে সুখ-স্বাচ্ছন্দে ভরে দিয়েছে। মানুষের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের একটি নতুন ও বিস্ময়কর সংযােজন হল মােবাইল ফোন। যােগাযােগের ক্ষেত্রে মােবাইল ফোনের প্রভাব এতটাই বেশি যে, একে বাদ দিয়ে আধুনিক জীবন যেন অচল, নিঃসঙ্গ, নিঃস্তব্ধ। মােবাইল যেন যাদুর কাঠি; যার স্পর্শে হাজার রকমের ভাবের লেনদেন যেমন সম্ভব, তেমনি নানারকম নিত্য প্রয়ােজনীয় কর্মকাণ্ড সহজেই নিষ্পন্ন করা সম্ভব। সাড়া বিশ্বের যােগাযােগ ব্যবস্থাকে হাতের মুঠোয় ক্ষুদ্র একটি সেটের মধ্যে বন্দি করে ফেলেছে। এর চেয়ে আশ্চর্যের বিষয় আর কী হতে পারে? বিপদে-আপদে, আনন্দ-বেদনায়, হর্য-বিষাদে, জরুরি প্রয়ােজনে মােবাইল এখন প্রতিটি মানুষের নিত্যসঙ্গী। তাৎক্ষণিক যােগাযােগ করার ক্ষেত্রে মােবাইলের বিকল্প এখনও আবিস্কৃত হয় নি। রাষ্ট্রপতি থেকে শুরু করে দিনমজুর পর্যন্ত মােবাইল ফোনের ব্যবহারে কোনাে ভেদাভেদ নেই। মােবাইলে শুধু কথাই হয় না, এসএমএস এর মাধ্যমে কাঙিক্ষত সংবাদ মুহূর্তেই পৌছিয়ে দিতে পারে। মােবাইলে ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিশ্বের যে কোনাে প্রান্তের খবর সহজে পাওয়া যায় এবং ঘরে বসে যে কারাের সঙ্গে অনায়াসে যােগাযােগ করা যায়। অফিস- আদালত, ব্যবসা-বাণিজ্য ও নানা কর্মযজ্ঞে তাে বটেই, ভ্রমণ-বিলাসে, রেস্তোরায়, খাবার টেবিলে, যানবাহনে- এমনকি পাহাড়-পর্বত, বনবনানীতে সর্বত্র এর সহজ পরিবহন ও ব্যবহারই এর আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তার কারণ। গান-বাজনা, সিনেমা দেখা ইত্যাদি বিনােদনমূলক কাজে মােবাইল ফোনের ব্যবহার সত্যিই বিস্ময়কর। স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য ব্যবহার হচ্ছে মােবাইল ক্যামেরা, ভিডিও ক্যামেরা। আজকাল মােবাইলের মাধ্যমে কথা বলা, খেলাধুলা, স্বাস্থ্যসেবা, সংবাদ প্রেরণ ছাড়াও বিভিন্ন সেবা, যেমন- মােবাইলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিলসহ অন্যান্য কাজ সহজেই করে নেয়া সম্ভব হচ্ছে। মােবাইল কোম্পানিগুলাে জাতীয় দিবসের প্রতিপাদ্য এবং সরকারের আদেশ খবর গ্রহণের কাছে পৌছিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করছে। মােবাইলের কথা বলার স্থান নির্বাচন করে এবং কথাবার্তার গতিপরিধি নির্ণয় করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সন্ত্রাসীদের পাকড়াও করছে। মােট কথা মােবাইল যােগাযােগের ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নতি সাধন করেছে। মােবাইল যােগাযােগ ব্যবস্থাকে সস্তা ও সহজসাধ্য করলেও এর কিছু ক্ষতিকারক দিকও রয়েছে। সন্ত্রাস, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, তুমকি, অসামাজিক কার্যকলাপ, মানহানি, প্রভৃতি অসামাজিক কার্যকলাপে মােবাইল ফোন সহায়ক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। মােবাইল ফোনের অপরিমিত ব্যবহারে স্কুল- কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় অনেক ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। আজকাল যন্ত্রের ওপর নির্ভর করেই যেন আমাদের নিত্য পথ চলা। যন্ত্রের সঙ্গে আমরাও হয়ে পড়েছি যান্ত্রিক। যান্ত্রিকতা মানুষকে সুখ স্বাচ্ছন্দ্য আরাম দিয়েছে। বটে, কিন্তু জীবনকে করেছে আবেগশূন্য। জীবনের এই আবেগরিক্ততা মনুষ্যত্বকেও অনেকখানি নিঃস্ব করে দিয়েছে। তথাপি মােবাইলের যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা আমাদের জীবনকে সুখে-স্বাচ্ছন্দে ভরে তুলতে পারি, এ কথা নিঃসেন্দহে বলা যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *